ঢাকা ১১:১৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২২ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বৃষ্টির সময় যেসব দোয়া পড়তেন নবীজি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:১৬:৩০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ১১ বার

বৃষ্টি আমাদের অতি পরিচিত একটি বিষয়। বৃষ্টি যখন নামে, সকলেই তা উপভোগ করে। এখানে ধনী-গরীব কিংবা অন্য কোনো প্রকারের বিভাজন নেই। এটি আল্লাহতায়ালার সুন্দর একটি নিয়ামত। এই এক নিয়ামতের মধ্যেও আমাদের জন্যে নিহিত রয়েছে আরো শত প্রকারের নিয়ামত।

পবিত্র কুরআনে সেসব বর্ণিত হয়েছে নানা প্রসঙ্গে, বিচিত্র উপস্থাপনায়। কুরআনের এসব বর্ণনা আমাদের ভাবনার দুয়ারকে খুলে দেবে, আল্লাহ তায়ালার অসীম কুদরতের সামনে তখন অবচেতনভাবেই নত হবে আমাদের শির। কৃতজ্ঞতায় আপ্লুত হব আমরা।

পবিত্র কুরআনের অনেক আয়াতে বৃষ্টির নানামুখী মুগ্ধকর বিবরণ এসেছে। কোথাও বৃষ্টি বর্ষণকে উল্লেখ করা হয়েছে আল্লাহ তায়ালার ক্ষমতা ও কুদরতের নিদর্শন হিসেবে। কোথাও বৃষ্টি আল্লাহ তায়ালার পরিচায়ক। বৃষ্টিকে কোনো কোনো আয়াতে আল্লাহর রহমত হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। বৃষ্টি কোথাও উল্লেখিত হয়েছে হৃদয়ছোঁয়া উপমায়।

রহমতের বৃষ্টি দেখে দোয়া পড়া সুন্নত। হাদিসে এসেছে, হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বৃষ্টি হতে দেখলে বলতেন-

اللَّهُمَّ صَيِّبًا نَافِعًا

উচ্চারণ :‘ আল্লাহুম্মা সাইয়্যেবান নাফিআ।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনি মুষলধারায় যে বৃষ্টি দিচ্ছেন, তা যেন আমাদের জন্য উপকারি হয়।’ (বুখারি ১০৩২)

বৃষ্টি চলমান সময়ে দোয়া কবুল হয়। তাই এ সময়টি দোয়ার জন্য লুফে নেওয়া সুন্নত।

হাদিসে এসেছে- হজরত সাহল বিন সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘দুই সময়ের দোয়া ফেরত দেওয়া হয় না কিংবা (তিনি বলেছেন), খুব কমই ফেরত দেওয়া হয়- আজানের সময় দোয়া এবং রণাঙ্গণে শত্রুর মুখোমুখি হওয়ার সময়ের দোয়া। অন্য বর্ণনা মতে, বৃষ্টির সময়ের দোয়া। (আবু দাউদ ২৫৪০)

হজরত জায়েদ ইবনে খালেদ জুহানি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুদাইবিয়ায় রাতে বৃষ্টির পর আমাদের নিয়ে নামাজ পড়লেন। নামাজ শেষে তিনি লোকজনের মুখোমুখি হলেন। তিনি বললেন, তোমরা কি জানো তোমাদের রব কী বলেছেন?

তারা বললেন, আল্লাহ ও তার রাসুলই ভালো জানেন। তিনি বলেছেন, আমার বান্দাদের কেউ আমার প্রতি ঈমান নিয়ে আর কেউ কেউ আমাকে অস্বীকার করে প্রভাতে উপনীত হয়েছে। যে বলেছে, বিফাদলিল্লাহি ওয়া রহমাতিহি তথা আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়ায় আমরা বৃষ্টিপ্রাপ্ত হয়েছি। ফলে সে আমার প্রতি ঈমান আর তারকার প্রতি কুফরি দেখিয়েছে। আর যে বলেছে, অমুক অমুক তারকার কারণে, সে আমার প্রতি অস্বীকারকারী এবং তারকার প্রতি ঈমানদার।’ (বুখারি ৮৪৬; মুসলিম ১৫)

হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একদিন জুমার দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুতবা দেওয়া অবস্থায় এক সাহাবি মসজিদে প্রবেশ করে আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! জীবজন্তু মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে, পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে, আল্লাহ তাআলার কাছে আমাদের জন্য বৃষ্টি প্রার্থনা করুন। তখনই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই হাত সম্প্রসারিত করে দোয়া করলেন-

اللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلاَ عَلَيْنَا، اللَّهُمَّ عَلَى الآكَامِ وَالْجِبَالِ وَالآجَامِ وَالظِّرَابِ وَالأَوْدِيَةِ وَمَنَابِتِ الشَّجَرِ

উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা হাওয়ালাইনা ওয়া লা আলাইনা; আল্লাহুম্মা আলাল আকামি ওয়াল ঝিবালি ওয়াল আঝামি ওয়াজ জিরাবি ওয়াল আওদিয়াতি ওয়া মানাবিতিশ শাঝারি।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমাদের আশে পাশে, আমাদের উপর নয়। হে আল্লাহ! টিলা, মালভূমি, উপত্যকায় এবং বনভূমিতে বর্ষণ করুন।’ (বুখারি ৯৩৩; মুসলিম ৮৯৭)

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বৃষ্টির সময় যেসব দোয়া পড়তেন নবীজি

আপডেট টাইম : ০৬:১৬:৩০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বৃষ্টি আমাদের অতি পরিচিত একটি বিষয়। বৃষ্টি যখন নামে, সকলেই তা উপভোগ করে। এখানে ধনী-গরীব কিংবা অন্য কোনো প্রকারের বিভাজন নেই। এটি আল্লাহতায়ালার সুন্দর একটি নিয়ামত। এই এক নিয়ামতের মধ্যেও আমাদের জন্যে নিহিত রয়েছে আরো শত প্রকারের নিয়ামত।

পবিত্র কুরআনে সেসব বর্ণিত হয়েছে নানা প্রসঙ্গে, বিচিত্র উপস্থাপনায়। কুরআনের এসব বর্ণনা আমাদের ভাবনার দুয়ারকে খুলে দেবে, আল্লাহ তায়ালার অসীম কুদরতের সামনে তখন অবচেতনভাবেই নত হবে আমাদের শির। কৃতজ্ঞতায় আপ্লুত হব আমরা।

পবিত্র কুরআনের অনেক আয়াতে বৃষ্টির নানামুখী মুগ্ধকর বিবরণ এসেছে। কোথাও বৃষ্টি বর্ষণকে উল্লেখ করা হয়েছে আল্লাহ তায়ালার ক্ষমতা ও কুদরতের নিদর্শন হিসেবে। কোথাও বৃষ্টি আল্লাহ তায়ালার পরিচায়ক। বৃষ্টিকে কোনো কোনো আয়াতে আল্লাহর রহমত হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। বৃষ্টি কোথাও উল্লেখিত হয়েছে হৃদয়ছোঁয়া উপমায়।

রহমতের বৃষ্টি দেখে দোয়া পড়া সুন্নত। হাদিসে এসেছে, হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বৃষ্টি হতে দেখলে বলতেন-

اللَّهُمَّ صَيِّبًا نَافِعًا

উচ্চারণ :‘ আল্লাহুম্মা সাইয়্যেবান নাফিআ।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনি মুষলধারায় যে বৃষ্টি দিচ্ছেন, তা যেন আমাদের জন্য উপকারি হয়।’ (বুখারি ১০৩২)

বৃষ্টি চলমান সময়ে দোয়া কবুল হয়। তাই এ সময়টি দোয়ার জন্য লুফে নেওয়া সুন্নত।

হাদিসে এসেছে- হজরত সাহল বিন সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘দুই সময়ের দোয়া ফেরত দেওয়া হয় না কিংবা (তিনি বলেছেন), খুব কমই ফেরত দেওয়া হয়- আজানের সময় দোয়া এবং রণাঙ্গণে শত্রুর মুখোমুখি হওয়ার সময়ের দোয়া। অন্য বর্ণনা মতে, বৃষ্টির সময়ের দোয়া। (আবু দাউদ ২৫৪০)

হজরত জায়েদ ইবনে খালেদ জুহানি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুদাইবিয়ায় রাতে বৃষ্টির পর আমাদের নিয়ে নামাজ পড়লেন। নামাজ শেষে তিনি লোকজনের মুখোমুখি হলেন। তিনি বললেন, তোমরা কি জানো তোমাদের রব কী বলেছেন?

তারা বললেন, আল্লাহ ও তার রাসুলই ভালো জানেন। তিনি বলেছেন, আমার বান্দাদের কেউ আমার প্রতি ঈমান নিয়ে আর কেউ কেউ আমাকে অস্বীকার করে প্রভাতে উপনীত হয়েছে। যে বলেছে, বিফাদলিল্লাহি ওয়া রহমাতিহি তথা আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়ায় আমরা বৃষ্টিপ্রাপ্ত হয়েছি। ফলে সে আমার প্রতি ঈমান আর তারকার প্রতি কুফরি দেখিয়েছে। আর যে বলেছে, অমুক অমুক তারকার কারণে, সে আমার প্রতি অস্বীকারকারী এবং তারকার প্রতি ঈমানদার।’ (বুখারি ৮৪৬; মুসলিম ১৫)

হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একদিন জুমার দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুতবা দেওয়া অবস্থায় এক সাহাবি মসজিদে প্রবেশ করে আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! জীবজন্তু মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে, পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে, আল্লাহ তাআলার কাছে আমাদের জন্য বৃষ্টি প্রার্থনা করুন। তখনই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই হাত সম্প্রসারিত করে দোয়া করলেন-

اللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلاَ عَلَيْنَا، اللَّهُمَّ عَلَى الآكَامِ وَالْجِبَالِ وَالآجَامِ وَالظِّرَابِ وَالأَوْدِيَةِ وَمَنَابِتِ الشَّجَرِ

উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা হাওয়ালাইনা ওয়া লা আলাইনা; আল্লাহুম্মা আলাল আকামি ওয়াল ঝিবালি ওয়াল আঝামি ওয়াজ জিরাবি ওয়াল আওদিয়াতি ওয়া মানাবিতিশ শাঝারি।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমাদের আশে পাশে, আমাদের উপর নয়। হে আল্লাহ! টিলা, মালভূমি, উপত্যকায় এবং বনভূমিতে বর্ষণ করুন।’ (বুখারি ৯৩৩; মুসলিম ৮৯৭)