ঢাকা ০৬:২৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শীতে সতর্কতা প্রয়োজন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:২৮:০৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৪
  • ৫৯ বার

এই শীতের সময় রোটা ভাইরাস থেকে ডায়রিয়া হয়। ডায়রিয়ার প্রধান কারণ, রোটা ভাইরাস এই শীতের সময় বেশি দেখা যায়। ডায়রিয়া হলে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। শিশুদেও রোটা ভাইরাস দিয়ে ডায়রিয়া হলে লক্ষণগুলো খুব তাড়াতাড়ি প্রকাশ পায়, যেমন বমি-জ্বর ইত্যাদি। বড়দের লক্ষণটা একটু কম প্রকাশ পায়। শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে, তাই অসুস্থ হয়ে পড়ে পানিশূন্যতা দেখা দেয় বেশি। গুরুতর হলে অবশ্যই ভর্তি হতে হবে হাসপাতালে। শিশুদের রোটা ভাইরাসের টিকা পাওয়া যায়। নির্দিষ্ট সময়ে টিকা দিয়ে দিতে হবে। শিশুকে রোটা ভাইরাসের প্রথম টিকাটি জন্মের ৬ থেকে ১৫ সপ্তাহের মধ্যে দিতে হবে। শিশুর দেড় মাস বয়সের আগে এ টিকা দেওয়া যাবে না। যেহেতু রোটা ভাইরাস দিয়ে আক্রান্ত শিশুরা খুব সহজেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে, তাই জন্মের পর প্রতিরোধ ভ্যাকসিনটা দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।

ডায়রিয়া হলে শরীর থেকে পানি ও লবণ বের হয়ে যায়, সঙ্গে যদি বমি হয়, সবকিছু মিলে সোডিয়াম পটাশিয়ামের ঘাটতি হয়। পানিশূন্যতা যেন না হয় তাই অবশ্যই স্যালাইন খেতে হবে। রোটা ভাইরাস চিকিৎসার জন্য অ্যান্টিবায়োটিকের আসলে দরকার পড়ে না।

এমনিতেই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে যায়, তবে পানিশূন্যতা রোধ করার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শমতো প্রথমে পাতলা পায়খানার পর স্যালাইন খাওয়াতে হবে। এবং শিশুকে পূর্ণ ২ বছর বুকের দুধ খাওয়াতে হবে এবং ৫ মাসের পর থেকে ছয় মাসের সময় বুকের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য খাবার খাওয়ালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শিশুর গড়ে ওঠে।

এই শীতের মধ্যে ডায়রিয়া ছাড়াও সুস্থ থাকতে হলে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। যেমন হাত ভালোমতো খাবারের আগে এবং খাবারের পর ধুয়ে নিতে হবে। বিশুদ্ধ খাবার পানি খেতে হবে। পানি ভালোমতো ফুটিয়ে তার পর খেতে হবে এবং বাইরে খোলা বাসি খাবার পরিহার করতে হবে।

সঙ্গে সবুজ শাকসবজি ভিটামিন-সিযুক্ত খাবার খেতে হবে, বাইরে বেরোলে ধুলাবালি থেকে রক্ষা পেতে মাস্ক পরিধান করতে হবে, অসুস্থ হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেতে হবে। যেহেতু শীতের সময় আবহাওয়া অনেক শুষ্ক থাকে, আর্দ্রতা কমে যায় তাই শরীরের চামড়া অনেক শুষ্ক হয়ে যায় তাই এ সময়ে ভেসলিন, অলিভ অয়েল সারা শরীরে লাগাতে হবে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে যেসব খাবারে এলার্জি আছে সেসব খাবার পরিহার করতে হবে। এই শীতে শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ যেমনÑ নিউমোনিয়া, সর্দি, কাশি এবং পরিপাকতন্ত্রের সমস্যার মধ্যে ডায়রিয়া এই সমস্যাগুলো বেশি দেখা যায় তাই অবশ্যই সাবধান থাকতে হবে, সচেতন হতে হবে।

শিশুদের পাশাপাশি প্রবীণদের সমস্যা দেখা দেয় বেশি। প্রবীণ বয়সে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তাই এ সময়টায় বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। তীব্র শীতে অ্যালার্জি, হাঁপানি, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিসের মতো রোগ হয়ে থাকে। যদি কারও রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস থাকে অথবা অস্টিও আর্থ্রাইটিস থাকে তা হলে শীতে এই সমস্যাগুলো আরও বেশি দেখা দেয়। তাই একটু হালকা ব্যায়াম করা, হাঁটাচলা করা, সতেজ রাখার চেষ্টা করতে হয়। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত ১০-১৫ মিনিট রোদ গায়ে লাগাতে পারেন। কারণ সূর্যের আলো ভিটামিন ডি-এর প্রধান উৎস, তাই কিছুক্ষণ রোদে বসলে ভিটামিন-ডি তৈরি হয়। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে আসলে ঋতু পরিবর্তনের সময় থেকে আজ পর্যন্ত শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ নিয়ে সারাদেশে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৭২ হাজারের ওপরে। শীতের সময় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত সংখ্যা দেখা যায় ডায়রিয়াজনিত কারণে। তবে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ নিয়ে এই সময়টাতে মানুষ বেশি মারা যায়। এর মধ্যে নিউমোনিয়া অন্যতম। তাই শীতের এই সময়টা স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখতে হবে, সচেতন হতে হবে। শৈত্যপ্রবাহের কারণে স্কুলের কার্যক্রম সকাল ১০টা থেকে শুরু করা হয়েছে। শীতের তীব্রতা নির্ণয় করে কয়েকটা জেলায় স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে। সরকারি সব সিদ্ধান্ত নিজের ভালোর জন্য খেয়াল রাখতে হবে এবং অসুস্থ হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। নিজের ইচ্ছামতো অযথা অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া যাবে না। অসুস্থ হলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে এবং চিকিৎসক যেভাবে আপনাকে ওষুধ দেয় সেভাবে খেতে হবে। অবহেলা করা যাবে না। নিজের প্রতি যত্নশীল হতে হবে।

শীতের সময় আর একটা বড় সমস্যা দেখা যায় তা হলো শীত কাটানোর জন্য আগুন পোহাতে গিয়ে অথবা গোসলের অতিরিক্ত গরম পানিতে দগ্ধ হয়ে যাচ্ছে। অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, গরম পানি ব্যবহারের সময় সাবধান থাকতে হবে, গরম পানি অবশ্যই শিশুদের কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্ব রাখতে হবে। আগুন পোহানোর সময় বাতাসের চাপে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুন পোহানোর সময় ওই জিনিসটা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। গরম কাপড় পরিধান করতে হবে এবং খুব বেশি প্রয়োজন না পড়লে বাসার বাইরে না বের হলে ভালো।

ডা. আয়শা আক্তার : সহকারী পরিচালক, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট টিবি হাসপাতাল, শ্যামলী, ঢাকা

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

শীতে সতর্কতা প্রয়োজন

আপডেট টাইম : ১২:২৮:০৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৪

এই শীতের সময় রোটা ভাইরাস থেকে ডায়রিয়া হয়। ডায়রিয়ার প্রধান কারণ, রোটা ভাইরাস এই শীতের সময় বেশি দেখা যায়। ডায়রিয়া হলে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। শিশুদেও রোটা ভাইরাস দিয়ে ডায়রিয়া হলে লক্ষণগুলো খুব তাড়াতাড়ি প্রকাশ পায়, যেমন বমি-জ্বর ইত্যাদি। বড়দের লক্ষণটা একটু কম প্রকাশ পায়। শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে, তাই অসুস্থ হয়ে পড়ে পানিশূন্যতা দেখা দেয় বেশি। গুরুতর হলে অবশ্যই ভর্তি হতে হবে হাসপাতালে। শিশুদের রোটা ভাইরাসের টিকা পাওয়া যায়। নির্দিষ্ট সময়ে টিকা দিয়ে দিতে হবে। শিশুকে রোটা ভাইরাসের প্রথম টিকাটি জন্মের ৬ থেকে ১৫ সপ্তাহের মধ্যে দিতে হবে। শিশুর দেড় মাস বয়সের আগে এ টিকা দেওয়া যাবে না। যেহেতু রোটা ভাইরাস দিয়ে আক্রান্ত শিশুরা খুব সহজেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে, তাই জন্মের পর প্রতিরোধ ভ্যাকসিনটা দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।

ডায়রিয়া হলে শরীর থেকে পানি ও লবণ বের হয়ে যায়, সঙ্গে যদি বমি হয়, সবকিছু মিলে সোডিয়াম পটাশিয়ামের ঘাটতি হয়। পানিশূন্যতা যেন না হয় তাই অবশ্যই স্যালাইন খেতে হবে। রোটা ভাইরাস চিকিৎসার জন্য অ্যান্টিবায়োটিকের আসলে দরকার পড়ে না।

এমনিতেই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে যায়, তবে পানিশূন্যতা রোধ করার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শমতো প্রথমে পাতলা পায়খানার পর স্যালাইন খাওয়াতে হবে। এবং শিশুকে পূর্ণ ২ বছর বুকের দুধ খাওয়াতে হবে এবং ৫ মাসের পর থেকে ছয় মাসের সময় বুকের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য খাবার খাওয়ালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শিশুর গড়ে ওঠে।

এই শীতের মধ্যে ডায়রিয়া ছাড়াও সুস্থ থাকতে হলে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। যেমন হাত ভালোমতো খাবারের আগে এবং খাবারের পর ধুয়ে নিতে হবে। বিশুদ্ধ খাবার পানি খেতে হবে। পানি ভালোমতো ফুটিয়ে তার পর খেতে হবে এবং বাইরে খোলা বাসি খাবার পরিহার করতে হবে।

সঙ্গে সবুজ শাকসবজি ভিটামিন-সিযুক্ত খাবার খেতে হবে, বাইরে বেরোলে ধুলাবালি থেকে রক্ষা পেতে মাস্ক পরিধান করতে হবে, অসুস্থ হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেতে হবে। যেহেতু শীতের সময় আবহাওয়া অনেক শুষ্ক থাকে, আর্দ্রতা কমে যায় তাই শরীরের চামড়া অনেক শুষ্ক হয়ে যায় তাই এ সময়ে ভেসলিন, অলিভ অয়েল সারা শরীরে লাগাতে হবে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে যেসব খাবারে এলার্জি আছে সেসব খাবার পরিহার করতে হবে। এই শীতে শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ যেমনÑ নিউমোনিয়া, সর্দি, কাশি এবং পরিপাকতন্ত্রের সমস্যার মধ্যে ডায়রিয়া এই সমস্যাগুলো বেশি দেখা যায় তাই অবশ্যই সাবধান থাকতে হবে, সচেতন হতে হবে।

শিশুদের পাশাপাশি প্রবীণদের সমস্যা দেখা দেয় বেশি। প্রবীণ বয়সে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তাই এ সময়টায় বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। তীব্র শীতে অ্যালার্জি, হাঁপানি, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিসের মতো রোগ হয়ে থাকে। যদি কারও রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস থাকে অথবা অস্টিও আর্থ্রাইটিস থাকে তা হলে শীতে এই সমস্যাগুলো আরও বেশি দেখা দেয়। তাই একটু হালকা ব্যায়াম করা, হাঁটাচলা করা, সতেজ রাখার চেষ্টা করতে হয়। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত ১০-১৫ মিনিট রোদ গায়ে লাগাতে পারেন। কারণ সূর্যের আলো ভিটামিন ডি-এর প্রধান উৎস, তাই কিছুক্ষণ রোদে বসলে ভিটামিন-ডি তৈরি হয়। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে আসলে ঋতু পরিবর্তনের সময় থেকে আজ পর্যন্ত শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ নিয়ে সারাদেশে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৭২ হাজারের ওপরে। শীতের সময় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত সংখ্যা দেখা যায় ডায়রিয়াজনিত কারণে। তবে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ নিয়ে এই সময়টাতে মানুষ বেশি মারা যায়। এর মধ্যে নিউমোনিয়া অন্যতম। তাই শীতের এই সময়টা স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখতে হবে, সচেতন হতে হবে। শৈত্যপ্রবাহের কারণে স্কুলের কার্যক্রম সকাল ১০টা থেকে শুরু করা হয়েছে। শীতের তীব্রতা নির্ণয় করে কয়েকটা জেলায় স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে। সরকারি সব সিদ্ধান্ত নিজের ভালোর জন্য খেয়াল রাখতে হবে এবং অসুস্থ হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। নিজের ইচ্ছামতো অযথা অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া যাবে না। অসুস্থ হলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে এবং চিকিৎসক যেভাবে আপনাকে ওষুধ দেয় সেভাবে খেতে হবে। অবহেলা করা যাবে না। নিজের প্রতি যত্নশীল হতে হবে।

শীতের সময় আর একটা বড় সমস্যা দেখা যায় তা হলো শীত কাটানোর জন্য আগুন পোহাতে গিয়ে অথবা গোসলের অতিরিক্ত গরম পানিতে দগ্ধ হয়ে যাচ্ছে। অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, গরম পানি ব্যবহারের সময় সাবধান থাকতে হবে, গরম পানি অবশ্যই শিশুদের কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্ব রাখতে হবে। আগুন পোহানোর সময় বাতাসের চাপে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুন পোহানোর সময় ওই জিনিসটা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। গরম কাপড় পরিধান করতে হবে এবং খুব বেশি প্রয়োজন না পড়লে বাসার বাইরে না বের হলে ভালো।

ডা. আয়শা আক্তার : সহকারী পরিচালক, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট টিবি হাসপাতাল, শ্যামলী, ঢাকা