ঢাকা ০৮:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফিলিপাইন জাতের আখ চাষে অধ্যাপক শফিকুলের বাজিমাত

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:০২:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ নভেম্বর ২০২৩
  • ৭৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কলেজের অধ্যাপক হলেও কৃষি কাজ তার নেশা। শিক্ষকতার পাশাপাশি অবসর সময়টুকু নিজেকে কৃষি কাজের সঙ্গেই নিয়োজিত রাখেন। কৃষি কাজ যেনো তার ধ্যান-জ্ঞান। প্রতিবছর বিভিন্ন ফসল চাষ করলেও গত বছর তিনি তার নিজ জমিতে রোপণ করেন ফিলিপাইন জাতের আখ ব্ল্যাক সুগার কেইন। ব্ল্যাক সুগার কেইন আবাদ করে নিজ এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন তিনি।

বলছিলাম টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার বোয়ালী ডিগ্রি কলেজের সহকারি অধ্যাপক এসএম শফিকুল ইসলামের কথা। তিনি ৮৭ শতাংশ জমিতে আবাদ করেছেন ফিলিপাইন জাতের কালো আখ।

অধ্যাপক শফিকুল সখীপুর উপজেলার বোয়ালি পূর্বপাড়া এলাকার প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সরাফত আলী মাস্টারের ছেলে। ইউটিউব দেখে ফিলিপাইন জাতের এই কালো আখ চাষে উদ্বুদ্ধ হন তিনি। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে চারা সংগ্রহ করে আখ চাষ শুরু করেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বোয়ালি মধ্যপাড়া এলাকায় প্রায় ৮৭ শতাংশ জমিতে তিনি ফিলিপাইনের জাতের আখ ব্ল্যাক সুগার কেইন চাষ করেছেন। তার জমিতে পরম যত্নে রোপণ করা কালো জাতের আখ এখন শোভা পাচ্ছে। আখ লম্বায় বড় হওয়ায় যেন সহজেই ভেঙে না যায় সেজন্য বাঁশ ও রশি দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে।

আখগুলো সাধারণভাবে দেখতে দেশীয় আখের মতো হলেও এর বৈশিষ্ঠ্যগত দিক দিয়ে ভিন্নতা রয়েছে। গোড়া থেকে পুরো কাণ্ডই মোটা ও নরম। আঙুলে একটু চাপ দিলে রস পাওয়া যায়। রস যেমন রয়েছে, তেমনি মিষ্টিও বেশি। আখের গায়ের রঙ কালো হলেও ভেতরটা সাদা। লালচে বা কালো খয়েরি রঙের আখটি চাষের পর আশপাশের গ্রামের লোকজন দেখতে ভিড় করছেন।

সহকারি অধ্যাপক এসএম শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি শিক্ষকতা করি। এর পাশাপাশি কৃষি কাজ করা আমার নেশা। ইউটিউবের মাধ্যমে ফিলিপাইন জাতের আখ ব্ল্যাক সুগার কেইন সম্পর্কে জানতে পারি। শখের বসে প্রথমে ফিলিপাইন জাতের আখ চাষ করতে আগ্রহী হই। গত বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রায় ৭২০০টি চারা ক্রয় করে নিজের ৮৭ শতাংশ জমিতে চাষ শুরু করি। চারা ক্রয়  ও রোপণ করতে আমার খরচ হয় প্রায় তিন লাখ টাকা। প্রতিটি আখ ৮০-১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যায়। এ বছর দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আশা করছি ৭-৮ লাখ টাকার আখ বিক্রি করতে পারবো।

তিনি বলেন, ফিলিপাইন জাতের ব্ল্যাক সুগার কেইন অল্প সময়েই পরিণত হয়ে যায়। ১০-১১ মাস বয়সে প্রায় ১৬-১৮ ফিট লম্বা ও  যথেষ্ট মোটা হয়। রস সাধারণ আখের চেয়ে দ্বিগুণ ও যথেষ্ট মিষ্টি হয়ে থাকে। অন্য কিছুর সঙ্গে বেঁধে রাখতে হয়। যেকোনো জমিতে ব্ল্যাক সুগার কেইন আবাদ করা যায়। পাহাড়ি অঞ্চল বা নিম্ন অঞ্চল বলি যেখানে ১৫ দিন পর্যন্ত পানি থাকে না, সেখানে এই আখ চাষ করা যাবে। এই আখ চাষে অল্প জমিতে অধিক পরিমাণ লাভ করা যায়।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশের যত কৃষক আছেন এবং বেকার যুবকদের যারা চাকরির পিছনে ঘোরেন, তাদের চাকরির পিছনে না ঘুরে এই আখ চাষ করা উচিৎ। অল্প সময় ব্যয় করে তারা লাভবান হবেন। এ জাতের আখ যদি সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া যায় এবং সঠিকভাবে চাষ করা যায়, অবশ্যই দ্বিগুণ পরিমাণ লাভ করা সম্ভব। দেশের বিভিন্ন জেলার অর্ডার করে ফিলিপাইন জাতের এ আখের চারা ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

স্থানীয় কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ব্ল্যাক সুগার কেইন চাষে এতো লাভ, সেটা আমি জানতাম না। পরিকল্পনা করেছি এই আখ আমিও চাষ করবো। আবহাওয়া অনূকুলে থাকলে এই আখ খুবই লাভজনক।

 

সদর আলী নামে আরেক কৃষক বলেন, এই এলাকায় এতো ভালো আখ হয়, সেটা জানতাম না। আমি এক বিঘা জমিতে ফিলিপাইন জাতের ব্ল্যাক সুগার কেইন চাষ করবো। এই আখের দামও বেশি, খেতেও সুস্বাদু। আর লম্বাও হয় অনেক।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার মোহাম্মদ দুলাল উদ্দিন জানান, সখীপুরে ফিলিপাইন জাতের আখ আবাদ হচ্ছে। অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম এই আখ আবাদ করে লাভবান হচ্ছেন। তাকে দেখে উদ্ধুদ্ধ হয়ে অনেক কৃষক এই আখ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। এই আখের জাতকে ভালোই মনে হচ্ছে। আশা করছি এই আখ চাষে অন্য কৃষকরাও লাভবান হবেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ফিলিপাইন জাতের আখ চাষে অধ্যাপক শফিকুলের বাজিমাত

আপডেট টাইম : ০৭:০২:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ নভেম্বর ২০২৩

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কলেজের অধ্যাপক হলেও কৃষি কাজ তার নেশা। শিক্ষকতার পাশাপাশি অবসর সময়টুকু নিজেকে কৃষি কাজের সঙ্গেই নিয়োজিত রাখেন। কৃষি কাজ যেনো তার ধ্যান-জ্ঞান। প্রতিবছর বিভিন্ন ফসল চাষ করলেও গত বছর তিনি তার নিজ জমিতে রোপণ করেন ফিলিপাইন জাতের আখ ব্ল্যাক সুগার কেইন। ব্ল্যাক সুগার কেইন আবাদ করে নিজ এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন তিনি।

বলছিলাম টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার বোয়ালী ডিগ্রি কলেজের সহকারি অধ্যাপক এসএম শফিকুল ইসলামের কথা। তিনি ৮৭ শতাংশ জমিতে আবাদ করেছেন ফিলিপাইন জাতের কালো আখ।

অধ্যাপক শফিকুল সখীপুর উপজেলার বোয়ালি পূর্বপাড়া এলাকার প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সরাফত আলী মাস্টারের ছেলে। ইউটিউব দেখে ফিলিপাইন জাতের এই কালো আখ চাষে উদ্বুদ্ধ হন তিনি। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে চারা সংগ্রহ করে আখ চাষ শুরু করেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বোয়ালি মধ্যপাড়া এলাকায় প্রায় ৮৭ শতাংশ জমিতে তিনি ফিলিপাইনের জাতের আখ ব্ল্যাক সুগার কেইন চাষ করেছেন। তার জমিতে পরম যত্নে রোপণ করা কালো জাতের আখ এখন শোভা পাচ্ছে। আখ লম্বায় বড় হওয়ায় যেন সহজেই ভেঙে না যায় সেজন্য বাঁশ ও রশি দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে।

আখগুলো সাধারণভাবে দেখতে দেশীয় আখের মতো হলেও এর বৈশিষ্ঠ্যগত দিক দিয়ে ভিন্নতা রয়েছে। গোড়া থেকে পুরো কাণ্ডই মোটা ও নরম। আঙুলে একটু চাপ দিলে রস পাওয়া যায়। রস যেমন রয়েছে, তেমনি মিষ্টিও বেশি। আখের গায়ের রঙ কালো হলেও ভেতরটা সাদা। লালচে বা কালো খয়েরি রঙের আখটি চাষের পর আশপাশের গ্রামের লোকজন দেখতে ভিড় করছেন।

সহকারি অধ্যাপক এসএম শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি শিক্ষকতা করি। এর পাশাপাশি কৃষি কাজ করা আমার নেশা। ইউটিউবের মাধ্যমে ফিলিপাইন জাতের আখ ব্ল্যাক সুগার কেইন সম্পর্কে জানতে পারি। শখের বসে প্রথমে ফিলিপাইন জাতের আখ চাষ করতে আগ্রহী হই। গত বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রায় ৭২০০টি চারা ক্রয় করে নিজের ৮৭ শতাংশ জমিতে চাষ শুরু করি। চারা ক্রয়  ও রোপণ করতে আমার খরচ হয় প্রায় তিন লাখ টাকা। প্রতিটি আখ ৮০-১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যায়। এ বছর দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আশা করছি ৭-৮ লাখ টাকার আখ বিক্রি করতে পারবো।

তিনি বলেন, ফিলিপাইন জাতের ব্ল্যাক সুগার কেইন অল্প সময়েই পরিণত হয়ে যায়। ১০-১১ মাস বয়সে প্রায় ১৬-১৮ ফিট লম্বা ও  যথেষ্ট মোটা হয়। রস সাধারণ আখের চেয়ে দ্বিগুণ ও যথেষ্ট মিষ্টি হয়ে থাকে। অন্য কিছুর সঙ্গে বেঁধে রাখতে হয়। যেকোনো জমিতে ব্ল্যাক সুগার কেইন আবাদ করা যায়। পাহাড়ি অঞ্চল বা নিম্ন অঞ্চল বলি যেখানে ১৫ দিন পর্যন্ত পানি থাকে না, সেখানে এই আখ চাষ করা যাবে। এই আখ চাষে অল্প জমিতে অধিক পরিমাণ লাভ করা যায়।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশের যত কৃষক আছেন এবং বেকার যুবকদের যারা চাকরির পিছনে ঘোরেন, তাদের চাকরির পিছনে না ঘুরে এই আখ চাষ করা উচিৎ। অল্প সময় ব্যয় করে তারা লাভবান হবেন। এ জাতের আখ যদি সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া যায় এবং সঠিকভাবে চাষ করা যায়, অবশ্যই দ্বিগুণ পরিমাণ লাভ করা সম্ভব। দেশের বিভিন্ন জেলার অর্ডার করে ফিলিপাইন জাতের এ আখের চারা ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

স্থানীয় কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ব্ল্যাক সুগার কেইন চাষে এতো লাভ, সেটা আমি জানতাম না। পরিকল্পনা করেছি এই আখ আমিও চাষ করবো। আবহাওয়া অনূকুলে থাকলে এই আখ খুবই লাভজনক।

 

সদর আলী নামে আরেক কৃষক বলেন, এই এলাকায় এতো ভালো আখ হয়, সেটা জানতাম না। আমি এক বিঘা জমিতে ফিলিপাইন জাতের ব্ল্যাক সুগার কেইন চাষ করবো। এই আখের দামও বেশি, খেতেও সুস্বাদু। আর লম্বাও হয় অনেক।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার মোহাম্মদ দুলাল উদ্দিন জানান, সখীপুরে ফিলিপাইন জাতের আখ আবাদ হচ্ছে। অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম এই আখ আবাদ করে লাভবান হচ্ছেন। তাকে দেখে উদ্ধুদ্ধ হয়ে অনেক কৃষক এই আখ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। এই আখের জাতকে ভালোই মনে হচ্ছে। আশা করছি এই আখ চাষে অন্য কৃষকরাও লাভবান হবেন।