এত নামীদামি নোবেলজয়ীর জন্য খয়রাতি বিজ্ঞাপন কেন: প্রধানমন্ত্রী

ড. ইউনূসকে নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা কোনো বিবৃতি নয় এটা একটা বিজ্ঞাপন। আমাদের দেশের এক ব্যক্তি খয়রাত করে এই বিবৃতি দিয়েছেন।’

সোমবার (১৩ মার্চ) বিকাল সাড়ে ৪টায় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন।

দ্রব্যমূল্যের বিষয়ে জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেখুন রমজান হচ্ছে কৃচ্ছ্রতাসাধনের মাস। রমজানে যা যা প্রয়োজন তার সবগুলোই আমরা ক্রয় করে মজুদ করে রেখেছি।’

তিনি বলেন. ‘আমরা দেখছি, শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফিতি। অনেক দেশে তিনটার বেশি টমেটো কিনতে পারবে না, কিংবা চারটার বেশি ডিম কিনতে পারবে না। সেই অবস্থায় আমরা যাইনি।’

গণভবনের কৃষি খামার সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি নিজে যেটা করি সেটাই জনগণকে করতে বলি। এমনকি আমাদের গ্রামের বাড়িতে কৃষি জমিতে চাষ করতে ব্যবস্থা করে দিয়েছি।

আপনারা জানেন যে, উত্তরবঙ্গে সবসময় মঙ্গা লেগে থাকতো। মানুষের শরীর কঙ্কালের মতো থাকত। গায়ে কাপড় লেগে থাকত। সেখানে আমি দলের নেতাদের পাঠিয়েছিলাম। আজকে সকালে স্বপন রিপোর্ট করল গঙ্গাছড়ায় এখন আর সেই অবস্থায় নেই। মানুষ কৃষি ক্ষেত করছে। গাইবান্দায়ও পাঠিয়েছি। এখন কুড়িগ্রামেও যেতে বলেছি। সব দেখে আমাকে রিপোর্ট করতে বলেছি। সেভাবেই পদক্ষেপ নিচ্ছি।

আমাদের সামনে রমজান। আগে আমাদের পেঁয়াজ আমদানি করতাম। এখন আমরা পেঁয়াজ উৎপাদন করি। গণভবনে ইতিমধ্যে আমরা ৪৬ মণ পেঁয়াজ উত্তোলন করেছি। চালের কোনো অভাব নেই।

আমরা রমজান মাস মানুষকে স্বল্প মূল্যে তেল, ডাল কিনতে টিসিবির মাধ্যমে দিচ্ছি। ৪৯ লাখ মানুষকে আমরা স্বল্প মূল্যে চাল দিয়ে দিচ্ছি। আর যারা একেবারেই কর্মক্ষম নয়, তাদেরকে আমরা বিনামূল্যে মাসে ৩০ কেজি চাল দিয়ে দিচ্ছি। আপনারা নিজেদের ঘরে যা পারেন উৎপাদন করেন। তাহলে আর কোনো সংকট থাকবে না। তবে আমাদের মজুতদার আছে। তার উপর আমাদের বিরোধী দল তো আছেই।

খাদ্যপণ্যের দাম যদি আমি বেশি কমাই। তাহলে যারা উৎপাদন করবে তারা উৎসাহ হারাবে। আবার বেশি দাম দিলে ভোক্তাদের কষ্ট হবে। যাতে কারো কোনো সমস্যা না হয় সেটা বিবেচনায় নিয়েই সবকিছু করতে হয়, যোগ করেন তিনি।

সবাইকে বলব একটু সুষম খাদ্য দেওয়া। আর এগুলো উৎপাদন করা খুব কঠিন না। খাওয়ার অভ্যাসটাও আমাদের আস্তে আস্তে বদলানো উচিত। আমি সকালে টমেটো খাই। টমেটোতে অনেক ভিটামিন আছে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশে কখনো সামরিক সরকার, কখনো মিলিটারি ব্যাক সরকার। ফলে শ্যাডো সরকারের সুযোগ হয়নি। আমরা যখন বিরোধী দলে ছিলাম তখন সব সময় পরিকল্পনা ছিল। পরিকল্পনা ছিল বলেই আমরা যখনই সরকারে এসেছি তখনই আমরা সেগুলো করেছি। আমরা হুটহাট কিছু করি না। আমরা আগে বিবেচনা করি কোনটা জনগণের উপকারে আসবে। সেটা বিবেচনায় নিয়েই আমরা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করি। এখন আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলছি। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। মানুষেকে সেলাই মেশিন দিয়েছি। কাজে লাগিয়েছি। ট্রেনিং দিচ্ছি। আমাদের জনগণকে দক্ষ জনগোষ্ঠী করতে চাচ্ছি।

আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সাল। তারই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা কিন্তু প্রত্যেকটা কাজ একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করেই কাজ করি।

২১০০ সালের বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান। সেটাও আমরা করে দিয়েছি। আমরা উপকূলীয় অঞ্চলে ঘরবাড়ি করে দিয়েছি। সাইক্লোন শেল্টার করে দিয়েছি। এমনভাবে ঘর করে দিয়েছি। যাতে তারা ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সময় সবকিছু নিয়ে যেতে পারে।

সমগ্র বাংলাদেশ একটা যোগাযোগ নেটওয়ার্কের মধ্যে চলে এসেছে। আমরা সারা দেশে ডিজিটাল সেন্টার করে দিয়েছি। আমাদের লক্ষ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।

বিএনপির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শ্যাডো সরকার কে করবে। যে দলের দুই নেতাই সাজাপ্রাপ্ত আসামি। বিএনপি তো তার নিজের গঠনতন্ত্র নিজেই ভঙ্গ করেছে। গঠনতন্ত্রে সাজাপ্রাপ্ত আসামি নেতা হতে পারবে না। কিন্তু তাদের দুই নেতাই সাজাপ্রাপ্ত।

তিনি বলেন, বগুড়ায় আজ খোঁজ নিলাম। সেখানেও গ্রামের মানুষ আমার দল করে না, তারাও বলছে দেশ ভালো চলছে। গ্রামের সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষা এই সরকারই থাকা উচিত। এখন জনগণ দিলে আছি না দিলে নাই।

আওয়ামী লীগে নতুন নেতা আসছেন কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৭ মার্চ আমি দেশে ছিলাম না। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে রাদওয়ান মুজিব পুস্পস্তবক অর্পণ করেছেন। আমার দুই বোনের ৫ ছেলে মেয়ে। তারা দেশের জন্য আপনাদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য অনেকগুলো পক্ষ আছে। দেশের ভেতরে ও দেশের বাইরে। আমি আগেই বলেছি, নির্বাচন করার জন্য আমরা কি কি করেছি সেটা বলেছি। আমরা নির্বাচন নির্বিঘ্ন করার জন্য সব সংস্কার করেছি।

নির্বাচন যে অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হতে পারে সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। আর কি প্রমাণ করতে হবে। আমরা যাকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করেছি তিনিও একজন পোড়খাওয়া মানুষ। তিনি জেল খেটেছেন। জুডিশিয়াল সার্ভিসে কাজ করেছেন। বিএনপির আমলে চাকরি হারিয়েছেন।

আমরা তো আইয়ুব, ইয়াহিয়া, জিয়া, এরশাদের সামরিক সরকার, আর্মি ব্যাক সরকার, আর্মির স্ত্রীর সরকার দেখেছি। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এটা বলতে পারেন, জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে দিয়েছি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর