ঢাকা ১০:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৫ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাওরের কৃষক বাঁচলে হাওর বাঁচবে, হাওর বাঁচলে দেশ বাঁচবে এ উপলক্ষে আলোচনা সভা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০১:০০:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫
  • ১৮ বার

হাওর শুধু সৌন্দর্যের লীলাভূমি নয়, হাওরের অর্থনৈতিক গুরুত্ব আছে । হাওর দেশের অন্যতম প্রাকৃতিক, মৎস্য ও ধানসম্পদে সমৃদ্ধ এলাকা। হাওরে যে দুর্যোগ চলছে, সেই দুর্গত মানুষের পাশে সরকার দাঁড়ানোর আশা করছি । কিন্তু এই দাঁড়ানো যথেষ্ট নয়। এই যথেষ্ট নয় কথাটি আমরা জানাতে চাই। হাওরবাসী আজ বিপন্ন। অনেকেই বলছেন, এই দুর্যোগ মানবসৃষ্ট। যদি এটা হয়ে থাকে তাহলে সেটি খুবই উদ্বেগের বিষয়।

আমরা আপনাদের মাধ্যমে হাওরবাসীর দুঃখ-কষ্টের কথা তুলে ধরতে চাই। এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলায় এবং ভবিষ্যতের করণীয় সম্পর্কে দীর্ঘ মেয়াদে পরিকল্পনা নিতে হবে। এই পরিকল্পনা কী হতে পারে, হাওরবাসীই তা বলবেন।

হাওরবাসীর জেগে উঠা এখন সময়ের দাবী অন্যথায় হাওর হয়ে যাবে বিলীন।

হাওরের কৃষক বাঁচলে হাওর বাঁচবে, হাওর বাঁচলে দেশ বাঁচবে। এই স্লোগান সকলের। 

প্রকৃতির সেবা উপহার অনন্য অপূর্ব আমাদের হাওর। বৈচিত্র্যময় হাওর ও হাওরবাসীর জীবনধারা। জল, জমি ও জনবল হাওরের প্রাণ। দেশের একদশমাংশ প্রায় ০২(দুই) কোটি মানুষ জীবন-জীবিকায় হাওরে বসবাস করেন এবং সকল সংকট সমস্যা ও প্রকৃতিক দুর্যোগ দুর্বিপাকে জীবন যুদ্ধের সু-কঠিন লড়াই করে জীবনধারা অব্যাহত রাখেন। বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাদলীয় ০৭: সাতটি জেলার ৪৯টি উপজেলার ৩৭০টির অধিক হাওর রয়েছে। এর আয়তন প্রায় ৮. লক্ষ ৫৮ হাজার ৪৬০ হেক্টর। নদ-নদী ও খাল-বিল বেষ্টিত জীববৈচিত্রের এই হাওর অঞ্চল। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি অর্জনে হাওরের অবদান তাৎপর্যময়।

লক্ষ লক্ষ টন খাদ্য শস্য কৃষিজাত পণ্য ও মৎস্য উৎপাদনে হাওরের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ও উল্লেখযোগ্য। এ হাওরকে বিশ্বের সেরা মিঠা পানির সায়রও বলা হয়। আমরা গর্বিত যে, এ হাওরে আমাদের জন্ম ও বেড়ে ওঠা। হাওর আমাদের জীবন ও প্রেম। স্বর্ণগর্ভা হাওরও হাওরবাসী দেশ ও জাতিকে দেয় উজার করে, বিনিময়ে প্রাপ্তি অপ্রতুল ও অপর্যাপ্ত। হাজার বছর অবধি এ ধারাবাহিকতায় দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় হাওর ও হাওবাসীর পরিচিতি এখন পিছিয়ে পরা অঞ্চল এবং উন্নয়ন বৈষম্যের স্বীকারে পরিণত। হাওরে রয়েছে বহুবিধ সংকট ও সমস্যা যা নিরসনের দায় রয়েছে রাষ্ট্রের এবং হাওর সন্তানদের। কৃষির সাথে জড়িত হাওরের কৃষক বাঁচলে-হাওর বাঁচবে, হাওর বাঁচলে দেশ বাঁচবে। জলের সাথে জেলে জড়িত- জেলে বাঁচলে মৎস্য সম্পদে দেশ হবে সমৃদ্ধ।

সাম্প্রতিকালে হাওরকে নগরায়নের রূপে সজ্জিত করার প্রয়াস ও প্রচেষ্টার ফলে হাওর হারিয়েছে আপন ঐতিহ্য মহিমা ও বৈশিষ্ট্য। উন্নয়নের নামে হাওরে নতুন নতুন নির্মাণ ও স্থাপনা-হাওরের চিরায়ত বৈশিষ্ট ও প্রকৃতিক ধারাবাহিকতা মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে অকাল বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ এখন হাওরবাসীর জীবনসঙ্গী, উৎপাদনশীলতায় এবং হাওর জীবনধারায় ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত। সম্প্রতি দেশের পরিকল্পনায় নিয়োজিত সরকারী ও বেসরকারী বিজ্ঞ পরিকল্পনাবিদগণ এই উন্নয়নকে অর্থের অপচয় বলে অবহিত করেছেন এবং নিজের পায়ে কুড়াল মারার সমতুল্য যা মরার উপর খাড়ার ঘা বলে মন্তব্য করেছেন।

লক্ষণীয় যে, হাওর উন্নয়নের নামে প্রায় সহস্রাধিক একর কৃষি জমি নগরায়নের নামে অপব্যবহার ও বিনষ্ট হয়েছে। নদী খননের পরিবর্তে কৃষি জমি জরাট যা অকাল বন্যার অন্যতম কারণ এবং পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী। অর্থ অপচয় ও পরিবেশ দূষণ থেকে এ হাওর ও হাওবাবাসীকে জাগ্রত ও সম্পৃক্ত করা আমাদের দেশ-প্রেমিকের দায়িত্ব। সবার জেগে ওঠা এখন সময়ের দাবী অন্যযায় হাওর হবে বিপন্ন। দেশের অব্যাহত উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় হারওকে ও হাওরবাসীকে সংযুক্ত ও সম্পৃক্ত করা আমাদের দায়িত্ব। একদিকে উন্নয়ন বৈষম্য নিরসন অপরদিকে সংবিধানে স্বীকৃত মৌলিক অধিকারসমূহে হাওবাসীর সংকট সমস্যা চিহ্নিত করণসহ বান্ধব পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা জরুরী। তাই আসুন হাওর ও হাওরবাসীর প্রতি আমাদের প্রেম ও ভালবাসার দায় পরিশোধের লক্ষ্যে হাওর বাঁচাই এবং হাওর উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি আন্দোলন গড়ে তুলি।

* হাওর ও হাওরবাসীর সংকট/সমস্যা সমাধানে সুপারিশ প্রস্তাবনাঃ-

১। নদীনালা খাল-বিল খননঃ নদ-নদী, খাল-বিল ও কৃষি জমি হাওরের প্রাণ এবং হাওরবাসীর জীবন জীবিকার উপায় ও অবলম্বন। অতীতে প্রকৃতির আপন ধারাবাহিকতায় ও নিয়মে হাওরের খাল-বিল, নদ-নদীর গভীরতা ছিল পর্যাপ্ত। পানি ধারণের ক্ষতাও ছিল যথেষ্ট। অকাল বন্যারোধে প্রাকৃতিক সেই ধারাবাহিকতা আজ আর নেই। যেখানে ছিল গভীর জল, সেখানে আজ হাটু-জল অথবা বালু-চর। নগরায়নের অভিযাত্রায় নদীও আজ হাওরের মারা প্রাণ হারায়। নদ ও নদী সংশ্লিষ্ট হাওরবসটিকে আপন ঐতিহ্যে বাঁচানোর লক্ষ্যে নদী-নালা, খাল-বিল সরকারী উদ্যোগে খনন কার্যক্রম অবিলম্বে শুরু করতে হবে।

২। শস্য বীমাঃ অবিলম্বে হাওর অঞ্চলে শস্য বীমা চালু করতে হবে। যাতে প্রকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষন ও মৎস্যজীবি বীমাকৃত ফসলের ক্ষতিপুরণ পেতে পারে।

৩। ইজারা প্রথাঃ হাওর অঞ্চলের মৎস্য আবাদ ও আহরণের লক্ষ্যে সকল খাল, বিল নদী নালা যা সরকারীভাবে ইজারা প্রদান করা হয়েছে, সেই সকল জলাভূমি সমূহের ইজারা প্রথা বাতিল করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক, মৎস্যজীবী ও সবল সাম্প্রদায় যাতে জীবন জীবিকা ও বেঁচে থাকার জন্য ভাসমান পানিতে অবাধে মৎস্য চাষ ও আহরন করতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।

৪। শিল্প প্রতিষ্ঠাঃ হাওরবাসীর জীবন জীবিকার স্বার্থেই আয় ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে এক ফসলীর বিকল্প হিসাবে দুগ্ধ খামার, গরু মোটা-তাজা করণ, পোল্ট্রি খামার, শাক- সবজি উৎপাদন এবং তাঁত ও পাট শিল্প প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি কৃষি ভিত্তিক শিল্প গড়ে তুলতে হবে।

৫। খাষ জমি বণ্টনঃ সকল খাস জমি সরকারের আয়ত্বে নিয়ে ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে বণ্টন করতে হবে।

৬। পর্যটন শিল্পঃ জীব বৈচিত্রে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর হাওর অঞ্চলে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটাতে হবে।

১। সম্পদ আহরণঃ হাওর অঞ্চলে গ্যাস সহ প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের অনুসন্ধান চালাতে হবে।

৮। বিদ্যুৎ উৎপাদনঃ পাহাড় থেকে নেমে আসা পানি সম্পদকে বিদ্যুৎ সম্পদে রূপান্তরিত করার ব্যবস্থা করতে হবে।

৯। ব্যাংক ঋণঃ হাওরের কৃষক, মৎস্যজীবী ও শিল্প উদ্যোগতাদেরকে সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।

১০। কৃষি উৎপাদনে বিদ্যুৎঃ কৃষকের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিনা মূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হবে এবং সার ও বীজ বিতরণে সরকারী ভর্তুকী প্রদান করতে হবে।।

১১। বিশ্ব বিদ্যালয়ঃ হাওর সুরক্ষা ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য হাওরে একটি কৃষি ভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

১২। হাসপাতাল প্রতিষ্ঠাঃ হাওরবাসীর স্বাস্থ্য সেবায় সু-চিকিৎসার লক্ষ্যে হাওর অঞ্চলে একটি আধুনিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

১৩। কর্মসংস্থানঃ হাওরের শিক্ষিত বেকার সন্তানদেরকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।

১৪। শিক্ষিত যুবকদের প্রশিক্ষণ প্রদান ও বিদেশ প্রেরণঃ হাওরের বেকার শিক্ষিত যুবকদেরকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিদেশ প্রেরণের ব্যবস্থা করতে হবে।।

১৫। কৃষি যন্ত্রপাতিঃ হাওর অঞ্চলের কৃষকদেরকে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করতে হবে।

১৬। হাওর যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ কৃষি জমি বিনষ্ট না করে উড়াল সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে প্রত্যেকটি উপজেলা হতে জেলায় ও সদরে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে হবে।

১৭। পরিবেশ সুরক্ষাঃ পরিবেশ সুরক্ষায় হাওর অঞ্চল উপযোগী বৃক্ষ রোপণের ব্যবস্থা করতে হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

হাওরের কৃষক বাঁচলে হাওর বাঁচবে, হাওর বাঁচলে দেশ বাঁচবে এ উপলক্ষে আলোচনা সভা

আপডেট টাইম : ০১:০০:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫

হাওর শুধু সৌন্দর্যের লীলাভূমি নয়, হাওরের অর্থনৈতিক গুরুত্ব আছে । হাওর দেশের অন্যতম প্রাকৃতিক, মৎস্য ও ধানসম্পদে সমৃদ্ধ এলাকা। হাওরে যে দুর্যোগ চলছে, সেই দুর্গত মানুষের পাশে সরকার দাঁড়ানোর আশা করছি । কিন্তু এই দাঁড়ানো যথেষ্ট নয়। এই যথেষ্ট নয় কথাটি আমরা জানাতে চাই। হাওরবাসী আজ বিপন্ন। অনেকেই বলছেন, এই দুর্যোগ মানবসৃষ্ট। যদি এটা হয়ে থাকে তাহলে সেটি খুবই উদ্বেগের বিষয়।

আমরা আপনাদের মাধ্যমে হাওরবাসীর দুঃখ-কষ্টের কথা তুলে ধরতে চাই। এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলায় এবং ভবিষ্যতের করণীয় সম্পর্কে দীর্ঘ মেয়াদে পরিকল্পনা নিতে হবে। এই পরিকল্পনা কী হতে পারে, হাওরবাসীই তা বলবেন।

হাওরবাসীর জেগে উঠা এখন সময়ের দাবী অন্যথায় হাওর হয়ে যাবে বিলীন।

হাওরের কৃষক বাঁচলে হাওর বাঁচবে, হাওর বাঁচলে দেশ বাঁচবে। এই স্লোগান সকলের। 

প্রকৃতির সেবা উপহার অনন্য অপূর্ব আমাদের হাওর। বৈচিত্র্যময় হাওর ও হাওরবাসীর জীবনধারা। জল, জমি ও জনবল হাওরের প্রাণ। দেশের একদশমাংশ প্রায় ০২(দুই) কোটি মানুষ জীবন-জীবিকায় হাওরে বসবাস করেন এবং সকল সংকট সমস্যা ও প্রকৃতিক দুর্যোগ দুর্বিপাকে জীবন যুদ্ধের সু-কঠিন লড়াই করে জীবনধারা অব্যাহত রাখেন। বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাদলীয় ০৭: সাতটি জেলার ৪৯টি উপজেলার ৩৭০টির অধিক হাওর রয়েছে। এর আয়তন প্রায় ৮. লক্ষ ৫৮ হাজার ৪৬০ হেক্টর। নদ-নদী ও খাল-বিল বেষ্টিত জীববৈচিত্রের এই হাওর অঞ্চল। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি অর্জনে হাওরের অবদান তাৎপর্যময়।

লক্ষ লক্ষ টন খাদ্য শস্য কৃষিজাত পণ্য ও মৎস্য উৎপাদনে হাওরের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ও উল্লেখযোগ্য। এ হাওরকে বিশ্বের সেরা মিঠা পানির সায়রও বলা হয়। আমরা গর্বিত যে, এ হাওরে আমাদের জন্ম ও বেড়ে ওঠা। হাওর আমাদের জীবন ও প্রেম। স্বর্ণগর্ভা হাওরও হাওরবাসী দেশ ও জাতিকে দেয় উজার করে, বিনিময়ে প্রাপ্তি অপ্রতুল ও অপর্যাপ্ত। হাজার বছর অবধি এ ধারাবাহিকতায় দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় হাওর ও হাওবাসীর পরিচিতি এখন পিছিয়ে পরা অঞ্চল এবং উন্নয়ন বৈষম্যের স্বীকারে পরিণত। হাওরে রয়েছে বহুবিধ সংকট ও সমস্যা যা নিরসনের দায় রয়েছে রাষ্ট্রের এবং হাওর সন্তানদের। কৃষির সাথে জড়িত হাওরের কৃষক বাঁচলে-হাওর বাঁচবে, হাওর বাঁচলে দেশ বাঁচবে। জলের সাথে জেলে জড়িত- জেলে বাঁচলে মৎস্য সম্পদে দেশ হবে সমৃদ্ধ।

সাম্প্রতিকালে হাওরকে নগরায়নের রূপে সজ্জিত করার প্রয়াস ও প্রচেষ্টার ফলে হাওর হারিয়েছে আপন ঐতিহ্য মহিমা ও বৈশিষ্ট্য। উন্নয়নের নামে হাওরে নতুন নতুন নির্মাণ ও স্থাপনা-হাওরের চিরায়ত বৈশিষ্ট ও প্রকৃতিক ধারাবাহিকতা মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে অকাল বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ এখন হাওরবাসীর জীবনসঙ্গী, উৎপাদনশীলতায় এবং হাওর জীবনধারায় ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত। সম্প্রতি দেশের পরিকল্পনায় নিয়োজিত সরকারী ও বেসরকারী বিজ্ঞ পরিকল্পনাবিদগণ এই উন্নয়নকে অর্থের অপচয় বলে অবহিত করেছেন এবং নিজের পায়ে কুড়াল মারার সমতুল্য যা মরার উপর খাড়ার ঘা বলে মন্তব্য করেছেন।

লক্ষণীয় যে, হাওর উন্নয়নের নামে প্রায় সহস্রাধিক একর কৃষি জমি নগরায়নের নামে অপব্যবহার ও বিনষ্ট হয়েছে। নদী খননের পরিবর্তে কৃষি জমি জরাট যা অকাল বন্যার অন্যতম কারণ এবং পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী। অর্থ অপচয় ও পরিবেশ দূষণ থেকে এ হাওর ও হাওবাবাসীকে জাগ্রত ও সম্পৃক্ত করা আমাদের দেশ-প্রেমিকের দায়িত্ব। সবার জেগে ওঠা এখন সময়ের দাবী অন্যযায় হাওর হবে বিপন্ন। দেশের অব্যাহত উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় হারওকে ও হাওরবাসীকে সংযুক্ত ও সম্পৃক্ত করা আমাদের দায়িত্ব। একদিকে উন্নয়ন বৈষম্য নিরসন অপরদিকে সংবিধানে স্বীকৃত মৌলিক অধিকারসমূহে হাওবাসীর সংকট সমস্যা চিহ্নিত করণসহ বান্ধব পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা জরুরী। তাই আসুন হাওর ও হাওরবাসীর প্রতি আমাদের প্রেম ও ভালবাসার দায় পরিশোধের লক্ষ্যে হাওর বাঁচাই এবং হাওর উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি আন্দোলন গড়ে তুলি।

* হাওর ও হাওরবাসীর সংকট/সমস্যা সমাধানে সুপারিশ প্রস্তাবনাঃ-

১। নদীনালা খাল-বিল খননঃ নদ-নদী, খাল-বিল ও কৃষি জমি হাওরের প্রাণ এবং হাওরবাসীর জীবন জীবিকার উপায় ও অবলম্বন। অতীতে প্রকৃতির আপন ধারাবাহিকতায় ও নিয়মে হাওরের খাল-বিল, নদ-নদীর গভীরতা ছিল পর্যাপ্ত। পানি ধারণের ক্ষতাও ছিল যথেষ্ট। অকাল বন্যারোধে প্রাকৃতিক সেই ধারাবাহিকতা আজ আর নেই। যেখানে ছিল গভীর জল, সেখানে আজ হাটু-জল অথবা বালু-চর। নগরায়নের অভিযাত্রায় নদীও আজ হাওরের মারা প্রাণ হারায়। নদ ও নদী সংশ্লিষ্ট হাওরবসটিকে আপন ঐতিহ্যে বাঁচানোর লক্ষ্যে নদী-নালা, খাল-বিল সরকারী উদ্যোগে খনন কার্যক্রম অবিলম্বে শুরু করতে হবে।

২। শস্য বীমাঃ অবিলম্বে হাওর অঞ্চলে শস্য বীমা চালু করতে হবে। যাতে প্রকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষন ও মৎস্যজীবি বীমাকৃত ফসলের ক্ষতিপুরণ পেতে পারে।

৩। ইজারা প্রথাঃ হাওর অঞ্চলের মৎস্য আবাদ ও আহরণের লক্ষ্যে সকল খাল, বিল নদী নালা যা সরকারীভাবে ইজারা প্রদান করা হয়েছে, সেই সকল জলাভূমি সমূহের ইজারা প্রথা বাতিল করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক, মৎস্যজীবী ও সবল সাম্প্রদায় যাতে জীবন জীবিকা ও বেঁচে থাকার জন্য ভাসমান পানিতে অবাধে মৎস্য চাষ ও আহরন করতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।

৪। শিল্প প্রতিষ্ঠাঃ হাওরবাসীর জীবন জীবিকার স্বার্থেই আয় ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে এক ফসলীর বিকল্প হিসাবে দুগ্ধ খামার, গরু মোটা-তাজা করণ, পোল্ট্রি খামার, শাক- সবজি উৎপাদন এবং তাঁত ও পাট শিল্প প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি কৃষি ভিত্তিক শিল্প গড়ে তুলতে হবে।

৫। খাষ জমি বণ্টনঃ সকল খাস জমি সরকারের আয়ত্বে নিয়ে ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে বণ্টন করতে হবে।

৬। পর্যটন শিল্পঃ জীব বৈচিত্রে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর হাওর অঞ্চলে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটাতে হবে।

১। সম্পদ আহরণঃ হাওর অঞ্চলে গ্যাস সহ প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের অনুসন্ধান চালাতে হবে।

৮। বিদ্যুৎ উৎপাদনঃ পাহাড় থেকে নেমে আসা পানি সম্পদকে বিদ্যুৎ সম্পদে রূপান্তরিত করার ব্যবস্থা করতে হবে।

৯। ব্যাংক ঋণঃ হাওরের কৃষক, মৎস্যজীবী ও শিল্প উদ্যোগতাদেরকে সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।

১০। কৃষি উৎপাদনে বিদ্যুৎঃ কৃষকের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিনা মূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হবে এবং সার ও বীজ বিতরণে সরকারী ভর্তুকী প্রদান করতে হবে।।

১১। বিশ্ব বিদ্যালয়ঃ হাওর সুরক্ষা ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য হাওরে একটি কৃষি ভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

১২। হাসপাতাল প্রতিষ্ঠাঃ হাওরবাসীর স্বাস্থ্য সেবায় সু-চিকিৎসার লক্ষ্যে হাওর অঞ্চলে একটি আধুনিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

১৩। কর্মসংস্থানঃ হাওরের শিক্ষিত বেকার সন্তানদেরকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।

১৪। শিক্ষিত যুবকদের প্রশিক্ষণ প্রদান ও বিদেশ প্রেরণঃ হাওরের বেকার শিক্ষিত যুবকদেরকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিদেশ প্রেরণের ব্যবস্থা করতে হবে।।

১৫। কৃষি যন্ত্রপাতিঃ হাওর অঞ্চলের কৃষকদেরকে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করতে হবে।

১৬। হাওর যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ কৃষি জমি বিনষ্ট না করে উড়াল সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে প্রত্যেকটি উপজেলা হতে জেলায় ও সদরে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে হবে।

১৭। পরিবেশ সুরক্ষাঃ পরিবেশ সুরক্ষায় হাওর অঞ্চল উপযোগী বৃক্ষ রোপণের ব্যবস্থা করতে হবে।