অধ্যক্ষ ড. গোলসান আরা বেগমঃ সময়ের পা নেই,হাত নেই,নেই তার চোখ,সুখ দুঃখের আত্মা, কোন ব্যথা বেদনার অনুভূতি।তারপরও সময় তার নিজস্ব গতি রেখায় দৌঁড়ায়।পৃথিবীর পার্থিব সব কিছু সময়ের কাছে জিম্মি। নিজের অজান্তেই সব কিছু সময়ের সাথে হামাগুড়ি দিয়ে দৌঁড়ায়।সৌর জগতের মধ্যমণি সুর্য্যের চারপাশে দৌঁড়ায় পৃথিবী।সময় মেপে মেপে প্রতি ৩৬৫ দিন পর পৃথিবী ফিরে আসে তার নিজস্ব অবস্থানে,আবার দৌঁড়ায়।বিঞ্জানের ভাষায় এই ঘূর্ণনকে বলে বার্ষিক গতি।
পরিবেশ পরিবতির্ত হয় সময়ের আবতর্নের সাথে। বাংলাদেশে সময়কে কেটে কেটে বৈশাখ, জৈষ্ঠ,আষাঢ়,শ্রাবন,ভাদ্র,আশ্বিন,কার্র্তক,অগ্রায়ণ,পৌষ,মাঘ,ফাল্গুন এই বার মাসে ভাগ করা হয়েছে। প্রতি দুই মাসে এক ঋতু।প্রতি ঋতুর আবহাওয়ার গতি প্রকৃতিতে রয়েছে ভিন্ন মাত্রিকতা।
সময়ের চোখে মুখে ঘুম নেই । থেমে থাকে না তার পথ চলা।বিরামহীন ভাবেই চলতে থাকে। এসব কথার গভীরে ঢোকে আদি তথ্য ইতিহাস সন্ধান করি যখন, বিস্ময়ের ঘরে দানা বাঁধে নানা কল্পনার ডালা পালা, দর্শন বিঞ্জানকে প্রলম্বিত করি। কে কোথায় সময়ের ঘড়ি স্থাপন করেছে জানি না।অদৃশ্য বিশ্বাসের উপর ভর করে, আমি অবুঝ প্রাণে সময়কে কোলে তুলে দৌঁড়াই আলো আধাঁরের কল্পনার ঘোরে।
এদিকে বিঞ্জান ও ধর্ম তত্ত্বে রয়েছে বহু ক্ষেত্রে আর্দশগত মত পার্থক্য। কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে পুর্নাঙ্গ চুড়ান্ত সমাধানও কেউ দিতে পারে না। প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর পূর্বে ধর্মীয় ভাবে মানুষ বিশ্বাস করতো পৃথিবী স্থির, তার চার পাশে সূর্য ঘূর্নায়মান। বিঞ্জানিরা এর বিরুদ্ধে বহু যুক্ত তর্ক উত্থাপন করে।বৈঞ্জানিক কোপারনিকাস বলেন সূর্য স্থির,পৃথিবী তার চার পাশে ঘুর্নায়মান।এই নিয়ে চলে ধর্ম ও বিঞ্জানের অনুসারিদের মধ্যে নানা যুক্তিতর্ক।বৈঞ্জানিক গ্যালেলিও তার নিজস্ব তথ্য দিয়ে কোপারনিকাসের মতবাদকে সমর্থন দেন।অবশেষে বহু পরিক্ষা নীরিক্ষার মাধ্যমে বিঞ্জান জয়ী হয়। এই সত্যে উপনীত হয় যে, সৌর জগতের অগ্নিকুন্ড নামে খ্যাত ও পৃথিবীর সকল শক্তির আধাঁর নক্ষত্র নামে খ্যাত সূর্য স্থির, সৌর জগতে তার চার পার্শে বিভিন্ন শক্তি স্তরে গ্রহ,উপগ্রহ, পৃথিবী ঘুরছে তো ঘুরছেই। এই ঘূণর্ন প্রক্রিয়াটি এতো সুবিন্যান্ত তা কল্পনারও বাইরে। সৃষ্টির ও সৃষ্টি কর্তার সকল রহস্য বিঞ্জানকে বার বার চপেটাঘাত করে। মানুষ তখন আবেগে আপ্লুত হয়ে ধর্মের গভীরতায় লুটিয়ে পড়ে।
অপরপক্ষে পৃথিবী তার নিজস্ব অক্ষের চার পাশে প্রতি ২৪ ঘন্টায় ঘুরে স্ব অবস্থানে ফিরে আসে একবার। এই ঘূর্ণনকে বলে আহ্নিক গতি। সময় নেয় না কোন বিরতি,বরং ক্লান্তিহীন ভাবে অনবরত চলতে থাকে। সৌর জগতের সকল সদস্যই ঘূণায়মান।সাথে সাথে পৃথবীর বুকে দাঁড়িয়ে থাকা জীব জড় সবকিছুই ঘুরছে তো ঘুরছে। এরই মাঝে চলছে ভাঙ্গা গড়ার কতো খেলা।যুদ্ধ বিগ্রহ,ঘূর্ণিজড়,ভূমিকম্প,জলোচ্চাস,সুখ দুঃখের, আনন্দ উচ্ছ্বাসের হৈ হৈ রৈ রৈ খেলা। পিঁপড়া তুল্য মানুষ সে খেলার নাটের গুরু।
সৃস্টির ঊষা লগ্ন থেকে সময়ের ভাঁজে ভাঁজে আসে পরিবর্তন। পাথর কষ্ট অতিক্রম করে মানুষকে আয়েসি জীবন উপহার দেয়। সময় তো বোবা বধির। কারো কোন কথা কানে শোনে না।ভয় ভীতি উপেক্ষা করে, সব কিছু পায়ে ঢলে পিষে সামনে এগিয়ে চলে।
আজকের আমিটা ১৯৬০ তে যাত্রা শুরু করে সময়ের ডানা ভেঙ্গে ২০২৪ এর আমিতে এসে পৌঁছেছি। ক্ষণে ক্ষণে ধূলি মুছে পরিস্কার করে হাতে তুলে নিয়েছি বিজয়ের স্বর্ন প্রদীপ। সময় দৌড়ায়,আমি তার সঙ্গে থাকি। আমার জীবনের প্রান্ত বিন্দুর শেষ সীমানা কোথায় জানি না। ঠিক তেমনি সময় নিজেও জানে না, তার দাড়ি কমা কোথায়।
আমরা জানি– Time & tide wait for non. নদীর স্রোত ধারা এবং সময় কখনও কারো জন্য অপেক্ষা করে না। If you want to be sucess, You should every thing do & done timely. সফলতা পেতে হলে সময়ের কাজ সময় মত করতে হবে। চৈতের গীত বৈশাখে গাইলে হবে না। শুধু সময় নয় প্রতাশ্যা, বাস্তবতা,পারিপার্শিকতার দিকেও রাখতে হবে খেয়াল।
কিছু র্দুবিসহ সময়ের কথা মনে হলে চোখ ওঠে যায় কপালে, যেমন অন্ধকার কবরের সময় পার করবো কি ভাবে। কিয়ামতের দিন কি করবো, ফুলসেরাতে ব্রিজ পার করার সময় কেমন ভয় পাবো। খাটিয়ায় ওঠার পর কবরে শুয়া পর্যন্ত কেমন করবে আমার শেষ বিদায়ের সময় ক্ষণ।
একটা চাবি মারিয়া পৃথিবীকে দিলেন ছাড়িয়া আমার আল্লাহ্ রব। তখন থেকেই চলছে আমার জীবন ঘড়ি। সময় থামে না,শোনে না কারো কথা। সময়ের পেছনে আমি কেবল দৌড়াই। সকালের সূর্যোদয়ে সুরু হয় আমার দৈনন্দিন কার্যক্রম,রুটিন মেপে মেপে রাত অবধি তা চলে।প্রতিদিন একটা দিন হারিয়ে য়ায় জীবন ডায়রী থেকে।রাতের বিছানায় শুয়ে সারাদিনের কাজের হিসাব মিলাই। যা করি তাতে তৃপ্তি পাই না।আরো কিছু করতে চাই মানব কল্যাণে।কিন্তু হায়, জীবন প্রদীপে তেল তো ফুরিয়ে আসছে। সামনে কবর অপেক্ষা করছে।আমার জীবন প্রদীপ ক্লান্ত অবসন্ন হয়ে যে কোন সময়ে থেমে যাবে। কিন্তু সময় তখনও দৌঁড়াবে। এই দৌঁড়ের শেষ কোথায় কেউ কি বলতে পারে? পারে না বলেই মানুষ অন্ধ তন্দ্রে মন্ত্রে বিশ্বাস করে ও ভয় ভীতিকে সম্বল করে বাতাসের পেছনে দৌঁড়ায়।
লেখকঃ কবি,গবেষক, সাবেক সিনেট সদস্য, জাবি।