ঢাকা ০৭:৩৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
ইটনায় জাতীয় পরিচয়পত্র পরিষেবা স্থানান্তর ও কূট পরিকল্পনার বিরুদ্ধে মানববন্ধন ইটনায় এ প্লাস ক্যাম্পেইন অবহিত করন সভা অনুষ্ঠিত ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতে যেসব শর্ত দিলেন পুতিন রান্না শেখাচ্ছেন পড়শী, ঈদে দেখা যাবে অভিনয় আর গানে শিমের রাজ্য সীতাকুণ্ড ২১০ কোটি টাকার শিম উৎপাদন, কৃষকের হাসি জাতিসংঘ, মহাসচিব, ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ ঢাকায় আসছেন জাতিসংঘের মহাসচিব হাসপাতাল থেকে শিশু চুরি অবশেষে মায়ের কোলে ফিরল সায়ান হরেদরে সবাইকে শাহবাগী বলা বন্ধ করতে হবে: মাহফুজ আলম পেঁয়াজের দাম না পেয়ে লোকসানের শঙ্কায় পাবনার চাষিরা পাচারকালে নারী শিশুসহ ১৮ রোহিঙ্গা উদ্ধার, দালাল আটক

চাষাবাদে লাভ কম, কৃষি পর্যটনে ঝুঁকছেন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকেরা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:৪২:৩৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ৯ বার

কৃষি মন্দা মোকাবিলায় পর্যটন ও এয়ারবিএনবির দিকে ঝুঁকছেন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকেরা। তাঁরা নিজেদের খামারে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় ভ্রমণ, খেলাধুলা ও রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা করছেন। দেশটির কৃষি অর্থনীতির অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে রোজগারের উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে কৃষি পর্যটন।

করোনা মহামারিকালে যুক্তরাষ্ট্রে কৃষি পর্যটন জনপ্রিয়তা পায়। সে সময় মানুষ কৃষি খামারগুলোতে ও বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকায় ছুটি কাটাতে যেতে শুরু করে। গ্রামাঞ্চলে সামাজিকভাবে দূরত্ব বজায় রেখে আনন্দময় সময় কাটায়। এর পর থেকে এই শিল্পের আকার বড় হতে থাকে। একাকী ও শান্ত সময় কাটাতে চাওয়া শহরের বাসিন্দাদের ভিড় বাড়তে থাকে। এদিকে কৃষকেরা তাঁদের খামারে নতুন নতুন পদ্ধতিতে শহর থেকে আসা মানুষকে আরামদায়ক ও শান্তিময় সময় কাটানো ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন।

উইসকনসিনের কৃষক ব্রিট থম্পসন তাঁর খামারে রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা রেখেছেন। শহর থেকে মানুষজন এসে তাঁর খামারে থাকা হাইল্যান্ড গরু, আইসল্যান্ডিক ভেড়ার সঙ্গে সময় কাটান। গ্রামে ঘুরে বেড়ান।

থম্পসন জানান, খামারে মাংসের জন্য পশু পালেন তিনি। এর পাশাপাশি পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা রেখেছেন। তাঁর অতিথিদের বেশির ভাগই শিকাগোর। অর্থনীতির এই অস্থিতিশীল সময়ে এটাই তাঁর রোজগারের উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। গরু ও ভেড়া বিক্রি করে যা আয় করতেন, তার তুলনায় এই আয়ের পরিমাণ অনেক বেশি।

তিনি আরও বলেন, প্রায় প্রতি সপ্তাহান্তে তাঁর খামারে পর্যটকেরা আসেন। ঝরনা, বন-হাইকিং ট্রেইলে সময় কাটান। রাতের আকাশের সৌন্দর্য উপভোগ করেন।

৩৩ বছর বয়সী থম্পসন জানান, তিনি অতিথিদের খামারের কাজ শেখাতে ভালোবাসেন। পাঁচ বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে নদীর তীরে মাছ ধরার সময় উপভোগ করেন। তাঁর মেয়ে একটি ছোট গোলাপি ফিশিং রড দিয়ে মোটা ক্যাটফিশ ধরতে পারে।

ইলিনয়ের হিপস জায়ান্ট পাম্পকিন ফার্ম ভুট্টা ও সয়াবিন উৎপাদন করে। ফার্মটির সহব্যবস্থাপক ৩৫ বছর বয়সী কাইলি হিপ বলেন, ‘আমরা আমাদের আয়ের পথ বৈচিত্র্যময় করায় কঠিন বা লোকসানের বছরগুলো সামলাতে সক্ষম হচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, শরৎকালে হিপের গ্রাহকেরা সূর্যমুখী ও কুমড়া তুলতে আসেন। খড়ের গাড়িতে চড়েন। ভুট্টাখেতে তৈরি গোলকধাঁধায় (কর্ন মেজ) ঘুরে বেড়ান।

নর্থ ক্যারোলাইনার শূকর খামারি ৫৬ বছর বয়সী ক্যাথরিন টোপেল হিপক্যাম্পের মাধ্যমে এয়ারবিএনবি কেবিন ও ক্যাম্পসাইট ভাড়া দিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, ‘শুধু চাষাবাদের মাধ্যমে পারিবারিক খামার টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। কেবিন ও ক্যাম্পিং ব্যবসা কঠিন সময়ে টিকে থাকতে সহায়তা করছে।’

করোনার সময়ের কথা স্মরণ করে আন্তর্জাতিক কৃষি পর্যটন সংস্থার পরিচালক সুজি স্পাহর বলেন, ‘এখন যখন আমরা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছি, মানুষ এখনো সেই অভিজ্ঞতাগুলো মনে রাখছে এবং তারা সেগুলো তাদের পারিবারিক ঐতিহ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছে।’

ডেটা সংস্থা এয়ারডিএনএ জানিয়েছে, শর্ট-টার্ম রেন্টাল প্ল্যাটফর্মে এসব খামারের সংখ্যা গত পাঁচ বছরে ৭৭ শতাংশ বেড়েছে। এয়ারবিএনবি, জনপ্রিয় ক্যাম্পসাইট বুকিং ওয়েবসাইটগুলো, যেমন—হিপক্যাম্প, হার্ভেস্ট হোস্টস এবং দ্য ডির্টওতে গত কয়েক বছরে খামারের নাম বেড়েছে দ্বিগুণ হারে।

কৃষক এবং শিল্পবিশেষজ্ঞরা বলছেন, শস্য মূল্য কমে যাওয়া, উচ্চ সুদের হার এবং বীজ, সার ও শ্রমের খরচ বাড়তে থাকায় কৃষকদের জন্য কৃষি পর্যটনের আয় টিকে থাকার অন্যতম মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) তথ্যমতে, কৃষি পর্যটনশিল্প থেকে ৪৫০ কোটি ডলার আয় হয়।

ভারমন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লিসা চেইস বলেন, অনেক খামার প্রতিবছর ২৫ হাজার থেকে ১ লাখ ডলার আয় করছেন কৃষি পর্যটন থেকে। কিছু খামার প্রতি বছর ‘বেড অ্যান্ড ব্রেকফাস্ট’, ‘পিক ইউর ওন অ্যাপল’ বাগান এবং অন্যান্য আয়োজনের মাধ্যমে ১০ লাখ পর্যন্ত আয় করছেন।

কৃষকদের মতে, বিনোদন ও পর্যটন থেকে অর্জিত আয় পরিবারের খামারমালিকানা ধরে রাখতে, ঋণ পরিশোধ করতে এবং তরুণ প্রজন্মের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে সহায়তা করতে পারে। তরুণদের অনেকেই এয়ারবিএনবি পরিচালনা বা ওয়েবসাইট নির্মাণকে বেশি পছন্দ করেন।

মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্প্রসারণ প্রশিক্ষক রায়ান পেশ বলেন, ‘তরুণ প্রজন্ম খামারজীবনকে কেবল হতাশা আর খারাপ দামের গল্প হিসেবে দেখে না। তারা ভাবে, আমরা কেন অন্য কিছু করি না? তারা সুযোগ ও উদ্যোক্তাবৃত্তিকে নতুনভাবে দেখে।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ইটনায় জাতীয় পরিচয়পত্র পরিষেবা স্থানান্তর ও কূট পরিকল্পনার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

চাষাবাদে লাভ কম, কৃষি পর্যটনে ঝুঁকছেন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকেরা

আপডেট টাইম : ০৭:৪২:৩৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

কৃষি মন্দা মোকাবিলায় পর্যটন ও এয়ারবিএনবির দিকে ঝুঁকছেন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকেরা। তাঁরা নিজেদের খামারে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় ভ্রমণ, খেলাধুলা ও রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা করছেন। দেশটির কৃষি অর্থনীতির অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে রোজগারের উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে কৃষি পর্যটন।

করোনা মহামারিকালে যুক্তরাষ্ট্রে কৃষি পর্যটন জনপ্রিয়তা পায়। সে সময় মানুষ কৃষি খামারগুলোতে ও বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকায় ছুটি কাটাতে যেতে শুরু করে। গ্রামাঞ্চলে সামাজিকভাবে দূরত্ব বজায় রেখে আনন্দময় সময় কাটায়। এর পর থেকে এই শিল্পের আকার বড় হতে থাকে। একাকী ও শান্ত সময় কাটাতে চাওয়া শহরের বাসিন্দাদের ভিড় বাড়তে থাকে। এদিকে কৃষকেরা তাঁদের খামারে নতুন নতুন পদ্ধতিতে শহর থেকে আসা মানুষকে আরামদায়ক ও শান্তিময় সময় কাটানো ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন।

উইসকনসিনের কৃষক ব্রিট থম্পসন তাঁর খামারে রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা রেখেছেন। শহর থেকে মানুষজন এসে তাঁর খামারে থাকা হাইল্যান্ড গরু, আইসল্যান্ডিক ভেড়ার সঙ্গে সময় কাটান। গ্রামে ঘুরে বেড়ান।

থম্পসন জানান, খামারে মাংসের জন্য পশু পালেন তিনি। এর পাশাপাশি পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা রেখেছেন। তাঁর অতিথিদের বেশির ভাগই শিকাগোর। অর্থনীতির এই অস্থিতিশীল সময়ে এটাই তাঁর রোজগারের উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। গরু ও ভেড়া বিক্রি করে যা আয় করতেন, তার তুলনায় এই আয়ের পরিমাণ অনেক বেশি।

তিনি আরও বলেন, প্রায় প্রতি সপ্তাহান্তে তাঁর খামারে পর্যটকেরা আসেন। ঝরনা, বন-হাইকিং ট্রেইলে সময় কাটান। রাতের আকাশের সৌন্দর্য উপভোগ করেন।

৩৩ বছর বয়সী থম্পসন জানান, তিনি অতিথিদের খামারের কাজ শেখাতে ভালোবাসেন। পাঁচ বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে নদীর তীরে মাছ ধরার সময় উপভোগ করেন। তাঁর মেয়ে একটি ছোট গোলাপি ফিশিং রড দিয়ে মোটা ক্যাটফিশ ধরতে পারে।

ইলিনয়ের হিপস জায়ান্ট পাম্পকিন ফার্ম ভুট্টা ও সয়াবিন উৎপাদন করে। ফার্মটির সহব্যবস্থাপক ৩৫ বছর বয়সী কাইলি হিপ বলেন, ‘আমরা আমাদের আয়ের পথ বৈচিত্র্যময় করায় কঠিন বা লোকসানের বছরগুলো সামলাতে সক্ষম হচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, শরৎকালে হিপের গ্রাহকেরা সূর্যমুখী ও কুমড়া তুলতে আসেন। খড়ের গাড়িতে চড়েন। ভুট্টাখেতে তৈরি গোলকধাঁধায় (কর্ন মেজ) ঘুরে বেড়ান।

নর্থ ক্যারোলাইনার শূকর খামারি ৫৬ বছর বয়সী ক্যাথরিন টোপেল হিপক্যাম্পের মাধ্যমে এয়ারবিএনবি কেবিন ও ক্যাম্পসাইট ভাড়া দিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, ‘শুধু চাষাবাদের মাধ্যমে পারিবারিক খামার টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। কেবিন ও ক্যাম্পিং ব্যবসা কঠিন সময়ে টিকে থাকতে সহায়তা করছে।’

করোনার সময়ের কথা স্মরণ করে আন্তর্জাতিক কৃষি পর্যটন সংস্থার পরিচালক সুজি স্পাহর বলেন, ‘এখন যখন আমরা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছি, মানুষ এখনো সেই অভিজ্ঞতাগুলো মনে রাখছে এবং তারা সেগুলো তাদের পারিবারিক ঐতিহ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছে।’

ডেটা সংস্থা এয়ারডিএনএ জানিয়েছে, শর্ট-টার্ম রেন্টাল প্ল্যাটফর্মে এসব খামারের সংখ্যা গত পাঁচ বছরে ৭৭ শতাংশ বেড়েছে। এয়ারবিএনবি, জনপ্রিয় ক্যাম্পসাইট বুকিং ওয়েবসাইটগুলো, যেমন—হিপক্যাম্প, হার্ভেস্ট হোস্টস এবং দ্য ডির্টওতে গত কয়েক বছরে খামারের নাম বেড়েছে দ্বিগুণ হারে।

কৃষক এবং শিল্পবিশেষজ্ঞরা বলছেন, শস্য মূল্য কমে যাওয়া, উচ্চ সুদের হার এবং বীজ, সার ও শ্রমের খরচ বাড়তে থাকায় কৃষকদের জন্য কৃষি পর্যটনের আয় টিকে থাকার অন্যতম মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) তথ্যমতে, কৃষি পর্যটনশিল্প থেকে ৪৫০ কোটি ডলার আয় হয়।

ভারমন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লিসা চেইস বলেন, অনেক খামার প্রতিবছর ২৫ হাজার থেকে ১ লাখ ডলার আয় করছেন কৃষি পর্যটন থেকে। কিছু খামার প্রতি বছর ‘বেড অ্যান্ড ব্রেকফাস্ট’, ‘পিক ইউর ওন অ্যাপল’ বাগান এবং অন্যান্য আয়োজনের মাধ্যমে ১০ লাখ পর্যন্ত আয় করছেন।

কৃষকদের মতে, বিনোদন ও পর্যটন থেকে অর্জিত আয় পরিবারের খামারমালিকানা ধরে রাখতে, ঋণ পরিশোধ করতে এবং তরুণ প্রজন্মের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে সহায়তা করতে পারে। তরুণদের অনেকেই এয়ারবিএনবি পরিচালনা বা ওয়েবসাইট নির্মাণকে বেশি পছন্দ করেন।

মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্প্রসারণ প্রশিক্ষক রায়ান পেশ বলেন, ‘তরুণ প্রজন্ম খামারজীবনকে কেবল হতাশা আর খারাপ দামের গল্প হিসেবে দেখে না। তারা ভাবে, আমরা কেন অন্য কিছু করি না? তারা সুযোগ ও উদ্যোক্তাবৃত্তিকে নতুনভাবে দেখে।’