হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঝুলে আছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। চলতি মাসের শেষের দিকেই দেশটিতে কর্মী যাওয়া শুরু হওয়ার কথা ছিল। গত ২ জুন ঢাকায় উভয় দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক শেষে প্রবাসীমন্ত্রী ইমরান আহমদ এ আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী দাতুক সেরি এম সারাভানানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল জনশক্তি রফতানি সংক্রান্ত ঢাকায় ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানান সীমিত সংখ্যক রিক্রুটিং এজেন্সির (২৫ এজেন্সি) মাধ্যমেই দেশটিতে কর্মী নেয়ার বিষয়ে অটল থাকেন। পরে মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করেও বাংলাদেশ থেকে জিরো কস্টে কর্মী নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং ব্যাপক কূটনৈতিক উদ্যোগের পর ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর কুয়ালালামপুরে দেশটিতে বাংলাদেশি কর্মী প্রেরণের লক্ষ্যে উভয় দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিতে মালয়েশিয়ার নিয়োগকারী কোম্পানিগুলো বাংলাদেশি কর্মীদের যাতায়াতের বিমান ভাড়া বহন করার শর্ত রয়েছে।
বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি হাজরে আসওয়াতের পরিচালক মো. দেলোয়ার হোসাইন গতকাল মঙ্গলবার ইনকিলাবকে বলেন, মালয়েশিয়ার সুপ্রিম উড এন্টারপ্রাইজ গত ২১ ফেব্রুয়ারি এবং স্কাই উড এসডিএন বিএইচডি’ গত ২৪ এপ্রিল তাদের এজেন্সির মাধ্যমে ১৫ জন সাধারণ কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র ইস্যু করেছে। মালয়েশিয়ার আরো একাধিক নিয়োগকর্তা সাধারণ কর্মী নেয়ার জন্য একাধিক চাহিদাপত্র ইস্যু করেছে। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তারা বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে। দেশটিতে অভিবাসী কর্মীর চরম সঙ্কট বিরাজ করছে।
উল্লেখ্য, বিগত দশ সিন্ডিকেটের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের দরুন দেশটিতে ২০১৮ সাল থেকে জনশক্তি রফতানি বন্ধ রয়েছে। এদের কারণে মালয়েশিয়া যেতে একেকজন কর্মীকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা থেকে ৪ লাখ টাকা খরচ করতে হয়েছে। অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় আর নানা ধরনের দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় তা বেশিদিন এগোয়নি। তারপর কেটে যায় প্রায় চার বছর। এরপর নানান দেনদরবার করে পুনরায় শ্রমবাজার খোলার প্রক্রিয়া শুরু করে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। মালয়েশিয়া সরকার এবার মাত্র ২৫টি এজেন্সির সঙ্গে ২৫০ সাব-এজেন্সির তালিকা ধরিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ সরকারকে। পাশাপাশি দেশটির মানবসম্পদমন্ত্রী দাতুক সেরি এম সারাভানান ১৪ জুলাই এক চিঠিতে সুপারিশ করা হয়, যেন এই প্রক্রিয়াতেই বাংলাদেশ কর্মী পাঠায়। কিন্তু প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ১৮ জানুয়ারি এক চিঠিতে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে কারণে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে গেছে, তা আর পুনরায় হবে না। আর এ নিয়ে মতানৈক্য তৈরি হওয়ায় বিষয়টি ছয় মাস ধরে ঝুলে রয়েছে।
বৈশ্বিক করোনা মহামারির পর মালয়েশিয়ার বিভিন্ন সেক্টরে অভিবাসী কর্মীর অভাবে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দেশটির শিল্প কারখানার মালিকরা বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। বিভিন্ন কোম্পানি প্রায় ৬০ হাজার বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের লক্ষ্যে অনুমতি চেয়ে সংশ্লিষ্ট অধিদফতরে কাগজপত্র জমা দিয়েছে। বায়রার একজন সাবেক কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রীর প্রস্তাবিত সীমিত সংখ্যক রিক্রুটিং এজেন্সির সাথে প্রায় ২৫০টি এজেন্সি যুক্ত হয়ে কর্মী প্রেরণের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। বায়রার অপর একটি অংশ সম্প্রতি ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বায়রার সাবেক সভাপতি আলহাজ আবুল বাসার মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার দ্রুত চালুর গুরুত্বারোপ করে সকল বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সিকে কর্মী প্রেরণে সুযোগ দেয়ার জোর দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমদ মনিরুছ সালেহীনের ছেলে মালয়েশিয়ার ২৫ সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত রয়েছে। এতে প্রবাসী সচিবের পদত্যাগেরও দাবি তোলা হয়।
মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর এবং কর্মী প্রেরণের পদ্ধতি চূড়ান্ত করায় দেশটির রাজা আগং বিশেষ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি মালয়েশিয়ার রাজপ্রাসাদ ইস্তানা নিগারায় রাজা ইয়াং ডি পারতোয়ান আগং এবং রানীর সঙ্গে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার এবং তার সহধর্মিণী মিসেস তাসলিমা সারোয়ার শুভেচ্ছা বিনিময় কালে রাজা এ সন্তোষ প্রকাশ করেন। কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।