ঢাকা ০৭:৩৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
দেশ ও জাতি গঠনে “দৈনিক আমার দেশ” পত্রিকার কাছে নেত্রকোণার জনগণের প্রত্যাশা শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত ভুল অস্ত্রোপচার, যা ঘটেছিল প্রিয়াঙ্কা সঙ্গে সচিবালয়ে উপদেষ্টা হাসান আরিফের তৃতীয় জানাজা সম্পন্ন সাবেক সচিব ইসমাইল রিমান্ডে অবশেষে বিল পাস করে ‘শাটডাউন’ এড়াল যুক্তরাষ্ট্র চাঁদাবাজদের ধরতে অভিযান শুরু হচ্ছে: ডিএমপি কমিশনার নির্বাচনের পর নিজের নিয়মিত কাজে ফিরে যাবেন ড. ইউনূস ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, আহত ১৬ জুলাই আন্দোলন বিগত বছরগুলোর অনিয়মের সমষ্টি: ফারুকী তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ‘সড়কে নৈরাজ্যের সঙ্গে রাজনৈতিক প্রভাব জড়িত

ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সংকট সাঁড়াশি অভিযানে নামছে সরকারের ১৪ সংস্থা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৪৪:১৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৫ মার্চ ২০২২
  • ১২৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ অতি মুনাফার লোভে ভোজ্যতেল মজুত করছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। এদের মধ্যে রয়েছেন-মিলার বা বড় বড় কোম্পানি, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা। মূল্যবৃদ্ধি করতে মিল পর্যায়ে পরিকল্পিত ভাবে গত সপ্তাহ থেকে ভোজ্যতেল সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এই সুয়োগে একচেটিয়া ব্যবসা করতে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা বাজার থেকে তেল সরিয়ে ফেলেছেন। পরিস্থিতি এমন যে-বাজারে খোলা ও পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন উধাও। এক লিটার বোতলজাত পাওয়া গেলেও বিক্রেতারা সরকারের বেঁধে দেওয়া দর মানছে না। বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৮০ থেকে সর্বোচ্চ ২০০ টাকায়।

পরিস্থিতি সামাল দিতে সাঁড়াশি অভিযানে মাঠে নামছে সরকারের ১৪টি সংস্থার তদারকি টিম। কাল রোববার থেকে টিমের সদস্যরা অভিযান কার্যক্রম শুরু করবেন। সংস্থাগুলো তেলের সরবরাহ, মজুত, পাইকারি ও খুচরা দোকানগুলোতে সংকটের কারণ খতিয়ে দেখবে।

একই সঙ্গে কোম্পানিগুলো থেকে তেলের সরবরাহ কমার কারণ পর্যালোচনা করা হবে। পাশাপাশি আমদানি কত হয়েছে তা জানতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। অভিযানকালে অনিয়ম পেলে জরিমানা, প্রতিষ্ঠান সিলগালাসহ অসাধুদের জেলে পাঠানোর হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

ইতোমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সারা দেশে সয়াবিন তেলের চাহিদা, আমদানি, সরবরাহ ও মজুদের তথ্য সংগ্রহ করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করছে। এটি তৈরি করতে তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বিভিন্ন কোম্পানিগুলো থেকে তথ্য নিয়েছে। এতে কোন জেলায় কি পরিমাণে তেল সরবরাহ করা হয়েছে সে তথ্যও রয়েছে। এসব তথ্য জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

এর আলোকে সরকারি সংস্থাগুলো অভিযানে নামবে। এর মধ্যে-বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চারটি বিশেষ টিম গঠন করেছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর গঠন করেছে আরও ৬টি বিশেষ টিম।

এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদারকি টিমসহ মন্ত্রণালয়ের আওতায় বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ, র‌্যাব, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও আনসার বাহিনী মাঠে নামবে। এর বাইরে শিল্প মন্ত্রণালয়ের তদারকি টিম, বিএসটিআই, কৃষি মন্ত্রণালয়ের তদারকি টিম, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতায় সিটি করপোরেশন, পৌরসভা এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আওতায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ মোট ১৪ সংস্থা মাঠে থাকবে।

সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে-সয়াবিন তেলের বেআইনি মজুতকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এ কারণে এবারের অভিযানে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ধারায় মামলার পাশাপাশি জরিমানা ও প্রতিষ্ঠান সিলগালা করা হবে। সয়াবিনের বেআইনি মজুত করার দায়ে নিয়োমিত বাজার তদারকিতে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে সিলগালা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তর।

জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার যুগান্তরকে বলেন, রোববার থেকে কঠোরভাবে অভিযান শুরু হবে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বিশেষ ৬টি টিমের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চারটি বিশেষ তদারকি টিম কাজ করবে। এছাড়া স্বরাষ্ট্র ও শিল্প মন্ত্রনালয়ের তদারকি টিম, কৃষি মন্ত্রণালয়ের তদারকি টিম, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতায় সিটি করপোরেশনের টিম অভিযান পরিচালনা করবে। তাদের সঙ্গে পুলিশ, র‌্যাব, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও আনসার বাহিনী কাজ করবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আওতায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন মাঠে থাকবে। এর বাইরে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা কাজ করবেন।

তিনি জানান, কে কোথায় তেল মজুত করেছে এবং কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে আমাদের কাছে তথ্য চলে এসেছে। আমরা সেই তথ্য ধরে ধরে অভিযান পরিচালনা করব। এ অসাধুতার সঙ্গে যাদের সম্পৃক্ততা পাব তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। কঠোর শাস্তির আওতায় জরিমানাসহ প্রতিষ্ঠান সিলগালা ও অসাধুদের মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হবে। ইতোমধ্যে সার্বিক তদারকিতে ভোক্তা অধিদপ্তর বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও মিল সাময়িক সময়ের জন্য সিলগালা করা হয়েছে। এবার আর কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

এদিকে সরবরাহ সংকটের কারণে গত বুধবার দুপুর থেকে সন্ধ্যার মধ্যে প্রতি লিটার সয়াবিনের দাম গড়ে ২০ থেকে ২৫ টাকা বেড়েছে। দুপুরের দিকে প্রতি লিটার ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকায় পাওয়া যায়। ওইদিন সন্ধ্যায় ১৯০ থেকে ২০৫ টাকা বিক্রি হয়েছে। বৃহস্পতিবার খুচরা বাজারে গিয়ে একই চিত্র দেখা যায়। ওইদিন প্রতিলিটার বোতলজাত সয়াবিন কিনতে ক্রেতাকে ১৮০-২০০ টাকা পর্যন্ত ব্যায় করতে হয়েছে। পাশাপাশি খোলা সয়াবিন তেল নেই।

এদিন খোলা তেল না পাওয়ার চিত্র সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক বাজার মূল্য তালিকায় উল্লেখ করা হয়। শুক্রবার সকাল থেকে রাজধানীর খুচরা বাজারে খোলা সয়াবিন নেই। বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ১৮০-২০০ টাকা।

কাওরান বাজারের মুদি বিক্রেতা মো. হেদায়াতউল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, মিল মালিক ও পরিবেশকরা তেলের দাম বাড়াতে চেয়েছিল। সরকার প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় তারা সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। এ কারণে দাম বেড়েছে।

এ বিষয়ে সিটি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, প্রতিদিনের মতোই নির্দিষ্ট পরিমাণ তেল সরবরাহ করা হচ্ছে। পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা রমজান সামনে রেখে সয়াবিন মজুত করছেন। এজন্য বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি হচ্ছে। কারখানায় কোনো সমস্যা নেই।

তবে রাজধানীর মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা বলেন, বড় বড় কোম্পানিগুলোর অভিযোগ সঠিক নয়। আমরা কোনো তেল মজুত করিনি। কোম্পানিগুলোই তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। তারাই বাজার অস্থির করে ফেলেছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারের তেলের দাম বাড়তি। সব মিলে বাজারে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

বুধবার বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সাংবাদিকদের বলেন, তেলের দাম আরও বাড়ানোর বিষয়ে ব্যাবসায়ীরা এসেছিলেন। আমরা পরিষ্কার বলে দিয়েছি-নট পসিবল, সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের কাছে সব তথ্য আছে। সেই তথ্যের ওপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিকারসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হবে। সরকারি একাধিক সংস্থা তদারকিতে নেমেছে। এছাড়া গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা বাজারে খোঁজখবর নিচ্ছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, সব রিফাইনারি কোম্পানির কাছে ভোজ্যতেল বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে। তারা গত ৩ মাসে কি পরিমাণ আমদানি করেছে; কত পরিমাণ পরিশোধন করেছে-তা কাস্টমস পেপারসহ চাওয়া হয়েছে। এছাড়া তারা কত পরিমাণের ডিও/এসও দিয়েছে, কত ডেলিভারি করেছে এবং কত মজুত আছে, সেটাও জানতে চাওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা যৌথ অপারেশনে নামব। এটা যারা ম্যানুপুলেট করছেন আমরা তাদের খুঁজে বের করব। আমাদের অপারেশন চলছে। আমরা একদম রুট লেভেলে চলে গেছি। কোথায় এটির ম্যানুপুলেট হচ্ছে, ডিলার-মিলার, সাপ্লাইয়ার সবাইকে আমরা শনাক্ত করছি। অনিয়ম পেলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

দেশ ও জাতি গঠনে “দৈনিক আমার দেশ” পত্রিকার কাছে নেত্রকোণার জনগণের প্রত্যাশা শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সংকট সাঁড়াশি অভিযানে নামছে সরকারের ১৪ সংস্থা

আপডেট টাইম : ০৯:৪৪:১৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৫ মার্চ ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ অতি মুনাফার লোভে ভোজ্যতেল মজুত করছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। এদের মধ্যে রয়েছেন-মিলার বা বড় বড় কোম্পানি, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা। মূল্যবৃদ্ধি করতে মিল পর্যায়ে পরিকল্পিত ভাবে গত সপ্তাহ থেকে ভোজ্যতেল সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এই সুয়োগে একচেটিয়া ব্যবসা করতে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা বাজার থেকে তেল সরিয়ে ফেলেছেন। পরিস্থিতি এমন যে-বাজারে খোলা ও পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন উধাও। এক লিটার বোতলজাত পাওয়া গেলেও বিক্রেতারা সরকারের বেঁধে দেওয়া দর মানছে না। বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৮০ থেকে সর্বোচ্চ ২০০ টাকায়।

পরিস্থিতি সামাল দিতে সাঁড়াশি অভিযানে মাঠে নামছে সরকারের ১৪টি সংস্থার তদারকি টিম। কাল রোববার থেকে টিমের সদস্যরা অভিযান কার্যক্রম শুরু করবেন। সংস্থাগুলো তেলের সরবরাহ, মজুত, পাইকারি ও খুচরা দোকানগুলোতে সংকটের কারণ খতিয়ে দেখবে।

একই সঙ্গে কোম্পানিগুলো থেকে তেলের সরবরাহ কমার কারণ পর্যালোচনা করা হবে। পাশাপাশি আমদানি কত হয়েছে তা জানতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। অভিযানকালে অনিয়ম পেলে জরিমানা, প্রতিষ্ঠান সিলগালাসহ অসাধুদের জেলে পাঠানোর হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

ইতোমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সারা দেশে সয়াবিন তেলের চাহিদা, আমদানি, সরবরাহ ও মজুদের তথ্য সংগ্রহ করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করছে। এটি তৈরি করতে তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বিভিন্ন কোম্পানিগুলো থেকে তথ্য নিয়েছে। এতে কোন জেলায় কি পরিমাণে তেল সরবরাহ করা হয়েছে সে তথ্যও রয়েছে। এসব তথ্য জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

এর আলোকে সরকারি সংস্থাগুলো অভিযানে নামবে। এর মধ্যে-বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চারটি বিশেষ টিম গঠন করেছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর গঠন করেছে আরও ৬টি বিশেষ টিম।

এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদারকি টিমসহ মন্ত্রণালয়ের আওতায় বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ, র‌্যাব, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও আনসার বাহিনী মাঠে নামবে। এর বাইরে শিল্প মন্ত্রণালয়ের তদারকি টিম, বিএসটিআই, কৃষি মন্ত্রণালয়ের তদারকি টিম, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতায় সিটি করপোরেশন, পৌরসভা এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আওতায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ মোট ১৪ সংস্থা মাঠে থাকবে।

সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে-সয়াবিন তেলের বেআইনি মজুতকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এ কারণে এবারের অভিযানে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ধারায় মামলার পাশাপাশি জরিমানা ও প্রতিষ্ঠান সিলগালা করা হবে। সয়াবিনের বেআইনি মজুত করার দায়ে নিয়োমিত বাজার তদারকিতে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে সিলগালা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তর।

জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার যুগান্তরকে বলেন, রোববার থেকে কঠোরভাবে অভিযান শুরু হবে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বিশেষ ৬টি টিমের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চারটি বিশেষ তদারকি টিম কাজ করবে। এছাড়া স্বরাষ্ট্র ও শিল্প মন্ত্রনালয়ের তদারকি টিম, কৃষি মন্ত্রণালয়ের তদারকি টিম, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতায় সিটি করপোরেশনের টিম অভিযান পরিচালনা করবে। তাদের সঙ্গে পুলিশ, র‌্যাব, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও আনসার বাহিনী কাজ করবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আওতায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন মাঠে থাকবে। এর বাইরে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা কাজ করবেন।

তিনি জানান, কে কোথায় তেল মজুত করেছে এবং কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে আমাদের কাছে তথ্য চলে এসেছে। আমরা সেই তথ্য ধরে ধরে অভিযান পরিচালনা করব। এ অসাধুতার সঙ্গে যাদের সম্পৃক্ততা পাব তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। কঠোর শাস্তির আওতায় জরিমানাসহ প্রতিষ্ঠান সিলগালা ও অসাধুদের মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হবে। ইতোমধ্যে সার্বিক তদারকিতে ভোক্তা অধিদপ্তর বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও মিল সাময়িক সময়ের জন্য সিলগালা করা হয়েছে। এবার আর কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

এদিকে সরবরাহ সংকটের কারণে গত বুধবার দুপুর থেকে সন্ধ্যার মধ্যে প্রতি লিটার সয়াবিনের দাম গড়ে ২০ থেকে ২৫ টাকা বেড়েছে। দুপুরের দিকে প্রতি লিটার ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকায় পাওয়া যায়। ওইদিন সন্ধ্যায় ১৯০ থেকে ২০৫ টাকা বিক্রি হয়েছে। বৃহস্পতিবার খুচরা বাজারে গিয়ে একই চিত্র দেখা যায়। ওইদিন প্রতিলিটার বোতলজাত সয়াবিন কিনতে ক্রেতাকে ১৮০-২০০ টাকা পর্যন্ত ব্যায় করতে হয়েছে। পাশাপাশি খোলা সয়াবিন তেল নেই।

এদিন খোলা তেল না পাওয়ার চিত্র সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক বাজার মূল্য তালিকায় উল্লেখ করা হয়। শুক্রবার সকাল থেকে রাজধানীর খুচরা বাজারে খোলা সয়াবিন নেই। বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ১৮০-২০০ টাকা।

কাওরান বাজারের মুদি বিক্রেতা মো. হেদায়াতউল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, মিল মালিক ও পরিবেশকরা তেলের দাম বাড়াতে চেয়েছিল। সরকার প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় তারা সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। এ কারণে দাম বেড়েছে।

এ বিষয়ে সিটি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, প্রতিদিনের মতোই নির্দিষ্ট পরিমাণ তেল সরবরাহ করা হচ্ছে। পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা রমজান সামনে রেখে সয়াবিন মজুত করছেন। এজন্য বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি হচ্ছে। কারখানায় কোনো সমস্যা নেই।

তবে রাজধানীর মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা বলেন, বড় বড় কোম্পানিগুলোর অভিযোগ সঠিক নয়। আমরা কোনো তেল মজুত করিনি। কোম্পানিগুলোই তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। তারাই বাজার অস্থির করে ফেলেছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারের তেলের দাম বাড়তি। সব মিলে বাজারে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

বুধবার বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সাংবাদিকদের বলেন, তেলের দাম আরও বাড়ানোর বিষয়ে ব্যাবসায়ীরা এসেছিলেন। আমরা পরিষ্কার বলে দিয়েছি-নট পসিবল, সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের কাছে সব তথ্য আছে। সেই তথ্যের ওপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিকারসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হবে। সরকারি একাধিক সংস্থা তদারকিতে নেমেছে। এছাড়া গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা বাজারে খোঁজখবর নিচ্ছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, সব রিফাইনারি কোম্পানির কাছে ভোজ্যতেল বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে। তারা গত ৩ মাসে কি পরিমাণ আমদানি করেছে; কত পরিমাণ পরিশোধন করেছে-তা কাস্টমস পেপারসহ চাওয়া হয়েছে। এছাড়া তারা কত পরিমাণের ডিও/এসও দিয়েছে, কত ডেলিভারি করেছে এবং কত মজুত আছে, সেটাও জানতে চাওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা যৌথ অপারেশনে নামব। এটা যারা ম্যানুপুলেট করছেন আমরা তাদের খুঁজে বের করব। আমাদের অপারেশন চলছে। আমরা একদম রুট লেভেলে চলে গেছি। কোথায় এটির ম্যানুপুলেট হচ্ছে, ডিলার-মিলার, সাপ্লাইয়ার সবাইকে আমরা শনাক্ত করছি। অনিয়ম পেলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।