হাওর বার্তা ডেস্কঃ নোয়াখালীর সুবর্ণচরে চর ওয়াপদা ইউনিয়নে অফ সিজনে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করে সফল হয়েছেন চর ওয়াপদা গ্রামের কৃষক মোঃ নুর উদ্দিন। টমেটো মূলত শীতকালীন ফসল। কিন্তু বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট (বারি) উদ্ভাবিত গ্রীষ্মকালীন টমেটো বারি-৮ অসময়ে চাষ করে উচ্চমূল্যে বাজারজাত করছেন নুর উদ্দিন। যখন বাজারে উৎপাদনের চেয়ে চাহিদা বেশি এবং দাম ও বেশ চওড়া। এতে করে বর্ষাকালে তার মৌসুমী পতিত জমি আবাদের আওতায় আনার পাশাপাশি আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন এবং মানুষের পুষ্টির চাহিদা মেটাচ্ছে।
কৃষক মোঃ নুর উদ্দিন জানান, তিনি উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ হারুন অর রশিদ ও উপসহকারী কৃষি অফিসার মুদিনুল হকের সহযোগীতা এবং পরামর্শে পলিশেড পদ্ধতিতে টমেটো আবাদে উৎসাহিত হন। মৌসুমের শুরুতে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসএসিপি প্রকল্পের অর্থায়নে উপজেলা কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগীতা নিয়ে প্রয়োজনীয় সকল উপকরণ ও আন্তঃপরিচর্যা খরচ পেয়ে ০৫ শতক জমিতে পলিশেড পদ্ধতিতে বারি-৮ জাতের গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করেন তিনি। কৃষি অফিস থেকে সঠিক সময়ে সার, বীজ, ও কীটনাশক পাওয়ায় তিনি সফলভাবে চাষাবাদ শুরু করেন ও সফলতা পান। বাজার মূল্য অনুযায়ী তিনি ৫০,০০০/- থেকে ৬০,০০০ টাকার টমেটো বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন। তাছাড়া তার সাফল্য দেখে এলাকার বিভিন্ন কৃষক প্রতিনিয়ত তার প্রদর্শনী প্লট পরিদর্শন ও ভবিষ্যতে এই ফসল চাষাবাদের আগ্রহ প্রকাশ করছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ হারুন অর রশিদ জানান, গত রবি মৌসুমে সুবর্ণচর উপজেলায় ১৬৫ হেঃ জমিতে টমেটো চাষ হয়। এটি শীতকালীন ফসল হিসেবে শীতকালে অধিক পরিমাণে আবাদ হলেও সাধারণত কৃষক তার ন্যায্য মূল্য পায় না। মৌসুম শেষে তা ৫-১০ টাকায় নেমে আসে যা অফ সিজনে ১৫০-২০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। তাই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুবর্ণচর এর পক্ষ থেকে আমরা গ্রীষ্মকালীন টমেটো আবাদে কৃষকদের উৎসাহিত করে আসছি। বিগত ২০২১-২২ মৌসুমে পরীক্ষামূলক ভাবে সুবর্ণচর উপজেলায় ১.০ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো আবাদে সক্ষম হয়েছিলাম এবং কৃষকগণ আর্থিকভাবে লাভবান হন। যার ফলে এই বছর নতুন অনেক কৃষক গ্রীষ্মকালীন টমেটো আবাদে আগ্রহ প্রকাশ করে। সরকারি ভাবে বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থায়নে ০১ শতক জমির জন্য প্রয়োজনীয় বীজ, সার, কীটনাশক, আন্তপরিচর্যা সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ ১০০ জন কৃষককে ও ০৫ শতকের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ ০২ জন কৃষককে সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে এবং কৃষকের ব্যাক্তিগত উদ্যোগে উপজেলার বিভিন্ন ব্লকে এই বছর প্রায় ৮.০০ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মাকালীন টমেটো আবাদ হয়। আশা করছি আগামী বছর এর দিগুণ জমিতে আবাদ হবে। এছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর “এক ইঞ্চি জায়গাও খালি থাকবে না” প্রতিপাদ্য কে ধারণ ও বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে আমরা চেষ্টা করছি স্থায়ী পতিত জমিকে আবাদে আনার পাশাপাশি মৌসুমী পতিত জমি গুলো অফ সিজনাল বিভিন্ন ফসল চাষাবাদের মাধ্যমে আবাদের আওতায় নিয়ে আসা।
তিনি আরো জানান দেশে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর আবাদ বাড়ানো গেলে আমদানী নির্ভরতা কমে কৃষকরা লাভবান হবেন। গ্রীষ্মকালীন টমেটোর আবাদ বাড়াতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি সবার সহযোগীতা পেলে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর আবাদ বৃদ্ধির মাধ্যমে স্থানীয় চাহিতা মিটিয়ে ঢাকা চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।