ঢাকা ০৩:০৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হুমায়ূন আহমেদ সব সময় আমার কৌতূহলের জবাব দিতেন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৩২:৪২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ এপ্রিল ২০১৬
  • ৪১১ বার

ছোটবেলা থেকেই হয়ে ওঠেন সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রিয়মুখ। ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ সিনেমার মাধ্যমে অভিনেত্রী হিসেবে জনপ্রিয়তা পান। অভিনয় ছাড়াও নৃত্যশিল্পী, গায়িকা, নির্মাতাসহ অনেক পরিচিতি তার। তিনি মেহের আফরোজ শাওন। প্রয়াত ঔপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী। সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে তার পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘কৃষ্ণপক্ষ’। এই সময়কে দেয়া এই সাক্ষাৎকারে নানা বিষয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সৈয়দ ঋয়াদ

যতটা জানি ছোটবেলায় আপনি শিশুদের সংগঠন নতুনকুঁড়িতে ছিলেন। তখন কি অভিনয়ও করতেন?

হ্যাঁ, আমি নতুনকুঁড়িতে ছিলাম। এর পাশাপাশি আমি তখন নাটকেও অভিনয় করতাম। ওই সময় নাচ-গানে পারদর্শী ছেলেমেয়েদেরই বিটিভিতে নেওয়া হতো। একটু চটপটে ছেলেমেয়েদের নেওয়া হতো। আমার প্রথম নাটক ‘স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা’, পরিচালক ছিলেন আলাউদ্দিন আহমেদ। তিনি নতুনকুঁড়িরও প্রযোজক ছিলেন। নতুনকুঁড়ি থেকেই তিনি আমাকে নিলেন। ওটাতে ভালো করার কারণে শিশু শিল্পীর চরিত্রগুলো আমাকে দিয়ে করানো শুরু করলেন। তারপর মামুনুর রশীদের ‘প্রভাত ঢাকা’ নাটকে কাজ করেছি। ’৯১ সালে নওয়াজেশ আলী খানের প্রোডাকশনে, হুমায়ূন আহমেদের লেখা ‘জননী’তে কাজ করি।

তখন কোন ক্লাসে পড়তেন?

তখন আমি ক্লাস ফাইভ বা সিক্সে পড়তাম।

এরপর আর থামেননি?

না। এরপর থেকে নাটক আর ক্লাস নিয়েই চলতে লাগল জীবন।

সেই সময় কোনো সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন?

‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ কিন্তু আমার প্রথম ছবি না। এটা অনেকেই জানে না। আমি সাত বছর বয়সে প্রথম সিনেমায় অভিনয় করি। ইবনে মিজান নামে খুব বিখ্যাত একজন পরিচালক ছিলেন। রাজা-রানীভিত্তিক সিনেমাগুলো বানাতেন তিনি। তার চলচ্চিত্রের জন্য কীভাবে যেন আমার ভাইকে পেলেন। নায়কের ছোটবেলার জন্য আমার ভাইকে কাস্টিং করলেন। দুই ভাইকে নিয়ে চলচ্চিত্র। আলাল-দুলাল। তাদেরকে সৎ মা জঙ্গলে পাঠিয়ে দেয়Ñ এরকম একটি গল্প ছিল সিনেমাটির। আলাল হলো সেই সময়ের বিখ্যাত শিশু শিল্পী চরিত্র পরিচালক গোলাম সোহরাব দোদুল। সেখানে আমার ভাই ছোট ভাইয়ের চরিত্রে আর দোদুল ভাই বড় ভাইয়ের চরিত্রে অভিনয় করে। এফডিসিতে শুটিং হয়। আমার মা সব সময় এফডিসিতে অভিনয়ের সময় ভাইয়াকে নিয়ে যেতেন। হঠাৎ আম্মুর কাছে প্রস্তাব দিল, আপনার মেয়েটা তো নাচতে পারে, এখানে নায়িকার ছোটবেলার একটা চরিত্র আছে, ওটা আপনার মেয়েকে দিয়ে করাতে চাই।

আপনার মা রাজি হয়ে গেলেন?

না, আম্মু তো আমাকে কোনোভাবেই সিনেমায় দিবেন না।

না দেয়ার কারণ?

কারণ শুটিং হবে কক্সবাজারে। এতে আমার স্কুল বন্ধ হয়ে যাবে। এখন দেখা গেল কক্সবাজারে আমার ভাইয়েরও শুটিং হবে। ওখানে মাকে যেতেই হবে। মাকে তিনি অনেকভাবেই বোঝালেন যে, যেহেতু আপনাকে যেতেই হবে, সঙ্গে মেয়েকেও নিয়ে যাবেন। তাহলেই তো হলো। আপনার জন্য আমরা প্লেনের টিকিট দেব। তখনকার দিনে কিন্তু এটা একটা বিশাল ব্যাপার। পুরো ইউনিটের মাত্র আমি, আমার মা, আমার ভাই, ডিরেক্টর এবং নৃত্য পরিচালক আমির হোসেন বাবু এই কয়জন প্লেনে গেলাম। এটা আমার জীবনে প্রথম প্লেন জার্নি । সিনেমাটার প্রথমে নাম ছিল ‘খুনের বদলে খুন’। পরে নাম পরিবর্তন করে ‘আলাল-দুলাল’ রাখা হলো। আমাকে শুটিংয়ে একটা গেরুয়া রঙের শাড়ি পরিয়ে দেওয়া হয়। আমার বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছেন শওকত আকবর। ছোটবেলায় আমরা গান গাই, ‘মন আমার দেহ ঘড়ি সন্ধান করি’। এই গান গাইতে গাইতে আমার পায়ের শট ধরা হয়। আমি যে পোশক পরেছিলাম ঠিক সেই পোশাক পরে দাঁড়িয়ে আছে খুব সুন্দরী একজন মহিলা। তিনি সুচরিতা। একদম একই রকম গেটআপে তিনি বসা। আমার যে শট নেওয়া হলো তারও সেই শট নেওয়া হলো। আমি তখনো জানি না আমি কত বিখ্যাত একজন মানুষের সঙ্গে কাজ করছি। ওটাই ছিল আমার প্রথম চলচ্চিত্র।

শ্রাবণ মেঘের দিনে কত সালে করলেন?

অনেক পরে, ১৯৯৯ সালে ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ সিনেমায় অভিনয় করি। এর মধ্যে আর কোনো সিনেমায় অভিনয় করিনি।

আপনি এ যাবৎ কটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন?

এ পর্যন্ত মোট ছয়টা সিনেমাতে অভিনয় করেছি। আলাল-দুলাল, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, শ্যামল ছায়া, আমার আছে জল।

কোনটিতে অভিনয় করে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছিল?

শ্রাবণ মেঘের দিন এবং চন্দ্রকথা আমার খুব ভালো লেগেছে। শ্যামল ছায়াও বেশ ভালো লেগেছে। দর্শক ওভাবে মনে রাখবে বা রেখেছে ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ সিনেমাটি। এটি বাংলাদেশের দর্শকদের হৃদয় স্পর্শ করেছে।

আপনার পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘কৃষ্ণপক্ষ’র পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই।

পরিকল্পনাটা হঠাৎ করেই, কোরবানির ঈদের এক বা দু দিন আগে পরিকল্পনা হলো। চ্যানেল আই থেকে আমাকে বলল, এবারের হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে আমরা নতুন কিছু করতে চাই। আমি বললাম কি? তারা বললেন, একটা ছবি করতে চাই। তো আপনি কি ছবিটা করতে পারবেন? তখন আমি হিসেব করে দেখলাম আমার হাতে সময় আছে এক মাস দশ দিন। এই চল্লিশ দিনের মধ্যে কি কি করতে হবে? গল্প বাছাই, স্ক্রিপ্ট তৈরি, চিত্রনাট্য, আর্টিস্ট নেওয়া, প্রি-প্রোডাকশন, লোকেশন, পোস্ট প্রোডাকশন অনেক কাজ। কীভাবে যেন ১৫ মিনিটের মাথায় বললাম করব, তবে আমি কিছু জিনিস চাই। আর্টিস্ট যাকে চাইব আপনারা জোগাড় করে দিবেন। তারা রাজি হলেন। আনুষঙ্গিক আরও কিছু জিনিস তাদের ম্যানেজ করে দিতে বললাম। তবে শুরু করার পর বোঝলাম যে এটা একেবারে অসম্ভব একটা কাজ। কারণ অনেক স্ক্রিপ্ট করা ছিল। কিন্তু ওই স্ক্রিপ্টগুলো পছন্দ করলাম না। প্রেমের গল্প নিয়ে কোনো ছবির স্ক্রিপ্ট করা ছিল না। ছিল কঠিন কঠিন ছবির স্ক্রিপ্ট। নির্বাসন, গুহা মানব ইত্যাদি। সবই কঠিন। ‘কৃষ্ণপক্ষ’ স্ক্রিপ্ট করতে বসে দেখলাম, আমি তো এর আগে কখনো স্ক্রিন প্লে করিনি। এটা খুব কঠিন জিনিস। ওই সময় সবচেয়ে বেশি মিস করছি হুমায়ূন আহমেদকে। চিত্রনাট্য করার ক্ষেত্রে। তিনি ভয়ংকর সুন্দর স্ক্রিপ্ট করতেন। তারপর মোটামুটি একটা স্ক্রিপ্ট দাঁড় করলাম। শুটিং স্পটে বহু রদবদল হয়েছে।

সিনেমাটির রিলিজ নিয়ে বিশেষ কোনো ঝামেলা তো পোহাতে হয়নি?

রিয়াজ ভাই অসুস্থ না হয়ে গেলে হয়ত বা ১৩ নভেম্বর মুক্তি দেওয়া সম্ভব ছিল। তার পর বলব আমি নিজেও পুরোপুরি তুষ্ট নই। মুক্তি পেয়েছে অবশেষে ২৬ ফেব্রুয়ারি। শুরু থেকে যদি জানতাম ২৬ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পাবে তাহলে চ্যালেঞ্জটা অন্যরকম হতো। কারণ কাজটা শুরু করেছি একটা টাইম লাইন রেখে। মানে সারা রাত কাজ করেছি। সারা রাত কাজ করলে এক সময় কাজের মান ফেইল করে। ক্যামেরা বারবার হ্যাঙ হয়ে যাচ্ছে। এমন করে প্রথম দিকে আমরা অনেক বেশি প্রেসার নিয়েছি। প্রেসার না নিয়ে যদি আর একটু সময় নিয়ে করতাম, তাহলে ডেফিনেটলি কাজটা ভালো হতো। প্রি-প্রোডাকশনে আমরা একদমই সময় নেইনি। ওখানে যদি আর একটু সময় নিতাম তাহলে আর একটু ভালো হতো। আমি স্ক্রিপ্ট করেছি মাত্র তিন দিনে। যদি এখানে ১০ দিন সময় দিতে পারতাম তাহলে ডেফিনেটলি অনেক বেটার কাজ হতো। সিনেমা অ্যাডিটিং শেষ করে দেখি ৩ ঘণ্টা ২০ মিনিট হয়েছে। এটা ৩ ঘণ্টার ছবি নয়। শেষে হলে প্রদর্শিত হয়েছে ২ ঘণ্টার চেয়ে কিছু বেশি। এর মানে অনেক সিকোয়েন্স আমাকে ফেলে দিতে হয়েছে। কিন্তু এই কাজগুলো তো কষ্ট করে করতে হয়েছে। আসলে ঘড়ি ধরে যে কাজটা করব সেই সময়টা আমি পাইনি। অভিজ্ঞতারও একটা ব্যাপার আছে। পরবর্তী সময়ে হয়ত ত্রিশ দিন নয়, তিন মাস ধরে প্রি-প্রোডাকশন করব।

একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে বাংলাদেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন হলো?

এখানে মানুষের চাওয়াগুলো খুব পজেটিভ। আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির একটা ভাগ আমরা করে ফেলেছি। একটি এফডিসিকেন্দ্রিক চলচ্চিত্র এবং দ্বিতীয়টি এর বাইরের বা ভিন্ন ঘরানার চলচ্চিত্র।

এমন ভাগ থাকা কি ঠিক?

না, উচিত না। যারা এফডিসিতে কাজ করেন তাদের দিক থেকেও ভাগটা আছে। তারা অনেক বছর ধরে একটা জায়গায় রোল করেছেন। তাদের সাম্রাজ্যে যখন বাইরে থেকে কেউ যাচ্ছে, তাদের উচিত ছিল ওয়েলকাম করে নেওয়া। কেউ ভালো করলে টিকে থাকবে, ভালো না করলে ঝরে যাবে। কিন্তু তারা ওয়েলকাম করেনি। অন্যদিকে আবার তারা যখন ওয়েলকাম করতে চেয়েছে আমরাও তাদের সহযোগিতা করিনি। কোনো কারণে এই দুইয়ের মধ্যে একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তবে এটা এখন আস্তে আস্তে অনেকাংশে কমে আসছে। কেন বলছি, কারণ এখন যারা এফডিসির বাইরে কাজ করে তারা এফডিসির আর্টিস্ট নিচ্ছে। আবার এফডিসির ডিরেক্টররাও টেলিভিশনের অভিনেতা-অভিনেত্রী নিতে শুরু করেছে। যে যেখান থেকেই সিনেমা তৈরি করুক না কেন, কেউ চায় না খারাপ ছবি বানাতে। আমি এটা নিশ্চিত করে বলতে পারি। সবাই প্রাণপণে চেষ্টা করে তার সেরাটা দেওয়ার জন্য। তার ক্ষমতা দিয়ে সে তার ভালোটা বানানোর চেষ্টা করে।

তারপরও অনেক সমস্যা হচ্ছে। ভুলটা আসলে কোথায়?

হ্যাঁ, আমরা যেটা ভুল করি তা হলো একটা সিনেমার সব আমিই করব। সিনেমার গল্প, চিত্রনাট্য, সংলাপ, এডিটিং, গান, স্ক্রিপ্ট সবই আমিই করব। কারণ আমি সবই পারি। কখনো কখনো পারলে আমারই বোনকে দিয়ে নায়িকা, আমার পরিচিত একজনকে নায়ক বানিয়ে ফেলি। এই যে ‘আমি সংস্কৃতি’ এটা একটা বড় সমস্যা। আমরা ভালো গল্পের দিকে হাত পাতি না।

গল্পের তো খুবই সংকট বলা চলে…।

হ্যাঁ। যতক্ষণ একটা ভালো গল্প বা সত্যিকারের মৌলিক গল্প থেকে না নেব ততক্ষণ ভালো সিনেমা হবে না। আমার কাছে মনে হয় ভালো সিনেমা হওয়ার জন্য একটা ভালো গল্প প্রয়োজন। আমরা ভালো গল্পের কাছে যেতে চাই না। আমাদের একটা কাজ হচ্ছে অন্য দেশের সিনেমা থেকে একটু ভালো লাগলো, সঙ্গে সঙ্গে এটা কাট দিয়ে নিয়ে নেই। তামিল ছবি থেকে আমরা খুব নিতে পছন্দ করি। দেখেন ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, কিংবা ‘মনপুরা’র কাহিনি কিন্তু খুব সিম্পল। এমন কোনো গ্ল্যামারাস কিছুই দেখানো হয়নি এগুলোতে। নায়ক-নায়িকা কেউই খুব গ্ল্যামারাস না। টেকনোলজির ব্যাপারেও এই ছবিগুলো কোনো হাইটেক কিছু নয়। আর যদি বলেন গল্প সেটিও খুব হাই থট কিছু নয়। খুব সিম্পল গল্প। কিন্তু সেটা খুব টাচি গল্প ছিল। যেমন মনপুরার বেলায় যেটি ঘটেছে। সহজ সরল গল্পগুলোই মানুষকে বেশি টানে।

শুনেছি আমাদের এখানে সিনেমা হলে মুক্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সিন্ডিকেট কাজ করে। বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখেন?

সাম্প্রতিক সময়ে হয়েছে এটা। আমি এটা নিয়ে স্পষ্ট কিছু এখনো জানি না। সুতরাং না জেনে ব্যাখ্যাটা দিতে পারব না। আমি যেটা ফিল করি, ভালো কাজে সবাইকে এপ্রিসিয়েট করা উচিত। এখন প্রশ্ন হলো কোনটা ভালো কাজ? যেটা আপনার কাছে ভালো সেটা হয়ত আমার কাছে ভালো মনে হচ্ছে না। সিন্ডিকেট যারা করছে তাদের কাছে হয়ত ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ভালো ছবি না। আমি এই মুহূর্তে ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ বা ‘মনপুরা’র উদাহরণ দেব। যার দায়িত্ব ছবি হলে মুক্তি দেওয়ার, তিনি যদি বলেন পোস্টারে তো নায়িকার কিছুই দেখা যাচ্ছে না, অথবা বলেন পোস্টারটা দেখছেন? এটাকে তো ফিল্মই মনে হচ্ছে না। আমার এখন মনে হয়, কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের হাতে হলগুলো নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে অথবা হলগুলো তাদের কন্ট্রোলে আছে। তবে একটা বিষয় না বললেই নয়, হলের মালিকরাও আমাকে জানিয়েছে আমরা ছবিটা নিতে চাই কিন্তু নিতে পারছি না। ধরেন তারা ইমপ্রেসকে জানিয়েছে। হল মালিক আপনাকে বলছেন আপনার ছবিটি চাই। আবার যে পরিবেশক তিনি বলছেন আপনার ছবিটি জোর করেও তো দিতে পারছি না। হল মালিকরা তো নেয় না আমি কি করব? আপনি ছবি যাই বানান আপনার উচিত ছিল পোস্টারে এমন একটা ছবি দেওয়া, যেগুলোতে সবই দেখা যায় বিষয়টা থাকে। তখন খারাপ লাগে যিনি ছবি বানান তার। শোনা যায় ১০০টা বা ১৫০টা হলে মুক্তি পাচ্ছে। সত্যিকার অর্থে কয়টা হলে ব্যবসা হচ্ছে বা কয়টা হলে মুক্তি পাচ্ছে বলে আপনি মনে করেন? যাদের হাতে পরিবেশনটা আটকে আছে, তারাও চাইছেন এর থেকে বেরিয়ে আসতে। যারা ভুক্তভোগী তারাও চাইছেন। তারাও একত্রিত হচ্ছেন এবং পরিবেশনার চেষ্টা করছেন। আসলে খোলা মাঠে গোল দেওয়া খুব ইজি। যদি কম্পিটিটর থাকে তাহলে এখান থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব।

সিনেমা হলেরও সংকট, কোটি টাকা লগ্নি করে পাঁচ বা দশটি হলে মুক্তি দেওয়া হয়, এটাকে কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

সিনেমা হল ঠিক করতে হবে সরকারকে। সিনেমা হল ঠিক করতে বলতে আমি বলছি ডিজিটাল বাংলাদেশে ডিজিটালাইজড সিনেমা হল তৈরি করতে হবে। আমাদের দেশে যদি রেস্টুরেন্টে খেতে যাই, সেখানে মনে করেন কোনো লিফট নেই। আমাকে দোতলায় উঠতে হবে। তাহলে আমার যে ভাইটার বা বোনটার হাঁটার ক্ষমতা নেই, যে হুইল চেয়ারে চলাফেরা করে, সে কি ওখানে যাবে না? সে কীভাবে যাবে? তাহলে আমাদের নীতিমালাতেই কেন এমন নেই যে, একটা বিল্ডিং প্রতিবন্ধীদের চলাফেরার ব্যবস্থা থাকতে হবে। এটা না থাকলে বিল্ডিংয়ের নকশা পাস করা হবে না। এখন যে নতুন বহুতল মার্কেটগুলো হচ্ছে, সরকার চাইলে আইন করতে পারে ওখানে একটা সিনেমা হল রাখতেই হবে। এমন আরও অনেক নীতিমালা হতে পারে। যারা প্রচুর সিনেমা বানান, আমরা তাদের কাছে আহবান জানাতে পারি। আমরা ইম্প্রেসের কাছে আহবান জানাতে পারি। আপনাদের মাধ্যমে ইম্প্রেসকে বলছি তারা এতগুলো ছবি বানাচ্ছে, তারা চাইলে ঢাকার বাইরে পাঁচটা হল ঠিক করে দিতে পারে। বেঙ্গল গ্রুপ, বেঙ্গল ফাউন্ডেশন ওনারা চলচ্চিত্রের প্রতি আগ্রহী হয়েছেন। ওনারা ছবি বানানো শুরু করেছেন। তারা চাইলে ১০টা হল ঠিক করতে পারেন। এভাবে মিডিয়াতে যারা ব্যবসা করছে। স্কয়ার ব্যবসা করছে মিডিয়াকে ঘিরে, আরও অনেকেই করছে। ওনারা যদি চলচ্চিত্র নিয়ে ভাবেন, তাহলে আমাদের চলচ্চিত্র শিল্প দাঁড়িয়ে যাবে। সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে পাশাপাশি ওনাদেরকেও এগিয়ে আসতে হবে। যদি হলগুলো না বাঁচে তাহলে আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি বাঁচবে না।

পরিচালনায় আসার ভাবনা কখন থেকে?

চন্দ্রকথা সিনেমাতে যখন কাজ করি, তখন থেকেই মাথায় কাজ করত ফিল্ম ডিরেকশন দেব। এটার ভাবনা তখন থেকেই আমার মাথায় ঢুকে গেছে। শুরু থেকেই মনে হতো এটা ইন্টারেস্টিং। সেটে অনেক সময় হুমায়ূন আহমেদের সাথে আমার মিলত না। মানে তিনি যেভাবে ক্যামেরা রাখছেন আমার মনে হতো ওখানে না রেখে এখানে রেখে কাজটা করলে হয়ত ভালো হতো। মাঝেমধ্যে কৌতূহলবশত বলতাম ক্যামেরাটা এখানে না রেখে ওখানে রাখলে কেমন হতো? এখানে ক্লোজআপ নিলেন না কেন, এখানে ক্লোজআপটা নিলে ভালো হতো। শেষ হওয়ার পর আবার কৌতূহল থেকে জিজ্ঞেস করতাম। হুমায়ূন আহমেদ সব সময় আমার কৌতূহলের জবাব দিতেন। একদিন বলে বসলেন, আমার মনে হয় ডিরেকশন লাইনে তোমার খুব আগ্রহ। তাহলে একটা নাটক কর না, দেখি পারো কি না? প্রথম নাটকটা সেই সময়েই করেছি।

কী নাম ছিল ওটার?

পক্ষীরাজ।

কত সালে?

২০০৩ সালে।

তারপর থেকেই কি নিয়মিতই নাটকের ডিরেকশন দিচ্ছেন?

হ্যা, তখন থেকেই নিয়মিত কাজ করছি। ২০০৩ সালে ‘পক্ষীরাজ’র পর থেকে প্রতি বছর টানা কাজ করেছি। প্রতি বছর ৩ থেকে ৪টা নাটক করেছি। গত ১৩ বছরে মোট ৪০-৪৫টি নাটক ডিরেকশন দিয়েছি।

মূল গল্পের সঙ্গে কৃষ্ণপক্ষ সিনেমা কতটুকু মিল রাখতে পেরেছেন?

কৃষ্ণপক্ষ সিনেমাতে গল্পের সঙ্গে হুবহু মিল রাখার চেষ্টা করেছি এবং রেখেছি। আমি এর ক্লাইমেক্সটার একটু আগে সিনেমাটা শেষ করেছি। ওখানে চেঞ্জ করেছি বলব না। বইয়েতে যেখানে শেষ করা হয়েছে সিনেমাতে আমি তার একটু আগে শেষ করেছি। এটা অনেকে পছন্দ করেছে। হুমায়ূন আহমেদের একনিষ্ঠ ভক্তদের অনেকে আবার এটা অপছন্দ করেছে। কেন শেষ অংশ দেখানো হলো না। একটু ক্লিয়ার করে বলি, বইয়ে ছিল মুহিব চরিত্রটি মারা যায়। তারপর একটা পরিশিষ্টের মতো ব্যাপার ছিল যে, ২৫ বছর পর অরু এবং আব্রারে মেয়ের বিয়ে হচ্ছে এবং মুহিব যেমন হলুদ পাঞ্জাবি পরে বিয়ে করতে এসেছিল অরুর মেয়ের যে হাজব্যান্ড সেও ওরকম হলুদ পাঞ্জাবি পরে এসছে। যা দেখে অরুর কান্না পেয়ে যাবে। পুরনো স্মৃতিটুকু মনে পড়ে যায়। চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। আমি এই অংশটুকু দেখাব না। আমি দেখাতে চাইনি। প্রথমত, ফিল্মের ইন্ট্রাপ্রিয়েশন বইয়ের মতো কখনোই হবে না। ওয়ার্ল্ডে যত বই নিয়ে বিখ্যাত সিনেমা আছে, কোনোটাই কিন্তু একদম বইকে হুবহু কপি করে করা হয়নি। একদিনের হাজব্যান্ড মারা যাবার পর বাস্তবমুখী অরুকে বিয়ে করতে হয়েছে। সময়ের প্রয়োজনে অরুর বিয়ে হয়েছে। সন্তানাদি হয়েছে। সেই সন্তানের বিয়েতে দুই ফোঁটা চোখের জল ফেলবে এই জিনিসটা পরিচালকের পাশাপাশি দর্শক হিসেবে এটা আমি মানতেই পারিনি। ওই একদিনের বিয়ের সম্পর্কটা সারা জীবন লালন করবে? আমি চাইনি বা পছন্দ করিনি, অরু বিয়ে করে সংসারি হয়ে ২৫ বছর পরে মুহিবের জন্য চোখের পানি ফেলুক। মুহিব মারা গেছে এটাও কিন্তু দেখাইনি। আবার বেঁচে আছে এটাও দেখাইনি। শেষটা হয়েছে আইসিইউর ভিতরে। কোনো দর্শক যদি ভাবে মুহিব ফিরে আসবে তো ভাবুক। কোনো দর্শক যদি ভাবে মুহিব মারা যাচ্ছে তবে ভেবে নিক। সিনেমায় সব কিছু দেখাতে হয় না।

দর্শকের কেমন সাড়া পেলেন?

দর্শকের জায়গায় আমি খুবই সন্তুষ্ট। কারণ, আমরা বলছি ফিল্মের খারাপ সময় যাচ্ছে। এই খারাপ সময়ের মধ্যে এত কিছুর পরও ছবিটি মানুষ হলে গিয়ে দেখছে। হলগুলো কিন্তু হাউজফুল হচ্ছে। আমি নিজে পাবনার একটা হলে গিয়ে দেখেছি। সেখানে যে রিপোর্ট পেলাম, খুলনা থেকে যে রিপোর্ট পেলাম, যেখানে ৪-৫ বছর ধরে ফ্যামিলি আসত না সেখানে এই ছবিটি দেখতে সপরিবারে দর্শক এসেছে। সম্ভ্রান্ত পরিবারের লোকেরা সিনেমাটি দেখতে এসেছে। এই লেভেলের দর্শক আমরা অনেক দিন পাইনি। আমি দর্শকের জায়গায় সুখী।

এখন পর্যন্ত অনেক কিছু করেছেন, কোন কাজটা করতে সবচেয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?

পরিচালনা। আনন্দ নিয়েই কাজটা করি। এবার অন্য প্রসঙ্গে একটা কথা বলি, এই যে ছোটবেলা থেকে অনেক কিছুর সঙ্গে ইনভলভ ছিলাম, এই অনেক কিছু করাটা আমার পরিচালনার ক্ষেত্রে অনেক বেশি সাহায্য করেছে। আমি অনেক কিছুই করেছি বলেই সিনেমায় গানের পার্টটা বুঝি, নাচের পার্টটার মতো আরও অনেক বিষয় খুব সহজে করতে পারি। আমার যেহেতু পরিচালনায় কোনো পড়াশোনা করা হয়নি, ছোটবেলা থেকে নাচ, গান, অভিনয় করেছি, ছবি দেখেছি, এগুলোই পরবর্তী জীবনে কাজে লেগেছে। ।

সিনেমাও তো পাইরেসি হচ্ছে।

হ্যাঁ, এটা সত্য। আমার প্রচুর ভক্ত পাগল করে দিচ্ছে, কবে ইউটিউবে আসবে ‘কৃষ্ণপক্ষ’। যিনি বিদেশে থাকেন তিনি বলতে পারেন। কিন্তু যিনি দেশে থাকেন তিনি কেন অপেক্ষা করছেন ইউটিউবের জন্য? কেউ কেউ আবার বলছে আপু টেলিভিশনে কবে দেখাবে এটা? আমি প্রত্যেককে আলাদা আলাদা করে বলি, ভাই ছবিটা তো হলের জন্য বানানো, আপনি টেলিভিশনে দেখে কি বুঝবেন? সব জিনিসে তো একটা আনন্দ নেওয়ার ব্যাপার আছে। মনে করেন পুর্নেন্দু পত্রী বা এস এম সুলতানের একটা বড় ছবি স্ক্যান করে ছোট ট্যাবে পিডিএফ করলাম, তখন তো এস এম সুলতান আর এস এম সুলতান থাকল না।

সিনেমা নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা?

অনেক সিনেমা বানাব। এটা বানিয়েছি হুমায়ুন আহমেদকে সামনে রেখে। তিনি কিভাবে বানাতেন সেটা মাথায় রেখে। চেষ্টাই করিনি এখানে শাওনের কোনো সিগনেচার থাকুক।- সাপ্তাহিক এই সময়-এর সৌজন্যে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

হুমায়ূন আহমেদ সব সময় আমার কৌতূহলের জবাব দিতেন

আপডেট টাইম : ১২:৩২:৪২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ এপ্রিল ২০১৬

ছোটবেলা থেকেই হয়ে ওঠেন সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রিয়মুখ। ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ সিনেমার মাধ্যমে অভিনেত্রী হিসেবে জনপ্রিয়তা পান। অভিনয় ছাড়াও নৃত্যশিল্পী, গায়িকা, নির্মাতাসহ অনেক পরিচিতি তার। তিনি মেহের আফরোজ শাওন। প্রয়াত ঔপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী। সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে তার পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘কৃষ্ণপক্ষ’। এই সময়কে দেয়া এই সাক্ষাৎকারে নানা বিষয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সৈয়দ ঋয়াদ

যতটা জানি ছোটবেলায় আপনি শিশুদের সংগঠন নতুনকুঁড়িতে ছিলেন। তখন কি অভিনয়ও করতেন?

হ্যাঁ, আমি নতুনকুঁড়িতে ছিলাম। এর পাশাপাশি আমি তখন নাটকেও অভিনয় করতাম। ওই সময় নাচ-গানে পারদর্শী ছেলেমেয়েদেরই বিটিভিতে নেওয়া হতো। একটু চটপটে ছেলেমেয়েদের নেওয়া হতো। আমার প্রথম নাটক ‘স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা’, পরিচালক ছিলেন আলাউদ্দিন আহমেদ। তিনি নতুনকুঁড়িরও প্রযোজক ছিলেন। নতুনকুঁড়ি থেকেই তিনি আমাকে নিলেন। ওটাতে ভালো করার কারণে শিশু শিল্পীর চরিত্রগুলো আমাকে দিয়ে করানো শুরু করলেন। তারপর মামুনুর রশীদের ‘প্রভাত ঢাকা’ নাটকে কাজ করেছি। ’৯১ সালে নওয়াজেশ আলী খানের প্রোডাকশনে, হুমায়ূন আহমেদের লেখা ‘জননী’তে কাজ করি।

তখন কোন ক্লাসে পড়তেন?

তখন আমি ক্লাস ফাইভ বা সিক্সে পড়তাম।

এরপর আর থামেননি?

না। এরপর থেকে নাটক আর ক্লাস নিয়েই চলতে লাগল জীবন।

সেই সময় কোনো সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন?

‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ কিন্তু আমার প্রথম ছবি না। এটা অনেকেই জানে না। আমি সাত বছর বয়সে প্রথম সিনেমায় অভিনয় করি। ইবনে মিজান নামে খুব বিখ্যাত একজন পরিচালক ছিলেন। রাজা-রানীভিত্তিক সিনেমাগুলো বানাতেন তিনি। তার চলচ্চিত্রের জন্য কীভাবে যেন আমার ভাইকে পেলেন। নায়কের ছোটবেলার জন্য আমার ভাইকে কাস্টিং করলেন। দুই ভাইকে নিয়ে চলচ্চিত্র। আলাল-দুলাল। তাদেরকে সৎ মা জঙ্গলে পাঠিয়ে দেয়Ñ এরকম একটি গল্প ছিল সিনেমাটির। আলাল হলো সেই সময়ের বিখ্যাত শিশু শিল্পী চরিত্র পরিচালক গোলাম সোহরাব দোদুল। সেখানে আমার ভাই ছোট ভাইয়ের চরিত্রে আর দোদুল ভাই বড় ভাইয়ের চরিত্রে অভিনয় করে। এফডিসিতে শুটিং হয়। আমার মা সব সময় এফডিসিতে অভিনয়ের সময় ভাইয়াকে নিয়ে যেতেন। হঠাৎ আম্মুর কাছে প্রস্তাব দিল, আপনার মেয়েটা তো নাচতে পারে, এখানে নায়িকার ছোটবেলার একটা চরিত্র আছে, ওটা আপনার মেয়েকে দিয়ে করাতে চাই।

আপনার মা রাজি হয়ে গেলেন?

না, আম্মু তো আমাকে কোনোভাবেই সিনেমায় দিবেন না।

না দেয়ার কারণ?

কারণ শুটিং হবে কক্সবাজারে। এতে আমার স্কুল বন্ধ হয়ে যাবে। এখন দেখা গেল কক্সবাজারে আমার ভাইয়েরও শুটিং হবে। ওখানে মাকে যেতেই হবে। মাকে তিনি অনেকভাবেই বোঝালেন যে, যেহেতু আপনাকে যেতেই হবে, সঙ্গে মেয়েকেও নিয়ে যাবেন। তাহলেই তো হলো। আপনার জন্য আমরা প্লেনের টিকিট দেব। তখনকার দিনে কিন্তু এটা একটা বিশাল ব্যাপার। পুরো ইউনিটের মাত্র আমি, আমার মা, আমার ভাই, ডিরেক্টর এবং নৃত্য পরিচালক আমির হোসেন বাবু এই কয়জন প্লেনে গেলাম। এটা আমার জীবনে প্রথম প্লেন জার্নি । সিনেমাটার প্রথমে নাম ছিল ‘খুনের বদলে খুন’। পরে নাম পরিবর্তন করে ‘আলাল-দুলাল’ রাখা হলো। আমাকে শুটিংয়ে একটা গেরুয়া রঙের শাড়ি পরিয়ে দেওয়া হয়। আমার বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছেন শওকত আকবর। ছোটবেলায় আমরা গান গাই, ‘মন আমার দেহ ঘড়ি সন্ধান করি’। এই গান গাইতে গাইতে আমার পায়ের শট ধরা হয়। আমি যে পোশক পরেছিলাম ঠিক সেই পোশাক পরে দাঁড়িয়ে আছে খুব সুন্দরী একজন মহিলা। তিনি সুচরিতা। একদম একই রকম গেটআপে তিনি বসা। আমার যে শট নেওয়া হলো তারও সেই শট নেওয়া হলো। আমি তখনো জানি না আমি কত বিখ্যাত একজন মানুষের সঙ্গে কাজ করছি। ওটাই ছিল আমার প্রথম চলচ্চিত্র।

শ্রাবণ মেঘের দিনে কত সালে করলেন?

অনেক পরে, ১৯৯৯ সালে ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ সিনেমায় অভিনয় করি। এর মধ্যে আর কোনো সিনেমায় অভিনয় করিনি।

আপনি এ যাবৎ কটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন?

এ পর্যন্ত মোট ছয়টা সিনেমাতে অভিনয় করেছি। আলাল-দুলাল, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, শ্যামল ছায়া, আমার আছে জল।

কোনটিতে অভিনয় করে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছিল?

শ্রাবণ মেঘের দিন এবং চন্দ্রকথা আমার খুব ভালো লেগেছে। শ্যামল ছায়াও বেশ ভালো লেগেছে। দর্শক ওভাবে মনে রাখবে বা রেখেছে ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ সিনেমাটি। এটি বাংলাদেশের দর্শকদের হৃদয় স্পর্শ করেছে।

আপনার পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘কৃষ্ণপক্ষ’র পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই।

পরিকল্পনাটা হঠাৎ করেই, কোরবানির ঈদের এক বা দু দিন আগে পরিকল্পনা হলো। চ্যানেল আই থেকে আমাকে বলল, এবারের হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে আমরা নতুন কিছু করতে চাই। আমি বললাম কি? তারা বললেন, একটা ছবি করতে চাই। তো আপনি কি ছবিটা করতে পারবেন? তখন আমি হিসেব করে দেখলাম আমার হাতে সময় আছে এক মাস দশ দিন। এই চল্লিশ দিনের মধ্যে কি কি করতে হবে? গল্প বাছাই, স্ক্রিপ্ট তৈরি, চিত্রনাট্য, আর্টিস্ট নেওয়া, প্রি-প্রোডাকশন, লোকেশন, পোস্ট প্রোডাকশন অনেক কাজ। কীভাবে যেন ১৫ মিনিটের মাথায় বললাম করব, তবে আমি কিছু জিনিস চাই। আর্টিস্ট যাকে চাইব আপনারা জোগাড় করে দিবেন। তারা রাজি হলেন। আনুষঙ্গিক আরও কিছু জিনিস তাদের ম্যানেজ করে দিতে বললাম। তবে শুরু করার পর বোঝলাম যে এটা একেবারে অসম্ভব একটা কাজ। কারণ অনেক স্ক্রিপ্ট করা ছিল। কিন্তু ওই স্ক্রিপ্টগুলো পছন্দ করলাম না। প্রেমের গল্প নিয়ে কোনো ছবির স্ক্রিপ্ট করা ছিল না। ছিল কঠিন কঠিন ছবির স্ক্রিপ্ট। নির্বাসন, গুহা মানব ইত্যাদি। সবই কঠিন। ‘কৃষ্ণপক্ষ’ স্ক্রিপ্ট করতে বসে দেখলাম, আমি তো এর আগে কখনো স্ক্রিন প্লে করিনি। এটা খুব কঠিন জিনিস। ওই সময় সবচেয়ে বেশি মিস করছি হুমায়ূন আহমেদকে। চিত্রনাট্য করার ক্ষেত্রে। তিনি ভয়ংকর সুন্দর স্ক্রিপ্ট করতেন। তারপর মোটামুটি একটা স্ক্রিপ্ট দাঁড় করলাম। শুটিং স্পটে বহু রদবদল হয়েছে।

সিনেমাটির রিলিজ নিয়ে বিশেষ কোনো ঝামেলা তো পোহাতে হয়নি?

রিয়াজ ভাই অসুস্থ না হয়ে গেলে হয়ত বা ১৩ নভেম্বর মুক্তি দেওয়া সম্ভব ছিল। তার পর বলব আমি নিজেও পুরোপুরি তুষ্ট নই। মুক্তি পেয়েছে অবশেষে ২৬ ফেব্রুয়ারি। শুরু থেকে যদি জানতাম ২৬ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পাবে তাহলে চ্যালেঞ্জটা অন্যরকম হতো। কারণ কাজটা শুরু করেছি একটা টাইম লাইন রেখে। মানে সারা রাত কাজ করেছি। সারা রাত কাজ করলে এক সময় কাজের মান ফেইল করে। ক্যামেরা বারবার হ্যাঙ হয়ে যাচ্ছে। এমন করে প্রথম দিকে আমরা অনেক বেশি প্রেসার নিয়েছি। প্রেসার না নিয়ে যদি আর একটু সময় নিয়ে করতাম, তাহলে ডেফিনেটলি কাজটা ভালো হতো। প্রি-প্রোডাকশনে আমরা একদমই সময় নেইনি। ওখানে যদি আর একটু সময় নিতাম তাহলে আর একটু ভালো হতো। আমি স্ক্রিপ্ট করেছি মাত্র তিন দিনে। যদি এখানে ১০ দিন সময় দিতে পারতাম তাহলে ডেফিনেটলি অনেক বেটার কাজ হতো। সিনেমা অ্যাডিটিং শেষ করে দেখি ৩ ঘণ্টা ২০ মিনিট হয়েছে। এটা ৩ ঘণ্টার ছবি নয়। শেষে হলে প্রদর্শিত হয়েছে ২ ঘণ্টার চেয়ে কিছু বেশি। এর মানে অনেক সিকোয়েন্স আমাকে ফেলে দিতে হয়েছে। কিন্তু এই কাজগুলো তো কষ্ট করে করতে হয়েছে। আসলে ঘড়ি ধরে যে কাজটা করব সেই সময়টা আমি পাইনি। অভিজ্ঞতারও একটা ব্যাপার আছে। পরবর্তী সময়ে হয়ত ত্রিশ দিন নয়, তিন মাস ধরে প্রি-প্রোডাকশন করব।

একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে বাংলাদেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন হলো?

এখানে মানুষের চাওয়াগুলো খুব পজেটিভ। আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির একটা ভাগ আমরা করে ফেলেছি। একটি এফডিসিকেন্দ্রিক চলচ্চিত্র এবং দ্বিতীয়টি এর বাইরের বা ভিন্ন ঘরানার চলচ্চিত্র।

এমন ভাগ থাকা কি ঠিক?

না, উচিত না। যারা এফডিসিতে কাজ করেন তাদের দিক থেকেও ভাগটা আছে। তারা অনেক বছর ধরে একটা জায়গায় রোল করেছেন। তাদের সাম্রাজ্যে যখন বাইরে থেকে কেউ যাচ্ছে, তাদের উচিত ছিল ওয়েলকাম করে নেওয়া। কেউ ভালো করলে টিকে থাকবে, ভালো না করলে ঝরে যাবে। কিন্তু তারা ওয়েলকাম করেনি। অন্যদিকে আবার তারা যখন ওয়েলকাম করতে চেয়েছে আমরাও তাদের সহযোগিতা করিনি। কোনো কারণে এই দুইয়ের মধ্যে একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তবে এটা এখন আস্তে আস্তে অনেকাংশে কমে আসছে। কেন বলছি, কারণ এখন যারা এফডিসির বাইরে কাজ করে তারা এফডিসির আর্টিস্ট নিচ্ছে। আবার এফডিসির ডিরেক্টররাও টেলিভিশনের অভিনেতা-অভিনেত্রী নিতে শুরু করেছে। যে যেখান থেকেই সিনেমা তৈরি করুক না কেন, কেউ চায় না খারাপ ছবি বানাতে। আমি এটা নিশ্চিত করে বলতে পারি। সবাই প্রাণপণে চেষ্টা করে তার সেরাটা দেওয়ার জন্য। তার ক্ষমতা দিয়ে সে তার ভালোটা বানানোর চেষ্টা করে।

তারপরও অনেক সমস্যা হচ্ছে। ভুলটা আসলে কোথায়?

হ্যাঁ, আমরা যেটা ভুল করি তা হলো একটা সিনেমার সব আমিই করব। সিনেমার গল্প, চিত্রনাট্য, সংলাপ, এডিটিং, গান, স্ক্রিপ্ট সবই আমিই করব। কারণ আমি সবই পারি। কখনো কখনো পারলে আমারই বোনকে দিয়ে নায়িকা, আমার পরিচিত একজনকে নায়ক বানিয়ে ফেলি। এই যে ‘আমি সংস্কৃতি’ এটা একটা বড় সমস্যা। আমরা ভালো গল্পের দিকে হাত পাতি না।

গল্পের তো খুবই সংকট বলা চলে…।

হ্যাঁ। যতক্ষণ একটা ভালো গল্প বা সত্যিকারের মৌলিক গল্প থেকে না নেব ততক্ষণ ভালো সিনেমা হবে না। আমার কাছে মনে হয় ভালো সিনেমা হওয়ার জন্য একটা ভালো গল্প প্রয়োজন। আমরা ভালো গল্পের কাছে যেতে চাই না। আমাদের একটা কাজ হচ্ছে অন্য দেশের সিনেমা থেকে একটু ভালো লাগলো, সঙ্গে সঙ্গে এটা কাট দিয়ে নিয়ে নেই। তামিল ছবি থেকে আমরা খুব নিতে পছন্দ করি। দেখেন ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, কিংবা ‘মনপুরা’র কাহিনি কিন্তু খুব সিম্পল। এমন কোনো গ্ল্যামারাস কিছুই দেখানো হয়নি এগুলোতে। নায়ক-নায়িকা কেউই খুব গ্ল্যামারাস না। টেকনোলজির ব্যাপারেও এই ছবিগুলো কোনো হাইটেক কিছু নয়। আর যদি বলেন গল্প সেটিও খুব হাই থট কিছু নয়। খুব সিম্পল গল্প। কিন্তু সেটা খুব টাচি গল্প ছিল। যেমন মনপুরার বেলায় যেটি ঘটেছে। সহজ সরল গল্পগুলোই মানুষকে বেশি টানে।

শুনেছি আমাদের এখানে সিনেমা হলে মুক্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সিন্ডিকেট কাজ করে। বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখেন?

সাম্প্রতিক সময়ে হয়েছে এটা। আমি এটা নিয়ে স্পষ্ট কিছু এখনো জানি না। সুতরাং না জেনে ব্যাখ্যাটা দিতে পারব না। আমি যেটা ফিল করি, ভালো কাজে সবাইকে এপ্রিসিয়েট করা উচিত। এখন প্রশ্ন হলো কোনটা ভালো কাজ? যেটা আপনার কাছে ভালো সেটা হয়ত আমার কাছে ভালো মনে হচ্ছে না। সিন্ডিকেট যারা করছে তাদের কাছে হয়ত ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ভালো ছবি না। আমি এই মুহূর্তে ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ বা ‘মনপুরা’র উদাহরণ দেব। যার দায়িত্ব ছবি হলে মুক্তি দেওয়ার, তিনি যদি বলেন পোস্টারে তো নায়িকার কিছুই দেখা যাচ্ছে না, অথবা বলেন পোস্টারটা দেখছেন? এটাকে তো ফিল্মই মনে হচ্ছে না। আমার এখন মনে হয়, কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের হাতে হলগুলো নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে অথবা হলগুলো তাদের কন্ট্রোলে আছে। তবে একটা বিষয় না বললেই নয়, হলের মালিকরাও আমাকে জানিয়েছে আমরা ছবিটা নিতে চাই কিন্তু নিতে পারছি না। ধরেন তারা ইমপ্রেসকে জানিয়েছে। হল মালিক আপনাকে বলছেন আপনার ছবিটি চাই। আবার যে পরিবেশক তিনি বলছেন আপনার ছবিটি জোর করেও তো দিতে পারছি না। হল মালিকরা তো নেয় না আমি কি করব? আপনি ছবি যাই বানান আপনার উচিত ছিল পোস্টারে এমন একটা ছবি দেওয়া, যেগুলোতে সবই দেখা যায় বিষয়টা থাকে। তখন খারাপ লাগে যিনি ছবি বানান তার। শোনা যায় ১০০টা বা ১৫০টা হলে মুক্তি পাচ্ছে। সত্যিকার অর্থে কয়টা হলে ব্যবসা হচ্ছে বা কয়টা হলে মুক্তি পাচ্ছে বলে আপনি মনে করেন? যাদের হাতে পরিবেশনটা আটকে আছে, তারাও চাইছেন এর থেকে বেরিয়ে আসতে। যারা ভুক্তভোগী তারাও চাইছেন। তারাও একত্রিত হচ্ছেন এবং পরিবেশনার চেষ্টা করছেন। আসলে খোলা মাঠে গোল দেওয়া খুব ইজি। যদি কম্পিটিটর থাকে তাহলে এখান থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব।

সিনেমা হলেরও সংকট, কোটি টাকা লগ্নি করে পাঁচ বা দশটি হলে মুক্তি দেওয়া হয়, এটাকে কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

সিনেমা হল ঠিক করতে হবে সরকারকে। সিনেমা হল ঠিক করতে বলতে আমি বলছি ডিজিটাল বাংলাদেশে ডিজিটালাইজড সিনেমা হল তৈরি করতে হবে। আমাদের দেশে যদি রেস্টুরেন্টে খেতে যাই, সেখানে মনে করেন কোনো লিফট নেই। আমাকে দোতলায় উঠতে হবে। তাহলে আমার যে ভাইটার বা বোনটার হাঁটার ক্ষমতা নেই, যে হুইল চেয়ারে চলাফেরা করে, সে কি ওখানে যাবে না? সে কীভাবে যাবে? তাহলে আমাদের নীতিমালাতেই কেন এমন নেই যে, একটা বিল্ডিং প্রতিবন্ধীদের চলাফেরার ব্যবস্থা থাকতে হবে। এটা না থাকলে বিল্ডিংয়ের নকশা পাস করা হবে না। এখন যে নতুন বহুতল মার্কেটগুলো হচ্ছে, সরকার চাইলে আইন করতে পারে ওখানে একটা সিনেমা হল রাখতেই হবে। এমন আরও অনেক নীতিমালা হতে পারে। যারা প্রচুর সিনেমা বানান, আমরা তাদের কাছে আহবান জানাতে পারি। আমরা ইম্প্রেসের কাছে আহবান জানাতে পারি। আপনাদের মাধ্যমে ইম্প্রেসকে বলছি তারা এতগুলো ছবি বানাচ্ছে, তারা চাইলে ঢাকার বাইরে পাঁচটা হল ঠিক করে দিতে পারে। বেঙ্গল গ্রুপ, বেঙ্গল ফাউন্ডেশন ওনারা চলচ্চিত্রের প্রতি আগ্রহী হয়েছেন। ওনারা ছবি বানানো শুরু করেছেন। তারা চাইলে ১০টা হল ঠিক করতে পারেন। এভাবে মিডিয়াতে যারা ব্যবসা করছে। স্কয়ার ব্যবসা করছে মিডিয়াকে ঘিরে, আরও অনেকেই করছে। ওনারা যদি চলচ্চিত্র নিয়ে ভাবেন, তাহলে আমাদের চলচ্চিত্র শিল্প দাঁড়িয়ে যাবে। সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে পাশাপাশি ওনাদেরকেও এগিয়ে আসতে হবে। যদি হলগুলো না বাঁচে তাহলে আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি বাঁচবে না।

পরিচালনায় আসার ভাবনা কখন থেকে?

চন্দ্রকথা সিনেমাতে যখন কাজ করি, তখন থেকেই মাথায় কাজ করত ফিল্ম ডিরেকশন দেব। এটার ভাবনা তখন থেকেই আমার মাথায় ঢুকে গেছে। শুরু থেকেই মনে হতো এটা ইন্টারেস্টিং। সেটে অনেক সময় হুমায়ূন আহমেদের সাথে আমার মিলত না। মানে তিনি যেভাবে ক্যামেরা রাখছেন আমার মনে হতো ওখানে না রেখে এখানে রেখে কাজটা করলে হয়ত ভালো হতো। মাঝেমধ্যে কৌতূহলবশত বলতাম ক্যামেরাটা এখানে না রেখে ওখানে রাখলে কেমন হতো? এখানে ক্লোজআপ নিলেন না কেন, এখানে ক্লোজআপটা নিলে ভালো হতো। শেষ হওয়ার পর আবার কৌতূহল থেকে জিজ্ঞেস করতাম। হুমায়ূন আহমেদ সব সময় আমার কৌতূহলের জবাব দিতেন। একদিন বলে বসলেন, আমার মনে হয় ডিরেকশন লাইনে তোমার খুব আগ্রহ। তাহলে একটা নাটক কর না, দেখি পারো কি না? প্রথম নাটকটা সেই সময়েই করেছি।

কী নাম ছিল ওটার?

পক্ষীরাজ।

কত সালে?

২০০৩ সালে।

তারপর থেকেই কি নিয়মিতই নাটকের ডিরেকশন দিচ্ছেন?

হ্যা, তখন থেকেই নিয়মিত কাজ করছি। ২০০৩ সালে ‘পক্ষীরাজ’র পর থেকে প্রতি বছর টানা কাজ করেছি। প্রতি বছর ৩ থেকে ৪টা নাটক করেছি। গত ১৩ বছরে মোট ৪০-৪৫টি নাটক ডিরেকশন দিয়েছি।

মূল গল্পের সঙ্গে কৃষ্ণপক্ষ সিনেমা কতটুকু মিল রাখতে পেরেছেন?

কৃষ্ণপক্ষ সিনেমাতে গল্পের সঙ্গে হুবহু মিল রাখার চেষ্টা করেছি এবং রেখেছি। আমি এর ক্লাইমেক্সটার একটু আগে সিনেমাটা শেষ করেছি। ওখানে চেঞ্জ করেছি বলব না। বইয়েতে যেখানে শেষ করা হয়েছে সিনেমাতে আমি তার একটু আগে শেষ করেছি। এটা অনেকে পছন্দ করেছে। হুমায়ূন আহমেদের একনিষ্ঠ ভক্তদের অনেকে আবার এটা অপছন্দ করেছে। কেন শেষ অংশ দেখানো হলো না। একটু ক্লিয়ার করে বলি, বইয়ে ছিল মুহিব চরিত্রটি মারা যায়। তারপর একটা পরিশিষ্টের মতো ব্যাপার ছিল যে, ২৫ বছর পর অরু এবং আব্রারে মেয়ের বিয়ে হচ্ছে এবং মুহিব যেমন হলুদ পাঞ্জাবি পরে বিয়ে করতে এসেছিল অরুর মেয়ের যে হাজব্যান্ড সেও ওরকম হলুদ পাঞ্জাবি পরে এসছে। যা দেখে অরুর কান্না পেয়ে যাবে। পুরনো স্মৃতিটুকু মনে পড়ে যায়। চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। আমি এই অংশটুকু দেখাব না। আমি দেখাতে চাইনি। প্রথমত, ফিল্মের ইন্ট্রাপ্রিয়েশন বইয়ের মতো কখনোই হবে না। ওয়ার্ল্ডে যত বই নিয়ে বিখ্যাত সিনেমা আছে, কোনোটাই কিন্তু একদম বইকে হুবহু কপি করে করা হয়নি। একদিনের হাজব্যান্ড মারা যাবার পর বাস্তবমুখী অরুকে বিয়ে করতে হয়েছে। সময়ের প্রয়োজনে অরুর বিয়ে হয়েছে। সন্তানাদি হয়েছে। সেই সন্তানের বিয়েতে দুই ফোঁটা চোখের জল ফেলবে এই জিনিসটা পরিচালকের পাশাপাশি দর্শক হিসেবে এটা আমি মানতেই পারিনি। ওই একদিনের বিয়ের সম্পর্কটা সারা জীবন লালন করবে? আমি চাইনি বা পছন্দ করিনি, অরু বিয়ে করে সংসারি হয়ে ২৫ বছর পরে মুহিবের জন্য চোখের পানি ফেলুক। মুহিব মারা গেছে এটাও কিন্তু দেখাইনি। আবার বেঁচে আছে এটাও দেখাইনি। শেষটা হয়েছে আইসিইউর ভিতরে। কোনো দর্শক যদি ভাবে মুহিব ফিরে আসবে তো ভাবুক। কোনো দর্শক যদি ভাবে মুহিব মারা যাচ্ছে তবে ভেবে নিক। সিনেমায় সব কিছু দেখাতে হয় না।

দর্শকের কেমন সাড়া পেলেন?

দর্শকের জায়গায় আমি খুবই সন্তুষ্ট। কারণ, আমরা বলছি ফিল্মের খারাপ সময় যাচ্ছে। এই খারাপ সময়ের মধ্যে এত কিছুর পরও ছবিটি মানুষ হলে গিয়ে দেখছে। হলগুলো কিন্তু হাউজফুল হচ্ছে। আমি নিজে পাবনার একটা হলে গিয়ে দেখেছি। সেখানে যে রিপোর্ট পেলাম, খুলনা থেকে যে রিপোর্ট পেলাম, যেখানে ৪-৫ বছর ধরে ফ্যামিলি আসত না সেখানে এই ছবিটি দেখতে সপরিবারে দর্শক এসেছে। সম্ভ্রান্ত পরিবারের লোকেরা সিনেমাটি দেখতে এসেছে। এই লেভেলের দর্শক আমরা অনেক দিন পাইনি। আমি দর্শকের জায়গায় সুখী।

এখন পর্যন্ত অনেক কিছু করেছেন, কোন কাজটা করতে সবচেয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?

পরিচালনা। আনন্দ নিয়েই কাজটা করি। এবার অন্য প্রসঙ্গে একটা কথা বলি, এই যে ছোটবেলা থেকে অনেক কিছুর সঙ্গে ইনভলভ ছিলাম, এই অনেক কিছু করাটা আমার পরিচালনার ক্ষেত্রে অনেক বেশি সাহায্য করেছে। আমি অনেক কিছুই করেছি বলেই সিনেমায় গানের পার্টটা বুঝি, নাচের পার্টটার মতো আরও অনেক বিষয় খুব সহজে করতে পারি। আমার যেহেতু পরিচালনায় কোনো পড়াশোনা করা হয়নি, ছোটবেলা থেকে নাচ, গান, অভিনয় করেছি, ছবি দেখেছি, এগুলোই পরবর্তী জীবনে কাজে লেগেছে। ।

সিনেমাও তো পাইরেসি হচ্ছে।

হ্যাঁ, এটা সত্য। আমার প্রচুর ভক্ত পাগল করে দিচ্ছে, কবে ইউটিউবে আসবে ‘কৃষ্ণপক্ষ’। যিনি বিদেশে থাকেন তিনি বলতে পারেন। কিন্তু যিনি দেশে থাকেন তিনি কেন অপেক্ষা করছেন ইউটিউবের জন্য? কেউ কেউ আবার বলছে আপু টেলিভিশনে কবে দেখাবে এটা? আমি প্রত্যেককে আলাদা আলাদা করে বলি, ভাই ছবিটা তো হলের জন্য বানানো, আপনি টেলিভিশনে দেখে কি বুঝবেন? সব জিনিসে তো একটা আনন্দ নেওয়ার ব্যাপার আছে। মনে করেন পুর্নেন্দু পত্রী বা এস এম সুলতানের একটা বড় ছবি স্ক্যান করে ছোট ট্যাবে পিডিএফ করলাম, তখন তো এস এম সুলতান আর এস এম সুলতান থাকল না।

সিনেমা নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা?

অনেক সিনেমা বানাব। এটা বানিয়েছি হুমায়ুন আহমেদকে সামনে রেখে। তিনি কিভাবে বানাতেন সেটা মাথায় রেখে। চেষ্টাই করিনি এখানে শাওনের কোনো সিগনেচার থাকুক।- সাপ্তাহিক এই সময়-এর সৌজন্যে।