দক্ষিণী সিনেমার তারকা অভিনেতা প্রভাস। তার অভিনীত বহুল আলোচিত সিনেমা ‘কল্কি ২৮৯৮ এডি’। নাগ অশ্বিন পরিচালিত এ সিনেমায় তার সহশিল্পী হিসেবে রয়েছেন— অমিতাভ বচ্চন, কমল হাসান, দীপিকা পাড়ুকোন, দিশা পাটানির মতো শিল্পীরা।
করোনা সংকটসহ নানা কারণে পিছিয়ে যায় ৬০০ কোটি রুপি বাজেটের এ সিনেমার মুক্তি। সব বাধা পেরিয়ে গত ২৭ জুন বিশ্বের ৫ হাজার ৬০০ পর্দায় মুক্তি পেয়েছে সিনেমাটি। মুক্তির পর বক্স অফিসে ঝড় তুলেছে এটি। প্রভাস ভক্ত, কোনো কোনো বক্স অফিস বিশ্লষক, সিনেমা সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন— ‘কল্কি’ বিশ্বব্যাপী ১ হাজার কোটি রুপির বেশি আয় করবে। কিন্তু এটা কি সত্যি সম্ভব? ভারতীয় বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রির বক্স অফিস বিশ্লেষকরা ‘কল্কি’ সিনেমার আয় কড়া সমালোচনা করেছেন। তাদের ভাষ্য— ‘কল্কি’ সিনেমার টিমের সদস্যরা আয়ের পরিমাণ বাড়িয়ে বলছেন।
বক্স অফিস বিশ্লেষক সুমিত কাড়েল ইন্ডিয়া টুডেকে বলেন, “কল্কি’ সিনেমা ভালো করছে। কিন্তু এটি ব্যতিক্রমভাবে ভালো করছে এমনটা নয়। অথচ অনেক পোর্টাল ও বক্স অফিস সংশ্লিষ্ট অনেকে এটাকে অতিমাত্রায় হাইলাইট করছেন। শেষ পর্যন্ত সিনেমাটি বিশ্বব্যাপী ৮০০-৮৫০ কোটি রুপি আয় করবে। কিন্তু এ সিনেমার টিমের সদস্যরা সবাইকে বিশ্বাস করিয়েছেন, বিশ্বব্যাপী এটি ১ হাজার কোটি রুপির বেশি আয় করবে।”
‘কল্কি’ সিনেমার আয় ১০০ কোটি রুপি বাড়িয়ে বলা হচ্ছে। এ তথ্য উল্লেখ করে সুমিত কাড়েল বলেন, “প্রত্যেকেই দেখাতে চায় তার সিনেমাটি বক্স অফিসে ভালো করছে। কিন্তু ‘কল্কি’ সিনেমার ক্ষেত্রে বিষয়টি ব্যতিক্রম। তারা এখানে যা করছেন তাতে আমি হতবাক! অনেক পরিচালকই আয়ের সংখ্যা বাড়িয়ে দেখান। কিন্তু সেখানে ৫-৭ কোটি রুপির ব্যবধান থাকে। কিন্তু ‘কল্কি’ টিম সত্যিকারের আয়ের চেয়ে ৯০-১০০ কোটি রুপি বাড়িয়ে বলছেন, যা মানা যায় না।”
স্যাকনিল্কের তথ্য অনুসারে, ‘কল্কি’ সিনেমা ৬ দিনে শুধু ভারতে আয় করেছে ৩৭০.২ কোটি রুপি (নীট)। যার মধ্যে তেলেগু মার্কেট থেকে এসেছে ১৯৩.৩ কোটি রুপি। আর হিন্দি মার্কেট থেকে আয় করেছে ১৪১ কোটি রুপি। বিশ্বব্যাপী আয় করেছে ৬০০ কোটি রুপি (গ্রোস)।
এ তথ্য অনুসারে, ‘কল্কি’ সিনেমার আয়ের সীমানা আকাশ পর্যন্ত। কিন্তু এর সঙ্গে একমত নন আরেক বক্স অফিস বিশ্লেষক রোহিত জসওয়াল।
ইন্ডিয়া টুডেকে রোহিত জসওয়াল বলেন, “খেয়াল করে দেখবেন তেলেগু মার্কেটে ‘কল্কি’ ভালো করছে না। হিন্দি বেল্টের মানুষ এটি দেখছেন। ব্যাখ্যা করলে বুঝতে পারবেন। হিন্দি ভাষাভাষির দর্শকদের কাছে সিনেমাটির পৌরাণিক অংশের আলাদা আবেদন রয়েছে। আর সিনেমাটিতে অমিতাভ বচ্চন ও দীপিকা পাড়ুকোন অভিনয় করায় দর্শক প্রেক্ষাগৃহে যাচ্ছেন।”
“সত্যি যদি ‘কল্কি’ সিনেমার বিশ্বব্যাপী ১ হাজার কোটি রুপি আয়ের লক্ষ্য থাকে, তবে শুধু তেলেগু মার্কেট থেকে সিনেমাটিকে ৩০০ কোটি রুপি আয় করতে হবে। সত্যিকার অর্থে হিন্দি ভার্সনে সিনেমাটি ‘হিট’ কিংবা ‘সুপার হিট’ হবে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী সিনেমাটি ১ হাজার কোটি রুপি আয় করতে পারবে না। এটি ৮০০-৮৫০ কোটি রুপি আয় করবে।” বলেন রোহিত জসওয়াল।
ভারতের ৬টি সিনেমা বিশ্বব্যাপী ১ হাজার কোটি রুপি আয়ের মাইলফলক অর্জন করেছে। এর মধ্যে দুটো সিনেমা বলিউডের। যা গত বছর মুক্তি পায়। এ দুটো সিনেমা হলো— ‘পাঠান’ (বিশ্বব্যাপী আয় করে ১০৫৫ কোটি রুপি), ‘জওয়ান’ (বিশ্বব্যাপী আয় করে ১১৬০ কোটি রুপি)। এ দুটো সিনেমাতেই অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান। এটা কি ‘কল্কি’র পক্ষে সম্ভব?
এ বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বক্স অফিস বিশ্লেষক সুমিত কাড়েল ইন্ডিয়া টুডেকে বলেন, “পাঠান’, ‘জওয়ান’ দুটো সিনেমাই সংযুক্ত আরব আমিরাতে দারুণ সাড়া ফেলেছিল। কিন্তু সেখানে প্রভাসের উপস্থিতি নেই। মূলত, ‘কল্কি’ সিনেমার আয় হবে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মার্কেট থেকে। সবমিলিয়ে বলা যায়, ‘কল্কি’ সিনেমা ৯০০ কোটি রুপি আয়ের মাইলফলক স্পর্শ করতে পারবে না।”
বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি আয় করা ভারতীয় ৮ সিনেমা (তথ্যসূত্র: স্যাকনিল্ক)
১. দঙ্গল (২০৭০.৩ কোটি রুপি)
২. বাহুবলি টু (১৭৮৮.০৬ কোটি রুপি)
৩. কেজিএফ টু (১২১৫ কোটি রুপি)
৪. জওয়ান (১১৬০ কোটি রুপি)
৫. ট্রিপল আর (১২৩০ কোটি রুপি)
৬. পাঠান (১০৫৫ কোটি রুপি)
৭. বজরাঙ্গি ভাইজান (৯২২ কোটি রুপি)
৮. অ্যানিমেল (৯১৫ কোটি রুপি)
ভারতের সিনেমার আয়ের হিসাব কোন প্রক্রিয়াতে হয়, তার ব্যাখ্যা কিছুটা দিয়েছেন বক্স অফিস বিশ্লেষক রমেশ বালা। ইন্ডিয়া টুডেকে তিনি বলেন, ‘মানুষ সিনেমার আয়ের বিষয়ে প্রযোজক ও সিনেমার টিমের সদস্যদের পরিসংখ্যানের উপর নির্ভর করে। এটা নিয়ে সবসময়ই বিতর্ক থাকে। প্রত্যেক রাজ্যের হিসাব আলাদা আলাদা থাকে। ট্রেডের লোকেরা প্রযোজকদের পরিসংখ্যানের উপরে নির্ভর করে। কখনে কখনো প্রত্যেক রাজ্যের নিজস্ব ট্র্যাকার থাকে, যারা আমাদের তথ্যগুলো সরবরাহ করে থাকেন। এরপর আমরা গণনা করি, তারপর চূড়ান্ত সংখ্যা প্রকাশ করা হয়।’