ঢাকা ১০:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এই ছেলে এক ভুল দু বার করে না

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:৫২:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ জুন ২০১৫
  • ৬০৮ বার
ছেলেটা দেখতে খুবই হ্যাংলা-পাতলা, আগে সেভাবে কখনো পরিচয় হয়নি, খেলাও দেখিনি। ফলে প্রথম দলে পেয়ে খুব একটা মুগ্ধ হয়ে গেছি বলা যাবে না। বরং দলে তখন রফিক ছিল, রাজ্জাক ছিল, ওদের ভিড়ে আরেকটা বাহাতি স্পিনারকে সেভাবে খুব খেয়াল করে দেখিওনি।
তারপররও যেহেতু বলা হচ্ছিল, ছেলেটার ভবিষ্যত ভালো, তাই ওকে একটা ম্যাচ খেলানোর ইচ্ছা ছিল। কিন্তু জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একটা অনুশীলন ম্যাচে ওর বোলিং দেখে সে ইচ্ছেটাও নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। জিম্বাবুইয়ানরা স্পিন একদমই ভালো খেলে না, বাঁহাতি স্পিনতো বুঝতেই পারে না। সেখানে প্রায় সবাই ভালো খেলেছে। এরপর আর ছেলেটাকে মাঠে নামানোর ইচ্ছে থাকে?
ইচ্ছে ছিল না। তারপরও সিরিজের শেষ ম্যাচে মুশফিককে প্রথম ম্যাচ খেলানো হলো; সঙ্গে আমরা ওই ছেলেটাকেও একটা চান্স দিলাম- সিরিজ তো হেরেই গেছি, খেলুক না হয় একটা ম্যাচ।
আমার জীবনে সবচেয়ে বড় বিস্ময়টা ওই ছেলেটা উপহার দিয়েছিল সেদিন। অনুশীলন ম্যাচে কাকে দেখেছিলাম, আর আজ কাকে দেখছি! ব্যাট হাতে দলের ম্যাচ বের করে আনা ৩০ রানের একটা ইনিংস খেললো বটে। কিন্তু আমি মুগ্ধ হলাম বোলিং দেখে-অবিশ্বাস্য।
সেই অনুশীল ম্যাচের প্রতিটা ভুল সে মাথায় রেখেছে। সেদিন যা যা করেছিল, তা কিচ্ছু করল না। একেবারে নতুন করে যেন নিজেকে চেনাল। সেদিনই একটা কথা বুঝেছিলাম- এই ছেলে এক ভুল দু বার করে না।
লেখকের নাম হাবিবুল বাশার সুমন। ২০০৬ সালে সাকিবের অভিষেক ম্যাচের দিন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক ছিলেন। যার হাত ধরে পরিবর্তনের পথে যাত্রা শুরু করেছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট। প্রথম ম্যাচেই অধিনায়কের জন্য বিস্ময় তৈরি করেছিলেন সাকিব। এরপর গত এক দশকে জগতের অনেক নিয়মেরই পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু একটি বিষয়ে কোন পরিবর্তন হয়নি। প্রায় প্রতিদিনই বিস্ময় তৈরি করছেন সাকিব আল হাসান।
মাঠে এবং মাঠের বাইরে সাকিব আল হাসান অবশ্যই ব্যতিক্রম। যা বিশ্বাস করেন তাই বলেন। এটা অবশ্য কখনও কখনও বিপদও ডেকে এনেছে তার জন্য। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপণতো তিনিই। দুনিয়ার যেখানেই খেলতে গেছেন দেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন। আইপিএল, বিগব্যাশ, ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লীগ কোথায় ঝড় তুলেননি সাকিব। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেতো গত এক দশক ধরেই আমাদের প্রধান খেলোয়াড়। তিনি আমাদের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান, অন্যতম সেরা বোলার, অন্যতম সেরা ফিল্ডার। বিশ্ব ক্রিকেট ইতিহাসেই এমন অলরাউন্ডার খুব বেশি আসেনি।
ভারতের বিরুদ্ধে কাল থেকে আবারও মাঠে নামছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। স্বভাবতই সবচেয়ে বড় ফোকাস সাকিবের দিকেই। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্ট ম্যাচে বল হাতে অনেটাই নিষ্প্রভ ছিলেন তিনি। ভারতের বিরুদ্ধে কী করেন তাই এখন দেখার বিষয়। পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের আগেই বাংলাদেশকে ফেভারিট ঘোষণা করেছিলেন। ভারতের বিরুদ্ধে তেমন ঘোষণা দেননি। তবে বলেছেন, ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজ জিততে পারলে তা হবে বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয়। আর কে না জানে এ ইতিহাস গড়া বহুলাংশেই নির্ভর করছে সাকিবের ওপর।

এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

এই ছেলে এক ভুল দু বার করে না

আপডেট টাইম : ০৪:৫২:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ জুন ২০১৫
ছেলেটা দেখতে খুবই হ্যাংলা-পাতলা, আগে সেভাবে কখনো পরিচয় হয়নি, খেলাও দেখিনি। ফলে প্রথম দলে পেয়ে খুব একটা মুগ্ধ হয়ে গেছি বলা যাবে না। বরং দলে তখন রফিক ছিল, রাজ্জাক ছিল, ওদের ভিড়ে আরেকটা বাহাতি স্পিনারকে সেভাবে খুব খেয়াল করে দেখিওনি।
তারপররও যেহেতু বলা হচ্ছিল, ছেলেটার ভবিষ্যত ভালো, তাই ওকে একটা ম্যাচ খেলানোর ইচ্ছা ছিল। কিন্তু জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একটা অনুশীলন ম্যাচে ওর বোলিং দেখে সে ইচ্ছেটাও নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। জিম্বাবুইয়ানরা স্পিন একদমই ভালো খেলে না, বাঁহাতি স্পিনতো বুঝতেই পারে না। সেখানে প্রায় সবাই ভালো খেলেছে। এরপর আর ছেলেটাকে মাঠে নামানোর ইচ্ছে থাকে?
ইচ্ছে ছিল না। তারপরও সিরিজের শেষ ম্যাচে মুশফিককে প্রথম ম্যাচ খেলানো হলো; সঙ্গে আমরা ওই ছেলেটাকেও একটা চান্স দিলাম- সিরিজ তো হেরেই গেছি, খেলুক না হয় একটা ম্যাচ।
আমার জীবনে সবচেয়ে বড় বিস্ময়টা ওই ছেলেটা উপহার দিয়েছিল সেদিন। অনুশীলন ম্যাচে কাকে দেখেছিলাম, আর আজ কাকে দেখছি! ব্যাট হাতে দলের ম্যাচ বের করে আনা ৩০ রানের একটা ইনিংস খেললো বটে। কিন্তু আমি মুগ্ধ হলাম বোলিং দেখে-অবিশ্বাস্য।
সেই অনুশীল ম্যাচের প্রতিটা ভুল সে মাথায় রেখেছে। সেদিন যা যা করেছিল, তা কিচ্ছু করল না। একেবারে নতুন করে যেন নিজেকে চেনাল। সেদিনই একটা কথা বুঝেছিলাম- এই ছেলে এক ভুল দু বার করে না।
লেখকের নাম হাবিবুল বাশার সুমন। ২০০৬ সালে সাকিবের অভিষেক ম্যাচের দিন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক ছিলেন। যার হাত ধরে পরিবর্তনের পথে যাত্রা শুরু করেছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট। প্রথম ম্যাচেই অধিনায়কের জন্য বিস্ময় তৈরি করেছিলেন সাকিব। এরপর গত এক দশকে জগতের অনেক নিয়মেরই পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু একটি বিষয়ে কোন পরিবর্তন হয়নি। প্রায় প্রতিদিনই বিস্ময় তৈরি করছেন সাকিব আল হাসান।
মাঠে এবং মাঠের বাইরে সাকিব আল হাসান অবশ্যই ব্যতিক্রম। যা বিশ্বাস করেন তাই বলেন। এটা অবশ্য কখনও কখনও বিপদও ডেকে এনেছে তার জন্য। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপণতো তিনিই। দুনিয়ার যেখানেই খেলতে গেছেন দেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন। আইপিএল, বিগব্যাশ, ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লীগ কোথায় ঝড় তুলেননি সাকিব। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেতো গত এক দশক ধরেই আমাদের প্রধান খেলোয়াড়। তিনি আমাদের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান, অন্যতম সেরা বোলার, অন্যতম সেরা ফিল্ডার। বিশ্ব ক্রিকেট ইতিহাসেই এমন অলরাউন্ডার খুব বেশি আসেনি।
ভারতের বিরুদ্ধে কাল থেকে আবারও মাঠে নামছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। স্বভাবতই সবচেয়ে বড় ফোকাস সাকিবের দিকেই। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্ট ম্যাচে বল হাতে অনেটাই নিষ্প্রভ ছিলেন তিনি। ভারতের বিরুদ্ধে কী করেন তাই এখন দেখার বিষয়। পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের আগেই বাংলাদেশকে ফেভারিট ঘোষণা করেছিলেন। ভারতের বিরুদ্ধে তেমন ঘোষণা দেননি। তবে বলেছেন, ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজ জিততে পারলে তা হবে বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয়। আর কে না জানে এ ইতিহাস গড়া বহুলাংশেই নির্ভর করছে সাকিবের ওপর।

এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত