ঢাকা ০২:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জমি অধিগ্রহণের জটিলতায় বাঙ্গালপাড়া-চাতলপাড় বন্ধ সেতু নির্মাণের কাজ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৩৮:১৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৩
  • ১৫৮ বার

কিশোরগঞ্জ হাওরাঞ্চলে বারো মাস সড়ক যোগাযোগের জন্য অষ্টগ্রাম উপজেলায় নির্মাণাধীন বাঙ্গালপাড়া-চাতলপাড় সেতুর কাজ ১ মাস ধরে বন্ধ। নেই শ্রমিক, নষ্ট হচ্ছে নির্মাণ সামগ্রী। অলস সময় পার করছে প্রকল্প কর্মকর্তারা। যথাসময়ে সেতুর কাজ শেষ না হওয়ার আশঙ্কা। দ্রুত নির্মাণ কাজ চালুর দাবি সাধারণ মানুষের।

সম্প্রতিক সময়ে দেশের অন্যতম পর্যটন স্থান কিশোরগঞ্জ হাওরাঞ্চলের ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়ক এলাকা বর্ষা মৌসুমে বিছিন্ন থাকে সড়ক যোগাযোগ। হাওরাঞ্চলের সাথে বারো মাস সারাদেশের যোগাযোগ স্থাপনে চলতি বছর জানুয়ারি মাসে অষ্টগ্রাম ও নাসিরনগর উপজেলার মাঝে মেঘনা নদীতে ১৭৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে এক কিলোমিটার দৈর্ঘের বাঙ্গালপাড়া-চাতলপাড় সেতু নির্মাণ শুরু করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।

১২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সেতুর নোয়াগাঁও প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে রড, পাওয়ারপাম্প, পাথরসহ বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী। ফেলে রাখা বহু পাইল খাচায় ধরছে মরিচা। প্রকল্প এলাকায় নেই কোনো শ্রমিক, অলস সময় পাড় করছেন কর্মকর্তারা।

জানুয়ারি মাস থেকে সেতুর অষ্টগ্রাম প্রান্তে ২ থেকে ৭ নম্বর পিলার পর্যন্ত ৬টি পিলারের ৪৫টি পাইলিং সম্পন্ন হয়েছে। গত ৯ সেপ্টম্বর ১ নম্বর পিলারে পাইলিং শুরু করলে স্থানীয় জমির মালিকরা বাধা দেন। পরে বাধ্য হয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন কাজ বন্ধ করে দেয়।

জমি মালিকরা জানান, আমরা জমি দিব, তবে জমির বিপরীতে সরকারি বরাদ্দের টাকা আমরা কবে পাব এই নিশ্চয়তা চাই। দ্রুত জমি অধিগ্রহণ কাজ শেষ করে যেন আমাদের পাওনা বুঝিয়ে দেয়, সে জন্য বাধা দিয়েছি।

অষ্টগ্রাম এলজিইডি ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতুর কাজ চালিয়ে যেতে জমি মালিকদের সাথে সমোঝতার জন্য নানা উদ্যোগ নিলেও কোনো লাভ হচ্ছে না। এতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শংকিত ২০২৫ সালে অক্টোবর মাসে নির্ধারিত সময়ে সেতু হস্তান্তর করতে পারবে কি-না তা নিয়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম, ইটনা ও মিঠামইন উপজেলার সাথে বারো মাস সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হবে এই নির্মাণাধীন এই সেতুর মাধ্যমে। হাওরের প্রবেশদ্বার খ্যাত এই সেতু নির্মাণে কিশোরগঞ্জ অংশে সংযোগ সড়কসহ ২৫০ মিটার জমি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর প্রান্তে প্রায় ৪৫০ মিটার জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। ইতোমধ্যে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল প্রথম ধাপে জরিপ শুরু করেছে। তারা জানান, জরিপ কাজ শেষে আইনী প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হলে জমি মালিকরা তাদের প্রাপ্য পাবেন।

এই বিষয়ে জমি মালিক হাবিব মেম্বার বলেন, ব্রিজের জন্য জমি দিতে আমাদের আপত্তি নেই। তবে, আমাদের জমির উচিত দাম দেওয়া হবে এই নিশ্চয়তা চাই। আমার ৩০ শতাংশ জমি নিয়ে যাচ্ছে। বিনিময়ে কী পাবো? কিছুই জানি না, তাই বাধা দিয়েছি।

মেমরাজ বেগম বলেন, আমরা গরিব মানুষ। কাজ করে খাই। ব্রিজে আমার বসত ভিটা নিয়ে গেলে থাকবো কোথায়? আগে আমার একটা জায়গার ব্যবস্থা করুক, পরে এই জায়গা নিয়ে যাক।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাশনের প্রকৌশলী মোহাম্মদ শরীফ বলেন, ইতোমধ্যে অনেকগুলো পাইল শেষ করেছি। জমি অধিগ্রহণ সমস্যায় স্থানীয়দের বাধার কারণে ৯ সেপ্টম্বর থেকে কাজ বন্ধ রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে লিখিতভাবে বিষয়টি জানিয়েছি। এভাবে কাজ বন্ধ থাকলে যথাসময়ে হস্তান্তর করা সম্ভব নাও হতে পারে।

কিশোরগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর নির্বাহী প্রকৌশলী আমিরুল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যে অধিগ্রহণের জন্য প্রাথমিক জরিপ করেছিল, সেখানেও তারা বাধা দিয়েছেন। অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হলে তারা তাদের প্রাপ্য পাবেন। আমরা আবারও উদ্যোগ নিচ্ছি এই সমস্যা সমাধের জন্য।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জমি অধিগ্রহণের জটিলতায় বাঙ্গালপাড়া-চাতলপাড় বন্ধ সেতু নির্মাণের কাজ

আপডেট টাইম : ০৯:৩৮:১৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৩

কিশোরগঞ্জ হাওরাঞ্চলে বারো মাস সড়ক যোগাযোগের জন্য অষ্টগ্রাম উপজেলায় নির্মাণাধীন বাঙ্গালপাড়া-চাতলপাড় সেতুর কাজ ১ মাস ধরে বন্ধ। নেই শ্রমিক, নষ্ট হচ্ছে নির্মাণ সামগ্রী। অলস সময় পার করছে প্রকল্প কর্মকর্তারা। যথাসময়ে সেতুর কাজ শেষ না হওয়ার আশঙ্কা। দ্রুত নির্মাণ কাজ চালুর দাবি সাধারণ মানুষের।

সম্প্রতিক সময়ে দেশের অন্যতম পর্যটন স্থান কিশোরগঞ্জ হাওরাঞ্চলের ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়ক এলাকা বর্ষা মৌসুমে বিছিন্ন থাকে সড়ক যোগাযোগ। হাওরাঞ্চলের সাথে বারো মাস সারাদেশের যোগাযোগ স্থাপনে চলতি বছর জানুয়ারি মাসে অষ্টগ্রাম ও নাসিরনগর উপজেলার মাঝে মেঘনা নদীতে ১৭৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে এক কিলোমিটার দৈর্ঘের বাঙ্গালপাড়া-চাতলপাড় সেতু নির্মাণ শুরু করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।

১২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সেতুর নোয়াগাঁও প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে রড, পাওয়ারপাম্প, পাথরসহ বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী। ফেলে রাখা বহু পাইল খাচায় ধরছে মরিচা। প্রকল্প এলাকায় নেই কোনো শ্রমিক, অলস সময় পাড় করছেন কর্মকর্তারা।

জানুয়ারি মাস থেকে সেতুর অষ্টগ্রাম প্রান্তে ২ থেকে ৭ নম্বর পিলার পর্যন্ত ৬টি পিলারের ৪৫টি পাইলিং সম্পন্ন হয়েছে। গত ৯ সেপ্টম্বর ১ নম্বর পিলারে পাইলিং শুরু করলে স্থানীয় জমির মালিকরা বাধা দেন। পরে বাধ্য হয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন কাজ বন্ধ করে দেয়।

জমি মালিকরা জানান, আমরা জমি দিব, তবে জমির বিপরীতে সরকারি বরাদ্দের টাকা আমরা কবে পাব এই নিশ্চয়তা চাই। দ্রুত জমি অধিগ্রহণ কাজ শেষ করে যেন আমাদের পাওনা বুঝিয়ে দেয়, সে জন্য বাধা দিয়েছি।

অষ্টগ্রাম এলজিইডি ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতুর কাজ চালিয়ে যেতে জমি মালিকদের সাথে সমোঝতার জন্য নানা উদ্যোগ নিলেও কোনো লাভ হচ্ছে না। এতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শংকিত ২০২৫ সালে অক্টোবর মাসে নির্ধারিত সময়ে সেতু হস্তান্তর করতে পারবে কি-না তা নিয়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম, ইটনা ও মিঠামইন উপজেলার সাথে বারো মাস সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হবে এই নির্মাণাধীন এই সেতুর মাধ্যমে। হাওরের প্রবেশদ্বার খ্যাত এই সেতু নির্মাণে কিশোরগঞ্জ অংশে সংযোগ সড়কসহ ২৫০ মিটার জমি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর প্রান্তে প্রায় ৪৫০ মিটার জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। ইতোমধ্যে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল প্রথম ধাপে জরিপ শুরু করেছে। তারা জানান, জরিপ কাজ শেষে আইনী প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হলে জমি মালিকরা তাদের প্রাপ্য পাবেন।

এই বিষয়ে জমি মালিক হাবিব মেম্বার বলেন, ব্রিজের জন্য জমি দিতে আমাদের আপত্তি নেই। তবে, আমাদের জমির উচিত দাম দেওয়া হবে এই নিশ্চয়তা চাই। আমার ৩০ শতাংশ জমি নিয়ে যাচ্ছে। বিনিময়ে কী পাবো? কিছুই জানি না, তাই বাধা দিয়েছি।

মেমরাজ বেগম বলেন, আমরা গরিব মানুষ। কাজ করে খাই। ব্রিজে আমার বসত ভিটা নিয়ে গেলে থাকবো কোথায়? আগে আমার একটা জায়গার ব্যবস্থা করুক, পরে এই জায়গা নিয়ে যাক।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাশনের প্রকৌশলী মোহাম্মদ শরীফ বলেন, ইতোমধ্যে অনেকগুলো পাইল শেষ করেছি। জমি অধিগ্রহণ সমস্যায় স্থানীয়দের বাধার কারণে ৯ সেপ্টম্বর থেকে কাজ বন্ধ রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে লিখিতভাবে বিষয়টি জানিয়েছি। এভাবে কাজ বন্ধ থাকলে যথাসময়ে হস্তান্তর করা সম্ভব নাও হতে পারে।

কিশোরগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর নির্বাহী প্রকৌশলী আমিরুল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যে অধিগ্রহণের জন্য প্রাথমিক জরিপ করেছিল, সেখানেও তারা বাধা দিয়েছেন। অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হলে তারা তাদের প্রাপ্য পাবেন। আমরা আবারও উদ্যোগ নিচ্ছি এই সমস্যা সমাধের জন্য।