ঢাকা ১০:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
ইটনায় জাতীয় পরিচয়পত্র পরিষেবা স্থানান্তর ও কূট পরিকল্পনার বিরুদ্ধে মানববন্ধন ইটনায় এ প্লাস ক্যাম্পেইন অবহিত করন সভা অনুষ্ঠিত ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতে যেসব শর্ত দিলেন পুতিন রান্না শেখাচ্ছেন পড়শী, ঈদে দেখা যাবে অভিনয় আর গানে শিমের রাজ্য সীতাকুণ্ড ২১০ কোটি টাকার শিম উৎপাদন, কৃষকের হাসি জাতিসংঘ, মহাসচিব, ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ ঢাকায় আসছেন জাতিসংঘের মহাসচিব হাসপাতাল থেকে শিশু চুরি অবশেষে মায়ের কোলে ফিরল সায়ান হরেদরে সবাইকে শাহবাগী বলা বন্ধ করতে হবে: মাহফুজ আলম পেঁয়াজের দাম না পেয়ে লোকসানের শঙ্কায় পাবনার চাষিরা পাচারকালে নারী শিশুসহ ১৮ রোহিঙ্গা উদ্ধার, দালাল আটক

বিএনপি পুনর্গঠনে বাধা প্রভাবশালী নেতারা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:১৪:৩২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২১
  • ১৬৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আগামীদিনের আন্দোলনকে সামনে রেখে সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর দিকে গুরুত্ব দিয়েছে বিএনপি। ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে তৃণমূলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ঢেলে সাজানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাইকমান্ড। কাউন্সিলের মাধ্যমে সব কমিটি করতে কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া।

কিন্তু এ ক্ষেত্রে বড় বাধা প্রভাবশালী নেতারা। এলাকায় আধিপত্য ধরে রাখতে যে কোনো মূল্যে নিজে কিংবা অনুসারীদের শীর্ষ নেতৃত্বে আনতে মরিয়া তারা। ফলে বেশিরভাগ জেলার নেতৃত্বে ঘুরেফিরে আসছে একই মুখ। অতীতে আন্দোলনসহ দলীয় কর্মকাণ্ডে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ থাকার পরও নেতৃত্বের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না।

আবার এক নেতার এক পদ কার্যকরেও বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন এসব প্রভাবশালী নেতা। বারবার সতর্ক করার পরও তারা একাধিক পদ আঁকড়ে ধরে আছেন। এতে একদিকে যেমন নেতৃত্বের বিকাশ হচ্ছে না পাশাপাশি দলে আসছে না সাংগঠনিক গতিও। এমন পরিস্থিতিতে যারা দীর্ঘদিন তৃণমূলে একই পদে আছেন তাদের পরিবর্তে যোগ্য ও ত্যাগীদের শীর্ষ পদে আনার জোর দাবি জানাচ্ছেন সব স্তরের নেতাকর্মী। কাউন্সিলের মাধ্যমে দল পুনর্গঠন করা হলেই নেতৃত্বে পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন তারা।

কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির ৮১টি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে। এর মধ্যে ৩৯টি জেলায় আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১০টি জেলায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক থাকলেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি আছে ৩১টি। ফরিদপুর ও লক্ষ্মীপুরের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছিল। শুক্রবার লক্ষ্মীপুর জেলার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।

জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহাজাহান বলেন, আগামীদিনের আন্দোলনকে ঘিরে পুরোদমে শুরু হয়েছে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া। বিগত সময়ে যারা রাজপথে ছিলেন তাদেরকেই শীর্ষ নেতৃত্বে আনা হবে। সুবিধাবাদী কেউ নেতৃত্বে আসতে পারবেন না। এবার প্রভাবশালীদের কারণে পুনর্গঠন থমকে যাওয়ারও সম্ভাবনা নেই। কারণ, এ ব্যাপারে হাইকমান্ড বেশ কঠোর।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কিছু এলাকায় একই ব্যক্তি টানা নেতৃত্বে আসছে এটা সত্যি। কিন্তু এতে দলের হাইকমান্ড বা নীতিনির্ধারকদের কোনো হাত নেই। কাউন্সিলররা যদি তাদের চায় তাহলে তো আমরা কিছু করতে পারি না। তবে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে নেতৃত্বের বিকাশ। নতুন নেতৃত্ব আসলে দলও সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হয়।

শাহজাহান বলেন, আমাদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এক নেতা একটির বেশি পদে থাকতে পারবেন না। অনেকেই একাধিক পদ ছেড়ে দিয়েছেন। আমি নিজেও নোয়াখালী জেলার সভাপতির পদ ছেড়ে দিয়েছি। যারা এখনো একাধিক পদে আছেন তারা নিশ্চয়ই দলের সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন।

সম্প্রতি বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও পেশাজীবীর সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করে বিএনপির হাইকমান্ড। এসব বৈঠকে ঘুরেফিরে দল পুনর্গঠনেই গুরুত্ব দেওয়া হয়। তবে সেই নেতৃত্ব হতে হবে আন্দোলনমুখী। অতীতের ব্যর্থরা যাতে শীর্ষ পদে আসতে না পারে সে ব্যাপারে হাইকমান্ডকে সতর্ক থাকার পরামর্শও দেন তারা। পাশাপাশি নেতৃত্বের বিকাশে এক নেতার এক পদ কার্যকরে আরও কঠোর হওয়ার পক্ষে মত দেন।

দলের পুনর্গঠন নিয়ে সম্প্রতি সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ওই বৈঠকে তৃণমূল পুনর্গঠনে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সবার মতামত নেওয়ার পর ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে তৃণমূলের সব মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি কাউন্সিলের মাধ্যমে পুনর্গঠনের নির্দেশ দেন তারেক রহমান। এ লক্ষ্যে সাংগঠনিক সম্পাদকদের একটি ‘ওয়ার্ক শিট’ তৈরি করতে বলা হয়। তাতে কোনো প্রক্রিয়া কিভাবে পুনর্গঠন করা হবে তা বিস্তারিত তুলে ধরতে বলা হয়েছে।

একইসঙ্গে তৃণমূলে যাতে যোগ্য ও ত্যাগীরা নেতৃত্বে আসে সেজন্য কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কাউন্সিল সম্ভব না হলে ন্যূনতম কর্মিসভা করতে হবে। কোনোমতেই পকেট কমিটি করা যাবে না। হাইকমান্ডের এমন নির্দেশ পেয়ে সংশ্লিষ্ট নেতারা জেলা সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। জেলা নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করে সুবিধাজনক সময় কাউন্সিলের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হবে।

এদিকে ডিসেম্বরের মধ্যে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শেষ করার সিদ্ধান্তে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে উদ্দীপনা। নতুন কমিটিতে পদ পেতে শুরু করছেন লবিং। ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের বাসায় বাসায় যাচ্ছেন অনেকে। প্রভাবশালী নেতারাও বসে নেই।

হাইকমান্ডকে ম্যানেজ করে ধরে রাখতে চাচ্ছেন নিজেদের আধিপত্য। কোনো কোনো জেলায় গোপনে ভোটাভুটি হলেও সেখানে হেরে যাচ্ছেন প্রভাবশালীরা। কিন্তু তৃণমূলের মতকে উপেক্ষা করে ভোটে হেরেও জেলার নেতৃত্বে আসছেন অনেকে। এক্ষেত্রে হাইকমান্ডও কঠোর সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না। প্রভাবশালীদের কাছে অনেকটা জিম্মি।

শুধু কমিটি পুনর্গঠন নয় এক নেতার এক পদ কার্যকরেও বাধা প্রভাবশালীরা। কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষণার পর যাদের একাধিক পদ রয়েছে তাদের একটি রেখে বাকি পদ ছেড়ে দিতে বারবার নির্দেশ দেওয়া হয়। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কয়েক নেতা হাইকমান্ডের এ নির্দেশ মেনে একাধিক পদ ছেড়ে দেন। কিন্তু প্রভাবশালী নেতারা দীর্ঘদিন কেন্দ্র ও জেলার নেতৃত্বে বহাল রয়েছেন।

সম্প্রতি তাদের একাধিক পদ ছেড়ে দিতে ফের কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এসব নেতারা নানা কৌশলে পদ আঁকড়ে ধরে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন। কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্বের হাতে জেলার দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। কিন্তু নানা কৌশলে তারা জেলার কাউন্সিল আটকে রাখছেন।

তবে দলের একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, এবার একাধিক পদধারীরা পার পাবেন না। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন-যদি স্বেচ্ছায় তারা পদ না ছাড়েন তবে চিঠি দিয়ে তাদের সরিয়ে দেওয়া হবে। হাইকমান্ডের এমন কঠোর মনোভাব বুঝতে পেরে প্রভাবশালী নেতারা একাধিক পদ ছেড়ে দেওয়ার সুযোগ খুঁজছেন।

২৫ আগস্ট ঘোষণা করা হয় মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি। আগের সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতনকে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব করে এ কমিটি দেওয়া হয়। পুরোনোদের ফের নেতৃত্বে আনায় জেলার বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীর মধ্যে সৃষ্টি হয় ক্ষোভ। কেন্দ্র ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে গঠন করা হয়েছে পালটা কমিটি। ২ সেপ্টেম্বর মুন্সীগঞ্জ প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কমিটি ঘোষণা করা হয়।

বিদ্রোহী কমিটির আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম মাসুম বলেন, যারা পাঁচ বছরে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কোনো কমিটি করতে পারেনি তাদেরকেই আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব করে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। বিগত সময়ে যারা রাজপথে ছিলেন তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। এভাবে ঘুরেফিরে একইমুখ এলে নেতৃত্বের বিকাশ কিভাবে হবে।

২৮ সেপ্টেম্বর ঘোষণা করা হয় মানিকগঞ্জ জেলা কমিটি। এতে সভাপতি করা হয়েছে আফরোজা খান রিতা ও সাধারণ সম্পাদক এসএ কবির জিন্নাহকে। এর আগেও জেলার সভাপতি ছিলেন রিতা। কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব গঠন হয়েছে বলে দাবি করা হলেও এর পেছনে প্রভাবশালীদের হাত রয়েছে বলে জানা গেছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ইটনায় জাতীয় পরিচয়পত্র পরিষেবা স্থানান্তর ও কূট পরিকল্পনার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

বিএনপি পুনর্গঠনে বাধা প্রভাবশালী নেতারা

আপডেট টাইম : ১০:১৪:৩২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আগামীদিনের আন্দোলনকে সামনে রেখে সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর দিকে গুরুত্ব দিয়েছে বিএনপি। ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে তৃণমূলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ঢেলে সাজানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাইকমান্ড। কাউন্সিলের মাধ্যমে সব কমিটি করতে কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া।

কিন্তু এ ক্ষেত্রে বড় বাধা প্রভাবশালী নেতারা। এলাকায় আধিপত্য ধরে রাখতে যে কোনো মূল্যে নিজে কিংবা অনুসারীদের শীর্ষ নেতৃত্বে আনতে মরিয়া তারা। ফলে বেশিরভাগ জেলার নেতৃত্বে ঘুরেফিরে আসছে একই মুখ। অতীতে আন্দোলনসহ দলীয় কর্মকাণ্ডে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ থাকার পরও নেতৃত্বের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না।

আবার এক নেতার এক পদ কার্যকরেও বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন এসব প্রভাবশালী নেতা। বারবার সতর্ক করার পরও তারা একাধিক পদ আঁকড়ে ধরে আছেন। এতে একদিকে যেমন নেতৃত্বের বিকাশ হচ্ছে না পাশাপাশি দলে আসছে না সাংগঠনিক গতিও। এমন পরিস্থিতিতে যারা দীর্ঘদিন তৃণমূলে একই পদে আছেন তাদের পরিবর্তে যোগ্য ও ত্যাগীদের শীর্ষ পদে আনার জোর দাবি জানাচ্ছেন সব স্তরের নেতাকর্মী। কাউন্সিলের মাধ্যমে দল পুনর্গঠন করা হলেই নেতৃত্বে পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন তারা।

কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির ৮১টি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে। এর মধ্যে ৩৯টি জেলায় আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১০টি জেলায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক থাকলেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি আছে ৩১টি। ফরিদপুর ও লক্ষ্মীপুরের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছিল। শুক্রবার লক্ষ্মীপুর জেলার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।

জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহাজাহান বলেন, আগামীদিনের আন্দোলনকে ঘিরে পুরোদমে শুরু হয়েছে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া। বিগত সময়ে যারা রাজপথে ছিলেন তাদেরকেই শীর্ষ নেতৃত্বে আনা হবে। সুবিধাবাদী কেউ নেতৃত্বে আসতে পারবেন না। এবার প্রভাবশালীদের কারণে পুনর্গঠন থমকে যাওয়ারও সম্ভাবনা নেই। কারণ, এ ব্যাপারে হাইকমান্ড বেশ কঠোর।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কিছু এলাকায় একই ব্যক্তি টানা নেতৃত্বে আসছে এটা সত্যি। কিন্তু এতে দলের হাইকমান্ড বা নীতিনির্ধারকদের কোনো হাত নেই। কাউন্সিলররা যদি তাদের চায় তাহলে তো আমরা কিছু করতে পারি না। তবে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে নেতৃত্বের বিকাশ। নতুন নেতৃত্ব আসলে দলও সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হয়।

শাহজাহান বলেন, আমাদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এক নেতা একটির বেশি পদে থাকতে পারবেন না। অনেকেই একাধিক পদ ছেড়ে দিয়েছেন। আমি নিজেও নোয়াখালী জেলার সভাপতির পদ ছেড়ে দিয়েছি। যারা এখনো একাধিক পদে আছেন তারা নিশ্চয়ই দলের সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন।

সম্প্রতি বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও পেশাজীবীর সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করে বিএনপির হাইকমান্ড। এসব বৈঠকে ঘুরেফিরে দল পুনর্গঠনেই গুরুত্ব দেওয়া হয়। তবে সেই নেতৃত্ব হতে হবে আন্দোলনমুখী। অতীতের ব্যর্থরা যাতে শীর্ষ পদে আসতে না পারে সে ব্যাপারে হাইকমান্ডকে সতর্ক থাকার পরামর্শও দেন তারা। পাশাপাশি নেতৃত্বের বিকাশে এক নেতার এক পদ কার্যকরে আরও কঠোর হওয়ার পক্ষে মত দেন।

দলের পুনর্গঠন নিয়ে সম্প্রতি সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ওই বৈঠকে তৃণমূল পুনর্গঠনে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সবার মতামত নেওয়ার পর ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে তৃণমূলের সব মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি কাউন্সিলের মাধ্যমে পুনর্গঠনের নির্দেশ দেন তারেক রহমান। এ লক্ষ্যে সাংগঠনিক সম্পাদকদের একটি ‘ওয়ার্ক শিট’ তৈরি করতে বলা হয়। তাতে কোনো প্রক্রিয়া কিভাবে পুনর্গঠন করা হবে তা বিস্তারিত তুলে ধরতে বলা হয়েছে।

একইসঙ্গে তৃণমূলে যাতে যোগ্য ও ত্যাগীরা নেতৃত্বে আসে সেজন্য কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কাউন্সিল সম্ভব না হলে ন্যূনতম কর্মিসভা করতে হবে। কোনোমতেই পকেট কমিটি করা যাবে না। হাইকমান্ডের এমন নির্দেশ পেয়ে সংশ্লিষ্ট নেতারা জেলা সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। জেলা নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করে সুবিধাজনক সময় কাউন্সিলের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হবে।

এদিকে ডিসেম্বরের মধ্যে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শেষ করার সিদ্ধান্তে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে উদ্দীপনা। নতুন কমিটিতে পদ পেতে শুরু করছেন লবিং। ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের বাসায় বাসায় যাচ্ছেন অনেকে। প্রভাবশালী নেতারাও বসে নেই।

হাইকমান্ডকে ম্যানেজ করে ধরে রাখতে চাচ্ছেন নিজেদের আধিপত্য। কোনো কোনো জেলায় গোপনে ভোটাভুটি হলেও সেখানে হেরে যাচ্ছেন প্রভাবশালীরা। কিন্তু তৃণমূলের মতকে উপেক্ষা করে ভোটে হেরেও জেলার নেতৃত্বে আসছেন অনেকে। এক্ষেত্রে হাইকমান্ডও কঠোর সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না। প্রভাবশালীদের কাছে অনেকটা জিম্মি।

শুধু কমিটি পুনর্গঠন নয় এক নেতার এক পদ কার্যকরেও বাধা প্রভাবশালীরা। কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষণার পর যাদের একাধিক পদ রয়েছে তাদের একটি রেখে বাকি পদ ছেড়ে দিতে বারবার নির্দেশ দেওয়া হয়। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কয়েক নেতা হাইকমান্ডের এ নির্দেশ মেনে একাধিক পদ ছেড়ে দেন। কিন্তু প্রভাবশালী নেতারা দীর্ঘদিন কেন্দ্র ও জেলার নেতৃত্বে বহাল রয়েছেন।

সম্প্রতি তাদের একাধিক পদ ছেড়ে দিতে ফের কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এসব নেতারা নানা কৌশলে পদ আঁকড়ে ধরে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন। কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্বের হাতে জেলার দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। কিন্তু নানা কৌশলে তারা জেলার কাউন্সিল আটকে রাখছেন।

তবে দলের একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, এবার একাধিক পদধারীরা পার পাবেন না। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন-যদি স্বেচ্ছায় তারা পদ না ছাড়েন তবে চিঠি দিয়ে তাদের সরিয়ে দেওয়া হবে। হাইকমান্ডের এমন কঠোর মনোভাব বুঝতে পেরে প্রভাবশালী নেতারা একাধিক পদ ছেড়ে দেওয়ার সুযোগ খুঁজছেন।

২৫ আগস্ট ঘোষণা করা হয় মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি। আগের সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতনকে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব করে এ কমিটি দেওয়া হয়। পুরোনোদের ফের নেতৃত্বে আনায় জেলার বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীর মধ্যে সৃষ্টি হয় ক্ষোভ। কেন্দ্র ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে গঠন করা হয়েছে পালটা কমিটি। ২ সেপ্টেম্বর মুন্সীগঞ্জ প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কমিটি ঘোষণা করা হয়।

বিদ্রোহী কমিটির আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম মাসুম বলেন, যারা পাঁচ বছরে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কোনো কমিটি করতে পারেনি তাদেরকেই আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব করে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। বিগত সময়ে যারা রাজপথে ছিলেন তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। এভাবে ঘুরেফিরে একইমুখ এলে নেতৃত্বের বিকাশ কিভাবে হবে।

২৮ সেপ্টেম্বর ঘোষণা করা হয় মানিকগঞ্জ জেলা কমিটি। এতে সভাপতি করা হয়েছে আফরোজা খান রিতা ও সাধারণ সম্পাদক এসএ কবির জিন্নাহকে। এর আগেও জেলার সভাপতি ছিলেন রিতা। কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব গঠন হয়েছে বলে দাবি করা হলেও এর পেছনে প্রভাবশালীদের হাত রয়েছে বলে জানা গেছে।