‘কোনো নারীর দিকে যদি কোনো পুরুষ ১৪ সেকেন্ড তাকিয়ে থাকেন, তাহলেই পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা যাবে। এটা দণ্ডনীয় অপরাধ’- এরকমই এক উক্তি করেছেন ভারতের এক পুলিশ কর্মকর্তা।
কেরালা রাজ্যের আবগারি কমিশনার, ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিসের অফিসার ঋষি রাজ সিংয়ের এই মন্তব্যের সময়ে সেখানেই ছিলেন রাজ্যের ক্রীড়া মন্ত্রী ই পি জয়রাজনো।
মন্ত্রী আবার সকলের সামনেই বলে দেন যে এইরকম কোনো আইন নেই। মস্তিষ্কপ্রসূত এক আইনের ধারার কথা উল্লেখ করছেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা!
আইনজীবীরাও বলছেন এরকম কোনো আইনের ধারাই ভারতে নেই, যাতে শুধু কোনো নারীর দিকে তাকিয়ে থাকলেই শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে।
ভারতের স্বাধীনতা দিবসের আগে কোচি শহরে ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন। সেই খবর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
মঙ্গলবার মি: ঋষি রাজ সিংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, “আমি সেদিন যা বলেছিলাম, এখনো সেটাই বলব। আর শুধু ১৪ সেকেন্ড কেন, তার কম সময়ের জন্যও যদি কোনো পুরুষ মানুষ কোনো
নারীর দিকে তাকিয়ে থাকেন, যাতে ওই নারীর অস্বস্তি হতে পারে, তাহলেও সেটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। শ্লিলতাহানি আর নারীদের হয়রানি রুখতে ২০১৩ সালে ভারতীয় দন্ডবিধিতে যে পরিবর্তনগুলো আনা হয়েছে, সেই অনুযায়ী এরজন্য জেলও হতে পারে”।
ভারতীয় দণ্ডবিধিতে ৩৫৪ সি এবং ৩৫৪ ডি বলে যে দুটি ধারা যুক্ত হয়েছে ২০১৩ সালে, তাতে ভয়্যারিজম আর স্টকিং-কেও শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য করা হয়েছে। এই ভয়্যারিজম আর স্টকিং –এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়েই ঋষি রাজ সিং বলছেন কোনও নারীর দিকে তাকানোটাই অপরাধ।
অথচ আইনে বলা হয়েছে কোনও নারীকে যদি কেউ লুকিয়ে লক্ষ্য করেন, অথবা ছবি তোলেন, বা ছবি তুলে তৃতীয় ব্যক্তিকে দিয়ে দেন অথবা সরাসরি কিংবা বৈদ্যুতিন মাধ্যমে পিছু করতে থাকেন, সেগুলো আইনের এই দুটি নতুন ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। খুব স্পষ্ট করেই আইনে বলা রয়েছে যে ঠিক কোন কোন কাজ এই দুটি ধারার অধীনে আসবে।
কেরালার ওই পুলিশ কর্মকর্তারা ব্যাখ্যা যেমন অসার বলে মনে হয়েছে কেরল রাজ্যের মন্ত্রী ই পি জয়রাজনের, তেমনই এই ব্যাখ্যাকে হাস্যকর বলে মন্তব্য করছেন কলকাতা হাইকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ভারতী মুৎসুদ্দিও।
মিসেস মুৎসুদ্দির কথায়, “ভয়্যারিজম আর স্টকিং-এর ব্যাপারটা যুক্ত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তাই বলে কোনও নারীর দিকে কোনো পুরুষ মানুষ তাকালেই সেটা অপরাধ হয় নাকি! তাও আবার ১৪ সেকেন্ড! এই সময়ের ব্যাপারটা উনি কোথায় পেলেন? আইনের এরকম ভুল ব্যাখ্যা করলে তো আসল উদ্দেশ্যটাই নষ্ট হয়ে যাবে”।
সেদিনের ভাষণ মঞ্চে উপস্থিত মন্ত্রী মি. জয়রাজন বলছেন, “ওঁরতো এ বিষয়ে মন্তব্য করারই কথা নয়। উনি তো আবগারি দপ্তরের অফিসার। এই বিষয়টা আমি আবগারি মন্ত্রীর নজরে আনব”।
কেরালার ওই পুলিশ কর্মকর্তা অবশ্য এর আগেও বিতর্ক তৈরি করেছেন।
কখনও মন্ত্রীকে স্যালুট করতে অস্বীকার করা, অথবা সহকর্মীরা ঠিকমতো উর্দি না পড়ে আসায় তাঁদের ওপরে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠার ঘটনাও ঘটিয়েছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
তবে রাজনৈতিক নেতা হোন বা আইনভঙ্গকারী সাধারণ নাগরিক – ঋষি রাজ সিংয়ের হাতে পড়লে ছাড়া পাওয়া মুশকিল। কঠোর পুলিশ অফিসার বলে তার পরিচিতি আছে মানুষের মধ্যে।-বিবিসি