প্রতিবারের মতো এবারও দেশের বৃহত্তম ঈদগাহ শোলাকিয়া ময়দানে ঈদের দিন সূর্যোদয়ের পর পরই মুসল্লিরা আসতে থাকে। সকাল ৮টার মধ্যে পুরো ময়দান পূর্ণ হয়ে যায়। ধীরে ধীরে আশেপাশের রাস্তাগুলোতেও ভিড় বাড়তে থাকে।
এদিকে ঈদের আগের দিন রাত থেকেই শোলাকিয়ার ঈদ জামাতকে কেন্দ্র করে পুরো কিশোরগঞ্জ শহরে নেওয়া হয় নজিরবিহীন নিরাপত্তা। সকাল থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয় শহরে যানবাহন চলাচল। শোলাকিয়া ময়দানের প্রবেশ পথে পুরানথানা এলাকা থেকে কয়েকদফা তল্লাশির মধ্য দিয়ে মুসল্লিদের ঈদগাহ প্রবেশ করতে হয়।
মাওলানা ফরিদউদ্দিন মাসউদশোলাকিয়ায় এবারের ১৮৯তম ঈদের জামাতে ইমামতি করার কথা ছিল ইমাম ফরিদউদ্দিন মাসউদের। তবে তার এই ইমামতির বিরোধিতা করে আসছিল শোলাকিয়া ময়দানের জমিদানকারী ঈশাখাঁর বংশধর দেওয়ান মান্নান দাদের বংশধরেরা। শোলাকিয়া ঈদগাহের মোতাওয়াল্লি দেওয়ান মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ্ দাদ্ খানের নেতৃত্বে শোলাকিয়া মুসল্লি পরিষদ’ নামে একটি সংগঠন আগের ইমাম মাওলানা আবুল খায়ের মো. সাইফুল্লাহকে বাদ দিয়ে ফরিদউদ্দিন মাসউদের ইমামতির বিরোধিতা করে আসছিল আগে থেকেই। এবারও তার ইমামতির বিরোধিত করা হয়েছিল।
এবারও ঈদের দিন বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ স্টেডিয়ামে পৌছান ইমাম ফরিদউদ্দিন মাসউদ। কিন্তু শেষপর্যন্ত তিনি শোলাকিয়ায় ইমামতি করতে পারেননি। এইসময় শোলাকিয়া ময়দানের আধা কিমি দূরে আজিমউদ্দিন হাই স্কুলের সামনে পুলিশের সঙ্গে একদল সন্ত্রাসীর সংঘাত হয়। অন্যসব মুসল্লিদের মতোই পুলিশ একদল তরুণকে তল্লাশির জন্য থামালে সংঘর্ষ বাঁধে। তরুণদের মধ্য থেকে একজন চাপাতি দিয়ে পুলিশ সদস্যের ওপর হামলা চালায়। একই সঙ্গে সন্ত্রাসীরা বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। পুলিশের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের এই সংঘর্ষে জহিরুল ও আনসার উল্লাহ নামে দুই পুলিশ সদস্য, ঝর্ণা রানী নামে এক নারী ও এক হামলাকারী নিহত হয়েছে। পুলিশ সদস্য জহিরুল ও এক হামলাকারী ঘটনস্থলে মারা যান। অপর পুলিশ সদস্য আনসার উল্লাহ ও ওই নারীর ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়।
ঈদগাহ মাঠে যখন লাখো মুসল্লি নামাজের অপেক্ষা করছিল তখনই ঘটে এই সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা। ওইসময় ময়দানের মাইকে বড় বাজার জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা সোয়াইব আবদুর রউফ পবিত্র কোরআনের বয়ান পাঠ করছিলেন, মাইকের আওয়াজে ময়দানের ৫০০ মিটার দূরে গোলাগুলি ও বোমা বিস্ফোরণের আওয়াজ শোনা যায়নি। বয়ান পাঠের একপর্যায়ে কিছু সময়ের জন্য তিনি থেমে যান। এসময় তাকে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। এরই মধ্যে মাঠে উপস্থিত মুসল্লিদের মধ্যে হামলা ও গোলাগুলির গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। মুসল্লিরা বসা থেকে উঠে দাঁড়ানো শুরু করেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তাৎক্ষণিকভাবে মাওলানা সোয়াইব মাইকে কাতার ঠিক করে দাঁড়ানোর কথা বলেন এবং নির্ধারিত সময় সকাল ১০টা বাজার আগেই তকবির দিয়ে ঈদের নামাজ শুরু করেন। মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে দিন দ্রুততার সঙ্গে ঈদের নামাজ ও মোনাজাত শেষ করেন। এরপর মাইকে তিনি ঘোষণা দেন, মুসল্লিরা আজিমুদ্দিন স্কুলের পথ দিয়ে যাবেন না। ওদিকে গোলমাল হচ্ছে। এই ঘোষণার পরই মুসল্লিরা জানতে পারে সন্ত্রাসী হামলার কথা। নামাজের আগে ময়দানে হামলার ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে আতঙ্কিত মানুষের ছোটাছুটিতে কয়েক হাজার মানুষ পদপিষ্ট হয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারতো।
গণমাধ্যম ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে শোলাকিয়ায় সন্ত্রাসীদের হামলার বিষয়টিকে জঙ্গি হামলার ঘটনা বলা হলেও স্থানীয়দের দাবি, এর সঙ্গে জঙ্গি হামলার কোনো সম্পর্ক নেই। শোলাকিয়ার ঈদের জামাতে ইমামতিকে কেন্দ্র করেই এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।