কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে সিলেটের বাজারে শাক-সবজির সংকট বেশি। আর এই সংকটের কারণেই দাম আকাশচুম্বী। ৩৫ টাকার নিচে কেজি নেই কোনো সবজির। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদা থাকলেও সবজির সংকট চলছে। এ কারণে বাজারেই দাম বেশি। অপরদিকে বাজারে বেগুনের দাম প্রতিকেজি ২০ টাকা বেড়েছে। এ অবস্থা চলছে গত এক সপ্তাহ ধরে। গতকাল থেকে পুরোপুরি ভাবেই রমজানের প্রস্তুতি শুরু হচ্ছে। বাজারের দাম বেশি হওয়ায় জোড়াতালি দিয়েই সিলেটের মানুষরা রমজানের প্রস্তুতি শুরু করেছেন। শাক-সবজির বাজারের এই যখন অবস্থা তখন মাছের বাজারে আগুন ঝরছে। সিলেটের পাইকারি মাছের আড়ৎ নগরীর কাজিরবাজার। গতকাল কাজিরবাজারের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, কয়েক দিন আগে বাজারে যে রুই মাছ কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা দরে সেটি গতকাল বিক্রি হয়েছে ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা দরে। আর খাল-বিলের মাছ বাজারে নেই বললেই চলে। ফলে অনেকেই বেশি দরে মাছ কিনে চাহিদা মেটাতে পারছেন না। একই অবস্থা মাংসের বাজারে। গরুর মাংসের দাম দিন দিন বাড়ছেই। পোল্ট্রি মোরগের দামও বেড়েছে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা দরে। সিলেটের ভোক্তারা জানিয়েছেন, সিলেটের বাজারে কোন মনিটরিং নেই। ইচ্ছে মতো দাম হাঁকিয়ে বিকিকিনি চলছে। গতকাল পর্যন্ত সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিংয়ের কোন কার্যক্রম শুরু হয়নি। সিলেটের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গেলো সপ্তাহে কাঁচামরিচের দাম ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা। গতকাল থেকে বাজারে কাঁচামরিচের দাম বাড়া শুরু হয়েছে। বিকালে সিলেটের বাজারে কাঁচামরিচ ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছিল। জালি কুমড়া গত সপ্তাহে ছিল ২৫ টাকা, গতকাল ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ঝিঙ্গা ৩৫ টাকা, মুলা ৩৫ টাকা, টমেটো ৫০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, চিচিংগা ৩৫ টাকা, গাঁজর ৪৫ টাকা, কাকরোল ৩০ টাকা, পটল ২৫ টাকা, বরবটি ৩৫ টাকা, মুকি ৪০-৪৫ টাকা, বেগুন ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ধনেপাতা প্রতি কেজিতে ৪০ টাকা করে বেড়ে গেছে। বর্তমানে ২শ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে ধনেপাতা। টানা বৃষ্টিপাতের কারণেও পণ্যের দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছে কাঁচামালের ব্যবসায়ীরা। তবে, সিলেটের পাইকারি আড়তে এ দাম কিছুটা কম। পাইকারি ও কাঁচাবাজারে মনিটরিং না থাকার কারণে ইচ্ছে মতো দামে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ক্রেতা সেলিম আহমদ। নগরীর বন্দরবাজারে পণ্য ক্রয়ের সময় তিনি অভিযোগ করেন, কোন পণ্য কত টাকায় বিক্রি করা হবে সেটি নির্ধারণ করার কেউ নেই। মনিটরিংয়ের কেউ নেই। এ কারণে সিলেটের বাজারে হ-য-ব-র-ল অবস্থা। সিলেটের কাজির বাজারে দোকানি তবারক মিয়া জানিয়েছেন, বর্ষার মওসুম হওয়ায় বাজারে সবজির সংকট বেশি। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কোন সবজিই তারা পান না। বেশিরভাগ সবজিই সিলেটের বাইরে থেকে নিয়ে আসা হয়। এ কারণে দাম বেশি হচ্ছে। তবে, বৃষ্টি কমে গেলে দাম সহনীয় পর্যায়ে পৌঁছাবে বলে জানান তিনি। সিলেটে মাছের বাজারও অস্থির। দেশী মাছের দাম আকাশচুম্বী। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন মাছের মওসুম না থাকায় দাম কিছুটা বেড়েছে। ইলিশের কেজি সর্বনিম্ন ৮শ’ থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। টেংরা ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা, মলা ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা, তেলাপিয়া ১শ’ ৪০ থেকে ১শ’ ৮০ টাকা, ইন্ডিয়ান রুই ২শ’ থেকে ২শ‘ ২৫ টাকা, বড় রুই আড়াইশ’ টাকা, ইন্ডিয়ান বোয়াল ৪শ’ টাকা, গলদা চিংড়ি ৭শ’ ও মাঝারি সাইজের চিংড়ি ৫শ’ টাকা, টেংরা ৪শ’ টাকা, ফিশারির কৈ ২শ’ থেকে ২৫০ টাকা, ফিশারির শিং ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা, বাইম ৫শ’ টাকা, ইন্ডিয়ান বাইম ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সিলেটের কাজিরবাজার মৎস্য আড়ৎদার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আহমদ জানিয়েছেন, স্থায়ীভাবে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। আমদানি করা মাছেই চাহিদা পূরণ করতে হচ্ছে। এ কারণে দাম বেশি হচ্ছে। তবে, পাইকারি আড়ৎদার সর্বনিম্ন লাভে মাছ বিক্রি করছেন। খুচরা বাজারে সে মাছ বেশি দামে বিক্রি করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। সে জন্য বাজার মনিটরিং প্রয়োজন। প্রায় দুই মাস আগে সিলেটের বাজারে গরুর মাংসের কেজি বিক্রি হয়েছে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা দরে। এই দাম এখন কেজিতে একশ টাকা বেড়েছে। গরুর মাংস প্রতি কেজি ৩৩০-৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত থেকে গরু আমদানি শুরু না হলে রমজানে দাম আরও বাড়তে পারে। এ ছাড়া, খাসি ৪শ’ ২০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি ব্রয়লার ১শ‘ ৪৫ টাকা ও লাল লেয়ার মুরগি সাড়ে ৩শ’ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। দেশী ডিম প্রতি হালি ৪৫ টাকা এবং ব্রয়লার ডিম ৩২-৩৩ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে পিয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে অন্তত ৮ টাকা। গত সপ্তাহে ৩০ থেকে ৩২ টাকা বিক্রি হলেও গতকাল বিক্রি হয়েছে ৩৮ থেকে ৪০ টাকা দামে। আদা ছিল ১শ’ ২০ টাকা , তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১শ’ ৩৫ টাকায়। রসুন ছিল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা, দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১শ’ থেকে ১শ’ ৫ টাকায়। ছোলা ছিল ৫২ টাকা। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। এদিকে, সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবিব গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, দুই দিন আগে সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিংয়ের বিষয়ে বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা ছাড়া ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে সিদ্বান্ত হয়েছে গত বছরের সঙ্গে মিল রেখে এবারও বাজারে দাম নির্ধারণ হবে। বিশেষ করে গরু, খাসি ও মুরগের মাংসের দাম যাতে না বাড়ে সে বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এরপরও আজ-কালের মধ্যে সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মনিটরিং করা শুরু হবে। আর দামে গলদ থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা দাম স্থিতিশীল রাখার আশ্বাস দিয়েছেন।
সংবাদ শিরোনাম
বেগুনে আগুন
- Reporter Name
- আপডেট টাইম : ০৯:৪৫:১৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ জুন ২০১৫
- ৩০৫ বার
Tag :
জনপ্রিয় সংবাদ