ঢাকা ১০:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হলো না বাংলাওয়াশ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৫:০১:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ জুন ২০১৫
  • ৩৮০ বার

আক্ষেপ করবেন! আফসোস কি! হলো না হলো না বলে মাতম তোলার মতো কিছু কি! ভারতকে বাগে পেয়েও বাংলাওয়াশ করা গেলো না বলে কি কষ্টে বুক ভেঙ্গে চৌচির হবে! না। তা কেন? বাংলাওয়াশের মঞ্চটা ছিল প্রস্তুত। গ্যালারির প্রতি কোণে ঠাসা অনুপ্রেরণা। খেলোয়াড়দের প্রেরণার অভাব নেই। টস জিতে ভারতকে মাশরাফি ব্যাটিংয়ে পাঠালে আফসোস করেছিলেন ধোনি। তার দল আগে ব্যাট করতে চায়নি। তবু ব্যাট করতে হলো। সতর্ক ভারত লড়াই করেই সমীহ জাগানোর মতো স্কোর প্রথমবারের মতো সিরিজে করলো। এই সেদিনই তো নেলসনে স্কটল্যান্ডের ৩১৮ রান তাড়া করে ৬ উইকেটে জিতলো বাংলাদেশ। প্রেরণা ওখানেও। বিশ্বকাপের মতো আসরে হলে এখানে নয় কেন! সেই আশা নিয়ে বাংলাদেশ লড়াই করতে চাইলো। কিন্তু লড়াইটা যুতসই হলো না বলেই কিছুটা আক্ষেপ নিয়ে ভারতের বিপক্ষে তিন ওয়ানডের সিরিজ শেষ করলো বাংলাদেশ। কপাল চাপড়ানোর মতো কিছু নেই তাতে। আছে গৌরব। আছে অনন্য অর্জনের সৌরভে মাখামাখি হয়ে সেই সুবাস সবার জন্য ছড়িয়ে দেওয়ার অবকাশ। শেষ ম্যাচ হারলেও ২-১ তে সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ। এই ম্যাচে ভারতের জয় ৭৭ রানের। ৪৭ ওভারে ২৪০ রানে অল আউট হয়েছে স্বাগতিকরা।
তামিম ইকবালের ভাগ্যটাই খারাপ বলতে হবে। হ্যাঁ, আম্পায়ার তাকে আউট দিয়েছেন টিকই। কিন্তু আসলে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে তিনি পড়েছিলেন কি না তা নিয়ে প্রশ্নটা থাকছেই। যে অ্যাঙ্গেল থেকে তার হাঁটুতে গিয়ে লেগেছে বল তাতে বলটা লেগ স্টাম্পের বাইরে থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই ছিল বেশি। কিন্তু আম্পায়ার আউট দিলে তো তা মেনে নিতেই হবে। দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে ধাওয়ালের শিকার হয়েছেন তামিম। দলের রান তখন ৮। তামিমের ৫।
হলো না বাংলাওয়াশ

৩১৮ রানের টার্গেট তাড়া করে জিততে যেমন ব্যাট করতে হয় তেমনটিই করছিলেন সৌম্য সরকার। বিনি, ধাওয়াল, যাদবরা তার সামনে পাত্তাই পাচ্ছিলেন না। কিন্তু ধাওয়াল দিশেহারা হওয়ার প্রতিশোধ নিয়েছেন। আগ্রাসী ক্রিকেট খেলা সৌম্যকে তাই ৩৪ বলে ৪০ রান করেই ফিরে আসতে হয় ধাওয়ালের শিকার হয়ে। মিরপুর থেকে শেষ খবর, পাওয়ার প্লের ১০ ওভার শেষ হয়েছে ২ উইকেটে ৬৫ রান টাইগারদের। ৭ রান করা লিটনের সাথে যোগ দিয়েছেন মুশফিকুর রহিম।
৬২ রানের মধ্যে দুই ওপেনার নেই। কিন্তু বাংলাদেশের এই সময়ের ব্যাটসম্যানরা ভালো। তারা ইনিংসটাকে টেনে নিতে জানেন। কিন্তু ভারতের জোড়া আঘাতে বিপদের মধ্যে বসবাস তখন টাইগারদের। ৫০ রানের জুটি গড়ে তুলেছিলেন মুশফিক ও লিটন। কিন্তু ভারতের দুই স্পিনারের আঘাতে শঙ্কার কালো মেঘ জমে বাংলাদেশের আকাশে। প্রথমে অনিয়মিত স্পিনার রাইনা তুলে নিলেন মুশফিককে। উইকেটের পেছনে দারুণ ক্যাচ নিয়েছেন ধোনি। মুশফিক ২৪ রান করলেন। লিটন সেট হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু অক্ষরের একটি সোজা বলকে বুঝতেই পারলেন না। আউট ৩৪ রান করে। ৬ রানের মধ্যে টপ অর্ডারের দুই ব্যাটসম্যানকে হারালো বাংলাদেশ।
সাকিব আর সাব্বির মিলে হালে অনেকগুলো ম্যাচে বাংলাদেশকে জয়ের পথ পার করে দিয়েছেন। এই ম্যাচে কেমন করবেন। ম্যাচের মুড অনুযায়ী আক্রমণ দিয়েই শুরু করেছিলেন সাকিব। তরুণ সাব্বির তার অনুসারী। আক্রমণকে সঙ্গী করেই জুটি গড়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বেশিক্ষণ এক সাথে থাকা হলো না তাদের। ভারতের স্পিনাররা হামলে পড়ার চেষ্টা করেছেন। সাকিব রাইনার শিকার হয়েছেন ২০ রান করে। বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের শেষ জুটিটা ছিল সাব্বির ও নাসিরের। ষষ্ঠ উইকেটে ৪৯ রানের জুটি গড়লেন তারা। কিন্তু সাব্বির ৪৩ রান করে বোল্ড বিনির বলে। এরপর নাসিরের আর সঙ্গী থাকে না। মাশরাফিও শুন্য হাতে ফেরায় বাংলাদেশের শেষ লড়াইটা তখন কেবল আনুষ্ঠানিকতার। নাসির ৩২ রান করে আউট হলে আর কিছু থাকেনি। জুটি গড়তে না পারা আর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানোর কারণেই টাইগারদের লড়াইটা জমলো না।
এদিন মাশরাফি নিলেন ৩ উইকেট। মুস্তাফিজ ২ উইকেট। সাকিব নিলেন ১টি। আর তিন ম্যাচের সিরিজের প্রথমবারের মতো ভারত লড়াই করতে পারলো বাংলাদেশের বোলিংয়ের সাথে। শেষ ১০ ওভারে ৯০ রান তুলেছে তারা। পুরো ইনিংসে ব্যাটিংটা বেশ ভালোই হয়েছে। ফিফটি করেছেন ধোনি ও ধাওয়ান। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের সামনে বড় এক চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে ভারত। ৬ উইকেটে ৩১৭ রানে শেষ হয়েছে ভারতের ইনিংস।
ধাওয়ান তখন বিপদের জন্ম দিচ্ছেন। সুবাস পাচ্ছেন সেঞ্চুরির। কিন্তু এমন সময়ে পাখির ডানায় ভর করে উড়ন্ত মানব হয়ে ওঠেন নাসির! বাংলাদেশের এই ফিল্ডারের হাত দুটি তখন পাখার মতো। বাতাসে উড়ে ধাওয়ানের যে ক্যাচটি নিলেন তা এক কথায় অবিশ্বাস্য। বিস্ময়কর। আর তিনি পাখির জীবন পাওয়ায় মরণ হয় ধাওয়ানের। নাসির আনন্দের সাগরে ভাসান তার অধিনায়ক মাশরাফিকে। ৭৫ রানে ফিরে যান ধাওয়ান। ওখানে গতি কমে ভারতের। ১৫৮ রানে তৃতীয় উইকেট পড়ে ভারতের।
হলো না বাংলাওয়াশ

ধাওয়ান অবশ্য ফিরে যেতে পারতেন ব্যক্তিগত ৪০ রানেই। সেই নাসিরই তখন দূর্ভাগা বোলার। ধাওয়ানের ব্যাটের কানায় চুমু খেয়ে বলটা লাফিয়ে উঠলো। মুশফিকুর রহিমের জায়গায় উইকেটকিপারের দায়িত্ব পালন করছেন লিটন দাস। কিন্তু ঘটনার আকস্মিকতা তাকে বলটাকে ধরতে দিলো না। আক্ষেপ লিটনের। তার চেয়ে বেশি আক্ষেপ নাসির ও টাইগার দলের। তখন যদি ধাওয়ানকে বিদায় করা যেত!
ধাওয়ান গল্পের আগের গল্পটা মুস্তাফিজ ও রোহিত শর্মার দ্বৈরথের। ভারতের ওপেনিং জুটি ততক্ষণে ৩৯ রান করে ফেলেছে। চলছে সপ্তম ওভারের খেলা। ২৮ বলে ২৯ রান রোহিতের। মুস্তাফিজকে একটা বাউন্ডারিও মেরে দিলেন। কিন্তু ওই যে মুস্তাফিজের কাটার। দূর্বোধ্য সেই কাটারে উইকেটের পেছনে লিটনের কাছে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন ওয়ানডেতে দুটি ডাবল সেঞ্চুরির একমাত্র মালিক রোহিত। টানা তিন ওয়ানডেতে রোহিতকে আউট করলেন মুস্তাফিজ। নিলেন তিন ম্যাচে ১২ উইকেট।
ভারত এদিন দারুণ সতর্ক। বাংলাওয়াশ এড়াতে হবে যে! ভীতি হয়তো সাবধান করেছে বেশি। তাই হাত খুলে ব্যাট চালাননি বিরাট কোহলিও। ধাওয়ানের সাথে তার ৭৫ রানের জুটি হলো বটে। কিন্তু তাতে আগ্রাসণের অভাব ছিল। সাকিব নিজের প্রথম ওভারেই ২৫ রান করা কোহলিকে বোল্ড করে দেখিয়ে দিয়েছেন সাজঘরের পথ।
হলো না বাংলাওয়াশ

দুই উইকেট পড়লেই ধোনি আসেন। তিন উইকেট পড়লে রাইডু। দুজনের ব্যাটিং ছিল পরিশ্রমী ক্রিকেটারের টিকে থেকে এগিয়ে যাওয়ার লড়াই। ধাওয়ানের বিদায়ের পর তাদের জুটি গড়ে ওঠে। দুই প্রান্ত থেকেই আসছিলো রান। কিন্তু টাইগার বোলাররা চাপের মধ্যে রেখেছিল দুই ব্যাটসম্যানকে। এর মধ্যে লড়ে গেছেন ওই দুজন। ফিফটি তুলে নেন অধিনায়ক ধোনি। ফিফটির দোরগোড়ায় গিয়ে দূর্ভাগ্যজনকভাবে রাইডু আউট। ৪৪ রানের সময় মাশরাফির বল প্যাডে লেগে লিটনের হাতে জমা পড়লো। আম্পায়ার এনামুল হক আউট দিলে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে ফেরেন রাইডু। ভাঙে ৯৩ রানের জুটি।
ধোনি তখন বাংলাদেশের গলার কাটার মতো। কিন্তু মাশরাফির একটি স্লোয়ার  তুলে মারতে গেলেন। মুস্তাফিজ আর ধোনির বোঝাপড়াটা তখনো বাকি ছিলো! সামনে ঝাপিয়ে পড়ে অসাধারণ এক ক্যাচ নিয়েছেন মুস্তাফিজ। ৬৯ রান করে বিদায় নেন ধোনি। তবে শেষের গল্পটা সুরেশ রাইনার। দ্রুত গতিতে রান তুলে দলের রানকে ৩০০ পার করে দিয়েছেন। কিন্তু তিনিও শিকার হয়েছেন মুস্তাফিজের। ২১ বলে ৩৮ রান করে বাঁ হাতি পেসারের দ্বিতীয় শিকার হয়েছেন রাইনা। ওটা ছিলো মুস্তাফিজের শেষ ওভার! একাধিক রেকর্ড দিয়েই বোলিং শেষ করেছেন মুস্তাফিজ। ১০ ওভারে ৫৭ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন। তাতে ৩ ম্যাচের সিরিজে তার উইকেট হয়েছে ১৩টি। ওয়ানডে সিরিজে অভিষেকে সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার যৌথ বিশ্ব রেকর্ড এখন তার। ৩ ম্যাচের সিরিজে অভিষেকে সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার একক বিশ্ব রেকর্ডও মুস্তাফিজের। সেই সাথে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার একক বিশ্ব রেকর্ডটা তারই।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

হলো না বাংলাওয়াশ

আপডেট টাইম : ০৫:০১:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ জুন ২০১৫

আক্ষেপ করবেন! আফসোস কি! হলো না হলো না বলে মাতম তোলার মতো কিছু কি! ভারতকে বাগে পেয়েও বাংলাওয়াশ করা গেলো না বলে কি কষ্টে বুক ভেঙ্গে চৌচির হবে! না। তা কেন? বাংলাওয়াশের মঞ্চটা ছিল প্রস্তুত। গ্যালারির প্রতি কোণে ঠাসা অনুপ্রেরণা। খেলোয়াড়দের প্রেরণার অভাব নেই। টস জিতে ভারতকে মাশরাফি ব্যাটিংয়ে পাঠালে আফসোস করেছিলেন ধোনি। তার দল আগে ব্যাট করতে চায়নি। তবু ব্যাট করতে হলো। সতর্ক ভারত লড়াই করেই সমীহ জাগানোর মতো স্কোর প্রথমবারের মতো সিরিজে করলো। এই সেদিনই তো নেলসনে স্কটল্যান্ডের ৩১৮ রান তাড়া করে ৬ উইকেটে জিতলো বাংলাদেশ। প্রেরণা ওখানেও। বিশ্বকাপের মতো আসরে হলে এখানে নয় কেন! সেই আশা নিয়ে বাংলাদেশ লড়াই করতে চাইলো। কিন্তু লড়াইটা যুতসই হলো না বলেই কিছুটা আক্ষেপ নিয়ে ভারতের বিপক্ষে তিন ওয়ানডের সিরিজ শেষ করলো বাংলাদেশ। কপাল চাপড়ানোর মতো কিছু নেই তাতে। আছে গৌরব। আছে অনন্য অর্জনের সৌরভে মাখামাখি হয়ে সেই সুবাস সবার জন্য ছড়িয়ে দেওয়ার অবকাশ। শেষ ম্যাচ হারলেও ২-১ তে সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ। এই ম্যাচে ভারতের জয় ৭৭ রানের। ৪৭ ওভারে ২৪০ রানে অল আউট হয়েছে স্বাগতিকরা।
তামিম ইকবালের ভাগ্যটাই খারাপ বলতে হবে। হ্যাঁ, আম্পায়ার তাকে আউট দিয়েছেন টিকই। কিন্তু আসলে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে তিনি পড়েছিলেন কি না তা নিয়ে প্রশ্নটা থাকছেই। যে অ্যাঙ্গেল থেকে তার হাঁটুতে গিয়ে লেগেছে বল তাতে বলটা লেগ স্টাম্পের বাইরে থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই ছিল বেশি। কিন্তু আম্পায়ার আউট দিলে তো তা মেনে নিতেই হবে। দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে ধাওয়ালের শিকার হয়েছেন তামিম। দলের রান তখন ৮। তামিমের ৫।
হলো না বাংলাওয়াশ

৩১৮ রানের টার্গেট তাড়া করে জিততে যেমন ব্যাট করতে হয় তেমনটিই করছিলেন সৌম্য সরকার। বিনি, ধাওয়াল, যাদবরা তার সামনে পাত্তাই পাচ্ছিলেন না। কিন্তু ধাওয়াল দিশেহারা হওয়ার প্রতিশোধ নিয়েছেন। আগ্রাসী ক্রিকেট খেলা সৌম্যকে তাই ৩৪ বলে ৪০ রান করেই ফিরে আসতে হয় ধাওয়ালের শিকার হয়ে। মিরপুর থেকে শেষ খবর, পাওয়ার প্লের ১০ ওভার শেষ হয়েছে ২ উইকেটে ৬৫ রান টাইগারদের। ৭ রান করা লিটনের সাথে যোগ দিয়েছেন মুশফিকুর রহিম।
৬২ রানের মধ্যে দুই ওপেনার নেই। কিন্তু বাংলাদেশের এই সময়ের ব্যাটসম্যানরা ভালো। তারা ইনিংসটাকে টেনে নিতে জানেন। কিন্তু ভারতের জোড়া আঘাতে বিপদের মধ্যে বসবাস তখন টাইগারদের। ৫০ রানের জুটি গড়ে তুলেছিলেন মুশফিক ও লিটন। কিন্তু ভারতের দুই স্পিনারের আঘাতে শঙ্কার কালো মেঘ জমে বাংলাদেশের আকাশে। প্রথমে অনিয়মিত স্পিনার রাইনা তুলে নিলেন মুশফিককে। উইকেটের পেছনে দারুণ ক্যাচ নিয়েছেন ধোনি। মুশফিক ২৪ রান করলেন। লিটন সেট হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু অক্ষরের একটি সোজা বলকে বুঝতেই পারলেন না। আউট ৩৪ রান করে। ৬ রানের মধ্যে টপ অর্ডারের দুই ব্যাটসম্যানকে হারালো বাংলাদেশ।
সাকিব আর সাব্বির মিলে হালে অনেকগুলো ম্যাচে বাংলাদেশকে জয়ের পথ পার করে দিয়েছেন। এই ম্যাচে কেমন করবেন। ম্যাচের মুড অনুযায়ী আক্রমণ দিয়েই শুরু করেছিলেন সাকিব। তরুণ সাব্বির তার অনুসারী। আক্রমণকে সঙ্গী করেই জুটি গড়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বেশিক্ষণ এক সাথে থাকা হলো না তাদের। ভারতের স্পিনাররা হামলে পড়ার চেষ্টা করেছেন। সাকিব রাইনার শিকার হয়েছেন ২০ রান করে। বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের শেষ জুটিটা ছিল সাব্বির ও নাসিরের। ষষ্ঠ উইকেটে ৪৯ রানের জুটি গড়লেন তারা। কিন্তু সাব্বির ৪৩ রান করে বোল্ড বিনির বলে। এরপর নাসিরের আর সঙ্গী থাকে না। মাশরাফিও শুন্য হাতে ফেরায় বাংলাদেশের শেষ লড়াইটা তখন কেবল আনুষ্ঠানিকতার। নাসির ৩২ রান করে আউট হলে আর কিছু থাকেনি। জুটি গড়তে না পারা আর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানোর কারণেই টাইগারদের লড়াইটা জমলো না।
এদিন মাশরাফি নিলেন ৩ উইকেট। মুস্তাফিজ ২ উইকেট। সাকিব নিলেন ১টি। আর তিন ম্যাচের সিরিজের প্রথমবারের মতো ভারত লড়াই করতে পারলো বাংলাদেশের বোলিংয়ের সাথে। শেষ ১০ ওভারে ৯০ রান তুলেছে তারা। পুরো ইনিংসে ব্যাটিংটা বেশ ভালোই হয়েছে। ফিফটি করেছেন ধোনি ও ধাওয়ান। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের সামনে বড় এক চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে ভারত। ৬ উইকেটে ৩১৭ রানে শেষ হয়েছে ভারতের ইনিংস।
ধাওয়ান তখন বিপদের জন্ম দিচ্ছেন। সুবাস পাচ্ছেন সেঞ্চুরির। কিন্তু এমন সময়ে পাখির ডানায় ভর করে উড়ন্ত মানব হয়ে ওঠেন নাসির! বাংলাদেশের এই ফিল্ডারের হাত দুটি তখন পাখার মতো। বাতাসে উড়ে ধাওয়ানের যে ক্যাচটি নিলেন তা এক কথায় অবিশ্বাস্য। বিস্ময়কর। আর তিনি পাখির জীবন পাওয়ায় মরণ হয় ধাওয়ানের। নাসির আনন্দের সাগরে ভাসান তার অধিনায়ক মাশরাফিকে। ৭৫ রানে ফিরে যান ধাওয়ান। ওখানে গতি কমে ভারতের। ১৫৮ রানে তৃতীয় উইকেট পড়ে ভারতের।
হলো না বাংলাওয়াশ

ধাওয়ান অবশ্য ফিরে যেতে পারতেন ব্যক্তিগত ৪০ রানেই। সেই নাসিরই তখন দূর্ভাগা বোলার। ধাওয়ানের ব্যাটের কানায় চুমু খেয়ে বলটা লাফিয়ে উঠলো। মুশফিকুর রহিমের জায়গায় উইকেটকিপারের দায়িত্ব পালন করছেন লিটন দাস। কিন্তু ঘটনার আকস্মিকতা তাকে বলটাকে ধরতে দিলো না। আক্ষেপ লিটনের। তার চেয়ে বেশি আক্ষেপ নাসির ও টাইগার দলের। তখন যদি ধাওয়ানকে বিদায় করা যেত!
ধাওয়ান গল্পের আগের গল্পটা মুস্তাফিজ ও রোহিত শর্মার দ্বৈরথের। ভারতের ওপেনিং জুটি ততক্ষণে ৩৯ রান করে ফেলেছে। চলছে সপ্তম ওভারের খেলা। ২৮ বলে ২৯ রান রোহিতের। মুস্তাফিজকে একটা বাউন্ডারিও মেরে দিলেন। কিন্তু ওই যে মুস্তাফিজের কাটার। দূর্বোধ্য সেই কাটারে উইকেটের পেছনে লিটনের কাছে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন ওয়ানডেতে দুটি ডাবল সেঞ্চুরির একমাত্র মালিক রোহিত। টানা তিন ওয়ানডেতে রোহিতকে আউট করলেন মুস্তাফিজ। নিলেন তিন ম্যাচে ১২ উইকেট।
ভারত এদিন দারুণ সতর্ক। বাংলাওয়াশ এড়াতে হবে যে! ভীতি হয়তো সাবধান করেছে বেশি। তাই হাত খুলে ব্যাট চালাননি বিরাট কোহলিও। ধাওয়ানের সাথে তার ৭৫ রানের জুটি হলো বটে। কিন্তু তাতে আগ্রাসণের অভাব ছিল। সাকিব নিজের প্রথম ওভারেই ২৫ রান করা কোহলিকে বোল্ড করে দেখিয়ে দিয়েছেন সাজঘরের পথ।
হলো না বাংলাওয়াশ

দুই উইকেট পড়লেই ধোনি আসেন। তিন উইকেট পড়লে রাইডু। দুজনের ব্যাটিং ছিল পরিশ্রমী ক্রিকেটারের টিকে থেকে এগিয়ে যাওয়ার লড়াই। ধাওয়ানের বিদায়ের পর তাদের জুটি গড়ে ওঠে। দুই প্রান্ত থেকেই আসছিলো রান। কিন্তু টাইগার বোলাররা চাপের মধ্যে রেখেছিল দুই ব্যাটসম্যানকে। এর মধ্যে লড়ে গেছেন ওই দুজন। ফিফটি তুলে নেন অধিনায়ক ধোনি। ফিফটির দোরগোড়ায় গিয়ে দূর্ভাগ্যজনকভাবে রাইডু আউট। ৪৪ রানের সময় মাশরাফির বল প্যাডে লেগে লিটনের হাতে জমা পড়লো। আম্পায়ার এনামুল হক আউট দিলে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে ফেরেন রাইডু। ভাঙে ৯৩ রানের জুটি।
ধোনি তখন বাংলাদেশের গলার কাটার মতো। কিন্তু মাশরাফির একটি স্লোয়ার  তুলে মারতে গেলেন। মুস্তাফিজ আর ধোনির বোঝাপড়াটা তখনো বাকি ছিলো! সামনে ঝাপিয়ে পড়ে অসাধারণ এক ক্যাচ নিয়েছেন মুস্তাফিজ। ৬৯ রান করে বিদায় নেন ধোনি। তবে শেষের গল্পটা সুরেশ রাইনার। দ্রুত গতিতে রান তুলে দলের রানকে ৩০০ পার করে দিয়েছেন। কিন্তু তিনিও শিকার হয়েছেন মুস্তাফিজের। ২১ বলে ৩৮ রান করে বাঁ হাতি পেসারের দ্বিতীয় শিকার হয়েছেন রাইনা। ওটা ছিলো মুস্তাফিজের শেষ ওভার! একাধিক রেকর্ড দিয়েই বোলিং শেষ করেছেন মুস্তাফিজ। ১০ ওভারে ৫৭ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন। তাতে ৩ ম্যাচের সিরিজে তার উইকেট হয়েছে ১৩টি। ওয়ানডে সিরিজে অভিষেকে সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার যৌথ বিশ্ব রেকর্ড এখন তার। ৩ ম্যাচের সিরিজে অভিষেকে সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার একক বিশ্ব রেকর্ডও মুস্তাফিজের। সেই সাথে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার একক বিশ্ব রেকর্ডটা তারই।