ঢাকা ০৬:০৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারী, সে তো সম্পূর্ণা, সে সব পারে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:০৮:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ অক্টোবর ২০১৬
  • ৪৭০ বার

তামান্না সেতু, অফিসে ত্রিশ মিনিট দেরিতে পৌঁছানোর জন্য আমার কলিগ যখন তেলতেলা হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করতেন -“কি ব্যাপার, রাতে স্বামী সোহাগ শেষ করে ঘুমাতে দেরি হয়েছে নাকি? সকালে ঘুম থেকে উঠতে লেট, অফিসে লেট? ”

আমি দুই ভ্রু এক করে ভাবতাম- এই হারামীটার নামে কোন থানায় গেলে একটা রেপ কেস করা যাবে।
ধর্ষণ কি শুধুই জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্কের নাম?

কিলবিল করে যে দু‘চোখ আমার শরীর খেতে থাকে দশ হাত দূরে দাঁড়িয়ে, সে চোখ কি ধর্ষক নয়?

মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির শিক্ষিত ভদ্র কলিগেরা যখন আমার দিকে তাকিয়ে জিভ চেটে কথা বলেন তখন? কে তিনি? ধর্ষক নয়?
তবে এর ভেতরেও আমরা পথ চলতে জানি। এও জানি পথ তৈরি করে নিতে হয়। হাসি মুখে কলিগের উদ্দেশ্যে বলি -“বোঝেনই তো ভাই, আপনার স্ত্রীরও নিশ্চয়ই অফিসে দেরি করার জন্য অফিসের পুরুষ বসের এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। আমাদের রাত জাগা আর প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ছাড়া আর কি করার আছে বলুন?”

অফিসের কলিগ, বাসের সহযাত্রী, আলু পটল বিক্রেতা সহ সকলের চোখে নারীর পরিচয় শুধু ভোগ করার শরীর মাত্র!
এর ভেতর দিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর সকল কন্যা। তাদের একজন হয়ে আমি তাদের অভিবাদন জানাই।
আমি জানি তাদের সাহস ঘরের বাইরের যুদ্ধের জন্য অসীম।

শুধু এখনো তাঁরা/আমরা মুষড়ে পড়ি তখন, যখন এই পথচলায় পাশের মানুষটি, ঘরের মানুষেরা হাত ছেড়ে দেয়। যখন ভাই তার বোনকে বলে -“সন্ধ্যায় কোনো ভদ্র ঘরের মেয়ে বাইরে যায়”?

মুষড়ে পড়ি তখন, যখন স্বামী বলে -“বুকের আঁচল ঠিক রাখো, না হলে পুরুষের দৃষ্টি তো পড়বেই।” ( পুরুষ তো তাকাবেই, কনফিডেন্সের সাথে এতোটা নির্লজ্জ বাক্য পৃথিবীতে আর নাই)

যখন মা বলে -“বেটা মানুষ দেখলেই কথা কইতে ইচ্ছা করে!”

আমরা মুষড়ে পড়ি তখন। ভেবে পাই না ঠিক কোন জায়গা থেকে যুদ্ধটা শুরু করব !!

মুন্নী আমায় বলেছে, তুমি কি সেসব মেয়েদের কথা লিখতে পারবে যারা ধর্ষিত হবার পরও ভেঙ্গে পড়ে না। যারা রক্তাক্ত শরীর নিয়ে ফিরে আসে ঘর পর্যন্ত। কিন্তু আপন ঘরের দরজা যখন বন্ধ হয়ে যায় চোখের সামনে, তখন তারা ভেঙ্গে পড়ে, আত্মহত্যা করে !!
আমি বলেছিলাম- একাত্তর পরবর্তী সময়ে এমন ২ লাখ গল্প বীরাঙ্গনারা নিজের জীবন দিয়ে লিখে গিয়েছে। আজও কেউ না কেউ প্রতিনিয়ত লিখছে।

বাইরের যুদ্ধটা চালিয়ে নিয়ে ঘরে এসে একগ্লাস পানি আপনজনের হাত থেকে পাবার আশা আমাদের কবে পূরণ হবে জানি না।
আমি আশার কথা লিখতে চাই। লিখতে চাই পথ চলার গল্প।

থেমে থাকার নাম জীবন নয়। যে জীবন দিয়ে কিছু পরিবর্তন করতে পারিনি সে জীবন মানুষের নয়। জন্মেছি এগিয়ে যাবার জন্য। জন্মেছি আমার কন্যাকে এক ধাপ এগিয়ে দেবার জন্য।

আলো একদিন আসবে। সেদিন আমার প্রিয় পৃথিবীতে আমার পদরেখা কোথাও না কোথাও থাকবেই। আর নাই যদি থাকে, কি আসে যায়…….. একটা জীবন মাথা হেট না করে পার করে দিচ্ছি সেও তো কম পাওয়া নয়।

পাশের মানুষগুলো কাছের মানুষ হল না এই ব্যথাও না হয় জয় করবো। নারী, সে তো সম্পূর্ণা, সে সব পারে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

নারী, সে তো সম্পূর্ণা, সে সব পারে

আপডেট টাইম : ১২:০৮:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ অক্টোবর ২০১৬

তামান্না সেতু, অফিসে ত্রিশ মিনিট দেরিতে পৌঁছানোর জন্য আমার কলিগ যখন তেলতেলা হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করতেন -“কি ব্যাপার, রাতে স্বামী সোহাগ শেষ করে ঘুমাতে দেরি হয়েছে নাকি? সকালে ঘুম থেকে উঠতে লেট, অফিসে লেট? ”

আমি দুই ভ্রু এক করে ভাবতাম- এই হারামীটার নামে কোন থানায় গেলে একটা রেপ কেস করা যাবে।
ধর্ষণ কি শুধুই জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্কের নাম?

কিলবিল করে যে দু‘চোখ আমার শরীর খেতে থাকে দশ হাত দূরে দাঁড়িয়ে, সে চোখ কি ধর্ষক নয়?

মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির শিক্ষিত ভদ্র কলিগেরা যখন আমার দিকে তাকিয়ে জিভ চেটে কথা বলেন তখন? কে তিনি? ধর্ষক নয়?
তবে এর ভেতরেও আমরা পথ চলতে জানি। এও জানি পথ তৈরি করে নিতে হয়। হাসি মুখে কলিগের উদ্দেশ্যে বলি -“বোঝেনই তো ভাই, আপনার স্ত্রীরও নিশ্চয়ই অফিসে দেরি করার জন্য অফিসের পুরুষ বসের এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। আমাদের রাত জাগা আর প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ছাড়া আর কি করার আছে বলুন?”

অফিসের কলিগ, বাসের সহযাত্রী, আলু পটল বিক্রেতা সহ সকলের চোখে নারীর পরিচয় শুধু ভোগ করার শরীর মাত্র!
এর ভেতর দিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর সকল কন্যা। তাদের একজন হয়ে আমি তাদের অভিবাদন জানাই।
আমি জানি তাদের সাহস ঘরের বাইরের যুদ্ধের জন্য অসীম।

শুধু এখনো তাঁরা/আমরা মুষড়ে পড়ি তখন, যখন এই পথচলায় পাশের মানুষটি, ঘরের মানুষেরা হাত ছেড়ে দেয়। যখন ভাই তার বোনকে বলে -“সন্ধ্যায় কোনো ভদ্র ঘরের মেয়ে বাইরে যায়”?

মুষড়ে পড়ি তখন, যখন স্বামী বলে -“বুকের আঁচল ঠিক রাখো, না হলে পুরুষের দৃষ্টি তো পড়বেই।” ( পুরুষ তো তাকাবেই, কনফিডেন্সের সাথে এতোটা নির্লজ্জ বাক্য পৃথিবীতে আর নাই)

যখন মা বলে -“বেটা মানুষ দেখলেই কথা কইতে ইচ্ছা করে!”

আমরা মুষড়ে পড়ি তখন। ভেবে পাই না ঠিক কোন জায়গা থেকে যুদ্ধটা শুরু করব !!

মুন্নী আমায় বলেছে, তুমি কি সেসব মেয়েদের কথা লিখতে পারবে যারা ধর্ষিত হবার পরও ভেঙ্গে পড়ে না। যারা রক্তাক্ত শরীর নিয়ে ফিরে আসে ঘর পর্যন্ত। কিন্তু আপন ঘরের দরজা যখন বন্ধ হয়ে যায় চোখের সামনে, তখন তারা ভেঙ্গে পড়ে, আত্মহত্যা করে !!
আমি বলেছিলাম- একাত্তর পরবর্তী সময়ে এমন ২ লাখ গল্প বীরাঙ্গনারা নিজের জীবন দিয়ে লিখে গিয়েছে। আজও কেউ না কেউ প্রতিনিয়ত লিখছে।

বাইরের যুদ্ধটা চালিয়ে নিয়ে ঘরে এসে একগ্লাস পানি আপনজনের হাত থেকে পাবার আশা আমাদের কবে পূরণ হবে জানি না।
আমি আশার কথা লিখতে চাই। লিখতে চাই পথ চলার গল্প।

থেমে থাকার নাম জীবন নয়। যে জীবন দিয়ে কিছু পরিবর্তন করতে পারিনি সে জীবন মানুষের নয়। জন্মেছি এগিয়ে যাবার জন্য। জন্মেছি আমার কন্যাকে এক ধাপ এগিয়ে দেবার জন্য।

আলো একদিন আসবে। সেদিন আমার প্রিয় পৃথিবীতে আমার পদরেখা কোথাও না কোথাও থাকবেই। আর নাই যদি থাকে, কি আসে যায়…….. একটা জীবন মাথা হেট না করে পার করে দিচ্ছি সেও তো কম পাওয়া নয়।

পাশের মানুষগুলো কাছের মানুষ হল না এই ব্যথাও না হয় জয় করবো। নারী, সে তো সম্পূর্ণা, সে সব পারে।