ঢাকা ০৪:০৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শূন্য প্রাপ্তির’ টিকফা বৈঠক বুধবার, জিএসপি চাইবে ঢাকা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:৩৮:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • ৮০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট (টিকফা)- এর অধীনে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সপ্তম কাউন্সিল বৈঠক আগামীকাল (২০ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শুল্ক কমানো, অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা (জিএসপি) পুনর্বহালে আগের দাবিও উত্থাপন করবে ঢাকা।

একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা তুলায় উৎপাদিত পোশাক সে দেশে রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা চাওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

টিকফা বৈঠকে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি হিসেবে গতকাল সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) অংশীজনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। টিকফা বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয়ের (ইউএসটিআর) দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী ইউএসটিআর ক্রিস্টোফার উইলসের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল অংশ নেবে।

এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধার দাবি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হবে। যুক্তরাষ্ট্রের তুলা আমদানিতে সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে যৌক্তিকভাবেই সে দেশের তুলায় তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা চাওয়া হবে। একই সঙ্গে জিএসপি পুনবর্হালের পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে ব্যাবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সে বিষয়েও আলোচনা হবে।

তিনি বলেন, উন্নয়নশীল দেশ হলে অনেক কিছু শুনতে হয়। এরই মধ্যে নিজেদের প্রয়োজনেই সেগুলো উন্নতি করতে হয়। তারা এখন আমাদের পোশাক খাতে উন্নতির কথা বলছে। আমরা করছি। কিন্তু একটা সময় তাদের দেশের স্ট্যান্ডার্ড আমাদের চেয়েও খারাপ ছিল। এখন উন্নতি করার পরও একই ইস্যু বারবার তোলা হয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে গড়ে ১৬ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রের দাবির কারণে গত মে মাসে সে দেশ থেকে কাঁচা তুলা আমদানির ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের তুলা দেশে আসার পর এখন ফিউমিগেশন বা পোকামাকড়মুক্ত করতে হয় না। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিউমিগেশন করলেই চলে। এ সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে টিকফা কাউন্সিল বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের তুলায় উৎপাদিত তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা চাইবে বাংলাদেশ।

বৈঠকে এলডিসি উত্তরণে মার্কিন সরকারের সমর্থন ও সহযোগিতা চাইবে বাংলাদেশ। দেশে ইতোমধ্যে জ্বালানি খাতে মার্কিন বিনিয়োগ আছে। আগামীতে যাতে এই বিনিয়োগ ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে হয়, তার প্রস্তাব রাখবে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের একটি ডিবিসি ফান্ড আছে। সেখানে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানাবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ আরও যেসব দাবি তুলবে সেগুলো অনেকটা বিভিন্ন সময়ের দাবির একটি ভিন্নতর রূপ বলে জানা গেছে।

এছাড়া, একক দেশ হিসেবে বিশ্বে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বড় বাজার হলো যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু বিভিন্ন দেশকে তারা বহুল আলোচিত জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্সেস (জিএসপি) বা অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা দিয়ে গেলেও বাংলাদেশের তৈরি পোশাক এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত। অন্যান্য কিছু রপ্তানি পণ্যে জিএসপি কোটা রাখা হলেও সেটিও কেড়ে নেওয়া হয় রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি ইস্যুতে। এরপর পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার পর দফায় দফায় চাওয়ার পরও জিএসপি আর ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি। অবস্থাটি এরকম যে, আরও উন্নতি করলে জিএসপি মিলবে—এরকম আশ্বাস দিয়ে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের একটা কৃত্রিম হাহাকার ছড়িয়ে রেখেছে মার্কিন প্রশাসন। ফলে মার্কিন বাজারে সর্বোচ্চ শুল্ক দিয়ে বাংলাদেশকে পণ্য রপ্তানি করতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে খোদ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘পিউ রিসার্চ’ মার্কিন সরকারের ‘ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড কমিশন’-এর তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য বিক্রি করতে ২৩২ দেশের মধ্যে বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ শুল্ক দিতে হয়। তাদের হিসাবে, যুক্তরাষ্ট্রে গড় আমদানি শুল্কহার যেখানে শতকরা ১ ভাগের মতো, সেখানে বাংলাদেশের প্রায় সব পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ দশমিক ২ শতাংশ শুল্ক রয়েছে।

অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র তাদের এজেন্ডায় বাংলাদেশে ব্যবসারত তাদের কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশ নিজেদের দেশে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করার বিষয়টি রেখেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে বীজ রপ্তানি করতে চায় দেশটি। এ জন্য দেশটির বীজ আইন নিয়ে আলোচনা করা হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশে মার্কিন বিনিয়োগ, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে শ্রমিক অধিকার, শ্রম সংগঠন করার স্বাধীনতা, কারখানায় নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশ, শিশুশ্রম, মেধাস্বত্ব ইত্যাদি বিষয়েও আলোচনা করবে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া আসন্ন বৈঠকে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জিএসপি পুনর্বহাল হলেও আগের মতো তৈরি পোশাক এর আওতার বাইরে থাকার আশঙ্কা রয়েছে। তাই আলাদা করে সার্বিকভাবে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শুল্ক কমানো এবং যুক্তরাষ্ট্রের তুলায় উৎপাদিত পোশাকে শুল্কমুক্ত সুবিধার দাবি তোলা হচ্ছে। একই সঙ্গে মেধাস্বত্ব অধিকার, মানসম্পন্ন সনদ অবকাঠামোর জন্য প্রযুক্তিগত সহযোগিতা, প্রস্তাবিত ডাটা সুরক্ষা আইন, যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে (এফডিএ) বাংলাদেশি ওষুধ নিবন্ধন পাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করার বিষয়েও আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

উল্লেখ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় আলোচনার একমাত্র প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফ্রেমওয়ার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট (টিকফা)। ২০১৩ সালে অভিন্ন উদ্দেশ্যে দুই দেশের মধ্যে টিকফা চুক্তি সই হয়। এরই মধ্যে চুক্তির এক দশক পার হতে চলেছে। এর আওতায় ঢাকা ও ওয়াশিংটনের মধ্যে এই সময়ে ছয়টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তবে এসব বৈঠক থেকে এখনো স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য কোনো প্রাপ্তি ঘটেনি। অর্থাৎ অর্জন প্রায় শূন্য। মেলেনি জিএসপি সুবিধা। উল্টো ২৩২ দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সর্বোচ্চ শুল্ক দিচ্ছে বাংলাদেশ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

শূন্য প্রাপ্তির’ টিকফা বৈঠক বুধবার, জিএসপি চাইবে ঢাকা

আপডেট টাইম : ০৭:৩৮:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট (টিকফা)- এর অধীনে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সপ্তম কাউন্সিল বৈঠক আগামীকাল (২০ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শুল্ক কমানো, অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা (জিএসপি) পুনর্বহালে আগের দাবিও উত্থাপন করবে ঢাকা।

একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা তুলায় উৎপাদিত পোশাক সে দেশে রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা চাওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

টিকফা বৈঠকে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি হিসেবে গতকাল সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) অংশীজনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। টিকফা বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয়ের (ইউএসটিআর) দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী ইউএসটিআর ক্রিস্টোফার উইলসের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল অংশ নেবে।

এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধার দাবি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হবে। যুক্তরাষ্ট্রের তুলা আমদানিতে সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে যৌক্তিকভাবেই সে দেশের তুলায় তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা চাওয়া হবে। একই সঙ্গে জিএসপি পুনবর্হালের পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে ব্যাবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সে বিষয়েও আলোচনা হবে।

তিনি বলেন, উন্নয়নশীল দেশ হলে অনেক কিছু শুনতে হয়। এরই মধ্যে নিজেদের প্রয়োজনেই সেগুলো উন্নতি করতে হয়। তারা এখন আমাদের পোশাক খাতে উন্নতির কথা বলছে। আমরা করছি। কিন্তু একটা সময় তাদের দেশের স্ট্যান্ডার্ড আমাদের চেয়েও খারাপ ছিল। এখন উন্নতি করার পরও একই ইস্যু বারবার তোলা হয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে গড়ে ১৬ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রের দাবির কারণে গত মে মাসে সে দেশ থেকে কাঁচা তুলা আমদানির ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের তুলা দেশে আসার পর এখন ফিউমিগেশন বা পোকামাকড়মুক্ত করতে হয় না। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিউমিগেশন করলেই চলে। এ সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে টিকফা কাউন্সিল বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের তুলায় উৎপাদিত তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা চাইবে বাংলাদেশ।

বৈঠকে এলডিসি উত্তরণে মার্কিন সরকারের সমর্থন ও সহযোগিতা চাইবে বাংলাদেশ। দেশে ইতোমধ্যে জ্বালানি খাতে মার্কিন বিনিয়োগ আছে। আগামীতে যাতে এই বিনিয়োগ ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে হয়, তার প্রস্তাব রাখবে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের একটি ডিবিসি ফান্ড আছে। সেখানে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানাবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ আরও যেসব দাবি তুলবে সেগুলো অনেকটা বিভিন্ন সময়ের দাবির একটি ভিন্নতর রূপ বলে জানা গেছে।

এছাড়া, একক দেশ হিসেবে বিশ্বে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বড় বাজার হলো যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু বিভিন্ন দেশকে তারা বহুল আলোচিত জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্সেস (জিএসপি) বা অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা দিয়ে গেলেও বাংলাদেশের তৈরি পোশাক এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত। অন্যান্য কিছু রপ্তানি পণ্যে জিএসপি কোটা রাখা হলেও সেটিও কেড়ে নেওয়া হয় রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি ইস্যুতে। এরপর পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার পর দফায় দফায় চাওয়ার পরও জিএসপি আর ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি। অবস্থাটি এরকম যে, আরও উন্নতি করলে জিএসপি মিলবে—এরকম আশ্বাস দিয়ে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের একটা কৃত্রিম হাহাকার ছড়িয়ে রেখেছে মার্কিন প্রশাসন। ফলে মার্কিন বাজারে সর্বোচ্চ শুল্ক দিয়ে বাংলাদেশকে পণ্য রপ্তানি করতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে খোদ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘পিউ রিসার্চ’ মার্কিন সরকারের ‘ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড কমিশন’-এর তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য বিক্রি করতে ২৩২ দেশের মধ্যে বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ শুল্ক দিতে হয়। তাদের হিসাবে, যুক্তরাষ্ট্রে গড় আমদানি শুল্কহার যেখানে শতকরা ১ ভাগের মতো, সেখানে বাংলাদেশের প্রায় সব পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ দশমিক ২ শতাংশ শুল্ক রয়েছে।

অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র তাদের এজেন্ডায় বাংলাদেশে ব্যবসারত তাদের কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশ নিজেদের দেশে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করার বিষয়টি রেখেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে বীজ রপ্তানি করতে চায় দেশটি। এ জন্য দেশটির বীজ আইন নিয়ে আলোচনা করা হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশে মার্কিন বিনিয়োগ, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে শ্রমিক অধিকার, শ্রম সংগঠন করার স্বাধীনতা, কারখানায় নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশ, শিশুশ্রম, মেধাস্বত্ব ইত্যাদি বিষয়েও আলোচনা করবে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া আসন্ন বৈঠকে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জিএসপি পুনর্বহাল হলেও আগের মতো তৈরি পোশাক এর আওতার বাইরে থাকার আশঙ্কা রয়েছে। তাই আলাদা করে সার্বিকভাবে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শুল্ক কমানো এবং যুক্তরাষ্ট্রের তুলায় উৎপাদিত পোশাকে শুল্কমুক্ত সুবিধার দাবি তোলা হচ্ছে। একই সঙ্গে মেধাস্বত্ব অধিকার, মানসম্পন্ন সনদ অবকাঠামোর জন্য প্রযুক্তিগত সহযোগিতা, প্রস্তাবিত ডাটা সুরক্ষা আইন, যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে (এফডিএ) বাংলাদেশি ওষুধ নিবন্ধন পাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করার বিষয়েও আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

উল্লেখ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় আলোচনার একমাত্র প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফ্রেমওয়ার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট (টিকফা)। ২০১৩ সালে অভিন্ন উদ্দেশ্যে দুই দেশের মধ্যে টিকফা চুক্তি সই হয়। এরই মধ্যে চুক্তির এক দশক পার হতে চলেছে। এর আওতায় ঢাকা ও ওয়াশিংটনের মধ্যে এই সময়ে ছয়টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তবে এসব বৈঠক থেকে এখনো স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য কোনো প্রাপ্তি ঘটেনি। অর্থাৎ অর্জন প্রায় শূন্য। মেলেনি জিএসপি সুবিধা। উল্টো ২৩২ দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সর্বোচ্চ শুল্ক দিচ্ছে বাংলাদেশ।