উৎপাদনের সঠিক তথ্যের অভাবে ম্লান হচ্ছে অর্জন

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশের কৃষি খাতের অর্জন বেশ ঈর্ষণীয় হলেও সঠিক পরিসংখ্যানের ঘাটতিতে সেই অর্জন ম্লান হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বক্তারা। তারা বলেন, বাজারে কৃষি পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। কিন্তু সেই পণ্যের উত্পাদনের সঠিক তথ্যের অভাবে আমদানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হয়।

ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হয় ভোক্তাদের। বক্তারা বর্তমানের কৃষির অর্জন ধরে রাখতে পরিসংখ্যান আরো সঠিক ও দ্রুত প্রকাশের দাবি জানান।

গতকাল রবিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশের ৫০ বছর কৃষির রূপান্তর ও অর্জন’ শীর্ষক কৃষি সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরাম (বিএজেএফ) ও বণিক বার্তা যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করে।

দুই অধিবেশনে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক ও বিশেষ অতিথি ছিলেন ইউএসএআইডি বাংলাদেশ-এর মিশন ডিরেক্টর ক্যাথরিন ডেভিস স্টিভেন্স ও এফএও-এর কান্ট্রি রিপ্রেজেনটিভ রবার্ট ডি সিম্পসন। দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, গত বছর ১ কোটি ৬ লাখ টন আলু উত্পাদন হয়েছিল। আমাদের চাহিদার কথা বলা হয়, ৭০ থেকে ৭৫ লাখ টন। এ হিসাবে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টন আলু বাড়তি থাকার কথা। কিন্তু সে সময় আলুর কেজি ৪০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। আমরা বুঝতে পারিনি প্রকৃতপক্ষে আমাদের উত্পাদন কম হয়েছে না চাহিদা বেশি ছিল। সঠিক পরিসংখ্যানের অভাবে হিসাবটা আমাদের সঠিকভাবে আসে নাই। সেজন্য তখন রপ্তানির সিদ্ধান্তও নেওয়া যায়নি। তিনি বলেন, দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২৮ লাখ টনের মতো। এর বিপরীতে আমাদের উত্পাদন হয়েছে ৩২ লাখ টনের বেশি। তারপরও আমদানি করতে হয়। কারণ মোট উত্পাদিত পেঁয়াজের প্রায় ২০ ভাগ নষ্ট হয়ে যায়। আবার আমদানিকৃত পেঁয়াজের ৯০ ভাগ আসে ভারত থেকে। তাই ভারতে যখন সমস্যা তৈরি হয় আমাদের দেশেও সমস্যা দেখা দেয়। এখানে আমাদের উত্পাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি চাহিদার সঠিক হিসাবটাও থাকা দরকার।

কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ পুষ্টিকর ও নিরাপদ খাদ্যের জোগান দেওয়া এবং কৃষির আধুনিকায়ন করা। থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম প্রক্রিয়াজাত কৃষি পণ্য রপ্তানি করে বড় আয় করে। কিন্তু আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। এ জন্যে কৃষির আধুনিকায়নের মাধ্যমে উত্পাদন বাড়াতে হবে।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, আমাদের কৃষি অনেক দূর এগোলেও এখনো আমরা ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডসহ বেশ কিছু দেশের তুলনায় অনেক পিছিয়ে আছি। আমরা যখন হেক্টরপ্রতি ২.৪৪ টন চাল উত্পাদন করছি সেখানে একই পরিমাণ জমিতে ভিয়েতনাম ৫.৯ টন চাল উত্পাদন করছে। অর্থাত্ আমরা প্রযুক্তিগতভাবে অনেক পিছিয়ে আছি। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে আমাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে উত্পাদনশীলতা দ্বিগুণ করতে হবে। তিনি বলেন, বাজারে কোনো কিছুর দাম বাড়লেই মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যের কথা বলা হয়। কিন্তু এটা ঠিক না।

বিশেষ করে কৃষিপণ্যের বেলায়। কারণ, এখানে সিন্ডিকেট করা কঠিন। দেখা যাবে, ঐ পণ্যের উত্পাদন কম হয়েছে। তিনি বলেন, মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে দাম বেঁধে দেওয়া ঠিক না। ক্ষুদ্রায়তনের কৃষি দিয়ে আমরা খুব বেশি দূর যেতে পারব না। বাণিজ্যিকীকরণে না যেতে পারলে আমাদের ক্ষুদ্রায়তনের কৃষিতে বিমা সুবিধা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না

অনুষ্ঠানে দুই অধিবেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম। আলোচনায় অংশ নেন মাল্টি মোড গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, এসিআই এগ্রিবিজনেস-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী ড. এফ এইচ আনসারী, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান, আকিজ গ্রুপের চেয়ারম্যান শেখ নাসির উদ্দিন, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা ও আফতাব বহুমুখী ফার্মস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু লুেফ ফজলে রহিম খান প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর