ঢাকা ১০:০১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আওয়ামী লীগের ১৫ বছরে বৈদেশিক ঋণ ৫ হাজার ৩৪৩ কোটি ডলার

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৩৮:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ৪ বার

আওয়ামী লীগের ১৫ বছরে বৈদেশিক ঋণ ৫ হাজার ৩৪৩ কোটি (৫৩ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন) ডলার বেড়েছে। ২০০৮-০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের সময় বিদেশি ঋণ ছিল ৫ হাজার ৩৬ কোটি (৫০ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন) ডলার। সেই হিসেবে গত ১৫ বছরের বৈদেশিক ঋণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। সুদের হার বাড়ার ফলে ক্রমেই বিদেশি ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

চলতি বছরের জুনের শেষে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের পরিমাণ বেড়ে ১০ হাজার ৩৭৯ কোটি (১০৩ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন) ডলারে পৌঁছেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এই ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় (১২০ টাকা দরে) ১২ লাখ ৪৫ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বরের শেষে সরকার ও বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণে স্থিতি ছিল ১০ হাজার ৬৪ কোটি (১০০ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন) ডলার। সেই হিসাবে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেই ৩১৫ কোটি (৩ দশমিক ১৫ বিলিয়ন) ডলার বিদেশি ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

আজ বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, জুন শেষে ১০৩ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের পরিমাণ। এর মধ্যে ৮৩ দশমিক ২১ বিলিয়ন সরকারের এবং বাকি ২০ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার বেসরকারি খাতের দায়। গত মার্চে দেশের মোট বিদেশি ঋণ কিছুটা কমেছিল। কিন্তু ডলার সংকটসহ নানা কারণে বিদেশি সংস্থাগুলো থেকে নেওয়া ঋণের ফলে বিদেশি ঋণ ফের বেড়েছে। গত মার্চে বিদেশি ঋণ কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছিল ৯৯ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলারে। কিন্তু মাত্র ৩ মাসের ব্যবধানে ঋণ আবার বেড়ে ১০৩ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত যে মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত করেছে কিংবা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন তার অন্যতম পদ্মা বহুমুখী সেতু, ঢাকা মেট্রোরেল, ঢাকা শাহজালাল বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, কর্ণফুলী টানেল, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর। কিন্তু এসব করতে গিয়ে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। দুঃখজনক বিষয়ে যে ঋণের অর্থে চলমান প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন যখন সম্পন্ন হবে তখন প্রকল্পগুলোর আয় থেকে ঋণের কিস্তির অতি সামান্য অংশই পরিশোধ করা সম্ভব হবে।

এদিকে ২০২৪ সালের জুন শেষে বেসরকারি খাতের বৈদেশিক ঋণ দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলারে। ডিসেম্বর শেষে এ ঋণ ছিল ২০ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের অক্টোবর শেষে বিদেশি ঋণের পরিমাণ ২১ দশমিক ২৮ বিলিয়ন থাকলেও চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ৯ মাসে বেসরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণ কমেছে ৭০৬ মিলিয়ন ডলার। জুন পর্যন্ত মোট বিদেশি ঋণের ১১ দশমিক ৪০ বিলিয়ন স্বল্পমেয়াদি এবং ৯ দশমিক ১৭ বিলিয়ন দীর্ঘমেয়াদি ঋণ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ৩ মাসের ব্যবধানে দেশের সরকারি খাতের বিদেশি ঋণ বেড়েছে ৪ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার। গত মার্চে সরকারি খাতের বিদেশি ঋণ ছিল ৭৯ বিলিয়ন ডলার। জুনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৩ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ঋণ বেড়েছে ৫ দশমিক ৩২ শতাংশ।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, দেশের প্রয়োজনে বিদেশি ঋণ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এই ঋণ নিয়ে দেশের অভ্যন্তরে অনৈতিক কার্যক্রম বাড়াতে হবে। পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগেরও পরিবেশ তৈরি করতে হবে। যাতে রপ্তানি ও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ে। এর সঙ্গে রেমিট্যান্সের দিকেও নজর দিতে হবে। অর্থাৎ ঋণ বাড়লেও পরিশোধ করার সক্ষমতা বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে সরকারকে। তাহলেই এই ঋণ কোনো সংকট তৈরি করবে না।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

আওয়ামী লীগের ১৫ বছরে বৈদেশিক ঋণ ৫ হাজার ৩৪৩ কোটি ডলার

আপডেট টাইম : ১০:৩৮:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আওয়ামী লীগের ১৫ বছরে বৈদেশিক ঋণ ৫ হাজার ৩৪৩ কোটি (৫৩ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন) ডলার বেড়েছে। ২০০৮-০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের সময় বিদেশি ঋণ ছিল ৫ হাজার ৩৬ কোটি (৫০ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন) ডলার। সেই হিসেবে গত ১৫ বছরের বৈদেশিক ঋণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। সুদের হার বাড়ার ফলে ক্রমেই বিদেশি ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

চলতি বছরের জুনের শেষে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের পরিমাণ বেড়ে ১০ হাজার ৩৭৯ কোটি (১০৩ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন) ডলারে পৌঁছেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এই ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় (১২০ টাকা দরে) ১২ লাখ ৪৫ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বরের শেষে সরকার ও বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণে স্থিতি ছিল ১০ হাজার ৬৪ কোটি (১০০ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন) ডলার। সেই হিসাবে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেই ৩১৫ কোটি (৩ দশমিক ১৫ বিলিয়ন) ডলার বিদেশি ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

আজ বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, জুন শেষে ১০৩ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের পরিমাণ। এর মধ্যে ৮৩ দশমিক ২১ বিলিয়ন সরকারের এবং বাকি ২০ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার বেসরকারি খাতের দায়। গত মার্চে দেশের মোট বিদেশি ঋণ কিছুটা কমেছিল। কিন্তু ডলার সংকটসহ নানা কারণে বিদেশি সংস্থাগুলো থেকে নেওয়া ঋণের ফলে বিদেশি ঋণ ফের বেড়েছে। গত মার্চে বিদেশি ঋণ কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছিল ৯৯ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলারে। কিন্তু মাত্র ৩ মাসের ব্যবধানে ঋণ আবার বেড়ে ১০৩ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত যে মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত করেছে কিংবা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন তার অন্যতম পদ্মা বহুমুখী সেতু, ঢাকা মেট্রোরেল, ঢাকা শাহজালাল বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, কর্ণফুলী টানেল, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর। কিন্তু এসব করতে গিয়ে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। দুঃখজনক বিষয়ে যে ঋণের অর্থে চলমান প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন যখন সম্পন্ন হবে তখন প্রকল্পগুলোর আয় থেকে ঋণের কিস্তির অতি সামান্য অংশই পরিশোধ করা সম্ভব হবে।

এদিকে ২০২৪ সালের জুন শেষে বেসরকারি খাতের বৈদেশিক ঋণ দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলারে। ডিসেম্বর শেষে এ ঋণ ছিল ২০ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের অক্টোবর শেষে বিদেশি ঋণের পরিমাণ ২১ দশমিক ২৮ বিলিয়ন থাকলেও চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ৯ মাসে বেসরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণ কমেছে ৭০৬ মিলিয়ন ডলার। জুন পর্যন্ত মোট বিদেশি ঋণের ১১ দশমিক ৪০ বিলিয়ন স্বল্পমেয়াদি এবং ৯ দশমিক ১৭ বিলিয়ন দীর্ঘমেয়াদি ঋণ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ৩ মাসের ব্যবধানে দেশের সরকারি খাতের বিদেশি ঋণ বেড়েছে ৪ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার। গত মার্চে সরকারি খাতের বিদেশি ঋণ ছিল ৭৯ বিলিয়ন ডলার। জুনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৩ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ঋণ বেড়েছে ৫ দশমিক ৩২ শতাংশ।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, দেশের প্রয়োজনে বিদেশি ঋণ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এই ঋণ নিয়ে দেশের অভ্যন্তরে অনৈতিক কার্যক্রম বাড়াতে হবে। পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগেরও পরিবেশ তৈরি করতে হবে। যাতে রপ্তানি ও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ে। এর সঙ্গে রেমিট্যান্সের দিকেও নজর দিতে হবে। অর্থাৎ ঋণ বাড়লেও পরিশোধ করার সক্ষমতা বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে সরকারকে। তাহলেই এই ঋণ কোনো সংকট তৈরি করবে না।