হাওর বার্তা ডেস্কঃ ৬ অক্টোবর, বিশ্ব সেরিব্রাল পালসি দিবস। প্রতি বছর সারাবিশ্বে এই দিনে পালন করা হয় সেরিব্রাল পালসি দিবস। এই দিনের লক্ষ্য হলো সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত মানুষদের সমান অধিকার ও সুযোগ প্রদান করা। সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের পারিপার্শ্বিক অবস্থার পরিবর্তনের জন্য একটি জোরালো কণ্ঠস্বর তৈরি করা। এই দিনটিতে যে সব ব্যক্তি এবং সংস্থাগুলো তাদের সাহায্য করেছে, সেই অবদানের জন্য গর্ব প্রকাশ করা হয়।
তবে এখনো অনেকেই এই ব্যাপারে সচেতন নন। আবার অনেকে তো জানেনও না সেরিব্রাল পালসি কী। কেন হয় এই সমস্যা। কাদেরই বা বেশি দেখা দেয় এই সমস্যা। প্রতিরোধের উপায়ই বা কী। চলুন আজ জেনে নিন এই সমস্যার আদ্যোপান্ত। নিজে সচেতন হন এবং অন্যকে সচেতন হতে সহায়তা করুন।
সেরিব্রাল পালসি কী?
সেরিব্রাল পালসি বলতে একধরনের স্নায়বিক বিশৃঙ্খলাকে বোঝায়। যা বাল্যকাল বা শৈশবের প্রথম পর্যায়ে দেখা দেয়। স্থায়ীভাবে শরীরের গতিবিধি, চলাফেরা এবং পেশি সমন্বয়কে প্রভাবিত করে।
সেরিব্রাল পালসি কেন হয়?
মস্তিষ্ক বা মস্তিষ্কের কোনো অংশে (যা আমাদের চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করে) ক্ষতির কারণে মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক বিকাশের ফলে সেরিব্রাল পালসি হয়। এই ক্ষতি অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায়, শিশুর জন্মের সময় বা জন্মের কিছু পরে হতে পারে।
বিশ্ব জুড়ে প্রায় ১৭ মিলিয়ন মানুষ সেরিব্রাল পালসি (সিপি) নিয়ে বাস করছেন। শৈশবে সবচেয়ে সাধারণ শারীরিক অক্ষমতা হল সেরিব্রাল পালসি। এটি প্রাথমিকভাবে আমাদের চলাফেরাকে প্রভাবিত করে। তবে সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত মানুষদের দেখা, শেখা, শ্রবণশক্তি, কথা বলা, মৃগী এবং বুদ্ধির বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। যার ফলে পেশিগুলোর দুর্বলতা থেকে চলাফেরায় সমস্যা পর্যন্ত হতে পারে।
এটি একটি জটিল অক্ষমতা। সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত ৪ জনের মধ্যে একটি শিশু কথা বলতে পারে না, তিন জনের মধ্যে একজন হাঁটতে পারে না (৬০ শতাংশ স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে, ১০ শতাংশ কোনো অবলম্বনের সাহায্যে হাঁটতে পারে, ৩০ শতাংশ হুইলচেয়ার ব্যবহার করে), দুইজনের মধ্যে একজনের বৌদ্ধিক অক্ষমতা রয়েছে এবং চারজনের মধ্যে একজনের মৃগী রয়েছে। সেরিব্রাল পালসি এক ধরনের আজীবন অক্ষমতা এবং এই রোগের কোনো নিরাময় নেই।
সেরিব্রাল পালসি কি প্রতিরোধ করা যায়?
যদিও সম্পূর্ণ প্রতিরোধ এখনও সম্ভব নয়। তবে এমন কয়েকটি জিনিস রয়েছে যা সন্তানের সেরিব্রাল পালসি হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস করতে পারে।
জেনে রাখুন সেগুলো-
অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় রুবেলা এবং জিকা (যা ভ্রূণের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পরিচিত) ভাইরাস বা সংক্রমণের সংস্পর্শ এড়ানো।
গর্ভসঞ্চারের আগেই রুবেলার টিকাকরণ করার চেষ্টা করুন।
রক্তচাপ,ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করুন।
অ্যালকোহল, সিগারেট এবং কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ যা গর্ভস্থ ভ্রূণের ক্ষতি করে, অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় সেগুলি এড়িয়ে চলুন।
মা এবং সন্তানের মধ্যে ‘আরএইচ ফ্যাক্টরের’ অসামঞ্জস্যতা শনাক্ত করুন।
প্রসবের সময় যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থা।
জন্মের সময়/ পরে মাথায় আঘাত লাগার সম্ভাবনা কমাতে হবে।
সেরিব্রাল পালসি সংক্রান্ত সচেতনতার মূল বিষয়-
জন সচেতনতা- বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সেরিব্রাল পালসি নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
নাগরিক অধিকার- নাগরিক এবং মানবিক অধিকার পেতে সাহায্য করুন।
মেডিকেল থেরাপেটিক- মানুষ যাতে সহজে চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন।
জীবনযাত্রার মান- সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত মানুষদের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং ব্যক্তিগত জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের জন্য অনলাইনে এবং অফলাইন দল গঠন করতে হবে।
শিক্ষা- সবার জন্য শিক্ষার অধিকার।
জীবিকার ব্যবস্থা তথা সমাজে অবদান- সমাজের সার্বিক উন্নতিতে যেন সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত প্রতিটি মানুষের অবদান থাকে, তা নিশ্চিত করা।
সেরিব্রাল পালসি সম্পর্কে কিছু তথ্য-
সেরিব্রাল পালসি এক ধরনের আজীবন অক্ষমতা।
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে অক্ষমতা বাড়তেও পারে, অনেকক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বার্ধক্য চলে আসে।
অক্ষমতার তীব্রতা সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো বোঝা যায় শিশুর দুই বছর বয়সে।
পুনর্বাসন এবং অর্থোপেডিক ব্যবস্থাপনা ব্যতীত সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত ব্যক্তির শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে পারে।
বাংলাদেশে সেরিব্রাল পালসির পরিসংখ্যান
বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও প্রথমবারের মত পালিত হয় দিবসটি। সরকারি হিসেবে দেশে সেরিব্রাল পালসি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখা ৯০ হাজার ৪৪৩ জন। সেরিব্রাল পালসি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা এন ডি ডি ট্রাস্টের মাধ্যমে মাসিক ৭৫০ টাকা হারে ভাতা পাচ্ছেন। এ ভাতার পাশাপাশি পুনর্বাসন ও থেরাপি সেবা কার্যক্রম অব্যাহত আছে।