হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ এখন ড্রাগন ফল চাষের রূপ পেয়েছে তাই মানুষ ঝুকে পড়ছে। মাঠের পর মাঠ তাকালেই শুধু খোয়া সিমেন্ট বালির তৈরি খুঁটিতে ঝুলছে ড্রাগনের ডাল, ফুল ও ফল। এ উপজেলায় দ্রুত বাড়ছে ড্রাগন ফলের চাষ। লাভ বেশি হওয়ায় চাষিরা এ ফলের চাষে ঝুঁকেছেন। এ বছর জেলায় ৬ হাজার ২২৫ বিঘাতে (৮৩০ হেক্টর) ড্রাগন ফলের চাষ হয়েছে। চাষি ও কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সূত্রের খবর, চলতি বছরে এ জেলায় ৩০০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের ড্রাগন ফল উৎপাদন হবে বলে তাদের আশা। ২০১৬ সালের দিকে এ জেলার মধ্যে মর্ক প্রথম কালীগঞ্জে বোরহান উদ্দিন ও শহিদুল ইসলাম ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করেন। ড্রাগন আফ্রিকার দেশের ফল।
পরে চিন, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডে এ ফলের চাষ শুরু হয়। ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. আবদুর রহিমের মাধ্যমে চারা সংগ্রহ করেন কালীগঞ্জের চাষিরা। তাদের দেখাদেখি আরও অনেকে বাণিজ্যিক ভাবে ড্রাগন ফল চাষ শুরু করেন। অনেকে এ ফলের চাষ করে লাভবান হয়েছেন। তাদের একজন কালীগঞ্জ উপজেলা শিবনগর গ্রামের সুরত আলী। তিনি জানান, ২০১৭ সাল থেকে তিনি ড্রাগনের চাষ শুরু করেন। ২৫ বিঘা জমির ওপর তার ড্রাগন বাগান। তিনি জানান, প্রথম বছর ফল কম ধরে। বাগানের বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে ফল উৎপাদন বাড়তে থাকে। তিনি বলেন, এক বিঘায় ড্রাগনের বাগান করতে দেড় লাখ টাকা খরচ হয়। এ বছর আবহাওয়া বৈরী। এজন্য ফল কম ধরছে। তবে বিঘা প্রতি ৫ লাখ টাকার ফল বিক্রি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কালীগঞ্জ উপজেলা তত্বীপুর গ্রামে ১৬ বিঘাতে ড্রাগনের বাগান করেছেন আহসানুল ইসলাম ডন নামে এক যুবক। তিনি পাঁচ বছর ধরে ড্রাগনের চাষ করছেন। মার্চ-এপ্রিল মাসে ফল ধরতে শুরু করে।
জুন মাসে ফল পাকে। ডিসেম্বর পর্যন্ত গাছে ফল থাকে। শীতে ফল ধরে না। বর্তমানে পাইকারি এ গ্রেড ফল ২৬০ টাকা কেজি ও বি গ্রেড ফল ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ফল ভালো হলে বিঘা প্রতি ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা আয় হয় বলে জানান তিনি। ফলের দোকান গুলোতে অন্যান্য ফলের সঙ্গে ড্রাগন ফল বিক্রি হচ্ছে। চাহিদাও ভালো। মহেশপুর উপজেলা গৌরীনাথপুরে ড্রাগন ফলের হাট বসেছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে ফল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। উপজেলার গৌরীনাথপুর গ্রামের শহিদুল ইসলাম বলেন, পাঁচ বছর আগে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করেছেন।বর্তমানে তার ২৫ বিঘার ওপর ড্রাগন বাগান। তিনি জানান, এ বছর বৃষ্টি কম ও গরমের কারণে ফলন কম হচ্ছে। এতে লাভ কম হবে। গৌরীনাথপুর গ্রাম জাহিদুল ইসলামের ড্রাগন ফলের বাগান। এসব বাগানে কর্ম করে কয়েক শ মানুষ জীবিকা অর্জন করে। গৌরীনাথপুরে ড্রাগনের হাট বসেছে ১০ মাস আগে। অন্তত ৫০টি আড়তে ড্রাগন ফল কেনাবেচা চলে। সকালে চাষি বাগান থেকে ফল তুলে হাটে নিয়ে আসেন। দুপুর পর্যন্ত কেনাবেচা চলে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ফেনী, নোয়াখালী, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর, নওগাঁ, সৈয়দপুর, নিলফামারীসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ব্যাপারিরা এসে ফল কিনে প্যাকিং করে পিকআপ ও ট্রাক যোগে চালান নিয়ে যান।
আড়তদার জসিম উদ্দিন জানান, গৌরীনাথপুরে তিনি প্রথম ড্রাগন ফল কেনাবেচার আড়ত খুলেন। তার দেখাদেখি আরও অনেকে আড়ত খুলেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে প্রতিদিন গৌরীনাথপুর হাটে তিন থেকে চার কোটি টাকার ড্রাগন কেনাবেচা হয়। তিনি প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকার ড্রাগন ফল কেনাবেচা করেন। কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের ঝিনাইদহের উপপরিচালক মো. আজগর আলী বলেন, অন্য ফসলের চেয়ে ড্রাগন ফলের চাষ বাড়ছে। এ পর্যন্ত ৮৩০ হেক্টরে ড্রাগনের চাষ হয়েছে। এ সময় বাজারে অন্য ফল থাকে না। এজন্য ড্রাগন ফলের চাহিদা বেড়েছে। হাটবাজারে ফলের দোকান গুলোতে প্রচুর ড্রাগন ফল শোভা পাঁচ্ছে। বিক্রিও ভালো হচ্ছে। তারা ফলের জাত ও মান উন্নয়নের জন্য কারিগরি পরামর্শ দিচ্ছেন।