সরকারি চাকরির নিয়োগে কোটা পদ্ধতি বাতিল এবং ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহাল এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে শুক্রবার (১২ জুলাই) দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমোবেশের ঘোষণা দিয়েছে কোটা বিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) রাত ৯টার দিকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ হাসান।
তিনি বলেন, আমরা সব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানাবো, নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব কিন্তু আপনাদের। আপনারা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। আমাদের ওপর হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনুন। আমাদের ওপর যে হামলা হয়েছে তার প্রতিবাদে আগামীকাল আমরা সারাদেশের সব ক্যাম্পাসে বিকেল ৪টায় বিক্ষোভ মিছিল করবো।
আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, হাইকোর্টের আংশিক রায়ে একটি বিষয় পরিষ্কার হয়েছে। হাইকোর্টের আংশিক রায়ে বলা হয়েছে, সরকার চাইলে কোটার সংস্কার করতে পারে। এ বিষয়টিই আজ স্পষ্ট হয়েছে। যদি তাই হয়, তাহলে শেকৃবিতে কেন লাঠিচার্জ করা হলো? শাবিপ্রবিতে হামলা করা হয়েছে, চবিতে নারী শিক্ষার্থীদের ওপর নারী পুলিশ হামলা করেছে, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা হয়েছে, রাবিতে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। মাভাবিপ্রবিসহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা করা হয়েছে। যারা হামলা করেছে তারা অতি উৎসাহী। সেই পুলিশদের বিচারের আওতায় আনতে হবে
হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, আমরা মনে করি, এতে সরকারেরই ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। আপনারা এতদিন আমাদের বলেছেন, আদালতের প্রতি ভরসা রাখতে। এখন আদালত আপনাদের দায়িত্ব দিয়েছে সেটি আপনারা পালন করুন।
এর আগে, আজ বিকেলে শাহবাগ মোড়ে দখল করেন তারা। এ সময় আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিতে থাকেন।
এর আগে, কোটা বাতিলের দাবিতে পূর্বঘোষিত ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালনের জন্য বিকেল ৩টা থেকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা।
এরপর সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তারা কলা ভবন, ভিসি চত্বর হয়ে শাহবাগে আসেন। শিক্ষার্থীরা আসার আগেই পুলিশ শাহবাগে ব্যারিকেড দিয়ে রাখে। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ব্যারিকেড ভেঙে সেখানে অবস্থান নেন। এ সময় কিছু শিক্ষার্থীকে পুলিশের সাঁজোয়া যানের ওপর উঠে উল্লাস করতে দেখা যায়।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ১০ শতাংশ নারী কোটা, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল।
ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় বিক্ষোভ হয়। কোটাব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ কোটা থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। পরে সে বছরের ৪ অক্টোবর কোটাপদ্ধতি বাতিলবিষয়ক পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
এর মাধ্যমে ৪৬ বছর ধরে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে যে কোটাব্যবস্থা ছিল, তা বাতিল হয়ে যায়। পরে ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে রিট করেন। সেই রিটের রায়ে চলতি বছরের ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এরপর চাকরিপ্রত্যাশী সাধারণ শিক্ষার্থীরা মাঠে নামেন।
টাকা কয়েক দিন আন্দোলনের পর গত ৯ জুলাই কোটা পুনর্বহাল নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী। পরদিন হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর এক মাসের স্থিতাবস্থা জারি করেন আপিল বিভাগ। এ আদেশের ফলে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র বহাল থাকছে। তবে শিক্ষার্থীরা আপিল বিভাগের এই আদেশ প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।