আগুনের হাত থেকে মানুষের জীবন, যান মালের রক্ষায় সচেতন হই, অপরকে সচেতন করি

 ড.গোলসান আরা বেগমঃ শরৎ ঋতুর  বাংলাদেশে শীত মৌসুমে আগুন তাপাতে গিয়ে বহু মানুষ আগুনে পুড়ে দগ্ধ হয়। কেউ কেউ মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে বেঁচে ওঠে, কেউবা মারা যায়। শৈত প্রবাহের তীব্রতা যখন বইতে শুরু করে, খড়কুটোরে আগুন জ্বালিয়ে চারিদিকে মানুষ গোল হয়ে বসে আগুন তাপায় ও নানা ধরনের খোশ গল্প করে। ঠান্ডা বাড়ার সাথে সাথে আগুন তাপানো ও সুর্য্যের দিকে পিট দিয়ে রোদ পোহানোর মাত্রা বেড়ে যায়।আগুন তাপানোর সময় অনেকে মারাত্বক ভাবে আগুনে দগ্ধ হয়।

পত্রিকান্তরে জানা যায় ২০২৩ সালের প্রথম দিকে হাসপাতালের বার্ণ হউনিটে রোগীকে জায়গা দেয়া যাচ্ছে না। দৈনিক গড়ে ৫০০ জন মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়। সে অনুযায়ী বছরে ১ লক্ষ ৮২ হাজার ৫০০ জন মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়।সংখ্যাটা মোটেই ছোট নয়। ৩০% এর উপরে দগ্ধ রুগীকে মফসম্বল হাসপাতাল থেকে ঢাকায় রেফার করে। সিট স্বল্পতার কারণে ঢাকা হাসপাতালের একমাত্র শেখ হাসিনা বার্ণ ও সার্জারী হউনিট সেবা দিতে ব্যর্ধ হয়। আগুনে পোড়া রুগী অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে। এ হেন অবস্থা কাম্য নয়।

অভিজ্ঞতা ও কেইস স্টোরি যাচাই করে দেখা যায় — গোসলের পানি গরম করে ভাত রুমে নেয়ার সময় হাতে পায়ে পড়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে।অথচ গরম পানিটা বালতিতে করে নিলে দূর্ঘটনা এড়ানো যায়।অনেকে বিদুৎ বিল সাশ্রয় করতে গিয়ে ভাত রুমের গিজার বন্ধ রেখে চুলার গরম পানি ব্যবহার করে গোসলের জন্য।এক্ষেত্রে জনমনে সচেতনতা তৈরী করা বেশী প্রয়োজন। কারণ বিদ্যৎ বিল কমাতে গিয়ে আগুনে পোড়ে সারা জীবনের কান্না বয়ে আনতে পারে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বার্ণ উনিটের ৫০০ শষ্যার সিট একটিও খালি নেই। প্রতিদিন গড়ে ৬০ জন আসে জরুরী বিভাগে, ২৩০– ২৫০ জন রোগী আসে বহির্ বিভাগে। এর মধ্যে খুব সংকটাপন্ন ১০ থেকে ১২ জনকে ভর্তি করা হয়।অপেক্ষায় থাকে বাকীরা( ৫ জানুয়ারী ২০২৩, দৈনিক প্রথম আলো)। তৃনমূল পর্যায়ের নারীরা রাতের রান্না শেষ করে চূলার দুই পাশে দুই পা দিয়ে আগুন তাপায় শরীরে উঞ্চতা বাড়াতে।কখন যে তার আঁচল বেয়ে সারা শরীরে আগুন ছড়িয়ে দগ্ধ হয়,,তা বুঝতে পারে না। মাটির পাতিলে ধানের তুষ দিয়ে গরম আগুনের ভান্ডর তৈরী করে। এই ভান্ডর দুই হাটুর নীচে দিয়ে আগুন তাপায়। ওখান থেকেও শরীরে আগুন ধরার সম্ভাবনা থাকে।

শীতের রাতে গরুর ঘোয়াল ঘরে মশা ও শীত থেকে গরুকে রক্ষা করতে তুষের আগুন দিয়ে ধুয়ার কুন্ডুলি তৈরী করে।এই ধুয়ার আগুন গরু ভুলক্রমে পা বা লেজ দিয়ে ছড়িয়ে দিলে সারা বাড়িতে আগুন লেগে যায়।গ্রামের সব মানুষ চিৎকার দিয়ে ছুটে আসে,পুকুর বা আশ পাশের জায়গা থেকে পানি দিয়ে আগুন নিভায়। কুসংস্কারাচ্ছ যারা, ছোট বাচ্ছা জন্ম নিলে আতুঁর ঘরের দরজায় আগুনের ধোঁয়া দেয়, শিশুটির উপর যেন ভুত পেন্তির নজর না পড়ে, সে জন্য। ওখান থেকেও ঘরে আগুন ছড়াতে পারে।
আজকাল গ্রামের মহিলারা শাড়ির পরিবর্তে ম্যাক্সি ব্যবহার করে,আগুন তাপানোর সময় ওড়না ও ম্যাক্সির দিকে খেয়াল রাখতে হবে।ঘরের এসি ভ্রাস্ট হয়ে,বিদ্যুতের সার্কিটে আগুন লাগতে পারে।গ্রামের কিশোররা বারবিকিউ পার্টি করে, খড়ের গাদার পাশে বসে খড়কুটো দিয়ে আগুন তাপায়,এক্ষেত্রেও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। গ্যাসের চূলায় যারা রান্না করে,চূলার উপরে দড়িতে কাপড় শুকায়।গ্রামের নারীরা মাটির চূলাতে ধান সেদ্ধ, কাপড় সেদ্ধ, রান্না বান্না করে খড়কুটো দিয়ে। এসব ক্ষেত্রেও সাবধানতা ও সচেতনতার বিকল্প নেই।

শস্য শ্যামল সবুজ দেশ ও দেশের জনগনকে জাতীয় উন্নয়নের প্রয়োজনে আমাদেরকে রক্ষা করতে হবে। আগুন নিভানোর ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিস সেবা জেলা, উপজেলা পর্যায়ে সবর্দা প্রস্তুত থাকে। যে কোন জায়গায় দূর্ঘটনা দেখা দিলে সাথে সাথে ফায়ার সার্ভিস কতৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে।।শিল্পপ্রতিষ্ঠানে, হাট বাজারে, বহুতল ভবনে আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে ফায়ার সার্ভিস যুগোপযোগি সেবা ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পরিশেষ বলবো – আসুন আমরা সচেতন হই, প্রতিরোধ করি আগুনে পুড়া থেকে। মানুষ, প্রানি, জীব জন্তু ও জান মালের রক্ষায় আগুনের হাত থেকে নিজে সচেতর হই এবং অপরকে সচেতন করি।

লেখকঃ – উপদেষ্টা সদস্য,বাংলাদেশ কৃষকলীগ, কেন্দ্রীয় কমিটি

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর