জাবির ইব্রাহিমের বয়স সবে মাত্র ছয় বছর পেরিয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নিয়ে খুব বেশি কিছু তার বোঝার কথা না। তবে টেলিভিশন দেখে ও বড় ভাই-বোনদের কাছে জেনে সে আফসোস করত। শিশুসহ অন্যদেরকে মেরে ফেলার বিষয়টি তাকে খুব পীড়া দিত।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, ৫ আগস্ট সকালে মাথায় একটি হেলমেট পরে জাবির। এরপর তার বাবাকে বলে, ‘আমি আর্মি অফিসার হব’। বাবা প্রশ্ন করেন, ‘কেন?’ জাবির বলতে থাকে, ‘আমি আর্মি হয়ে পুলিশকে মারব। পুলিশ আমার ভাইদেরকে মারতেছে এ জন্য তাদেরকে মারব।
’ বাড়ির সবাই তার কথায় অবাক হয়ে যায়।ওইদিন দুপুরের দিকে স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে ঢাকার উত্তরা এলাকায় বিজয়োল্লাসে যোগ দিতে যান কবির হোসেন ভূঁইয়া। হাজার হাজার মানুষ তখন আনন্দ মিছিল করছিল। খুব খুশি ছিল শিশু জাবির।
কখনো মুষ্টিবদ্ধ হাত উঁচিয়ে, কখনো আঙ্গুল উঁচিয়ে বিজয় উদযাপনে সেও ছিল ব্যস্ত।কথা হলে কবির হোসেন বলেন, ‘৫ আগস্ট বিকেল সাড়ে চারটার দিকে একটি সেতুর ওপর থাকা অবস্থায় হঠাৎ গুলির শব্দ শুনতে পাই। লোকজনও দৌঁড়াদৌঁড়ি শুরু করে। আমিও পরিবারের লোকজন নিয়ে সরে যাওয়ার চেষ্টা করি। জাবিরের ডান হাত ছিল আমার বাম হাতে ধরা।
হঠাৎ একটি গুলি এসে জাবিরের পায়ে লাগে। একটু দূর গিয়েই জাবির নিস্তেজ হয়ে পড়ে। তাকে কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে চিকিৎসকদের অনেক অবহেলা ছিল। পরে ঢাকা স্পেশালাইজড হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসক জাবিরকে মৃত ঘোষণা করেন।’জাবিরদের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার মনিয়ন্দ ইউনিয়নের তুলাই শিমুল গ্রামে। তবে তাদের পরিবার ঢাকার উত্তরায় থাকত। জাবির পড়ত উত্তরার কেসি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নার্সারি বিভাগে। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে জাবির ছিল ছোট।
জাবিরের নামে মোগড়া-মনিয়ন্দ-তুলাই শিমুল সড়কের নামকরণ কিংবা তুলাই শিমুল এলাকার প্রস্তাবিত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করার দাবি জানিয়েছেন তার বাবা কবির হোসেন ভূঁইয়া। আখাউড়ায় অনুষ্ঠিত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত-নিহতদের স্মরণে আয়োজিত সভায় তিনি এ দাবি তুলে ধরেন।
জাবিরের মৃত্যুকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না তার পরিবার। জাবিরের পরিবারসহ তার চাচাদের পরিবারের সবাই আন্দোলনে যোগ দেয় বলে জানিয়েছেন তার বাবা। জাবিরের নামে কোনো একটা প্রতিষ্ঠানের বা স্থাপনার নামকরণ হওয়ায় আশায় আছেন পরিবারের সদস্যরা।