ঢাকা ০৫:২৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পাহাড়ে রাম্বুটান চাষে চিকিৎসকের সফলতা, নতুন সম্ভাবনা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৫৫:৫১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫
  • ১৮ বার

পাহাড়ের ঢালু অংশজুড়ে সারি সারি গাছ; সেগুলোয় ঝুলছে থোকায় থোকায় হলুদ এবং লাল রঙের রাম্বুটান। গাছে গাছে বিদেশি ফলটির এমন ফলন পাহাড়ে স্বপ্ন দেখাচ্ছে নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার।

খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলা সদরের বিহার টিলা গ্রামে রাম্বুটান ফলের এ বাগানের উদ্যোক্তা মহালছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক আকেইপ্রু চৌধুরী।

২০২১ সালে শখের বসে বাগানটি শুরু করলেও সাফল্যের মুখ দেখায় এখন বাণিজ্যিকভাবেও রাম্বুটান চাষ শুরুর কথা ভাবছেন তিনি।

সরেজমিনে মহালছড়ির সবচেয়ে বড় এই রাম্বুটান বাগান ঘুরে দেখা যায়– মাঝারি আকৃতির গাছগুলো অধিকাংশেই প্রচুর পরিমাণে ফল এসেছে। থোকায় থোকায় ধরা সেসব ফল দেখতে কিছুটা লিচুর মত।

গাছ থেকে ফল ছিড়ে খেয়ে দেখা যায় সেগুলো বেশ মিষ্টি ও সুস্বাদু। কিছু গাছে আছে অপরিপক্ক সবুজ ফল।

চিকিৎসক আকেইপ্রু বলেন, “আমি ২০২১ সালে ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইন ভ্রমণে যাই। সেখানে রাম্বুটান দেখে আমাদের দেশেও সেটি রোপণের স্বপ্ন দেখি।

“তাই রাম্বুটান ফলের চারা কিনে দেশে নিয়ে আসি। পরবর্তীতে কলম তৈরি করে বাড়ির পাশে পতিত ঢালু জমিতে রোপণ করি।

তিনি বলেন, পরে বিভিন্ন দেশ থেকে রাম্বুটানের চারা সংগ্রহ করে বাড়ির পাশের ঢালু জমিতে প্রাথমিকভাবে ২২০টি চারা রোপণ করি। রোপণের মাত্র চার বছরের মাথায় এর মধ্যে ১৮০টি গাছেই পরিপূর্ণভাবে ফলন হয়েছে। বাগানজুড়ে এখন ফলভর্তি রাম্বুটান গাছ।

ফলটি ভিটামিন এ, সিসহ বিভিন্ন ভিটামিন ও পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ জানিয়ে এ চিকিৎসক বলেন, পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য শখের বসে বাগান শুরু করেছিলাম। কিন্তু ভালো ফলন হওয়ায় আমি আশাবাদী হয়ে উঠি। বাণিজ্যিক সম্ভাবনা থাকায় আরও প্রায় ১০ একর জমিতে রাম্বুটানের চারা রোপণ করেছি।

তিনি বলেন, আমার বাগানে পাঁচটি বিদেশি জাতের রাম্বুটান রয়েছে। এ গুলো হল- ইন্দোনেশিয়ান বিনজাই, থাইল্যান্ডের রংবিয়ান, ফিলিপাইনের কুইজন, মালয়েশিয়ান স্কুল বয় বা আনাক সেকুলা ও ইন্ডিয়ান জাতের এন-১৮। এগুলো খুবই জনপ্রিয় জাত। এতো জাতের গাছ দেশের অন্য কোথাও নেই।

বাগানে রাম্বুটান গাছের পরিচর্যা করছেন চিকিৎসক আকেইপ্রু চৌধুরী।

ফলটি চাষ অর্থনৈতিক ভাবে লাভজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাম্বুটানের পরিচর্যা অন্যান্য ফলের তুলনায় কম। সার এবং কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় না। কেবল নিয়মিত সেচ দেওয়ার মাধ্যমে পাহাড়ে ঢালু জমিতে এটি চাষ উপযোগী।

অন্যদিকে রাম্বুটানের বাজারমূল্য বেশি। খোলা বাজারে প্রতি কেজি বিক্রয় হয় প্রায় এক হাজার ৪০০ টাকায়। সুপারশপে প্রায় আড়াইহাজার টাকায় ফলটি বিক্রি হয়। অর্থাৎ রাম্বুটানের চাষ বেশ লাভজনক।

পাহাড়ে আলো ছড়াচ্ছে বিদেশি ফল রাম্বুটান

তাই যারা বেকার যুবক রয়েছে তারা রাম্বুটান চাষ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারে বলে জানান এই চিকিৎসক।

এদিকে চিকিৎসক আকেইপ্রুর বাগান দেখে অনেকেই রাম্বুটান চাষে আগ্রহী হচ্ছে।

স্থানীয় তরুণ সুনীল চাকমা, পরেশ ত্রিপুরা, রফিকুল ইসলাম সাগর বলেন, রাম্বুটানের বাজারমূল্য বেশ ভালো। পাহাড়ে চাষ উপযোগী। এছাড়া উৎপাদন খরচও কম। কৃষি উদ্যোক্ততা ও চিকিৎসক আকেইপ্রু চৌধুরীর বাগান দেখে তাদের খুবই ভালো লাগছে।

এই তরুণরা বলেন, তাদের বাড়িতে যে পতিত জমি রয়েছে তাতে তারা রাম্বুটানের বাগান গড়ে তোলার সিন্ধান্ত নিয়েছেন। কারণ রাম্বুটানে সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় না। ফলে উৎপাদন খরচও কম।

পাহাড়ে মাটি ও আবহাওয়া বিদেশি ফল রাম্বুটান চাষের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী বলে জানিয়েছেন পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মালেক ।

তিনি বলেন, ‘ফল পাহাড়ি কৃষির মেরুদণ্ড। এখানে কৃষকরা বিদেশি রাম্বুটান চাষ করছে। বিদেশি জাতের পাশাপাশি আমাদের বারি রাম্বুটান-১ পাহাড়ের মাটিতে চাষের উপযোগী। রাম্বুটান চাষের জন্য যে মাটি ও পরিবেশ দরকার তা পার্বত্য অঞ্চলে রয়েছে।

পার্বত্য এলাকার মাটি অম্লীয় হওয়ায় পাহাড়ের ঢালু জমি ও পর্যাপ্ত সূর্যের আলো রয়েছে এমন স্থানে রাম্বুটান চাষের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এমন জমি রাম্বুটান চাষের বিশেষভাবে উপযুক্ত ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

পাহাড়ে রাম্বুটান চাষে চিকিৎসকের সফলতা, নতুন সম্ভাবনা

আপডেট টাইম : ১০:৫৫:৫১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫

পাহাড়ের ঢালু অংশজুড়ে সারি সারি গাছ; সেগুলোয় ঝুলছে থোকায় থোকায় হলুদ এবং লাল রঙের রাম্বুটান। গাছে গাছে বিদেশি ফলটির এমন ফলন পাহাড়ে স্বপ্ন দেখাচ্ছে নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার।

খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলা সদরের বিহার টিলা গ্রামে রাম্বুটান ফলের এ বাগানের উদ্যোক্তা মহালছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক আকেইপ্রু চৌধুরী।

২০২১ সালে শখের বসে বাগানটি শুরু করলেও সাফল্যের মুখ দেখায় এখন বাণিজ্যিকভাবেও রাম্বুটান চাষ শুরুর কথা ভাবছেন তিনি।

সরেজমিনে মহালছড়ির সবচেয়ে বড় এই রাম্বুটান বাগান ঘুরে দেখা যায়– মাঝারি আকৃতির গাছগুলো অধিকাংশেই প্রচুর পরিমাণে ফল এসেছে। থোকায় থোকায় ধরা সেসব ফল দেখতে কিছুটা লিচুর মত।

গাছ থেকে ফল ছিড়ে খেয়ে দেখা যায় সেগুলো বেশ মিষ্টি ও সুস্বাদু। কিছু গাছে আছে অপরিপক্ক সবুজ ফল।

চিকিৎসক আকেইপ্রু বলেন, “আমি ২০২১ সালে ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইন ভ্রমণে যাই। সেখানে রাম্বুটান দেখে আমাদের দেশেও সেটি রোপণের স্বপ্ন দেখি।

“তাই রাম্বুটান ফলের চারা কিনে দেশে নিয়ে আসি। পরবর্তীতে কলম তৈরি করে বাড়ির পাশে পতিত ঢালু জমিতে রোপণ করি।

তিনি বলেন, পরে বিভিন্ন দেশ থেকে রাম্বুটানের চারা সংগ্রহ করে বাড়ির পাশের ঢালু জমিতে প্রাথমিকভাবে ২২০টি চারা রোপণ করি। রোপণের মাত্র চার বছরের মাথায় এর মধ্যে ১৮০টি গাছেই পরিপূর্ণভাবে ফলন হয়েছে। বাগানজুড়ে এখন ফলভর্তি রাম্বুটান গাছ।

ফলটি ভিটামিন এ, সিসহ বিভিন্ন ভিটামিন ও পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ জানিয়ে এ চিকিৎসক বলেন, পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য শখের বসে বাগান শুরু করেছিলাম। কিন্তু ভালো ফলন হওয়ায় আমি আশাবাদী হয়ে উঠি। বাণিজ্যিক সম্ভাবনা থাকায় আরও প্রায় ১০ একর জমিতে রাম্বুটানের চারা রোপণ করেছি।

তিনি বলেন, আমার বাগানে পাঁচটি বিদেশি জাতের রাম্বুটান রয়েছে। এ গুলো হল- ইন্দোনেশিয়ান বিনজাই, থাইল্যান্ডের রংবিয়ান, ফিলিপাইনের কুইজন, মালয়েশিয়ান স্কুল বয় বা আনাক সেকুলা ও ইন্ডিয়ান জাতের এন-১৮। এগুলো খুবই জনপ্রিয় জাত। এতো জাতের গাছ দেশের অন্য কোথাও নেই।

বাগানে রাম্বুটান গাছের পরিচর্যা করছেন চিকিৎসক আকেইপ্রু চৌধুরী।

ফলটি চাষ অর্থনৈতিক ভাবে লাভজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাম্বুটানের পরিচর্যা অন্যান্য ফলের তুলনায় কম। সার এবং কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় না। কেবল নিয়মিত সেচ দেওয়ার মাধ্যমে পাহাড়ে ঢালু জমিতে এটি চাষ উপযোগী।

অন্যদিকে রাম্বুটানের বাজারমূল্য বেশি। খোলা বাজারে প্রতি কেজি বিক্রয় হয় প্রায় এক হাজার ৪০০ টাকায়। সুপারশপে প্রায় আড়াইহাজার টাকায় ফলটি বিক্রি হয়। অর্থাৎ রাম্বুটানের চাষ বেশ লাভজনক।

পাহাড়ে আলো ছড়াচ্ছে বিদেশি ফল রাম্বুটান

তাই যারা বেকার যুবক রয়েছে তারা রাম্বুটান চাষ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারে বলে জানান এই চিকিৎসক।

এদিকে চিকিৎসক আকেইপ্রুর বাগান দেখে অনেকেই রাম্বুটান চাষে আগ্রহী হচ্ছে।

স্থানীয় তরুণ সুনীল চাকমা, পরেশ ত্রিপুরা, রফিকুল ইসলাম সাগর বলেন, রাম্বুটানের বাজারমূল্য বেশ ভালো। পাহাড়ে চাষ উপযোগী। এছাড়া উৎপাদন খরচও কম। কৃষি উদ্যোক্ততা ও চিকিৎসক আকেইপ্রু চৌধুরীর বাগান দেখে তাদের খুবই ভালো লাগছে।

এই তরুণরা বলেন, তাদের বাড়িতে যে পতিত জমি রয়েছে তাতে তারা রাম্বুটানের বাগান গড়ে তোলার সিন্ধান্ত নিয়েছেন। কারণ রাম্বুটানে সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় না। ফলে উৎপাদন খরচও কম।

পাহাড়ে মাটি ও আবহাওয়া বিদেশি ফল রাম্বুটান চাষের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী বলে জানিয়েছেন পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মালেক ।

তিনি বলেন, ‘ফল পাহাড়ি কৃষির মেরুদণ্ড। এখানে কৃষকরা বিদেশি রাম্বুটান চাষ করছে। বিদেশি জাতের পাশাপাশি আমাদের বারি রাম্বুটান-১ পাহাড়ের মাটিতে চাষের উপযোগী। রাম্বুটান চাষের জন্য যে মাটি ও পরিবেশ দরকার তা পার্বত্য অঞ্চলে রয়েছে।

পার্বত্য এলাকার মাটি অম্লীয় হওয়ায় পাহাড়ের ঢালু জমি ও পর্যাপ্ত সূর্যের আলো রয়েছে এমন স্থানে রাম্বুটান চাষের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এমন জমি রাম্বুটান চাষের বিশেষভাবে উপযুক্ত ।