ঢাকা ০৬:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাজনীতি বদলের স্বপ্ন দেখছেন তারেক রহমান,পারবেন তো? আমার বিশ্বাস আমার নেতা পারবেন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০১:১১:০৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৫
  • ১২ বার

এনাম আবেদীনঃ গতকয়েক দশকে দেশের রাজনীতিতে অনেক উত্থান-পতনের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশকে তথা দেশের রাজনীতিকে বদলে দেওয়ার একধরনের স্বপ্ন দেখছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কিন্তু তিনি কতটা সফল হবেন বা হতে পারবেন, এ নিয়ে তার দলের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি সুধী সমাজের মধ্যেও নানা আলোচনা আছে।

বলা হচ্ছে, দুর্নীতিমুক্ত গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়া এখন সময়ের দাবি, এই উপলব্ধি তারেক রহমানের হয়েছে। অনেক ঘটনার পর দেশে একধরনের ‍ন্যারেটিভও তৈরি হয়েছে, গত ৫০ বছর বাংলাদেশ যেভাবে চলেছে সেভাবে চলতে পারে না। পরিবর্তন অবশ্যই দরকার। কিন্তু সেটি কী প্রক্রিয়ায় এবং কাদের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে, সে বিষয়ে তারেক রহমানের সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয় রয়েছে। বিশেষ করে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে নেতৃত্ব বাছাইয়েরর ক্ষেত্রে তারেক রহমানকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অনেক সতর্ক থাকতে হবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ মনে করেন, “তারেক রহমানকে সম্রাট আকবরের মতো ‘নবরত্ন’ বাছাই করে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হবে। পাশাপাশি দুর্জনদের পরিত্যাগ করতে হবে।”

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দিলারা চৌধুরীর মতে, ‘বিএনপির জন্য এবার ঐতিহাসিক এবং শেষ সুযোগ। সফল হলে একটি উদারপন্থি এবং গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপি টিকে যাবে। আর ব্যর্থ হলে বিএনপি শেষ, আমরাও শেষ। তাই ভুল করার সুযোগ নেই।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, ‘ভালো কিছু করতে চাইলে সৎ ও যোগ্য লোক দলে আনতে হবে এবং তাদের মনোনয়ন দিতে হবে। নেতৃত্ব বাছাই প্রক্রিয়ায় ভুল করা যাবে না।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মানবাধিকারবিষয়ক উপদেষ্টা ও দলটির মিডিয়া সেলের সদস্য ব্যারিস্টার আবু সায়েম মনে করেন, তারেক রহমান সাহেব সতর্কতার সঙ্গে পা ফেলছেন। তিনি পারবেন। কারণ তার ভিশন রয়েছে।

ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, তারেক রহমান এক-এগারোর কঠিন সময় দেখেছেন। সে সময় কে তার আপন, কে পর, তা প্রত্যক্ষ করেছেন। এরপর দেখেছেন ২০১৪ ও ২০১৫ সালের আন্দোলন থেকে শুরু করে ২০১৮ ও ২০২৪ সালের ক্রাইসিস তথা প্রশ্নবিদ্ধ তিনটি নির্বাচন। দেখেছেন গত সাড়ে ১৫ বছরে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের ঘটনা। এক-এগারোর পর তার নিজেরও অনেক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। এসব ঘটনাকে মানুষ চেনার ইন্ডিকেটর বলে ধরা হয়। ওই সময় বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী যেমন বিদেশে চলে গেছেন, আবার কেউ কেউ সংস্কারপন্থিদের তালিকায় নামও লিখিয়েছেন। কিন্তু এমন পরিস্থিতির মধ্যে অনেকেই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান তথা বিএনপির পক্ষে সোচ্চার ছিলেন। তারা জেল-জুলুম সহ্য করেছেন। অনেকে গুম হয়েছেন। আন্দোলন করতে গিয়ে অনেকে পঙ্গু হয়েছেন, কেউ ব্যবসা ও চাকরি হারিয়েছেন। আবার অনেকে ঘাপটি মেরে, রং বদল করে টিকে থাকার চেষ্টাও করেছেন। কেউ কেউ বিএনপির সমালোচনায় মুখর হলেও এক-এগারোর সময় মামলায় ফেঁসে গিয়ে বিএনপির পক্ষে থাকতে বাধ্য হয়েছেন। রসিকতা করে এদের ‘আটকে পড়া পাকিস্তানি’ বলে কেউ কেউ অভিহিত করে থাকেন।

কিন্তু এসব পক্ষের মধ্যে একটি অংশ কিছু ‘পাওয়ার জন্য’ এখনই মরিয়া হয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন। তাদের কেউবা ক্ষমতায় গেলে কী পাওয়া যাবে, তার হিসাব-নিকাশ করছেন এবং আগাম পথ তৈরির উপায় খুঁজছেন। আবার কেউ কেউ নেতাদের বাসায় বাসায় গিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে, বিএনপির জন্য কতটা ‘ত্যাগ’ শিকার করেছেন তারা! আলোচনা আছে, এদের কারণে ইতোমধ্যে বিএনপির কিছুটা দুর্নাম ছড়িয়েছে। পাশাপাশি ক্ষমতায় গেলেও তারা ঝাঁপিয়ে পড়বেন এমন আলোচনাও আছে। ফলে ক্ষমতায় গেলে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত দলের নেতা-কর্মীদের লাগাম তারেক রহমান কতটা সফলতার সঙ্গে টেনে ধরতে পারবেন, তা নিয়ে নানা আলোচনা আছে। ইতোমধ্যে কিছুটা স্পষ্ট হতে শুরু করেছে, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ‌‘‌স্টিয়ারিং’ কাদের হাতে থাকবে। এটা যাদের হাতে থাকবে বলে জনমনে দৃশ্যমান হচ্ছে, তাদের ভাবমূর্তি কেমন বা তারা কারা ইতোমধ্যে এ নিয়ে আলোচনাও শুরু হয়েছে। এ কারণেই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে, তারেক রহমান শেষ পর্যন্ত সফল হতে পারবেন তো?

যদিও তারেক রহমানকে এখন যারা খুব কাছে থেকে দেখছেন তারা বলছেন, দুর্নীতি উপড়ে ফেলার বিষয়ে এবার তিনি বদ্ধপরিকর। চাঁদাবাজ ও দখলদারদের এবারে তিনি ছাড় দিচ্ছেন না। ইতোমধ্যে গত সাত মাসে ৮০০ জনকে বহিষ্কার, ৫০ জনের পদ স্থগিতসহ বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের মোট ৩ হাজার ২০০ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে তিনি সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছেন। তবে এ অবস্থান ধরে রাখতে হলে তাকে আরও কঠোর হতে হবে। নেতৃত্বের জন্য নির্লোভ ও যথাযথ মানুষকে তার বেছে নিতে হবে।

জানা গেছে, চাঁদাবাজ ও দখলদারদের বিষয়ে ঢাকা থেকে তারেক রহমানের কাছে যেসব অভিযোগ যাচ্ছে, তিনি তা খতিয়ে দেখে সে অনুযায়ী নেতা-কর্মীদের ‘আমলনামা’ তৈরি করছেন। এর মাধ্যমে নেতৃত্ব বাছাই করার জন্য তার ঘনিষ্ঠদের কেউ কেউ তাকে পরামর্শও দিচ্ছেন।

কিন্তু আলোচনা উঠেছে, মানবিক, বৈষম্যহীন ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হলে একজন দক্ষ রাষ্ট্রনায়ক (স্টেটসম্যান) দরকার। দরকার রাজনৈতিক দর্শনের পাশাপাশি দেশ গড়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা। প্রয়োজন দক্ষ পরামর্শক কাঠামো বা পরিষদ; যারা অগ্রসর চিন্তাচেতনার মধ্য দিয়ে যথাযথ ‘ন্যারেটিভ’ তৈরি করবেন। তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠরা বলছেন, দুর্নীতি বন্ধ করার জন্য দেশে যে পরিবর্তন দরকার, এমন ‘ন্যারেটিভ’ দেশে ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে তারেক রহমান ‘কনভিন্সড’। তার নিজের মধ্যেও এই ধরনের চেতনাবোধ তৈরি হয়েছে। কিন্তু তিনি ‌‘কনফিউজড’ বা বিভ্রান্ত হয়ে যান কি না, সে প্রশ্নও আছে। কারণ, তার চারপাশে এখন অনেক মানুষ ভিড় করছেন; কেউ ভালো পদ, কেউ ভবিষ্যতে মনোনয়ন আবার কেউবা ভবিষ্যতে সরকারের আনুকূল্য পাওয়ার আশায়। এসবের মধ্য থেকেই তারেক রহমানকে সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব বেছে নিতে হবে। আর এই বাছাই প্রক্রিয়ার যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে সেখানে তাকে উত্তীর্ণ হতে হবে। কিন্তু তিনি পারবেন কি না, সে প্রশ্ন ইতোমধ্যে সামনে এসেছে।

ড মাহবুব উল্লাহ.

সম্রাট আকবরের মতো ‘নবরত্ন’ গঠন করে তারেক রহমানকে দেশ পরিচালনা করতে হবে। মাত্র ১৪ বছর বয়সে সিংহাসনে বসে একটা সময় পর্যন্ত আকবর তার অভিভাবক বৈরাম খাঁর মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তৎকালীন ভারতের শ্রেষ্ঠ পণ্ডিতদের সমন্বয়ে তিনি রাজসভা গঠন করেছিলেন। তাদের বুদ্ধি ও পরামর্শ অনুযায়ী তিনি রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন। রাষ্ট্র পরিচালনায় কর্মসূচি গ্রহণ, সংস্কার করা এবং বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ তাদের পরামর্শে নেওয়া হয়েছে। তারেক রহমানকেও দেশের সবচেয়ে প্রজ্ঞাবান, মেধাসম্পন্ন, গুণীজন ও সম্মানিত লোকদের পরামর্শ গ্রহণের পথ অনুসরণ করতে হবে। বিশেষ করে নিজস্ব স্বার্থ নিয়ে চিন্তা করেন না, দেশপ্রেমিক- এমন গুণীদের সঙ্গে নিয়ে তাদের উপদেশ, পরামর্শ, মেধা, জ্ঞান, প্রজ্ঞাকে ব্যবহার করতে হবে। দেশের বয়স্ক, মুরুব্বি এবং গুণীজনদের সম্মান দিতে হবে। ছোটদের ভালোবাসতে হবে। দুর্জনদের পরিত্যাগ করতে হবে। পাশাপাশি ইতিহাস থেকে তাকে শিক্ষা নিতে হবে। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়াটা বিএনপির পাশাপাশি আওয়ামী লীগের জন্যও প্রযোজ্য। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও এরশাদের আমলসহ অন্যান্য দলের ক্ষেত্রেও অতীতে যেসব ভুল-ভ্রান্তি ঘটেছে, সেখান থেকে শিক্ষা নিতে হবে।

সাময়িক বা অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য নেতৃত্ব বাছাই করা যেতে পারে। তবে চূড়ান্তভাবে দলের নেতৃত্ব দলের সদস্যদের দ্বারাই নির্বাচিত হওয়া উচিত।

অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী

স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে তারেক রহমানকে তার দলে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করতে হবে। তার দলের মধ্যে অনেক লোক ঢুকে গেছেন যারা তার স্বপ্নকে শেয়ার করেন না। তারা আওয়ামী লীগের মতোই কীভাবে লুটপাট করা যাবে, কে মন্ত্রী হবেন, কে কত টাকা খাবেন, এসব চিন্তায় ব্যস্ত। দলের মধ্য থেকে এগুলো বের করে দলকে ক্লিন করতে হবে। কারণ ইতোমধ্যে কিছু মানুষ বিএনপির ওপরে কিছুটা ক্ষুব্ধ হতে শুরু করেছে।

তবে শুনেছি, তারেক রহমান দলের মধ্যে একদল বুদ্ধিদীপ্ত তরুণকে কাছে টানছেন যারা জিয়াউর রহমানের রাজনীতির চর্চা করতে চাইছেন। এটি শুভ লক্ষণ। তাকে তরুণ সমাজের আশা-আকাঙ্ক্ষাও বিবেচনায় নিতে হবে। কারণ তরুণরাও দুর্নীতি বন্ধ, আইনের শাসন ও সামাজিক ন্যায়বিচারের কথা বলছেন। সুখী-সমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের কথা বলছেন।

বিএনপির সিনিয়র দু-একজন নেতা এখন যে ধরনের কথা বলছেন, তাতে মনে হচ্ছে তারা জিয়াউর রহমানের রাজনীতিটা করছেন না। আশার কথা, দেশের বাইরে থেকে ফোন করেও অনেকে এখন তারেক রহমানের স্বপ্নের কথা বলছেন। তাই যারা এই স্বপ্নটা ধারণ করেন তাদের সঙ্গে নিতে হবে। একদল প্রতিশ্রুতিশীল নেতৃত্ব লাগবে যারা এই বিশ্বকে বোঝেন। এই নেতৃত্ব বাছাই করাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যেমন ড. মোহাম্মদ ইউনূস সাহেব অনেক ভালো লোক। উনি দেশের জন্য অনেক কাজ করছেন। কিন্তু তার টিম সিলেকশন পুরোপুরি ভালো হয়নি। সে কারণেই তিনি অনেক ক্ষেত্রে সফল হচ্ছেন না। এ জন্যই টিম সিলেকশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারেক রহমানের তার মায়ের পথ অনুসরণ করে তার বাবার পলিটিকসে ফেরত যাওয়া উচিত। বাংলাদেশের আপামর জনগণ কী চায়? প্রথমত, ভারতের আধিপত্য আমরা মানব না। দ্বিতীয়ত, দুর্নীতি দেশের জনগণ আর সহ্য করতে পারছে না। এটা বন্ধ করতে না পারলে কিচ্ছু হবে না। আইনের শাসন, বিচার বিভাগ তাকে শক্ত হাতে পরিচালনা করতে হবে। এগুলোর বাস্তবায়ন ঘটলে তার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।

বিএনপি হয়তো ক্ষমতায় আসবে। কিন্তু দুর্নীতি বন্ধ না হলে টিকতে পারবে না। আজকের আওয়ামী লীগের পরিণতির মতোই দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে বিএনপিও ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। তাই বিএনপির জন্য এবারই শেষ সুযোগ।

বদিউল আলম মজুমদার

তারেক রহমানের স্বপ্নকে স্বাগত জানাই। উনি ভালো কিছু করতে চাইলে সংশ্লিষ্ট সবার তাকে সাহায্য করা উচিত। তবে অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে মানুষের মনে কিছুটা সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে; কাজের মধ্য দিয়ে সেগুলো দূর করা উচিত। শেখ হাসিনাও দিন বদলের সনদ, দিন বদলের স্বপ্ন দেখিয়ে ক্ষমতায় এসে ঠিক তার বিপরীতে অবস্থান নিয়ে দেশ চালিয়েছেন। এসব ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে দিন বদল করতে পারলে দেশের মানুষ তাকে সমর্থন করবে।

শেখ হাসিনা তো ট্রেন বা ট্যাংকে চড়ে ক্ষমতায় আসেননি, সংবিধান বাতিলও করেননি। তিনি স্বৈরাচার হয়েছেন ভোট চুরি ও বিতর্কিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। কিন্তু এই সংবিধান ও রাজনীতির সংস্কৃতি, আচার-আচরণ তাকে স্বৈরাচারী করেছে। আইনি কাঠামো পরিবর্তন, রাজনীতির সংস্কৃতি পরিবর্তন, রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক চর্চা চালু, দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ করতে হবে। আরেকটা বিষয় হলো, সব জায়গায় নির্বাচনে শিল্পপতি দাঁড়াবেন। হু ইজ হি! কেন? তার টাকা আছে এ জন্য তিনি দাঁড়াবেন? রাজনীতিতে এই প্রবণতা বন্ধ করতে হবে।

আমাদের নির্বাচনিব্যবস্থা এবং রাজনীতির অঙ্গনকে পরিচ্ছন্ন করতে হবে। পরিচ্ছন্ন রাজনৈতিক দল গঠন করতে হলে গণতন্ত্রায়ন করতে হবে। শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের থেকে দূরে সরে আসতে হবে। আমার লোক, তোমার লোক, এগুলো বন্ধ করতে হবে। যেসব কারণে অতীতে সরকারগুলো ব্যর্থ হয়েছে, বিশেষ করে শেখ হাসিনার পতন হয়েছে, সেই কারণগুলো চিহ্নিত করে পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করতে হবে।

দেশে সর্বগ্রাসী দুর্নীতির পাশাপাশি স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, আইনের শাসন, মানবাধিকার সবকিছুই ধ্বংস হয়ে গেছে। তাই বিএনপির জন্য এবার বড় টেস্ট। শেখ হাসিনা সুযোগ পেয়েও আওয়ামী লীগকে মুসলিম লীগের মতো বানিয়ে ফেলেছেন। মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি বরং জনগণের রোষানলে পড়েছেন। বিএনপি ক্ষমতায় এসে একই কাজ করলে তাদের প্রতি মানুষের আস্থা থাকবে না।

তরুণ প্রজন্মের আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং মনোভাব বিএনপিকে ধারণ করতে হবে। ২৫ শতাংশ তরুণ ভোটার রয়েছেন। তরুণদের জন্য চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে, শিক্ষার মান বৃদ্ধি করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। বিশেষ করে শিক্ষকসহ পেশাজীবীদের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। এদের কারণেই সর্বস্তরে রাজনীতিকীকরণ হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। শিক্ষকদের রাজনীতি বন্ধ থাকলে শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস হতো না। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ও শিক্ষকরা এক হতো না। রাজনৈতিক ফায়দা ও বিভিন্ন রকমের সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকে এসব প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে গেছে।

ড. ইউনূসকে সবাই চায়। সংস্কারের পরেই সবাই নির্বাচন চায়। তবে বিএনপি দেশের বড় রাজনৈতিক দল। নির্বাচন অবশ্যই হতে হবে। নির্বাচনিব্যবস্থায় ফেরা উচিত। দেশের নির্বাচনিব্যবস্থা ধ্বংসের কারণেই গণ-অভ্যুত্থান হয়েছিল। যদি শেখ হাসিনা ফেয়ার ও ইনক্লুসিভ ইলেকশন করতেন তাহলে মানুষের এত ক্ষোভ তৈরি হতো না। দুর্নীতি ও চুরি করে দেশটাকে একদম শেষ করে দিয়েছেন।

ব্যারিস্টার আবু সায়েম

আমার বিশ্বাস, জনাব তারেক রহমান পারবেন। কারণ তার ভিশন আছে। কাজের ব্যাপক অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাও আছে। তিনি জানেন, বদলাতে হলে কী করতে হবে। তবে আমাদের সবার সহযোগিতা লাগবে। রাষ্ট্র ও সমাজ পরিবর্তনের লড়াই কোনো ছেলেখেলা নয়। এটা দীর্ঘমেয়াদি ও আদর্শিক লড়াই। একা কেউ কখনো এ লড়াইয়ে সফল হতে পারেন না।

দেশ বদলাতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে দুর্বৃত্তের আগ্রাসন থেকে দল ও দেশকে রক্ষা করা। চারদিকে লোভী, দুর্নীতিবাজ, চরিত্রহীন মানুষ কিলবিল করছে। তার ওপরে আছে হোয়াইট কলার ক্রিমিনালরা; যাদের একমাত্র লক্ষ্য অবৈধ উপায়ে অর্থ কামিয়ে বিদেশে পাচার করা। সব দলেই এরা শীর্ষ নেতৃত্বের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খায়। এদের কাছে ঘেঁষতে বা থাকতে দেওয়া যাবে না।

আরও দরকার জাতীয় ঐকমত্য। আমরা যারা হাসিনা রেজিমের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছি, তাদের ঐক্যকে ধরে রাখতে হবে। ফ্যাসিবাদের দোসররা দেশে বিভাজন ও অশান্তি সৃষ্টি করতে তৎপর। তাদের সুযোগ দেওয়া যাবে না। আমাদের নেতা নির্বাচনের পর জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন, যা ইতোমধ্যে ইতিবাচক চিন্তা হিসেবে প্রশংসিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের সবাইকে আন্তরিক হতে হবে। সর্বশেষ বলতে চাই, দেশপ্রেমিক সহযোদ্ধা ছাড়া দেশ বদলানো সম্ভব নয়। দল ও দেশ চালাতে চেয়ারম্যানকে তাই মেধাবী ও যোগ্য নবীন-প্রবীণের সমন্বয় ঘটাতে হবে।

আমি জানি, জনাব তারেক রহমান সতর্কভাবে পা ফেলছেন এবং বিশ্বাস করি, প্রতিটি ইস্যুতে দেশ ও জাতির স্বার্থে তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

রাজনীতি বদলের স্বপ্ন দেখছেন তারেক রহমান,পারবেন তো? আমার বিশ্বাস আমার নেতা পারবেন

আপডেট টাইম : ০১:১১:০৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৫

এনাম আবেদীনঃ গতকয়েক দশকে দেশের রাজনীতিতে অনেক উত্থান-পতনের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশকে তথা দেশের রাজনীতিকে বদলে দেওয়ার একধরনের স্বপ্ন দেখছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কিন্তু তিনি কতটা সফল হবেন বা হতে পারবেন, এ নিয়ে তার দলের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি সুধী সমাজের মধ্যেও নানা আলোচনা আছে।

বলা হচ্ছে, দুর্নীতিমুক্ত গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়া এখন সময়ের দাবি, এই উপলব্ধি তারেক রহমানের হয়েছে। অনেক ঘটনার পর দেশে একধরনের ‍ন্যারেটিভও তৈরি হয়েছে, গত ৫০ বছর বাংলাদেশ যেভাবে চলেছে সেভাবে চলতে পারে না। পরিবর্তন অবশ্যই দরকার। কিন্তু সেটি কী প্রক্রিয়ায় এবং কাদের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে, সে বিষয়ে তারেক রহমানের সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয় রয়েছে। বিশেষ করে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে নেতৃত্ব বাছাইয়েরর ক্ষেত্রে তারেক রহমানকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অনেক সতর্ক থাকতে হবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ মনে করেন, “তারেক রহমানকে সম্রাট আকবরের মতো ‘নবরত্ন’ বাছাই করে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হবে। পাশাপাশি দুর্জনদের পরিত্যাগ করতে হবে।”

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দিলারা চৌধুরীর মতে, ‘বিএনপির জন্য এবার ঐতিহাসিক এবং শেষ সুযোগ। সফল হলে একটি উদারপন্থি এবং গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপি টিকে যাবে। আর ব্যর্থ হলে বিএনপি শেষ, আমরাও শেষ। তাই ভুল করার সুযোগ নেই।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, ‘ভালো কিছু করতে চাইলে সৎ ও যোগ্য লোক দলে আনতে হবে এবং তাদের মনোনয়ন দিতে হবে। নেতৃত্ব বাছাই প্রক্রিয়ায় ভুল করা যাবে না।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মানবাধিকারবিষয়ক উপদেষ্টা ও দলটির মিডিয়া সেলের সদস্য ব্যারিস্টার আবু সায়েম মনে করেন, তারেক রহমান সাহেব সতর্কতার সঙ্গে পা ফেলছেন। তিনি পারবেন। কারণ তার ভিশন রয়েছে।

ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, তারেক রহমান এক-এগারোর কঠিন সময় দেখেছেন। সে সময় কে তার আপন, কে পর, তা প্রত্যক্ষ করেছেন। এরপর দেখেছেন ২০১৪ ও ২০১৫ সালের আন্দোলন থেকে শুরু করে ২০১৮ ও ২০২৪ সালের ক্রাইসিস তথা প্রশ্নবিদ্ধ তিনটি নির্বাচন। দেখেছেন গত সাড়ে ১৫ বছরে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের ঘটনা। এক-এগারোর পর তার নিজেরও অনেক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। এসব ঘটনাকে মানুষ চেনার ইন্ডিকেটর বলে ধরা হয়। ওই সময় বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী যেমন বিদেশে চলে গেছেন, আবার কেউ কেউ সংস্কারপন্থিদের তালিকায় নামও লিখিয়েছেন। কিন্তু এমন পরিস্থিতির মধ্যে অনেকেই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান তথা বিএনপির পক্ষে সোচ্চার ছিলেন। তারা জেল-জুলুম সহ্য করেছেন। অনেকে গুম হয়েছেন। আন্দোলন করতে গিয়ে অনেকে পঙ্গু হয়েছেন, কেউ ব্যবসা ও চাকরি হারিয়েছেন। আবার অনেকে ঘাপটি মেরে, রং বদল করে টিকে থাকার চেষ্টাও করেছেন। কেউ কেউ বিএনপির সমালোচনায় মুখর হলেও এক-এগারোর সময় মামলায় ফেঁসে গিয়ে বিএনপির পক্ষে থাকতে বাধ্য হয়েছেন। রসিকতা করে এদের ‘আটকে পড়া পাকিস্তানি’ বলে কেউ কেউ অভিহিত করে থাকেন।

কিন্তু এসব পক্ষের মধ্যে একটি অংশ কিছু ‘পাওয়ার জন্য’ এখনই মরিয়া হয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন। তাদের কেউবা ক্ষমতায় গেলে কী পাওয়া যাবে, তার হিসাব-নিকাশ করছেন এবং আগাম পথ তৈরির উপায় খুঁজছেন। আবার কেউ কেউ নেতাদের বাসায় বাসায় গিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে, বিএনপির জন্য কতটা ‘ত্যাগ’ শিকার করেছেন তারা! আলোচনা আছে, এদের কারণে ইতোমধ্যে বিএনপির কিছুটা দুর্নাম ছড়িয়েছে। পাশাপাশি ক্ষমতায় গেলেও তারা ঝাঁপিয়ে পড়বেন এমন আলোচনাও আছে। ফলে ক্ষমতায় গেলে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত দলের নেতা-কর্মীদের লাগাম তারেক রহমান কতটা সফলতার সঙ্গে টেনে ধরতে পারবেন, তা নিয়ে নানা আলোচনা আছে। ইতোমধ্যে কিছুটা স্পষ্ট হতে শুরু করেছে, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ‌‘‌স্টিয়ারিং’ কাদের হাতে থাকবে। এটা যাদের হাতে থাকবে বলে জনমনে দৃশ্যমান হচ্ছে, তাদের ভাবমূর্তি কেমন বা তারা কারা ইতোমধ্যে এ নিয়ে আলোচনাও শুরু হয়েছে। এ কারণেই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে, তারেক রহমান শেষ পর্যন্ত সফল হতে পারবেন তো?

যদিও তারেক রহমানকে এখন যারা খুব কাছে থেকে দেখছেন তারা বলছেন, দুর্নীতি উপড়ে ফেলার বিষয়ে এবার তিনি বদ্ধপরিকর। চাঁদাবাজ ও দখলদারদের এবারে তিনি ছাড় দিচ্ছেন না। ইতোমধ্যে গত সাত মাসে ৮০০ জনকে বহিষ্কার, ৫০ জনের পদ স্থগিতসহ বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের মোট ৩ হাজার ২০০ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে তিনি সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছেন। তবে এ অবস্থান ধরে রাখতে হলে তাকে আরও কঠোর হতে হবে। নেতৃত্বের জন্য নির্লোভ ও যথাযথ মানুষকে তার বেছে নিতে হবে।

জানা গেছে, চাঁদাবাজ ও দখলদারদের বিষয়ে ঢাকা থেকে তারেক রহমানের কাছে যেসব অভিযোগ যাচ্ছে, তিনি তা খতিয়ে দেখে সে অনুযায়ী নেতা-কর্মীদের ‘আমলনামা’ তৈরি করছেন। এর মাধ্যমে নেতৃত্ব বাছাই করার জন্য তার ঘনিষ্ঠদের কেউ কেউ তাকে পরামর্শও দিচ্ছেন।

কিন্তু আলোচনা উঠেছে, মানবিক, বৈষম্যহীন ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হলে একজন দক্ষ রাষ্ট্রনায়ক (স্টেটসম্যান) দরকার। দরকার রাজনৈতিক দর্শনের পাশাপাশি দেশ গড়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা। প্রয়োজন দক্ষ পরামর্শক কাঠামো বা পরিষদ; যারা অগ্রসর চিন্তাচেতনার মধ্য দিয়ে যথাযথ ‘ন্যারেটিভ’ তৈরি করবেন। তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠরা বলছেন, দুর্নীতি বন্ধ করার জন্য দেশে যে পরিবর্তন দরকার, এমন ‘ন্যারেটিভ’ দেশে ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে তারেক রহমান ‘কনভিন্সড’। তার নিজের মধ্যেও এই ধরনের চেতনাবোধ তৈরি হয়েছে। কিন্তু তিনি ‌‘কনফিউজড’ বা বিভ্রান্ত হয়ে যান কি না, সে প্রশ্নও আছে। কারণ, তার চারপাশে এখন অনেক মানুষ ভিড় করছেন; কেউ ভালো পদ, কেউ ভবিষ্যতে মনোনয়ন আবার কেউবা ভবিষ্যতে সরকারের আনুকূল্য পাওয়ার আশায়। এসবের মধ্য থেকেই তারেক রহমানকে সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব বেছে নিতে হবে। আর এই বাছাই প্রক্রিয়ার যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে সেখানে তাকে উত্তীর্ণ হতে হবে। কিন্তু তিনি পারবেন কি না, সে প্রশ্ন ইতোমধ্যে সামনে এসেছে।

ড মাহবুব উল্লাহ.

সম্রাট আকবরের মতো ‘নবরত্ন’ গঠন করে তারেক রহমানকে দেশ পরিচালনা করতে হবে। মাত্র ১৪ বছর বয়সে সিংহাসনে বসে একটা সময় পর্যন্ত আকবর তার অভিভাবক বৈরাম খাঁর মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তৎকালীন ভারতের শ্রেষ্ঠ পণ্ডিতদের সমন্বয়ে তিনি রাজসভা গঠন করেছিলেন। তাদের বুদ্ধি ও পরামর্শ অনুযায়ী তিনি রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন। রাষ্ট্র পরিচালনায় কর্মসূচি গ্রহণ, সংস্কার করা এবং বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ তাদের পরামর্শে নেওয়া হয়েছে। তারেক রহমানকেও দেশের সবচেয়ে প্রজ্ঞাবান, মেধাসম্পন্ন, গুণীজন ও সম্মানিত লোকদের পরামর্শ গ্রহণের পথ অনুসরণ করতে হবে। বিশেষ করে নিজস্ব স্বার্থ নিয়ে চিন্তা করেন না, দেশপ্রেমিক- এমন গুণীদের সঙ্গে নিয়ে তাদের উপদেশ, পরামর্শ, মেধা, জ্ঞান, প্রজ্ঞাকে ব্যবহার করতে হবে। দেশের বয়স্ক, মুরুব্বি এবং গুণীজনদের সম্মান দিতে হবে। ছোটদের ভালোবাসতে হবে। দুর্জনদের পরিত্যাগ করতে হবে। পাশাপাশি ইতিহাস থেকে তাকে শিক্ষা নিতে হবে। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়াটা বিএনপির পাশাপাশি আওয়ামী লীগের জন্যও প্রযোজ্য। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও এরশাদের আমলসহ অন্যান্য দলের ক্ষেত্রেও অতীতে যেসব ভুল-ভ্রান্তি ঘটেছে, সেখান থেকে শিক্ষা নিতে হবে।

সাময়িক বা অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য নেতৃত্ব বাছাই করা যেতে পারে। তবে চূড়ান্তভাবে দলের নেতৃত্ব দলের সদস্যদের দ্বারাই নির্বাচিত হওয়া উচিত।

অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী

স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে তারেক রহমানকে তার দলে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করতে হবে। তার দলের মধ্যে অনেক লোক ঢুকে গেছেন যারা তার স্বপ্নকে শেয়ার করেন না। তারা আওয়ামী লীগের মতোই কীভাবে লুটপাট করা যাবে, কে মন্ত্রী হবেন, কে কত টাকা খাবেন, এসব চিন্তায় ব্যস্ত। দলের মধ্য থেকে এগুলো বের করে দলকে ক্লিন করতে হবে। কারণ ইতোমধ্যে কিছু মানুষ বিএনপির ওপরে কিছুটা ক্ষুব্ধ হতে শুরু করেছে।

তবে শুনেছি, তারেক রহমান দলের মধ্যে একদল বুদ্ধিদীপ্ত তরুণকে কাছে টানছেন যারা জিয়াউর রহমানের রাজনীতির চর্চা করতে চাইছেন। এটি শুভ লক্ষণ। তাকে তরুণ সমাজের আশা-আকাঙ্ক্ষাও বিবেচনায় নিতে হবে। কারণ তরুণরাও দুর্নীতি বন্ধ, আইনের শাসন ও সামাজিক ন্যায়বিচারের কথা বলছেন। সুখী-সমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের কথা বলছেন।

বিএনপির সিনিয়র দু-একজন নেতা এখন যে ধরনের কথা বলছেন, তাতে মনে হচ্ছে তারা জিয়াউর রহমানের রাজনীতিটা করছেন না। আশার কথা, দেশের বাইরে থেকে ফোন করেও অনেকে এখন তারেক রহমানের স্বপ্নের কথা বলছেন। তাই যারা এই স্বপ্নটা ধারণ করেন তাদের সঙ্গে নিতে হবে। একদল প্রতিশ্রুতিশীল নেতৃত্ব লাগবে যারা এই বিশ্বকে বোঝেন। এই নেতৃত্ব বাছাই করাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যেমন ড. মোহাম্মদ ইউনূস সাহেব অনেক ভালো লোক। উনি দেশের জন্য অনেক কাজ করছেন। কিন্তু তার টিম সিলেকশন পুরোপুরি ভালো হয়নি। সে কারণেই তিনি অনেক ক্ষেত্রে সফল হচ্ছেন না। এ জন্যই টিম সিলেকশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারেক রহমানের তার মায়ের পথ অনুসরণ করে তার বাবার পলিটিকসে ফেরত যাওয়া উচিত। বাংলাদেশের আপামর জনগণ কী চায়? প্রথমত, ভারতের আধিপত্য আমরা মানব না। দ্বিতীয়ত, দুর্নীতি দেশের জনগণ আর সহ্য করতে পারছে না। এটা বন্ধ করতে না পারলে কিচ্ছু হবে না। আইনের শাসন, বিচার বিভাগ তাকে শক্ত হাতে পরিচালনা করতে হবে। এগুলোর বাস্তবায়ন ঘটলে তার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।

বিএনপি হয়তো ক্ষমতায় আসবে। কিন্তু দুর্নীতি বন্ধ না হলে টিকতে পারবে না। আজকের আওয়ামী লীগের পরিণতির মতোই দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে বিএনপিও ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। তাই বিএনপির জন্য এবারই শেষ সুযোগ।

বদিউল আলম মজুমদার

তারেক রহমানের স্বপ্নকে স্বাগত জানাই। উনি ভালো কিছু করতে চাইলে সংশ্লিষ্ট সবার তাকে সাহায্য করা উচিত। তবে অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে মানুষের মনে কিছুটা সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে; কাজের মধ্য দিয়ে সেগুলো দূর করা উচিত। শেখ হাসিনাও দিন বদলের সনদ, দিন বদলের স্বপ্ন দেখিয়ে ক্ষমতায় এসে ঠিক তার বিপরীতে অবস্থান নিয়ে দেশ চালিয়েছেন। এসব ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে দিন বদল করতে পারলে দেশের মানুষ তাকে সমর্থন করবে।

শেখ হাসিনা তো ট্রেন বা ট্যাংকে চড়ে ক্ষমতায় আসেননি, সংবিধান বাতিলও করেননি। তিনি স্বৈরাচার হয়েছেন ভোট চুরি ও বিতর্কিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। কিন্তু এই সংবিধান ও রাজনীতির সংস্কৃতি, আচার-আচরণ তাকে স্বৈরাচারী করেছে। আইনি কাঠামো পরিবর্তন, রাজনীতির সংস্কৃতি পরিবর্তন, রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক চর্চা চালু, দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ করতে হবে। আরেকটা বিষয় হলো, সব জায়গায় নির্বাচনে শিল্পপতি দাঁড়াবেন। হু ইজ হি! কেন? তার টাকা আছে এ জন্য তিনি দাঁড়াবেন? রাজনীতিতে এই প্রবণতা বন্ধ করতে হবে।

আমাদের নির্বাচনিব্যবস্থা এবং রাজনীতির অঙ্গনকে পরিচ্ছন্ন করতে হবে। পরিচ্ছন্ন রাজনৈতিক দল গঠন করতে হলে গণতন্ত্রায়ন করতে হবে। শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের থেকে দূরে সরে আসতে হবে। আমার লোক, তোমার লোক, এগুলো বন্ধ করতে হবে। যেসব কারণে অতীতে সরকারগুলো ব্যর্থ হয়েছে, বিশেষ করে শেখ হাসিনার পতন হয়েছে, সেই কারণগুলো চিহ্নিত করে পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করতে হবে।

দেশে সর্বগ্রাসী দুর্নীতির পাশাপাশি স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, আইনের শাসন, মানবাধিকার সবকিছুই ধ্বংস হয়ে গেছে। তাই বিএনপির জন্য এবার বড় টেস্ট। শেখ হাসিনা সুযোগ পেয়েও আওয়ামী লীগকে মুসলিম লীগের মতো বানিয়ে ফেলেছেন। মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি বরং জনগণের রোষানলে পড়েছেন। বিএনপি ক্ষমতায় এসে একই কাজ করলে তাদের প্রতি মানুষের আস্থা থাকবে না।

তরুণ প্রজন্মের আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং মনোভাব বিএনপিকে ধারণ করতে হবে। ২৫ শতাংশ তরুণ ভোটার রয়েছেন। তরুণদের জন্য চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে, শিক্ষার মান বৃদ্ধি করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। বিশেষ করে শিক্ষকসহ পেশাজীবীদের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। এদের কারণেই সর্বস্তরে রাজনীতিকীকরণ হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। শিক্ষকদের রাজনীতি বন্ধ থাকলে শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস হতো না। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ও শিক্ষকরা এক হতো না। রাজনৈতিক ফায়দা ও বিভিন্ন রকমের সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকে এসব প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে গেছে।

ড. ইউনূসকে সবাই চায়। সংস্কারের পরেই সবাই নির্বাচন চায়। তবে বিএনপি দেশের বড় রাজনৈতিক দল। নির্বাচন অবশ্যই হতে হবে। নির্বাচনিব্যবস্থায় ফেরা উচিত। দেশের নির্বাচনিব্যবস্থা ধ্বংসের কারণেই গণ-অভ্যুত্থান হয়েছিল। যদি শেখ হাসিনা ফেয়ার ও ইনক্লুসিভ ইলেকশন করতেন তাহলে মানুষের এত ক্ষোভ তৈরি হতো না। দুর্নীতি ও চুরি করে দেশটাকে একদম শেষ করে দিয়েছেন।

ব্যারিস্টার আবু সায়েম

আমার বিশ্বাস, জনাব তারেক রহমান পারবেন। কারণ তার ভিশন আছে। কাজের ব্যাপক অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাও আছে। তিনি জানেন, বদলাতে হলে কী করতে হবে। তবে আমাদের সবার সহযোগিতা লাগবে। রাষ্ট্র ও সমাজ পরিবর্তনের লড়াই কোনো ছেলেখেলা নয়। এটা দীর্ঘমেয়াদি ও আদর্শিক লড়াই। একা কেউ কখনো এ লড়াইয়ে সফল হতে পারেন না।

দেশ বদলাতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে দুর্বৃত্তের আগ্রাসন থেকে দল ও দেশকে রক্ষা করা। চারদিকে লোভী, দুর্নীতিবাজ, চরিত্রহীন মানুষ কিলবিল করছে। তার ওপরে আছে হোয়াইট কলার ক্রিমিনালরা; যাদের একমাত্র লক্ষ্য অবৈধ উপায়ে অর্থ কামিয়ে বিদেশে পাচার করা। সব দলেই এরা শীর্ষ নেতৃত্বের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খায়। এদের কাছে ঘেঁষতে বা থাকতে দেওয়া যাবে না।

আরও দরকার জাতীয় ঐকমত্য। আমরা যারা হাসিনা রেজিমের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছি, তাদের ঐক্যকে ধরে রাখতে হবে। ফ্যাসিবাদের দোসররা দেশে বিভাজন ও অশান্তি সৃষ্টি করতে তৎপর। তাদের সুযোগ দেওয়া যাবে না। আমাদের নেতা নির্বাচনের পর জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন, যা ইতোমধ্যে ইতিবাচক চিন্তা হিসেবে প্রশংসিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের সবাইকে আন্তরিক হতে হবে। সর্বশেষ বলতে চাই, দেশপ্রেমিক সহযোদ্ধা ছাড়া দেশ বদলানো সম্ভব নয়। দল ও দেশ চালাতে চেয়ারম্যানকে তাই মেধাবী ও যোগ্য নবীন-প্রবীণের সমন্বয় ঘটাতে হবে।

আমি জানি, জনাব তারেক রহমান সতর্কভাবে পা ফেলছেন এবং বিশ্বাস করি, প্রতিটি ইস্যুতে দেশ ও জাতির স্বার্থে তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন।