ঢাকা ০৫:৩৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৮ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আছেন শেখ মুজিব নেই মহাত্মা গান্ধী

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৫:৫৪:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ জুন ২০১৫
  • ৫১৮ বার

বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্ত। বেনাপোল অংশে রয়েছে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমানের ২০ ফুট প্রাচীরচিত্র। কিন্তু পেট্রাপোলে ভারতের অংশে মহাত্মা গান্ধীর প্রতিকৃতি স্থাপনের কথা থাকলেও এখনও তা বাস্তবায়ন হয়নি। গতকাল ভারতের একাধিক গণমাধ্যম এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৩ সালের ৭ই নভেম্বর উভয় দেশ বেনাপোল-পেট্রাপোলে প্রতিদিন সীমান্ত ফটক বন্ধ করার একটি অনুষ্ঠান উদ্বোধন করে। ১৩ মিনিটের এ অনুষ্ঠানে বন্ধুভাবাপন্ন প্রক্রিয়ায় অংশ নেয় বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ)। অনুষ্ঠানটি যেখানে অনুষ্ঠিত হয় সেখানে ভারতের অংশে স্থাপন করার কথা ছিল মহাত্মা গান্ধীর প্রতিকৃতি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের লড়াইয়ে আটকে আছে নির্মাণ কাজ। মহড়া দিয়ে সীমান্ত ফটক বন্ধের অনুষ্ঠান যখন উদ্বোধন হয় তখন উভয় পক্ষ মহাত্মা গান্ধীর নামে একটি প্রতিকৃতি নির্মাণের প্রস্তাবে সম্মত হয়। এছাড়াও নির্মাণ করার কথা ছিল মহড়া প্রত্যক্ষ করার একটি গ্যালারি ও পার্কিং এলাকা। বাংলাদেশের অংশে যেভাবে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি স্থাপন করেছে বাংলাদেশ, ভারতের পক্ষেও তেমনটা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিশালাকৃতি একটি বোধি বৃক্ষ কেটে ফেলা নিয়ে সৃষ্টি হয় জটিলতা। গাছটির অবস্থান সীমান্ত রাস্তার ঠিক মাঝখানে। ভারতীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা গাছটি কাটার বদলে এর ডালপালা ছেঁটে ফেলার বিষয়ে সম্মত হই। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক সীমানার ১৫০ মিটারের মধ্যে কোন নির্মাণ কাজ করতে হলে উভয় দেশের কাছ থেকে অনুমতি ও অনুমোদন প্রয়োজন হয়। পেট্রাপোল সীমান্তের কর্মকর্তারা বলেছেন, নির্মাণ কাজ দেরি হওয়ার কারণ হলো ভারতের জাতীয় মহাসড়ক কর্তৃপক্ষ এবং পরিবেশ মন্ত্রণালয় এখনও ছাড়পত্র দেয়নি। প্রত্যক্ষদর্শীদের জন্য একটি গ্যালারি নির্মাণের প্রস্তাব ২০১২ সালে দাখিল করা হয়। রাজ্যের ভূমি দলিল থেকে জানা যায় যেখানে গ্যালারি নির্মাণ হওয়ার কথা সে স্থানটি পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের। বিএসএফ এর সিনিয়র এক কমান্ডার বলেন, আমরা ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য রাজ্য প্রশাসনের পিছে দৌড়াদৌড়ি করেছি। এছাড়া জাতীয় মহাসড়ক কর্তৃপক্ষ, পরিবেশ মন্ত্রণালয় রাজ্য বন অধিদপ্তরের কাছ থেকে ছাড়পত্র পাওয়া বাকি আছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার অবশ্য বলছে, ভারতের জাতির জনকের নামে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের পুরো প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে তারা তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। পেট্রাপোলের দায়িত্বে থাকা উত্তর ২৪ পরগণার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মানমিত নন্দ ইকোনমিক টাইমসকে ফোনে বলেন, পেট্রাপোলে যা কিছু করা প্রয়োজন রাজ্য প্রশাসন তা করেছে। আমাদের তরফ থেকে কোন কিছু আটকে নেই। তবে তিনি এও স্বীকার করলেন যে, রাজ্য সরকার আর কেন্দ্রীয় সরকারের কয়েকটি ইস্যু সমাধা করা বাকি আছে। পেট্রাপোলে রাজ্য সরকারের আরেক কর্মকর্তা নিজের পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, পেট্রাপোলে নতুন একটি সমন্বিত চেকপোস্ট (আইপিসি) নির্মাণ সম্পন্ন হবার পর এসব ইস্যুগুলো সমাধা হবে আমরা আশা করছি। এর প্রায় ৭৫ ভাগ কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এদিকে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়, আধুনিক অবকাঠামোসহ আইপিসি নির্মাণের কাজ হওয়ার কথা সীমান্তের উভয়দিকে। বাংলাদেশ তাদের কাজ ইতিমধ্যে শুরু করলেও, ভারত বিস্তারিত খুঁটিনাটি বিষয়বস্তু সমাধা করে চলেছে এখনও। বিএসএফ-এর এক কর্মকর্তা বলেন, নির্মাণ নকশা এখনও চূড়ান্ত না হওয়ায় আমরা পিছিয়ে আছি।
২০১৩ সালে বেনাপোল-পেট্রাপোলে সীমান্ত বন্ধের মহড়া অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর এবং ভারতের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্ধে। উভয় দেশের জাতীয় সংগীত দিয়ে শুরু হয় এ অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানে যোগ করা হয় বাংলাদেশের বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কিছু গান। ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা, গান যোগ করার দাবিটা এসেছিল বিএসএফ-এর তরফ থেকে। উল্লেখ্য, বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের চুরুলিয়ায় জন্মেছিলেন কবি নজরুল। বাংলাদেশের আমন্ত্রণে তিনি এদেশে পাড়ি জমান ১৯৭২ সালে। অবিভক্ত বাংলার পক্ষে তার ছিল জোরালো অবস্থান। সীমান্তের যে স্থানটিতে প্রতিদিন অনুষ্ঠানটি পরিচালিত হয় সেখানে সাদা রংয়ের দাগ দিয়ে দুদেশের সীমানা ভাগ করা আছে। এ অনুষ্ঠানটি আরও তিনটি সীমান্ত এলাকায় চালু করার কথা রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি, চ্যাঙড়াবান্ধা-বুড়িমারী ও ত্রিপুরা-আখাউড়াতে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্তে উভয় দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী ১৩ মিনিটের যে মহড়া পরিচালনা করে তা প্রত্যক্ষ করতে উভয় দিকে হাজির হয় অনেক মানুষ। প্রস্তাবিত গ্যালারি নির্মাণ এখনও সম্পন্ন না হওয়ায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই তারা উপভোগ করেন অনুষ্ঠানটি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

আছেন শেখ মুজিব নেই মহাত্মা গান্ধী

আপডেট টাইম : ০৫:৫৪:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ জুন ২০১৫

বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্ত। বেনাপোল অংশে রয়েছে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমানের ২০ ফুট প্রাচীরচিত্র। কিন্তু পেট্রাপোলে ভারতের অংশে মহাত্মা গান্ধীর প্রতিকৃতি স্থাপনের কথা থাকলেও এখনও তা বাস্তবায়ন হয়নি। গতকাল ভারতের একাধিক গণমাধ্যম এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৩ সালের ৭ই নভেম্বর উভয় দেশ বেনাপোল-পেট্রাপোলে প্রতিদিন সীমান্ত ফটক বন্ধ করার একটি অনুষ্ঠান উদ্বোধন করে। ১৩ মিনিটের এ অনুষ্ঠানে বন্ধুভাবাপন্ন প্রক্রিয়ায় অংশ নেয় বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ)। অনুষ্ঠানটি যেখানে অনুষ্ঠিত হয় সেখানে ভারতের অংশে স্থাপন করার কথা ছিল মহাত্মা গান্ধীর প্রতিকৃতি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের লড়াইয়ে আটকে আছে নির্মাণ কাজ। মহড়া দিয়ে সীমান্ত ফটক বন্ধের অনুষ্ঠান যখন উদ্বোধন হয় তখন উভয় পক্ষ মহাত্মা গান্ধীর নামে একটি প্রতিকৃতি নির্মাণের প্রস্তাবে সম্মত হয়। এছাড়াও নির্মাণ করার কথা ছিল মহড়া প্রত্যক্ষ করার একটি গ্যালারি ও পার্কিং এলাকা। বাংলাদেশের অংশে যেভাবে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি স্থাপন করেছে বাংলাদেশ, ভারতের পক্ষেও তেমনটা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিশালাকৃতি একটি বোধি বৃক্ষ কেটে ফেলা নিয়ে সৃষ্টি হয় জটিলতা। গাছটির অবস্থান সীমান্ত রাস্তার ঠিক মাঝখানে। ভারতীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা গাছটি কাটার বদলে এর ডালপালা ছেঁটে ফেলার বিষয়ে সম্মত হই। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক সীমানার ১৫০ মিটারের মধ্যে কোন নির্মাণ কাজ করতে হলে উভয় দেশের কাছ থেকে অনুমতি ও অনুমোদন প্রয়োজন হয়। পেট্রাপোল সীমান্তের কর্মকর্তারা বলেছেন, নির্মাণ কাজ দেরি হওয়ার কারণ হলো ভারতের জাতীয় মহাসড়ক কর্তৃপক্ষ এবং পরিবেশ মন্ত্রণালয় এখনও ছাড়পত্র দেয়নি। প্রত্যক্ষদর্শীদের জন্য একটি গ্যালারি নির্মাণের প্রস্তাব ২০১২ সালে দাখিল করা হয়। রাজ্যের ভূমি দলিল থেকে জানা যায় যেখানে গ্যালারি নির্মাণ হওয়ার কথা সে স্থানটি পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের। বিএসএফ এর সিনিয়র এক কমান্ডার বলেন, আমরা ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য রাজ্য প্রশাসনের পিছে দৌড়াদৌড়ি করেছি। এছাড়া জাতীয় মহাসড়ক কর্তৃপক্ষ, পরিবেশ মন্ত্রণালয় রাজ্য বন অধিদপ্তরের কাছ থেকে ছাড়পত্র পাওয়া বাকি আছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার অবশ্য বলছে, ভারতের জাতির জনকের নামে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের পুরো প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে তারা তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। পেট্রাপোলের দায়িত্বে থাকা উত্তর ২৪ পরগণার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মানমিত নন্দ ইকোনমিক টাইমসকে ফোনে বলেন, পেট্রাপোলে যা কিছু করা প্রয়োজন রাজ্য প্রশাসন তা করেছে। আমাদের তরফ থেকে কোন কিছু আটকে নেই। তবে তিনি এও স্বীকার করলেন যে, রাজ্য সরকার আর কেন্দ্রীয় সরকারের কয়েকটি ইস্যু সমাধা করা বাকি আছে। পেট্রাপোলে রাজ্য সরকারের আরেক কর্মকর্তা নিজের পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, পেট্রাপোলে নতুন একটি সমন্বিত চেকপোস্ট (আইপিসি) নির্মাণ সম্পন্ন হবার পর এসব ইস্যুগুলো সমাধা হবে আমরা আশা করছি। এর প্রায় ৭৫ ভাগ কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এদিকে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়, আধুনিক অবকাঠামোসহ আইপিসি নির্মাণের কাজ হওয়ার কথা সীমান্তের উভয়দিকে। বাংলাদেশ তাদের কাজ ইতিমধ্যে শুরু করলেও, ভারত বিস্তারিত খুঁটিনাটি বিষয়বস্তু সমাধা করে চলেছে এখনও। বিএসএফ-এর এক কর্মকর্তা বলেন, নির্মাণ নকশা এখনও চূড়ান্ত না হওয়ায় আমরা পিছিয়ে আছি।
২০১৩ সালে বেনাপোল-পেট্রাপোলে সীমান্ত বন্ধের মহড়া অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর এবং ভারতের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্ধে। উভয় দেশের জাতীয় সংগীত দিয়ে শুরু হয় এ অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানে যোগ করা হয় বাংলাদেশের বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কিছু গান। ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা, গান যোগ করার দাবিটা এসেছিল বিএসএফ-এর তরফ থেকে। উল্লেখ্য, বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের চুরুলিয়ায় জন্মেছিলেন কবি নজরুল। বাংলাদেশের আমন্ত্রণে তিনি এদেশে পাড়ি জমান ১৯৭২ সালে। অবিভক্ত বাংলার পক্ষে তার ছিল জোরালো অবস্থান। সীমান্তের যে স্থানটিতে প্রতিদিন অনুষ্ঠানটি পরিচালিত হয় সেখানে সাদা রংয়ের দাগ দিয়ে দুদেশের সীমানা ভাগ করা আছে। এ অনুষ্ঠানটি আরও তিনটি সীমান্ত এলাকায় চালু করার কথা রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি, চ্যাঙড়াবান্ধা-বুড়িমারী ও ত্রিপুরা-আখাউড়াতে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্তে উভয় দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী ১৩ মিনিটের যে মহড়া পরিচালনা করে তা প্রত্যক্ষ করতে উভয় দিকে হাজির হয় অনেক মানুষ। প্রস্তাবিত গ্যালারি নির্মাণ এখনও সম্পন্ন না হওয়ায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই তারা উপভোগ করেন অনুষ্ঠানটি।