ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ৫ উইকেটে হেরে গেছে বাংলাদেশ। এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল উইন্ডিজ। আজ মঙ্গলবার একই ভেন্যুতে সিরিজ বাঁচাতে মাঠে নামবে টাইগাররা।
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মাঠে নামার আগে বোলারদের দিকে আঙুল তুলেছেন বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ওভারে ছয় উইকেটে ২৯৪ রান তোলে টাইগাররা। হাফ সেঞ্চুরি করেন তানজিদ হাসান, অধিনায়ক মিরাজ ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। অল্পের জন্য ফিফটি পাননি জাকের আলী।
কিন্তু তাদের মন ভেঙে ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক শাই হোপ ও শেরফানে রাদারাফোর্ড। প্রথমজন ফিরেছেন সেঞ্চুরির আভাস নিয়ে। দ্বিতীয়জন করেন বিধ্বংসী সেঞ্চুরি। এই দুজনের ব্যাটিং দৃঢ়তার কাছে স্রেফ আত্মসমর্পণ করেছেন বাংলাদেশের বোলাররা। সেন্ট কিটসে এত রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড ছিল না। এই ম্যাচের আগে সর্বোচ্চ ২৬৫ রান তাড়া করে জয়ের নজির ছিল। কিন্তু নিখাদ ব্যাটিং স্বর্গে বাংলাদেশের প্রায় তিনশ ছোঁয়া লক্ষ্যে পৌঁছাতে বেগ পেতে হলো না ওয়েস্ট ইন্ডিজের। টাইগারদের আরও রান করা উচিত ছিল কিনা এমন প্রশ্নও উঠেছে। কেননা ইনিংসজুড়ে ১৫৫টি ‘ডটবল’ খেলেছে তারা। তবু নিষ্প্রাণ উইকেটে বোলারদের কিছু না কিছু করার ছিল। তাসকিন-মিরাজরা প্রত্যাশার ন্যূনতমও পূরণ করতে পারেননি।
তাই ব্যাটিং নয়, মিরাজ দুষলেন বোলিং বিভাগকে। হারের পর বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেছেন, ‘হ্যাঁ, (ব্যাটিং নিয়ে) আমরা সন্তুষ্ট ছিলাম। এ ধরনের উইকেটে ২৯৪ খুব ভালো স্কোর। তাদেরকে কৃতিত্ব দিতেই হবে, তারা অনেক ভালো খেলেছে। বিশেষ করে শাই হোপ ও রাদারফোর্ড। ভালো জুটি গড়েছে তারা। মাঝের সময়টায় আমরা উইকেট নিতে পারিনি। আমাদের বোলারদের জন্য দিনটি কঠিন ছিল।’
এই ম্যাচ থেকে হারের শিক্ষা নিয়ে পরের ম্যাচে তা শুধরে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন মিরাজ। তার ভাষায়, ‘শুরুটা খুব ভালো করেছিলাম আমরা, বিশেষ করে নাহিদ রানা, তাসকিন ও তানজিম ভালো বল করেছে। কিন্তু মাঝের ওভারগুলোয় আমরা উইকেট বের করতে পারিনি। তবে এ ধরনের উইকেটে এমন কিছু হতেই পারে। উইকেট খুব ভালো এবং অবশ্যই ওদেরকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। এই ম্যাচ থেকে আমরা অনেক কিছুই শিখতে পারি। বেশ কিছু ভুল করেছি। পরের ম্যাচে আরও ভালো করায় মনোযোগ দিতে হবে। এখনও দুই ম্যাচ বাকি আছে। জয়ের জন্য পরিকল্পনা করতে হবে আমাদের। আমাদের ভালো সুযোগ আছে।’
গত অর্ধ যুগে ওয়ানডে সংস্করণে বাংলাদেশের ‘প্রিয়’ প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এ সময়ে টানা ১১টি ম্যাচ জিতেছে টাইগাররা। বাংলাদেশের বিপক্ষে হারের বৃত্ত ভাঙতে পেরে ভীষণ খুশি ক্যারিবীয় অধিনায়ক হোপ। তিনি বলেছেন, ‘ছেলেরা যেভাবে মাঠে নেমেছে এবং ১১ ম্যাচের ওই ধারা যেভাবে বদলে দিতে চেয়েছেৃ। ব্যাপারটি নিয়ে আমরা কথা বলেছিলাম। ব্যাটে-বলে যে ধারাবাহিকতা আমরা দেখাতে পেরেছি, সেটিও দারুণ। ফিল্ডিংয়ে আমাদের আরও তৎপর হতে হবে। সব মিলিয়ে আমি খুশি।’
২০১৮ সালে শেষবার বাংলাদেশকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ হারিয়েছিল এই হোপের ১৪৬ রানের ইনিংসের ওপর দাঁড়িয়ে। ঘুরে দাঁড়ানোর ম্যাচে তিনিও এবার দলের জয়ে রাখলেন অবদান। তবে জয়ের নায়ক ৮০ বলে ১১৩ রান করা রাদারফোর্ড। গত বছর এই সংস্করণে অভিষেকের পর থেকেই হেসে চলেছে তার ব্যাট। রাদারফোর্ড আট ইনিংসের পাঁচটিতে করেছেন ফিফটি। টাইগারদের বিপক্ষে পেলেন স্বপ্নের সেঞ্চুরির দেখা। তার জন্য প্রশংসার ঝাঁপি খুলে দিয়েছেন হোপ।
ক্যারিবীয় অধিনায়ক বলেছেন, ‘ব্যাটিংয়ের সে অনেক উন্নতি করেছে। বলা যায়, সামনে থেকে আমাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে সে। সবার কাছ থেকেই ধারাবাহিকতা চাই আমরা। প্রতিবার মাঠে গিয়েই সেটি দেখাচ্ছে রাদারফোর্ড। দারুণ সব শট খেলছে। অনেক পরিশ্রম করেছে নিজের খেলায় উন্নতি করতে। সব কিছুর ফল সে পাচ্ছে, এটা দেখে ভালো লাগছে।’ সতীর্থের ব্যাটিংয়ে খুশি হলেও নিজে ম্যাচটা শেষ করে আসতে না পারায় কিছুটা হতাশ হোপ। তার ভাষায়, ‘আমি বেশি হতাশ দলকে ম্যাচ জিতিয়ে ফিরতে না পেরে। রাদারফোর্ড সেঞ্চুরি করেছে, ওর জন্য আমি খুশি।’
প্রথম ওয়ানডে জিতলেও নির্ভার হতে পারছেন না হোপ। পরের দুই ম্যাচও জিততে চান তিনি। বলেছেন, ‘আমাদের নির্ভার থাকার সুযোগ নেই। দুদিনের মধ্যে আমাদের আরেকটি ম্যাচ খেলতে হবে। গত কয়েক মাস ধরে আমরা ভালো খেলছি। এটা ধরে রাখতে হবে। এই সিরিজে আরও দুবার তা করে দেখাতে হবে।’