ঢাকা ০৬:১৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
সংবাদ প্রকাশের পরও গুরুত্ব দেয়নি এলজিইডি, ব্রীজের এ্যাপ্রোচ এখন নদীতে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে মিললো বিশাল সুখবর শরতে কাশফুলের রাজ্যে টানা ৪ দিনের ছুটিতে টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় মধ্যরাত থেকে ২২ দিন ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ বাফুফে নির্বাচনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেন যারা শেখ হাসিনার ‘ট্রাভেল ডকুমেন্ট’ নিয়ে যা বললেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এমন দেশ গড়তে চাই, সব সম্প্রদায়ের সমান অধিকারের বাংলাদেশ : প্রধান উপদেষ্টা- জ্বালানি সংকট দূর করতে বাপেক্স আরও ১৫০ কূপ খনন করবে: জ্বালানি উপদেষ্টা ইংল্যান্ড আমাদের সঙ্গে ৮০০ করে, বাংলাদেশও হারায়

কতদিন থাকব তা আমরাই বলবো: ভয়েস অফ আমেরিকাকে ড. ইউনূস

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:০১:৫২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২ অক্টোবর ২০২৪
  • ৯ বার

আগামী ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে সেনাপ্রধানের বক্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ দেড় বছর কি না এমন প্রশ্নে ড. ইউনূস বলেন, ইচ্ছে করলে তা ধরে নিতে পারেন। কিন্তু এটি সরকারের মতামত নয়। সরকার এখন পর্যন্ত কোনো মত দেয়নি। এটি আমাদেরকেই বলতে হবে। আমাদের মুখ থেকে যখন শুনবেন তখন সেটাই হবে তারিখ।

গত শুক্রবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ভাষণ শেষে ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস।

অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। তবে উপদেষ্টা পরিষদ এই বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।

বর্তমানে ভারতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরানোর বিষয়ে তিনি বলেন, এটি আইনগত বিষয়, এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে।

ভারতের সাথে সম্পর্ক প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, দুই দেশের মধ্যে স্বার্থ হলো অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও মধুর সম্পর্ক গড়ে তোলা। তবে মাঝে মধ্যে কতগুলা প্রশ্ন এসে যায়, যেখানে সম্পর্কে একটু চির ধরে। যেমন, সীমান্তে গুলি করার ফলে বাচ্চা ছেলেমেয়ে মারা গেলো। এই বিষয়গুলো মনে কষ্ট দেয়। তবে ভারতের সরকার ইচ্ছা করে এসব করেছে তা মনে করি না। তবে কারণগুলো বের করে তা যেন বন্ধ করতে পারি। যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে এবং মানুষ নিরাপদে চলাচল করতে পারে।

ছাত্ররা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে ছিল। সরকারেও তাদের প্রতিনিধি রয়েছে। তবে অনেক ছাত্রকে দেশের নানা ক্ষেত্র ও প্রতিষ্ঠানে কতৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করতে দেখা যাচ্ছে।

শিক্ষার্থীরাই কি দেশ চালাচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, শিক্ষার্থীরা দেশ চালাচ্ছে বলছি না। তবে তাদের চালানো উচিত। আমি এই দায়িত্ব পালনের আগে থেকেই বলছি যে তরুণদের হাতে ছেড়ে দেয়া উচিত।

ক্ষমতা নেয়ার প্রায় দেড় মাস পর সেনাবাহিনীর কমিশন অফিসারদের ম্যাজিস্ট্রেসির ক্ষমতা দেয়ার প্রয়োজন হলো কেন? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের সময় ছাত্রদের হত্যা করাসহ গণবিরোধী ভূমিকা পালন করায় পুলিশের ব্যাপারে জনগণের মধ্যে একটি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। গণঅভ্যুত্থানের পর পুলিশের মনোবল ভেঙে যাওয়ায় তাদের দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা যাচ্ছিল না। আনসারকে দায়িত্ব দিয়েও কোনো লাভ হয়নি। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সেনাবাহিনীকে দুইমাসের জন্য ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।

ড. ইউনূস আরও বলেন, নানা ধরণের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। সমাবেশ হচ্ছে। বিশেষ করে পোশাক শিল্প কারখানাগুলোতে শ্রমিকদের অসন্তোষ দেখা দিলো। তখন ভাবলাম এভাবে চলতে দিলে তা বাড়বে। তখন সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেয়া বিষয়টি সামনে আসলো। সেনাবাহিনী বললো আমাদেরকে কেউ পরোয়া করছে না। কারণ আমাদের কোনো ক্ষমতা নেই। তখন সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেয়া হলো।

গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, বিশেষ করে পুলিশ হত্যার ঘটনাগুলো তদন্ত ও বিচারের প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সে যেখানে অপরাধ করেছে তার বিচার হবে। তা না হলে তো বিচার সম্পন্ন হবে না।

এ সাক্ষাৎকারে ডঃ মুহাম্মদ ইউনূস ১৯৭১-এর যুদ্ধাপরাধের জন্য পাকিস্তান সরকারের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়া, সার্ক পুনরায় কার্যকরভাবে চালু করার ব্যাপারে পাকিস্তান, নেপাল, ভূটানের সাথে জাতিসংঘ অধিবেশনের ব্যস্ততার ফাঁকে আলোচনা করা, সংবিধান সংস্কারসহ নানাক্ষেত্রে সংস্কারের বিষয়ে তার সরকারের উদ্যোগ ও অগ্রগতি, বাংলাদেশের পার্বত্য জেলাগুলোতে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর বাংলাদেশী নাগরিকদের সঙ্গে বাঙালিদের সাম্প্রতিক সংঘর্ষ ও সহিংসতা, রোহিঙ্গা সংকট ইত্যাদি বিষয়েও কথা বলেন।

পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা তো মাত্র আসলাম। এত বছরের একটা সমস্যা, দুদিনে সমাধান হবে টা আশা করা তো ঠিক হবে না। একতী শান্তি চুক্তি হয়েছে। সেই চুক্তি বহু বছরের চেষ্টায় হয়েছে। তবে সেই শান্তি চুক্তি বহাল করা যাচ্ছে না, মান্য করছে না। এখন কি আবার নতুন করে শান্তি চুক্তি করতে হবে? সেটা আমাদের সরকার পেরে উঠবে না। এটা পরবর্তীতে যেই নির্বাচিত সরকার আসবে, তারা করবে।

নতুন করে রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করলে সে বিষয়ে সরকারের কী সিদ্ধান্ত কী নেবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা আসতে চাইলে তাদের আসতে দেব। আমরা তাদের গ্রহণ করব।

সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার শেষ করে একটি নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আয়োজন করা অন্তর্বর্তী সরকারের মূল লক্ষ্য বলেও জানান তিনি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সংবাদ প্রকাশের পরও গুরুত্ব দেয়নি এলজিইডি, ব্রীজের এ্যাপ্রোচ এখন নদীতে

কতদিন থাকব তা আমরাই বলবো: ভয়েস অফ আমেরিকাকে ড. ইউনূস

আপডেট টাইম : ১২:০১:৫২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২ অক্টোবর ২০২৪

আগামী ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে সেনাপ্রধানের বক্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ দেড় বছর কি না এমন প্রশ্নে ড. ইউনূস বলেন, ইচ্ছে করলে তা ধরে নিতে পারেন। কিন্তু এটি সরকারের মতামত নয়। সরকার এখন পর্যন্ত কোনো মত দেয়নি। এটি আমাদেরকেই বলতে হবে। আমাদের মুখ থেকে যখন শুনবেন তখন সেটাই হবে তারিখ।

গত শুক্রবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ভাষণ শেষে ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস।

অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। তবে উপদেষ্টা পরিষদ এই বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।

বর্তমানে ভারতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরানোর বিষয়ে তিনি বলেন, এটি আইনগত বিষয়, এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে।

ভারতের সাথে সম্পর্ক প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, দুই দেশের মধ্যে স্বার্থ হলো অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও মধুর সম্পর্ক গড়ে তোলা। তবে মাঝে মধ্যে কতগুলা প্রশ্ন এসে যায়, যেখানে সম্পর্কে একটু চির ধরে। যেমন, সীমান্তে গুলি করার ফলে বাচ্চা ছেলেমেয়ে মারা গেলো। এই বিষয়গুলো মনে কষ্ট দেয়। তবে ভারতের সরকার ইচ্ছা করে এসব করেছে তা মনে করি না। তবে কারণগুলো বের করে তা যেন বন্ধ করতে পারি। যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে এবং মানুষ নিরাপদে চলাচল করতে পারে।

ছাত্ররা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে ছিল। সরকারেও তাদের প্রতিনিধি রয়েছে। তবে অনেক ছাত্রকে দেশের নানা ক্ষেত্র ও প্রতিষ্ঠানে কতৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করতে দেখা যাচ্ছে।

শিক্ষার্থীরাই কি দেশ চালাচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, শিক্ষার্থীরা দেশ চালাচ্ছে বলছি না। তবে তাদের চালানো উচিত। আমি এই দায়িত্ব পালনের আগে থেকেই বলছি যে তরুণদের হাতে ছেড়ে দেয়া উচিত।

ক্ষমতা নেয়ার প্রায় দেড় মাস পর সেনাবাহিনীর কমিশন অফিসারদের ম্যাজিস্ট্রেসির ক্ষমতা দেয়ার প্রয়োজন হলো কেন? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের সময় ছাত্রদের হত্যা করাসহ গণবিরোধী ভূমিকা পালন করায় পুলিশের ব্যাপারে জনগণের মধ্যে একটি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। গণঅভ্যুত্থানের পর পুলিশের মনোবল ভেঙে যাওয়ায় তাদের দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা যাচ্ছিল না। আনসারকে দায়িত্ব দিয়েও কোনো লাভ হয়নি। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সেনাবাহিনীকে দুইমাসের জন্য ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।

ড. ইউনূস আরও বলেন, নানা ধরণের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। সমাবেশ হচ্ছে। বিশেষ করে পোশাক শিল্প কারখানাগুলোতে শ্রমিকদের অসন্তোষ দেখা দিলো। তখন ভাবলাম এভাবে চলতে দিলে তা বাড়বে। তখন সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেয়া বিষয়টি সামনে আসলো। সেনাবাহিনী বললো আমাদেরকে কেউ পরোয়া করছে না। কারণ আমাদের কোনো ক্ষমতা নেই। তখন সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেয়া হলো।

গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, বিশেষ করে পুলিশ হত্যার ঘটনাগুলো তদন্ত ও বিচারের প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সে যেখানে অপরাধ করেছে তার বিচার হবে। তা না হলে তো বিচার সম্পন্ন হবে না।

এ সাক্ষাৎকারে ডঃ মুহাম্মদ ইউনূস ১৯৭১-এর যুদ্ধাপরাধের জন্য পাকিস্তান সরকারের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়া, সার্ক পুনরায় কার্যকরভাবে চালু করার ব্যাপারে পাকিস্তান, নেপাল, ভূটানের সাথে জাতিসংঘ অধিবেশনের ব্যস্ততার ফাঁকে আলোচনা করা, সংবিধান সংস্কারসহ নানাক্ষেত্রে সংস্কারের বিষয়ে তার সরকারের উদ্যোগ ও অগ্রগতি, বাংলাদেশের পার্বত্য জেলাগুলোতে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর বাংলাদেশী নাগরিকদের সঙ্গে বাঙালিদের সাম্প্রতিক সংঘর্ষ ও সহিংসতা, রোহিঙ্গা সংকট ইত্যাদি বিষয়েও কথা বলেন।

পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা তো মাত্র আসলাম। এত বছরের একটা সমস্যা, দুদিনে সমাধান হবে টা আশা করা তো ঠিক হবে না। একতী শান্তি চুক্তি হয়েছে। সেই চুক্তি বহু বছরের চেষ্টায় হয়েছে। তবে সেই শান্তি চুক্তি বহাল করা যাচ্ছে না, মান্য করছে না। এখন কি আবার নতুন করে শান্তি চুক্তি করতে হবে? সেটা আমাদের সরকার পেরে উঠবে না। এটা পরবর্তীতে যেই নির্বাচিত সরকার আসবে, তারা করবে।

নতুন করে রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করলে সে বিষয়ে সরকারের কী সিদ্ধান্ত কী নেবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা আসতে চাইলে তাদের আসতে দেব। আমরা তাদের গ্রহণ করব।

সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার শেষ করে একটি নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আয়োজন করা অন্তর্বর্তী সরকারের মূল লক্ষ্য বলেও জানান তিনি।