রোববার শপথ নিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে বিপুলসংখ্যক দেশি-বিদেশি অতিথির উপস্থিতিতে তিনি শপথ নেন। নরেন্দ্র মোদির পাশাপাশি এদিন নতুন জোট সরকারের ৭২ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীকেও শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। তাদের মধ্যে ৩০ জন ক্যাবিনেট মন্ত্রী, পাঁচজন স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং ৩৬ জন প্রতিমন্ত্রী। অবশ্য কে কোন মন্ত্রণালয় পাবেন, তা পরে ঘোষণা করা হবে। এ নিয়ে বিজেপি টানা তৃতীয়বারের মতো ভারতে সরকার গঠন করল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ মন্ত্রিসভার সব সদস্যের প্রতি রইল আমাদের অভিনন্দন। উল্লেখ্য, এবারের নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির রাজনৈতিক দল বিজেপি এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। দেশটির লোকসভায় মোট ৫৪৩টি আসনের মধ্যে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য ২৭২টি আসনে জয় প্রয়োজন ছিল। সে লক্ষ্যে পৌঁছাতে ৩২ আসন দূরে থাকলেও বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট মোট ২৯৩টি আসন পাওয়ায় তাদেরই সরকার গঠনের অনুমতি দেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার সময়ও নরেন্দ্র মোদি প্রতিবেশী দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। নিজের শপথ অনুষ্ঠানে প্রতিবেশী দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানানোর পেছনে মোদির ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতি কাজ করেছে। প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভালো সম্পর্কের মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার এ উদ্যোগ প্রশংসার দাবিদার। বস্তুত, প্রতিবেশী দেশ ভালো না থাকলে বিশ্বায়নের এ যুগে নিজ দেশের ভালো থাকার উপায় নেই। মোদির আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। আরও উপস্থিত ছিলেন, মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী প্রবিন্দ যুগনৌত, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু, শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং টোবগে, নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দহল প্রচন্দ এবং আফ্রিকা মহাদেশের ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্র সিচেলিসের ভাইস প্রেসিডেন্ট আহমেদ আতিফ। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন দেশটির শিল্পপতি গৌতম আদানি, মুকেশ আম্বানি, অভিনেতা শাহরুখ খান, রজনীকান্ত, অক্ষয় কুমারসহ অন্তত ৮ হাজার অতিথি। শপথ অনুষ্ঠানের পর একান্ত সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দনের পাশাপাশি ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তী সময়ে ভারতের অবস্থান এবং অবদান অস্বীকার করার সুযোগ নেই। নানা ক্ষেত্রে দুদেশের সম্পর্ক দৃঢ় হলেও তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি, সীমান্তে মানুষ হত্যা বন্ধের মতো কিছু বিষয় এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে। আশার কথা, প্রথম মেয়াদে ক্ষমতাগ্রহণের পর থেকেই নরেন্দ্র মোদি তিস্তাসহ অমীমাংসিত ইস্যুগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে ইতিবাচক অবস্থান ব্যক্ত করে আসছেন। তৃতীয় মেয়াদে তার শপথের মধ্য দিয়ে উভয় দেশের যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে, বিশেষত তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি, সীমান্তে হত্যা বন্ধ ও অন্যান্য অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান হবে বলে আমরা আশাবাদী। এছাড়া বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে অশুল্ক-শুল্ক বাধা দূর করাসহ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে দুপক্ষই আন্তরিকভাবে কাজ করবে-এটিই প্রত্যাশা।