ঢাকা ১০:২০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৫ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে যা করবেন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৩৩:৩৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫
  • ১৭ বার

গত ১৯ জানুয়ারি ২০২৫ থেকে আমাদের দেশে শুরু হয়েছে জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যানসার প্রতিরোধ সপ্তাহ। চলবে আগামী ২৫ জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত। জরায়ুমুখ ক্যানসার ভয়ঙ্কর ব্যাধি। সাধারণত অবিন্যস্ত ও অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজনে অস্বাভাবিক বৃদ্ধিপ্রাপ্ত কোষকলার পিণ্ডকে বলে টিউমার। দুই ধরনের টিউমারের মধ্যে ম্যালিগন্যান্ট টিউমারই হলো ক্যানসার। জরায়ুমুখের দুষ্ট টিউমারটিকে বলে জরায়ুমুখের ক্যানসার।

ক্যানসারের সম্ভাব্য কারণ : ১৮ বছর বয়সের নিচে বিয়ে বা যৌনমিলন, বিভিন্নজনের সঙ্গে যৌনমিলন বা গণিকাবৃত্তি, অপরিচ্ছন্ন জননেন্দ্রীয়, জননেন্দ্রীয়ের সংক্রামক রোগ, যেমনÑ হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস-টাইপ২ ও হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস, ২০ বছর বয়সের নিচে গর্ভধারণ ও মা হওয়া, ধূমপান ও নিম্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থা।

রোগের লক্ষণ : অনিয়মিত রক্তস্রাব, ঋতু বন্ধের এক বছর পরও রক্তস্রাব, যৌন সঙ্গমের পর রক্তস্রাব, যোনিপথে অধিক পরিমাণ বাদামি বা রক্তমাখা স্রাব। দুর্গন্ধযুক্ত সাদা স্রাব। এসব লক্ষণের ক্যানসার নিশ্চিতকরণ চিহ্ন নয়। পরীক্ষার মাধ্যমেই চিকিৎসক নিশ্চিত হন রোগটি আসলে কোন ধরনের।

চিকিৎসা : জরায়ুমুখ ক্যানসার পর্যায় অনুযায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি ভিন্ন ভিন্ন। অস্বাভাবিক ও অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজনের চিকিৎসা করা হয় ক্রাইওথেরাপির মাধ্যমে। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা প্রয়োগ করে আক্রান্ত কোষকলা ধ্বংস করে দেওয়া হয়। ইলেকট্রো কোওয়াগুলেশনের মাধ্যমেও প্রচণ্ড উত্তাপ সৃষ্টি করে আক্রান্ত কোষকলা ধ্বংস করা যায়। চিকিৎসার এ প্রক্রিয়ায় রোগীর সন্তান ধারণ ক্ষমতা অটুট থাকে।

সার্জারি : ক্যানসার যখন উৎপত্তিস্থলে সীমাবদ্ধ থাকে, তখন সার্জারি চিকিৎসা বেছে নেন অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। এ চিকিৎসায় রোগীর সম্পূর্ণ জরায়ু অপসারণ করা হয়। কখনো কখনো যোনিপথের উপরের অংশ এবং কাছের কোষকলা ও লসিকাগ্রন্থি অপসারণ করা হয়, যাতে ক্যানসারে আক্রান্ত কোষ দূরবর্তী স্থানে ছড়িয়ে না পড়ে।

রেডিয়েশন থেরাপি : এ চিকিৎসার মূল ভিত্তি হলো, বিকিরণের মাধ্যমে ক্যানসারে আক্রান্ত কোষের ধ্বংস বা ক্ষতিসাধন করা। অনেক সময় এ চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় টিউমারের প্রবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে বা ব্যথা কমানোর জন্য। যখন ক্যানসার আক্রান্ত সব কোষ সার্জারির মাধ্যমে অপসারণ করা যায় না, তখন সার্জারির পরে রেডিয়েশন দেওয়া হয়।

চিকিৎসা-পরবর্তী করণীয় : সার্জারি বা রেডিয়েশন থেরাপির পর রোগীকে নির্দিষ্ট সময় পর-পর পরীক্ষা করাতে হয়। যৌনমিলন থেকে কিছুদিন বিরত থাকতে হয়। সব নিয়ম-কানুন যথাযথভাবে মেনে চললে চিকিৎসার দু-তিন মাসের মধ্যে রোগী স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন।

প্রতিরোধ : বিবাহিত জীবনে বা যৌনজীবনে প্রবেশ করা প্রত্যেক নারীকে তিন বছরে একবার শারীরিক কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হয়। মাসিক অবস্থায় বা ঋতু বন্ধের পর অস্বাভাবিক রক্তস্রাব, স্রাব ইত্যাদি দেখলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এভাবে প্রত্যেক নারী যদি নিজের শরীর ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হন, তবে জরায়ুমুখ ক্যানসারের জন্য কোনো নারীকে চরম মূল্য দিতে হবে না।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে যা করবেন

আপডেট টাইম : ১১:৩৩:৩৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫

গত ১৯ জানুয়ারি ২০২৫ থেকে আমাদের দেশে শুরু হয়েছে জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যানসার প্রতিরোধ সপ্তাহ। চলবে আগামী ২৫ জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত। জরায়ুমুখ ক্যানসার ভয়ঙ্কর ব্যাধি। সাধারণত অবিন্যস্ত ও অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজনে অস্বাভাবিক বৃদ্ধিপ্রাপ্ত কোষকলার পিণ্ডকে বলে টিউমার। দুই ধরনের টিউমারের মধ্যে ম্যালিগন্যান্ট টিউমারই হলো ক্যানসার। জরায়ুমুখের দুষ্ট টিউমারটিকে বলে জরায়ুমুখের ক্যানসার।

ক্যানসারের সম্ভাব্য কারণ : ১৮ বছর বয়সের নিচে বিয়ে বা যৌনমিলন, বিভিন্নজনের সঙ্গে যৌনমিলন বা গণিকাবৃত্তি, অপরিচ্ছন্ন জননেন্দ্রীয়, জননেন্দ্রীয়ের সংক্রামক রোগ, যেমনÑ হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস-টাইপ২ ও হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস, ২০ বছর বয়সের নিচে গর্ভধারণ ও মা হওয়া, ধূমপান ও নিম্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থা।

রোগের লক্ষণ : অনিয়মিত রক্তস্রাব, ঋতু বন্ধের এক বছর পরও রক্তস্রাব, যৌন সঙ্গমের পর রক্তস্রাব, যোনিপথে অধিক পরিমাণ বাদামি বা রক্তমাখা স্রাব। দুর্গন্ধযুক্ত সাদা স্রাব। এসব লক্ষণের ক্যানসার নিশ্চিতকরণ চিহ্ন নয়। পরীক্ষার মাধ্যমেই চিকিৎসক নিশ্চিত হন রোগটি আসলে কোন ধরনের।

চিকিৎসা : জরায়ুমুখ ক্যানসার পর্যায় অনুযায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি ভিন্ন ভিন্ন। অস্বাভাবিক ও অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজনের চিকিৎসা করা হয় ক্রাইওথেরাপির মাধ্যমে। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা প্রয়োগ করে আক্রান্ত কোষকলা ধ্বংস করে দেওয়া হয়। ইলেকট্রো কোওয়াগুলেশনের মাধ্যমেও প্রচণ্ড উত্তাপ সৃষ্টি করে আক্রান্ত কোষকলা ধ্বংস করা যায়। চিকিৎসার এ প্রক্রিয়ায় রোগীর সন্তান ধারণ ক্ষমতা অটুট থাকে।

সার্জারি : ক্যানসার যখন উৎপত্তিস্থলে সীমাবদ্ধ থাকে, তখন সার্জারি চিকিৎসা বেছে নেন অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। এ চিকিৎসায় রোগীর সম্পূর্ণ জরায়ু অপসারণ করা হয়। কখনো কখনো যোনিপথের উপরের অংশ এবং কাছের কোষকলা ও লসিকাগ্রন্থি অপসারণ করা হয়, যাতে ক্যানসারে আক্রান্ত কোষ দূরবর্তী স্থানে ছড়িয়ে না পড়ে।

রেডিয়েশন থেরাপি : এ চিকিৎসার মূল ভিত্তি হলো, বিকিরণের মাধ্যমে ক্যানসারে আক্রান্ত কোষের ধ্বংস বা ক্ষতিসাধন করা। অনেক সময় এ চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় টিউমারের প্রবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে বা ব্যথা কমানোর জন্য। যখন ক্যানসার আক্রান্ত সব কোষ সার্জারির মাধ্যমে অপসারণ করা যায় না, তখন সার্জারির পরে রেডিয়েশন দেওয়া হয়।

চিকিৎসা-পরবর্তী করণীয় : সার্জারি বা রেডিয়েশন থেরাপির পর রোগীকে নির্দিষ্ট সময় পর-পর পরীক্ষা করাতে হয়। যৌনমিলন থেকে কিছুদিন বিরত থাকতে হয়। সব নিয়ম-কানুন যথাযথভাবে মেনে চললে চিকিৎসার দু-তিন মাসের মধ্যে রোগী স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন।

প্রতিরোধ : বিবাহিত জীবনে বা যৌনজীবনে প্রবেশ করা প্রত্যেক নারীকে তিন বছরে একবার শারীরিক কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হয়। মাসিক অবস্থায় বা ঋতু বন্ধের পর অস্বাভাবিক রক্তস্রাব, স্রাব ইত্যাদি দেখলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এভাবে প্রত্যেক নারী যদি নিজের শরীর ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হন, তবে জরায়ুমুখ ক্যানসারের জন্য কোনো নারীকে চরম মূল্য দিতে হবে না।