হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে উভয় পক্ষই মালয়শিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিরাপদ, নিয়মিত, সস্তা এবং সুশৃঙ্খল কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার উপায় তৈরি করতে সক্ষম হবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) প্রেস উইংয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের টিকাদান এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতাসহ প্রয়োজনীয় সমস্ত প্রোটোকল বজায় রেখে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী শ্রমিক পাঠানোর আশ্বাস দিয়েছেন।
মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী দাতুক সেরি এম সারাভানান গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি এ কথা বলেন। শেখ হাসিনা দুই দেশের মধ্যে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে স্বাক্ষরিত শ্রমিকদের কর্মসংস্থান সংক্রান্ত এমওইউ-এর পৃষ্ঠপোষকতায় জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রæপের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ায় গভীর সন্তোষ প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী মালয়শিয়া সরকারের অ-সামরিক ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশি নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেন। কুশল বিনিময় শেষে প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের ক‚টনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণ জয়ন্তীতে বাংলাদেশ সফররত মালয়েশিয়ার মন্ত্রীকে স্বাগত জানান।
তিনি স্মরণ করেন যে আমাদের স্বাধীনতার পরপরই মালয়শিয়া বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার পর থেকে সম্পর্ক শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। বৈঠকে মালয়শিয়ার মন্ত্রী মালয়েশিয়ান চলমান জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রæপের বৈঠকে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
তিনি প্রধানমন্ত্রীকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাদের মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পুনর্গঠন এবং আইএলও নির্দেশিকা অনুসরণ করে তাদের অভ্যন্তরীণ কর্মসংস্থান প্রক্রিয়া সুগম করার বিষয়ে অবহিত করেন।
তিনি বলেন, আমরা অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য ৫ বছরের কর্মপরিকল্পনা নিয়েছি। এই লক্ষ্যে তারা ইতিমধ্যেই ন্যূনতম মজুরি ১৫০০ আরএম এ বাড়িয়েছে।
দাতুক সেরি এম. সারাভানান বলেছেন, তারা এখন সব কর্মসংস্থান প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজড করেছেন যাতে প্রতিটি পদক্ষেপে অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা হয়। মালয়েশিয়া শুধুমাত্র চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে অনলাইনে আবেদন গ্রহণ করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা নিয়োগকারী সংস্থাকে মাঝখানে না রেখেই নিয়োগকর্তাদের কাছ থেকে কর্মীদের বেতন কার্ড অ্যাকাউন্টে সরাসরি ই-পেমেন্ট ইনস্টল করেছেন। তবে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত এমওইউ বাস্তবায়ন বিলম্বিত হওয়ায় তিনি মানব পাচারের সম্ভাবনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
এ মাসেই শুরু : বছরে দু’লাখ কর্মী যাবে মালয়েশিয়ায়
চলতি মাসের শেষের দিকে স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়ায় কর্মী যাওয়া শুরু হবে। পূর্বের নির্ধারিত অভিবাসন ব্যয়ের (১লাখ ৬০ হাজার টাকা) অনেক কম টাকায়ই দেশটিতে কর্মী যাবে। যাওয়া আসার বিমানের টিকিট দেশটির নিয়োগকর্তা বহন করবে। এক বছরের মধ্যে দেশটিতে দু’লাখ বাংলাদেশি কর্মী যাওয়ার সুযোগ পাবে। দেশটির শ্রম আইন অনুযায়ী সকল সুযোগ সুবিধা লাভসহ একজন বাংলাদেশি কর্মী সর্বনি¤œ ১৫শ’ রিংগিট বেতন পাবেন। গতকাল বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি সংক্রান্ত উভয় দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রæপের দিনব্যাপী বৈঠক শেষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ তার দপ্তরের সম্মেলনকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন প্রবাসী সচিব ড. আহমদ মনিরুছ সালেহীন। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন, বিএমইটির মহাপরিচালক শহীদুল আলম,মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশি হাইকমিশনার গোলাম সরওয়ারসহ প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এর আগে সফররত মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী দাতুক সেরি এম সারাভানান দু’দফা সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে বলেন, আজ ঢাকায় উভয় দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রæপের বৈঠকে ফলপ্রæসূ আলোচনা হয়েছে। মালয়েশিয়ার ক্যাবিনেটের অনুমোদনের পর পরই বাংলাদেশ থেকে কর্মী যাওয়া শুরু হবে। ২৫ সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই কর্মী যাবে না সকল বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী প্রেরণের সুযোগ পাবে এমন প্রশ্নের জবাবে সফররত মন্ত্রী এম সারাভানান বলেন, ২৫ কোম্পানীর মাধ্যমে কর্মী নেয়ার ব্যাপারে পূর্বের সিদ্ধান্তের ওপর তার দেশ অনড় রয়েছে। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে সাংবাদিকদের সাথে সফররত মন্ত্রী এম সারাভানান বলেন, বিগত দিনে দশ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় কর্মী গিয়েছিল। এখন আমরা অনেকটা সহনশীল হয়েছি বর্তমানে ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নিতে চাচ্ছি। পরিস্থিতি অনকূলে এলে এর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলেও সফররত মন্ত্রী আভাস দেন।
প্রবাসী মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রæপের মাঝে অনুষ্ঠিত সৌহর্দ্যপূর্ণ বৈঠকে ফলপ্রæসূ আলোচনা হয়ে্েযছ। গত ডিসেম্বর মাসে উভয় দেশের মাঝে সম্পাদিত সমঝোতা স্বারকের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশটিতে কর্মী প্রেরণ শুরু করা হবে। দেশটির সিষ্টেম অনুযায়ী কর্মী যাওয়ার সুযোগ পাবে। এক প্রশ্নের জবাবে প্রবাসী মন্ত্রী বলেন, ১৫২০ বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকা মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়েছে। কারা কর্মী পাঠাবে তা’সিলেকশনের দায়িত্ব মালয়েশিয়া সরকারের। মন্ত্রী বলেন, জিরো কস্টে কর্মী নেয়ার চেষ্টা করবে মালয়েশিয়া সরকার। অতিরিক্ত অর্থ নিলে তারা ব্যবস্থা নিবে। তিনি বলেন, সরকার নির্ধারিত অভিবাসন ব্যয়ের চাইতে কেউ কর্মীর কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রবাসী মন্ত্রী বলেন, আমাদের ডাটা ব্যাংক থেকে মালয়েশিয়া কর্মী নিবে। তিনি বলেন, অন্যদেশ থেকে কর্মী না পেলে আগামী ৫ বছরে ৫লক্ষাধিক কর্মী দেশটিতে যাওয়ার সুযোগ পাবে। প্রবাসী মন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার জন্য আর কোনো মিটিংয়ের প্রয়োজন হবে না। চলতি জুনের মধ্যেই দেশটিতে কর্মী যাওয়া শুরু হবে। তিনি বলেন, তেরটি সোর্সকান্ট্রির সাথে মালয়েশিয়ার সরকারের পৃথক পৃথক চুক্তি রয়েছে। মালয়েশিয়ার শ্রববাজার যাতে পুনরায় বন্ধ হয়ে না যায় সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। গতকাল রাতেই সফররত মালয়েশিয়ার প্রতিনিধি দল মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকাত্যাগ করেছেন।