ঢাকা ১০:৪৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২২ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি চেয়ার আছে, নেতা নেই

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:৫৭:০০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ১১ বার

সিনেমার অভিনয়শিল্পীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি গঠিত হলেও গত কয়েক বছর অন্যান্য ইস্যুতে আলোচনায় ছিল সংগঠনটি। বিশেষ করে শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের চেয়ার ছিল আলোচনার কেন্দ্রে। ২০২২-২৪ মেয়াদে জায়েদ-নিপুণ, পরবর্তী সময়ে ডিপজল-নিপুণের দ্বন্দ্বে বিরক্ত ছিলেন অভিনয়শিল্পীরাও। কোনো সমালোচনাই থামাতে পারছিল না তাঁদের। চেয়ার দখলের যুদ্ধ হাস্যরসের জন্ম দিয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝেও। কেউ বলতে পারছিলেন না চেয়ার দখলের এ লড়াইয়ের শেষ হবে কবে। তবে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বদলে গেছে দৃশ্যপট। শিল্পী সমিতির অফিসে সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারটি আগের জায়গায় রয়ে গেলেও চেয়ারের পেছনে ছুটতে থাকা মানুষগুলোকে আর দেখা যাচ্ছে না।

২০২২-২৪ মেয়াদের শিল্পী সমিতির নির্বাচনের সময় থেকেই শুরু হয় সাধারণ সম্পাদকের চেয়ার দখলের লড়াই। সেই নির্বাচনে ১৩ ভোটে নিপুণ আক্তারকে হারিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন জায়েদ খান। ভোটে হেরে গেলেও নির্বাচনের আপিল বোর্ডের কাছে জায়েদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ করেন নিপুণ। ফল প্রকাশের পরদিন বিকেলে এফডিসির বাগানে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিল করে নিপুণকে জয়ী ঘোষণা করে নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহানের নেতৃত্বাধীন আপিল বোর্ড।

শপথ নিয়ে চেয়ারে বসলেও স্বস্তিতে থাকতে পারেননি নিপুণ। বিচার চেয়ে আদালতে যান জায়েদ। হাইকোর্ট জায়েদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্ত বাতিল করে সাধারণ সম্পাদকের পদে স্থিতাবস্থা জারি করেন। সেখানেই থেমে থাকেননি জায়েদ।

ভুয়া কাগজ দেখিয়ে সমিতির সভাপতির কাছ থেকে শপথও নেন। পরে আদালতে হাজির হন নিপুণ। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত করেন আপিল বিভাগ। সেই সুযোগে চেয়ারে বসেন নিপুণ। এক দিকে নিপুণ দায়িত্ব পালন করতে থাকেন, আরেক দিকে আদালতে মামলা চলতে থাকে। পাশাপাশি দুজনের মধ্যে চলমান থাকে বাগ্‌যুদ্ধ। আদালতে মামলা নিষ্পত্তি না হলেও শেষ হয়ে যায় কমিটির মেয়াদ।

২০২৪-২৬ মেয়াদে নিপুণ এবার পরাজিত হন মনোয়ার হোসেন ডিপজলের কাছে। ফল ঘোষণার সময় ডিপজলকে ফুল দিয়ে বরণ করে নিলে অনেকেই মনে করেছিলেন শেষ হলো চেয়ারের যুদ্ধ। তবে এক মাস না পেরোতেই পুরোনো রূপে ফেরেন নিপুণ। তাঁর করা রিটে সাধারণ সম্পাদক পদে মনোয়ার হোসেন ডিপজলের দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট।

এরপর ডিপজল ও নিপুণ মেতে ওঠেন একে অপরের সমালোচনায়। ডিপজলকে ‘অশিক্ষিত’ বলে কটাক্ষ করেন নিপুণ। অন্যদিকে, ‘নিপুণের পেছনে বড় শক্তি আছে’ বলে অভিযোগ করেন ডিপজল। নিপুণের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। দুজনের কথার যুদ্ধে শামিল হতে দেখা যায় জায়েদ খানকেও। পরবর্তী সময়ে আট সপ্তাহের জন্য ডিপজলের সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞাবিষয়ক হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন আপিল বিভাগ।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের সব মাধ্যমেই পরিবর্তনের ছোঁয়া লক্ষ করা যাচ্ছে। বদল এসেছে শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের চেয়ার-যুদ্ধের দৃশ্যপটেও। গত ৫ আগস্টের পর থেকে আড়ালে রয়েছেন ডিপজল, নিপুণ ও জায়েদ। তিনজনই জড়িয়েছেন বিতর্কে। ডিপজল ও জায়েদ খানের বিরুদ্ধে করা হয়েছে হত্যা মামলা। আর এক আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন নিপুণ। জানা গেছে, জায়েদ ও নিপুণ দুজনেই এখন আছেন দেশের বাইরে। অন্যদিকে, দেশে থাকলেও এখনো এফডিসিতে পা রাখেননি ডিপজল।

ডিপজল, নিপুণ ও জায়েদ আড়ালে চলে গেলেও থেমে নেই শিল্পী সমিতির কর্মকাণ্ড। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা ও বন্যার্তদের সহায়তায় তহবিল সংগ্রহেও সরব ছিল সংগঠনটি। তবে ফাঁকা পড়ে আছে সাধারণ সম্পাদকের বহুল আলোচিত চেয়ারটি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি চেয়ার আছে, নেতা নেই

আপডেট টাইম : ০৬:৫৭:০০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সিনেমার অভিনয়শিল্পীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি গঠিত হলেও গত কয়েক বছর অন্যান্য ইস্যুতে আলোচনায় ছিল সংগঠনটি। বিশেষ করে শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের চেয়ার ছিল আলোচনার কেন্দ্রে। ২০২২-২৪ মেয়াদে জায়েদ-নিপুণ, পরবর্তী সময়ে ডিপজল-নিপুণের দ্বন্দ্বে বিরক্ত ছিলেন অভিনয়শিল্পীরাও। কোনো সমালোচনাই থামাতে পারছিল না তাঁদের। চেয়ার দখলের যুদ্ধ হাস্যরসের জন্ম দিয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝেও। কেউ বলতে পারছিলেন না চেয়ার দখলের এ লড়াইয়ের শেষ হবে কবে। তবে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বদলে গেছে দৃশ্যপট। শিল্পী সমিতির অফিসে সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারটি আগের জায়গায় রয়ে গেলেও চেয়ারের পেছনে ছুটতে থাকা মানুষগুলোকে আর দেখা যাচ্ছে না।

২০২২-২৪ মেয়াদের শিল্পী সমিতির নির্বাচনের সময় থেকেই শুরু হয় সাধারণ সম্পাদকের চেয়ার দখলের লড়াই। সেই নির্বাচনে ১৩ ভোটে নিপুণ আক্তারকে হারিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন জায়েদ খান। ভোটে হেরে গেলেও নির্বাচনের আপিল বোর্ডের কাছে জায়েদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ করেন নিপুণ। ফল প্রকাশের পরদিন বিকেলে এফডিসির বাগানে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিল করে নিপুণকে জয়ী ঘোষণা করে নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহানের নেতৃত্বাধীন আপিল বোর্ড।

শপথ নিয়ে চেয়ারে বসলেও স্বস্তিতে থাকতে পারেননি নিপুণ। বিচার চেয়ে আদালতে যান জায়েদ। হাইকোর্ট জায়েদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্ত বাতিল করে সাধারণ সম্পাদকের পদে স্থিতাবস্থা জারি করেন। সেখানেই থেমে থাকেননি জায়েদ।

ভুয়া কাগজ দেখিয়ে সমিতির সভাপতির কাছ থেকে শপথও নেন। পরে আদালতে হাজির হন নিপুণ। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত করেন আপিল বিভাগ। সেই সুযোগে চেয়ারে বসেন নিপুণ। এক দিকে নিপুণ দায়িত্ব পালন করতে থাকেন, আরেক দিকে আদালতে মামলা চলতে থাকে। পাশাপাশি দুজনের মধ্যে চলমান থাকে বাগ্‌যুদ্ধ। আদালতে মামলা নিষ্পত্তি না হলেও শেষ হয়ে যায় কমিটির মেয়াদ।

২০২৪-২৬ মেয়াদে নিপুণ এবার পরাজিত হন মনোয়ার হোসেন ডিপজলের কাছে। ফল ঘোষণার সময় ডিপজলকে ফুল দিয়ে বরণ করে নিলে অনেকেই মনে করেছিলেন শেষ হলো চেয়ারের যুদ্ধ। তবে এক মাস না পেরোতেই পুরোনো রূপে ফেরেন নিপুণ। তাঁর করা রিটে সাধারণ সম্পাদক পদে মনোয়ার হোসেন ডিপজলের দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট।

এরপর ডিপজল ও নিপুণ মেতে ওঠেন একে অপরের সমালোচনায়। ডিপজলকে ‘অশিক্ষিত’ বলে কটাক্ষ করেন নিপুণ। অন্যদিকে, ‘নিপুণের পেছনে বড় শক্তি আছে’ বলে অভিযোগ করেন ডিপজল। নিপুণের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। দুজনের কথার যুদ্ধে শামিল হতে দেখা যায় জায়েদ খানকেও। পরবর্তী সময়ে আট সপ্তাহের জন্য ডিপজলের সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞাবিষয়ক হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন আপিল বিভাগ।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের সব মাধ্যমেই পরিবর্তনের ছোঁয়া লক্ষ করা যাচ্ছে। বদল এসেছে শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের চেয়ার-যুদ্ধের দৃশ্যপটেও। গত ৫ আগস্টের পর থেকে আড়ালে রয়েছেন ডিপজল, নিপুণ ও জায়েদ। তিনজনই জড়িয়েছেন বিতর্কে। ডিপজল ও জায়েদ খানের বিরুদ্ধে করা হয়েছে হত্যা মামলা। আর এক আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন নিপুণ। জানা গেছে, জায়েদ ও নিপুণ দুজনেই এখন আছেন দেশের বাইরে। অন্যদিকে, দেশে থাকলেও এখনো এফডিসিতে পা রাখেননি ডিপজল।

ডিপজল, নিপুণ ও জায়েদ আড়ালে চলে গেলেও থেমে নেই শিল্পী সমিতির কর্মকাণ্ড। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা ও বন্যার্তদের সহায়তায় তহবিল সংগ্রহেও সরব ছিল সংগঠনটি। তবে ফাঁকা পড়ে আছে সাধারণ সম্পাদকের বহুল আলোচিত চেয়ারটি।