চলমান এসএসসি পরীক্ষার গণিত বিষয়ের প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যেই অকাট্য প্রমাণ পেয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত পরীক্ষা বাতিলের ঘোষণা আসেনি মন্ত্রণালয় থেকে। জানা গেছে, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে মন্ত্রণালয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘গণিত পরীক্ষা শুরুর ৪০ মিনিট আগে যে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে সেটির সঙ্গে হুবহু মিল পাওয়া গেছে পরীক্ষার সময় । এর সবধরনের তথ্যপ্রমাণ তদন্ত কমিটির কাছে আছে। তবে পরীক্ষা বাতিল হবে কি না, সে বিষয়ে তদন্ত কমিটি কিছুই বলতে পারছে না। এজন্য মন্ত্রীর নির্দেশনার অপেক্ষায় আছেন তারা।’
গণিত পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ঘটনা সংবাদমাধ্যম জনসম্মুখে তুলে ধরার পর শিক্ষামন্ত্রী ঘটনার পরদিন সাংবাদিকদের কাছে স্বীকারও করেছিলেন বিষয়টি। তিনি বলেছিলেন, প্রশ্নফাঁসের প্রমাণ মিললে বাতিল হবে পরীক্ষা। এরপর চলে গেছে অনেক সময়।
জনমনে প্রশ্ন জেগেছে, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ পরীক্ষা বাতিল করতে কতখানি আন্তরিক? তিনি আসলে কী চাইছেন? শিক্ষামন্ত্রী যে সুর পালটেছেন।
নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রথমদিকে বলেছিলেন, ‘গণিত পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস প্রমাণিত হলে পরীক্ষাটি বাতিল হবে’। তিনি আরও বলেছিলেন, ‘৪০ মিনিট আগে যে প্রশ্নফাঁস হয়েছে সেটির সঙ্গে আসল প্রশ্নের মিল আছে। তবে একদিন আগে যেটি ফাঁস হয়েছে তার সঙ্গে কোনো মিল নেই।’
এর কয়েকদিন পর তিনি তার সুর পাল্টে বলেছেন, ‘এখনই গণিত পরীক্ষা বাতিল হচ্ছে না। এটি আরও যাচাই-বাছাইয়ের বিষয় আছে। এরপর পরীক্ষা বাতিল হবে কি, হবে না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘গণিত পরীক্ষা বাতিল নিয়ে সরকার দ্বিমুখী সমস্যায় আছে। বাতিল হলে অন্য শিক্ষার্থীরা আদালতে মামলা করলে নতুন সংকট সৃষ্টি হবে । কারণ ৪০ মিনিট আগের ফাঁস হওয়া প্রশ্ন নিশ্চয় সব শিক্ষার্থী পায়নি। এখন এই পরীক্ষা বাতিল হলে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থী যদি আদালতে মামলা করে তাহলে বেকায়দায় পড়বে শিক্ষা মন্ত্রণালয়’।
তিনি আরও বলেন, ‘৪০ মিনিটে আগে প্রশ্নফাঁস হলে সেই প্রশ্ন দিয়ে কেউ কিছু করতে পারে কি না সেটি নিয়ে প্রশ্ন আছে। কারণ ৪০ মিনিটে আগে তো একজন শিক্ষার্থীকে পরীক্ষার হলেই যেতে হয়। এসব বিবেচনায় পরীক্ষাটি বাতিল হবে কি না সেটি নিয়ে সিদ্ধান্তের বিষয় আছে। এটি বাতিল করা যৌক্তিক হবে কি না সে প্রশ্ন করছেন কেউ কেউ।’
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত গণিত পরীক্ষার আগেই হোয়াটসঅ্যাপে পাওয়া প্রশ্নের হুবহু মিল পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। পরীক্ষার্থী সেজে যোগাযোগ করে মেসেজিং অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে আগের রাতেই প্রশ্নপত্র পেয়েছিল গণমাধ্যমের এক কর্মী। রাতে পাওয়া সৃজনশীল প্রশ্নপত্র এবং সকালে পাওয়া এমসিকিউ প্রশ্ন মূল প্রশ্নপত্রের সঙ্গে হুবহু মিলে যায়। এনিয়ে নানা মহলে সমালোচনার মধ্যেই আরও দুইটি বিষয়ের প্রশ্ন ফাঁসের খবর আসে।
এসব নিয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রুহী রহমান জানান, ‘প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। এনিয়ে আমি বেশি কিছু বলতে চাই না। কোনো সিদ্ধান্ত হলে আপনারা জানতে পারবেন।’