ঢাকা ০৭:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২২ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

১৫ বছরে টাকায় ধস : ৬৭ টাকার ডলার ছাড়ায় ১২০ টাকা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:৩৪:১৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ অক্টোবর ২০২৪
  • ৩ বার
হাসিনা সরকারের আমলে বিগত ১৫ বছরে মূল্যস্ফীতির ভয়াবহ চাপে টাকার মানে ধস নেমেছিল। মার্কিন ডলারের বাজার হয়েছিল লাগামহীন। মুদ্রাবাজার, পুঁজিবাজার ও ডলার বাজার (বৈদেশিক মুদ্রা)- অর্থনীতির এই তিন খাত প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। ৬৭ টাকার ডলার ১২০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছায়।

সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য সর্বনাশ ডেকে আনে।বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে দেশ থেকে কোটি কোটি ডলার পাচার ও ব্যাংক ব্যবস্থায় নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিরি সৃষ্টি হয়। মুদ্রাবাজারে ভয়াবহ দুর্নীতির কারণে ডজনের বেশি ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম হয়। কয়েকটি ব্যাংক মার্জার করতে বাধ্য হয়।

শেষ দিকে এ ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার কোনো সরবরাহ ছিল না। ফলে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় সব ধরনের লেনদেন।পুঁজিবাজার থেকেও হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেন হাসিনা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ লোকেরা। যার পুরোটা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে।

ডলারসংকটের কারণে এলসি বন্ধ করতে হয়েছে। ফলে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের ব্যবসা কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খেতে হয়েছে।জানা গেছে, ২০০৮ সালের অক্টোবরে দেশে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৮ হাজার কোটি টাকা। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ওই বছরের অক্টোবরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ২ হাজার টাকা বৃদ্ধি পায়। এই বৃদ্ধির সূচক আর থামেনি।

প্রতিবছর খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। বেড়েছে ব্যাংক লুটপাট। ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে ঋণ নিয়ে ব্যাংক দেউলিয়া করে দেওয়া হয়েছে।অনিয়ম-জালিয়াতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, লুটপাটে অংশীদারদের হাতে ব্যাংকব্যবস্থা ছেড়ে দেওয়া হয়। তারা নতুন ব্যাংক অনুমোদন দিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা লুট করেছে। এর চাপ পড়ে দেশের পুরো অর্থনীতিতে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো লুটপাটের কেন্দ্রে পরিণত করা হয়। ব্যাংকের টাকা লুট করে ডলারে রূপান্তর করে কোটি কোটি ডলার পাচার করে দেওয়া হয়।

জানা গেছে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার সময় প্রতি ডলারের দাম ছিল ৬৭ টাকা। এই দর বেড়ে ২০১১ সাল পর্যন্ত ডলারের বিনিময় হার ওঠানামা করে ৬৯ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে। ২০১২ সাল থেকে ডলারের দাম এক লাফে ৭৬ টাকায় পৌঁছায়। ২০১৪ সালে হাসিনা সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে ডলার বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে।
ব্যাংক থেকে নানা জালিয়াতি করে অবাধে ডলার পাচার শুরু হয়। সরকার বিদেশি ঋণ এনে এই ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা করে। টাকার অবমূল্যায়ন করা হয় কয়েক দফা। এতে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি তো হয়নি, বরং তা অর্থ পাচারকারীদের আরও সহায়তা করে। বাড়তে থাকে ডলারের সংকট,  সেই সঙ্গে ডলারের দর। ২০১৭ সালের অক্টোবরে ডলারের দর ছিল ৮০ টাকা, ২০২০ সালে ৮৩ টাকা। ২০২১ সালে ৮৫ টাকা।

এর পর ২০২২ সালে হাইজাম্প দিয়ে ডলারের দর পৌঁছায় ১০০ টাকা। পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে ওঠে। ডলারের চরম সংকট দেখা যায়। ২০২৩ সালে খোলাবাজারে ডলার দর ১৩০ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়। এর পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংকোচন নীতির কারণে ডলারের দর কিছুটা কমে আসে। বাংলাদেশ ব্যাংক ক্রলিং পদ্ধতি চালু করলে ডলারের দর ১২০ টাকায় ওঠানামা করে।

২০১৬ সালে এসে ব্যাংক খাতে বড় কয়েকটি জালিয়াতির ঘটনা প্রকাশিত হয়। সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেংকারী, বেসিক ব্যাংকের কেলেংকারী। দুই ঘটনায় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা সামনে আসে। এতে ব্যাংক খাতে চরম নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়। এই জালিয়াতির পুরো টাকা ডলারে রূপান্তর করে দুবাই, সিঙ্গাপুর পাচার করার বিষয়টি প্রকাশ পায়। দেশের মূল্যস্ফীতির ভয়াবহ সংকটে পড়ে দেশের অর্থনীতি। সরকার এই নৈরাজ্য ঠেকানোর পরিবর্তে আরও উৎসাহিত করার পদক্ষেপ নেয়।

ব্যাংকের নেতৃত্বে এনে বসানো হয় হাজার কোটি টাকা লুটপাটের সঙ্গে জড়িতদের। যাদের বিরুদ্ধে বড় বড় দুর্নীতির অভিযোগ ছিল তাদের হাতে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়। রাষ্ট্রীয় মালিকাধীন ব্যাংকগুলোর হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করা হয়। মিথ্যা ঘোষণায় এলসি করে রপ্তানি দেখানো হলেও সেই মূল্য দেশে না এনে বিদেশে পাচার করা হয়।  এতে টাকার মান কমতে কমতে গিয়ে একেবারে তলানিতে ঠেকে। টাকার মান কমতে থাকে ধারাবাহিকভাবে।

২০১০ সালে জানুয়ারি মাসে দেশে সোনার (২২ ক্যারট) ভরি ছিল ৩২ হাজার ৮৯২ টাকা। ২০২৪ সালে জানুয়ারিতে এসে ভরি দাঁড়ায় ১ লাখ ১২ হাজার ৪৪০ টাকা। অর্থাৎ ১৫ বছরে টাকার অবমূল্যায়ন সাধারণ মানুষের কষ্ট বাড়িয়েছে ভয়াবহভাবে।

২০১০ সালে যে মোটা চালের কেজি ছিল ২৪ থেকে ২৬ টাকা। এখন সেটা ৬০ টাকার ওপর। ২০১০ সালে গরুর মাংসের কেজি ছিল ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা। ২০২৩ সালে গরুর মাংসের কেজি হয় ৮০০ টাকার ওপর। বিগত সরকার নতুন টাকা ছাপিয়ে ঋণ নিয়ে উন্নয়ন বাজেটে ব্যবহার করে দেশের অর্থনীতিকে ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়। ক্রমবর্ধমান ব্যয় ও দুর্বল চাহিদার কারণে দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ ব্যবসা প্রভাবিত হয়েছে।

দেশের ব্যবসা পরিস্থিতি নিয়ে ২৫টিরও বেশি খাতের বহুজাতিক, স্থানীয় বড় কোম্পানি, স্টার্টআপ ও এসএমই খাতের ১৬৭টি কোম্পানি নিয়ে একটি জরিপে বলা হয়েছে, টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন ছাড়াও আর্থিক অনিয়ম, উচ্চখেলাপি, নগদ ঘাটতি ও সঞ্চয় হ্রাসের ফলে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিভিন্ন ধরনের আর্থিক চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। ক্রমবর্ধমান ব্যয় এবং কর্মক্ষম নগদ প্রবাহের ঘাটতি কম্পানিগুলো বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে।

বিদেশি মুদ্রার বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করায় অনেক বেসরকারি কোম্পানিও বর্তমানে ক্ষতির সম্মুখীন। ডলারের বিপরীতে টাকার তীব্র অবমূল্যায়নের পাশাপাশি বিলম্বিত এলসি পেমেন্ট সেটেলমেন্টের কারণে এ ধরনের ক্ষতি বাড়ছে বলে খাত-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়েছে যেসব কম্পানির বিদেশি ঋণ রয়েছে এবং উৎপাদিত পণ্যের কাঁচামাল বেশির ভাগই আমদানিনির্ভর।

জানতে চাইলে, বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ডলারের এই উচ্চ দরের কারণে দেশের মূল্যস্ফীতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। এতে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন কঠিন করে তুলেছে। ভোক্তাদের এই দুর্গতির এখনো পরিবর্তন হয়নি। যারা বড় খেলাপি তাদের সুবিধা হয়েছে। তাদের মূল্যস্ফীতে কোনো সমস্যা হয়নি। হয়েছে দেশের অর্থনীতির, দেশের সাধারণ মানুষের।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

১৫ বছরে টাকায় ধস : ৬৭ টাকার ডলার ছাড়ায় ১২০ টাকা

আপডেট টাইম : ০৬:৩৪:১৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ অক্টোবর ২০২৪
হাসিনা সরকারের আমলে বিগত ১৫ বছরে মূল্যস্ফীতির ভয়াবহ চাপে টাকার মানে ধস নেমেছিল। মার্কিন ডলারের বাজার হয়েছিল লাগামহীন। মুদ্রাবাজার, পুঁজিবাজার ও ডলার বাজার (বৈদেশিক মুদ্রা)- অর্থনীতির এই তিন খাত প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। ৬৭ টাকার ডলার ১২০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছায়।

সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য সর্বনাশ ডেকে আনে।বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে দেশ থেকে কোটি কোটি ডলার পাচার ও ব্যাংক ব্যবস্থায় নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিরি সৃষ্টি হয়। মুদ্রাবাজারে ভয়াবহ দুর্নীতির কারণে ডজনের বেশি ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম হয়। কয়েকটি ব্যাংক মার্জার করতে বাধ্য হয়।

শেষ দিকে এ ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার কোনো সরবরাহ ছিল না। ফলে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় সব ধরনের লেনদেন।পুঁজিবাজার থেকেও হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেন হাসিনা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ লোকেরা। যার পুরোটা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে।

ডলারসংকটের কারণে এলসি বন্ধ করতে হয়েছে। ফলে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের ব্যবসা কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খেতে হয়েছে।জানা গেছে, ২০০৮ সালের অক্টোবরে দেশে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৮ হাজার কোটি টাকা। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ওই বছরের অক্টোবরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ২ হাজার টাকা বৃদ্ধি পায়। এই বৃদ্ধির সূচক আর থামেনি।

প্রতিবছর খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। বেড়েছে ব্যাংক লুটপাট। ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে ঋণ নিয়ে ব্যাংক দেউলিয়া করে দেওয়া হয়েছে।অনিয়ম-জালিয়াতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, লুটপাটে অংশীদারদের হাতে ব্যাংকব্যবস্থা ছেড়ে দেওয়া হয়। তারা নতুন ব্যাংক অনুমোদন দিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা লুট করেছে। এর চাপ পড়ে দেশের পুরো অর্থনীতিতে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো লুটপাটের কেন্দ্রে পরিণত করা হয়। ব্যাংকের টাকা লুট করে ডলারে রূপান্তর করে কোটি কোটি ডলার পাচার করে দেওয়া হয়।

জানা গেছে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার সময় প্রতি ডলারের দাম ছিল ৬৭ টাকা। এই দর বেড়ে ২০১১ সাল পর্যন্ত ডলারের বিনিময় হার ওঠানামা করে ৬৯ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে। ২০১২ সাল থেকে ডলারের দাম এক লাফে ৭৬ টাকায় পৌঁছায়। ২০১৪ সালে হাসিনা সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে ডলার বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে।
ব্যাংক থেকে নানা জালিয়াতি করে অবাধে ডলার পাচার শুরু হয়। সরকার বিদেশি ঋণ এনে এই ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা করে। টাকার অবমূল্যায়ন করা হয় কয়েক দফা। এতে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি তো হয়নি, বরং তা অর্থ পাচারকারীদের আরও সহায়তা করে। বাড়তে থাকে ডলারের সংকট,  সেই সঙ্গে ডলারের দর। ২০১৭ সালের অক্টোবরে ডলারের দর ছিল ৮০ টাকা, ২০২০ সালে ৮৩ টাকা। ২০২১ সালে ৮৫ টাকা।

এর পর ২০২২ সালে হাইজাম্প দিয়ে ডলারের দর পৌঁছায় ১০০ টাকা। পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে ওঠে। ডলারের চরম সংকট দেখা যায়। ২০২৩ সালে খোলাবাজারে ডলার দর ১৩০ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়। এর পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংকোচন নীতির কারণে ডলারের দর কিছুটা কমে আসে। বাংলাদেশ ব্যাংক ক্রলিং পদ্ধতি চালু করলে ডলারের দর ১২০ টাকায় ওঠানামা করে।

২০১৬ সালে এসে ব্যাংক খাতে বড় কয়েকটি জালিয়াতির ঘটনা প্রকাশিত হয়। সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেংকারী, বেসিক ব্যাংকের কেলেংকারী। দুই ঘটনায় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা সামনে আসে। এতে ব্যাংক খাতে চরম নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়। এই জালিয়াতির পুরো টাকা ডলারে রূপান্তর করে দুবাই, সিঙ্গাপুর পাচার করার বিষয়টি প্রকাশ পায়। দেশের মূল্যস্ফীতির ভয়াবহ সংকটে পড়ে দেশের অর্থনীতি। সরকার এই নৈরাজ্য ঠেকানোর পরিবর্তে আরও উৎসাহিত করার পদক্ষেপ নেয়।

ব্যাংকের নেতৃত্বে এনে বসানো হয় হাজার কোটি টাকা লুটপাটের সঙ্গে জড়িতদের। যাদের বিরুদ্ধে বড় বড় দুর্নীতির অভিযোগ ছিল তাদের হাতে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়। রাষ্ট্রীয় মালিকাধীন ব্যাংকগুলোর হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করা হয়। মিথ্যা ঘোষণায় এলসি করে রপ্তানি দেখানো হলেও সেই মূল্য দেশে না এনে বিদেশে পাচার করা হয়।  এতে টাকার মান কমতে কমতে গিয়ে একেবারে তলানিতে ঠেকে। টাকার মান কমতে থাকে ধারাবাহিকভাবে।

২০১০ সালে জানুয়ারি মাসে দেশে সোনার (২২ ক্যারট) ভরি ছিল ৩২ হাজার ৮৯২ টাকা। ২০২৪ সালে জানুয়ারিতে এসে ভরি দাঁড়ায় ১ লাখ ১২ হাজার ৪৪০ টাকা। অর্থাৎ ১৫ বছরে টাকার অবমূল্যায়ন সাধারণ মানুষের কষ্ট বাড়িয়েছে ভয়াবহভাবে।

২০১০ সালে যে মোটা চালের কেজি ছিল ২৪ থেকে ২৬ টাকা। এখন সেটা ৬০ টাকার ওপর। ২০১০ সালে গরুর মাংসের কেজি ছিল ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা। ২০২৩ সালে গরুর মাংসের কেজি হয় ৮০০ টাকার ওপর। বিগত সরকার নতুন টাকা ছাপিয়ে ঋণ নিয়ে উন্নয়ন বাজেটে ব্যবহার করে দেশের অর্থনীতিকে ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়। ক্রমবর্ধমান ব্যয় ও দুর্বল চাহিদার কারণে দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ ব্যবসা প্রভাবিত হয়েছে।

দেশের ব্যবসা পরিস্থিতি নিয়ে ২৫টিরও বেশি খাতের বহুজাতিক, স্থানীয় বড় কোম্পানি, স্টার্টআপ ও এসএমই খাতের ১৬৭টি কোম্পানি নিয়ে একটি জরিপে বলা হয়েছে, টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন ছাড়াও আর্থিক অনিয়ম, উচ্চখেলাপি, নগদ ঘাটতি ও সঞ্চয় হ্রাসের ফলে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিভিন্ন ধরনের আর্থিক চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। ক্রমবর্ধমান ব্যয় এবং কর্মক্ষম নগদ প্রবাহের ঘাটতি কম্পানিগুলো বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে।

বিদেশি মুদ্রার বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করায় অনেক বেসরকারি কোম্পানিও বর্তমানে ক্ষতির সম্মুখীন। ডলারের বিপরীতে টাকার তীব্র অবমূল্যায়নের পাশাপাশি বিলম্বিত এলসি পেমেন্ট সেটেলমেন্টের কারণে এ ধরনের ক্ষতি বাড়ছে বলে খাত-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়েছে যেসব কম্পানির বিদেশি ঋণ রয়েছে এবং উৎপাদিত পণ্যের কাঁচামাল বেশির ভাগই আমদানিনির্ভর।

জানতে চাইলে, বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ডলারের এই উচ্চ দরের কারণে দেশের মূল্যস্ফীতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। এতে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন কঠিন করে তুলেছে। ভোক্তাদের এই দুর্গতির এখনো পরিবর্তন হয়নি। যারা বড় খেলাপি তাদের সুবিধা হয়েছে। তাদের মূল্যস্ফীতে কোনো সমস্যা হয়নি। হয়েছে দেশের অর্থনীতির, দেশের সাধারণ মানুষের।