অবশেষে স্থগিত প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। বুধবার (১ মার্চ) রাত ১০টা ৪০ মিনিটে এ ফল প্রকাশ করা হয়।
মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সচিবালয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ঘটা বৃত্তি পরীক্ষার ফল ঘোষণা করেছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মো. জাকির হোসেন।
এর কয়েক ঘণ্টা পর সন্ধ্যায় প্রকাশিত ফল স্থগিত করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কারিগরি ত্রুটির কারণে বৃত্তি পরীক্ষার ফল স্থগিত করা হয়েছে। পুনঃযাচাই শেষে করে ১ মার্চ ফল প্রকাশ করা হবে।
বুধবার রাতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. রেজওয়ান হায়াত স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মঙ্গলবার প্রকাশিত ফলাফলে কারিগরি ত্রুটির কারণে সেটি স্থগিত করা হয়েছিল। বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফল পুনর্যাচাই শেষে প্রকাশ করা হলো।
অনিচ্ছাকৃত কারিগরি ত্রুটির জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর আন্তরিক ভাবে দুঃখ প্রকাশ করছে।
এদিকে, একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরে ফল প্রকাশের পররপই কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার চর গোরক মণ্ডল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সজীব আলী, বগুড়ার গাবতলী উপজেলার দক্ষিণপাড়া ইউনিয়নের পাঁচপাইকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী মিথিলা আক্তার মারিয়াসহ কয়েকজন পরীক্ষা না দিয়েও বৃত্তি পেয়েছে বলে খবর আসে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) একজন শীর্ষ কর্মকর্তা ওইদিন জানান, ‘পরীক্ষা না দিয়েও বৃত্তি পেয়েছে এই বিষয়টি নজরে আসলে আমরা তা খতিয়ে দেখে সত্যতা পাই। পরে অধিকতর যাচাইয়ের জন্য ফল স্থগিত করেছি। এছাড়া বিষয়টি কীভাবে ঘটল তা যাচাই করার জন্য চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
কী ধরনের কারিগরি ত্রুটি ছিল তা জানতে চাইলে ডিপিইর পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. উত্তর কুমার দাশ বলেন, ‘সফটওয়্যারে কিছু কোডিংয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। সে কারণে ফলাফলের তালিকায় কিছু ত্রুটি দেখা দেয়।’
এদিকে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে , ‘ফল প্রকাশের ভুলের দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বদলিসহ বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন।’
ফলাফল স্থগিত করার পর মঙ্গলবারই চার সদস্যের কমিটি গঠন করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। কমিটি কাজ শুরু করেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
এদিকে রাতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তার পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বৃত্তির ফল প্রকাশের কথা জানিয়ে বলা হয়, অনিচ্ছাকৃত ত্রুটির জন্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় দুঃখ প্রকাশ করেছে। মন্ত্রণালয় আশা করে নতুন প্রকাশিত ফলাফল সব বিভ্রান্তি দূর করবে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় মোট ৮২ হাজার ৩৮৩ জন শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছে। এর মধ্যে ট্যালেন্টপুলে ৩৩ হাজার ও সাধারণ কোটায় ৪৯ হাজার ৩৮৩ জন শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছে। বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বৃত্তি পাবে।মঙ্গলবার প্রকাশিত প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফলের সংখ্যা ঠিক রেখে ফল সংশোধন করা হয়েছে।
ফল জানবেন যেভাবে
বৃত্তি পরীক্ষার ফল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের ওয়েবসাইট (www.dpe.gov.bd) এবং মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট (www.mopme.gov.bd) স্থানীয়ভাবে বিভাগীয় উপ-পরিচালকের কার্যালয়, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কার্যালয় এবং উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয় থেকে পাওয়া যাবে। ঘরে বসেও মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়ে জানতে পারবেন ফল।
এজন্য মোবাইলে DPE Thana/Upazila Code No.Roll Number Year লিখে 16222 এ সেন্ড করলে ফিরতি এসএমএসে ফল জানিয়ে দেয়া হবে।
২০২০ ও ২০২১ সালে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা না হওয়ায় প্রাথমিক বৃত্তি প্রদান করা সম্ভব হয়নি। ২৮ নভেম্বর ২০২২ তারিখে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আন্ত: মন্ত্রণালয় সভায় ২০২২ সাল হতে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ৩০ ডিসেম্বর ২০২২ সালে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা সারা দেশে একযোগে অনুষ্ঠিত হয়।
পঞ্চম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে মেধাক্রম অনুসারে ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী নিয়ে বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলা, প্রাথমিক গণিত, ইংরেজি ও প্রাথমিক বিজ্ঞান এ চারটি বিষয়ে বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। মোট নম্বর ছিল-১০০ এবং সময় ছিল-২ ঘণ্টা।