সময় তখন বেলা ১টা ১৫ মিনিট। ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৯-এর এজলাসে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে চিত্রনায়িকা পরীমনি। দুই বছর আগে ঢাকার অদূরে সাভারের বোট ক্লাবে মারধর ও শ্লীলতাহানির অভিযোগে তাঁর করা মামলায় আজ সোমবার সাক্ষ্য দিচ্ছিলেন তিনি।
ঘটনার কিছু বিবরণ দিয়ে পরীমনি আর কথা বলতে পারছিলেন না। একপর্যায়ে তিনি ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকেন।
তখন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) শহীদ হোসেন বিচারকের উদ্দেশে বলেন, এই জনাকীর্ণ আদালতে পরীমনি হয়তো সেদিনকার ঘটনার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ দিতে পারছেন না। আইনে এই ধরনের মামলায় ক্যামেরার ট্রায়ালের (রুদ্ধদ্বার এজলাসে বিচার) বিধান রয়েছে।
বিচারক পরীমনি উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি যদি মনে করেন, ক্যামেরা ট্রায়ালে সব ঘটনা খুলে বলবেন, তাহলে অবশ্যই মামলার বিচার ক্যামেরা ট্রায়ালে হবে। আপনার সাক্ষ্যগ্রহণকালে আপনার আইনজীবী ও আসামিপক্ষের আইনজীবী ছাড়া আর কেউ সেখানে থাকবেন না। আপনি কি ক্যামেরা ট্রায়ালে সাক্ষ্য দিতে চান?’
তখন পরীমনি বিচারকের উদ্দেশে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, সেদিনকার ঘটনা মনে পড়লে আমি আজও ট্রমাটাইজ (মানসিক আঘাতগ্রস্ত) হয়ে যাই…।’
পরীমনি এ কথা বলে আবার কাঁদতে থাকেন। তখন তাঁর আইনজীবী মুজিবর রহমান বলেন, ‘মাননীয় আদালত, পরীমনি ক্যামেরা ট্রায়ালে সব ঘটনা খুলে বলবেন।’
পরীমনিও বলেন, ‘মাননীয় আদালত, ক্যামেরা ট্রায়ালে আমি সাক্ষ্য দেব।’
আদালত তখন পরীমনিকে বলেন, ‘ক্যামেরা ট্রায়ালে বিচার হবে।’
আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য করে এজলাস ত্যাগ করেন বিচারক।
পরীমনি যখন আদালতে সাক্ষ্য দিচ্ছিলেন, তখন কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন ব্যবসায়ী নাসির ইউ মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী। মামলার অপর আসামি শাহ শহিদুল আলমের পক্ষে তাঁর আইনজীবী আদালতে ছিলেন। শহিদুল আজ আদালতে আসতে না পারায় তাঁর পক্ষে সময় চাওয়া হয়।
২০২১ সালের ১৪ জুন সাভার থানায় পরীমনি বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলাটি তদন্ত করে ২০২১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর নাসির, তুহিন ও শহিদুলের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ।
অভিযোগপত্র আমলে নেন আদালত। গত বছরের ১৮ মে তিন আসামির বিরুদ্ধে আদালত অভিযোগ গঠন করেন। তখন নাসিরসহ তিন আসামি নিজেদের নিরপরাধ দাবি করে আদালতের কাছে ন্যায়বিচার চান।
গত বছরের ২৯ নভেম্বর আদালতে প্রথম আংশিক সাক্ষ্য দেন পরীমনি। সেদিনের ধারাবাহিকতায় আজও তিনি ঘটনার কিছু বিবরণ দেন।