ঢাকা ০৬:৩৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সীমাহীন কষ্টে বানভাসিরা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:২৬:১৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • ১৪৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশের চলমান বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে ১৫টি জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। বানের স্রোতে রাস্তাঘাট ও ব্রিজ ভেঙে যাতায়াতে বেড়েছে দুর্ভোগ। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। একই সাথে নদী ভাঙনে ঘরবাড়ি জায়গা জমি সব হারিয়ে নিঃস্ব মানুষ আশ্রয়ের খোঁজে উঁচু বাঁধের দিকে ছুটছে। অনেকেই আবার মাঁচা তৈরি করে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। কেউ কেউ নৌকাতে ভাসমান জীবন কাটাচ্ছেন। অনেকে বন্যামুক্ত এলাকায় স্বজনদের বাড়িতে ঠাঁই নিচ্ছে। চলতি বন্যায় প্রায় এক কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বানভাসিদের কষ্টের সীমা নেই। তাদের পয়ঃনিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। প্লাবিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ত্রাণের জন্য চলছে হাহাকার। ১০ বার দিন ধরে পানিবন্দি থাকলে অনেক এলাকায় এখনো ত্রাণ পৌঁছেনি। অসহায় বানভাসিদের দেখার কেউ নেই।

টাঙ্গাইলে ১০ দিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন প্রায় দুই লাখ মানুষ। এখন পর্যন্ত কোনো খাদ্য সহায়তা পৌঁছেনি এই বানভাসি মানুষের কাছে। জেলার ভূঞাপুর উপজেলায় তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট। রাস্তাগুলো ভেঙে সড়কপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া বন্যার পানিতে টিউবওয়েল তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়ায় উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী ও চররাজিবপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বসতভিটায় পানি প্রবেশ করায় লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে বাঁধ ও আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। তৃণভ‚মি তলিয়ে যাওয়ায় গবাদিপশুর খাদ্যেরও তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সিরাজগঞ্জে ৫টি উপজেলায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় দূর্বিষহ জীবনযাপন করছে।

ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান জানিয়েছেন, মন্ত্রণালয়ে গঠিত মনিটরিং টিম সার্বক্ষণিক বন্যা পরিস্থিতি নজরে রাখছে। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রয়োজন অনুযায়ী পরামর্শ করা হচ্ছে।

বর্তমানে দেশের ১৫টি জেলা বন্যাকবলিত। এ জেলাগুলো হলো- কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, পাবনা, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও শরীয়তপুর। আগামী ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, পাবনা, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও শরীয়তপুরের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। এছাড়া দেশের ১০ নদীর পানি ২২টি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীগুলোর মধ্যে রয়েছে দুধকুমার, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, তিস্তা, ঘাঘট, তুরাগ, পদ্মা, আত্রাই ও ধলেশ্বরী।

বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদন তুলে ধরা হলো।
চট্টগ্রাম থেকে শফিউল আলম জানান, উজান থেকে ভারতের ঢল হ্রাস-বৃদ্ধি হচ্ছে। সেই সঙ্গে দেশের প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি কোথাও বাড়ছে কোথাও কমছে। আবার অনেক জায়গায় নদীর পানি অপরিবর্তিত রয়েছে। গতকাল শনিবার ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, পদ্মাসহ ৯টি নদ-নদী ২১টি পয়েন্টে বিপদসীমার ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হয়। ঢল-বানের পানি হ্রাস-বৃদ্ধি ও অপরিবর্তিত থাকার ফলে নদ-নদীগুলো উত্তাল ও অশান্ত রয়েছে। এতে নদীভাঙন আরো তীব্র আকার ধারণ করেছে। অনেক স্থানে রাস্তাঘাট, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ধসে পড়ছে। পৈত্রিক বসতভিটা, ফল-ফসলের জমি, বাগান, ক্ষেত-খামার, চাষের মাছ, মসজিদ, হাসপাতাল-ক্লিনিক, হাট-বাজার, স্কুল-মাদরাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান চোখের সামনেই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নিঃস্ব হয়ে পথে বসছে হাজারো পরিবার। বন্যা ও নদীভাঙনে ভাঙছে তাদের কপাল। চরম অভাব-অনটনে কাটছে দিন। দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল থেকে দক্ষিণে পদ্মা-মেঘনার ভাটি, চাঁদপুর-ভোলা মোহনা, দক্ষিণ-পশ্চিমে সাতক্ষীরা অবধি বৃদ্ধি পাচ্ছে নদীভাঙনের তান্ডব। অসহায় নদীপাড়ের লাখো মানুষ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, বর্তমানে দেশের দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল থেকে মধ্য-দক্ষিণাঞ্চল পর্যন্ত ১৩টি জেলা বন্যা কবলিত। জেলাগুলো হচ্ছে, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, পাবনা, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও শরীয়তপুর। আগামী ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর ও বগুড়া জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও মানিকগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকতে পারে। অন্যদিকে রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মুন্সীগঞ্জ ও ফরিদপুর জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে।

গতকাল বিকাল পর্যন্ত ৯টি নদ-নদী ২১টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। নদ-নদীগুলো হচ্ছে- ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, পদ্মা, ঘাঘট, ধরলা, আত্রাই, ধলেশ্বরী, কালিগঙ্গা ও তুরাগ। প্রধান নদ-নদীগুলোর ১০৯টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে গতকাল ৪৬টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি, ৫৯টিতে হ্রাস ও ৪টি স্থানে অপরিবর্তিত থাকে। নদ-নদীর প্রবাহ পরিস্থিতি ও পূর্বাভাসে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র আরো জানায়, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি হ্রাস পাচ্ছে। অন্যদিকে যমুনা নদের পানি স্থিতিশীল রয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় উভয় নদ-নদীর পানি হ্রাস পেতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে।

রংপুর থেকে হালিম আনসারী জানান, তিস্তার তীরবর্তী চরাঞ্চলসহ ৩টি উপজেলার প্রায় ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জেলার গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ১৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে। হাজার হাজার একর জমির ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

টাঙ্গাইল থেকে আতাউর রহমান আজাদ জানান, জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। যমুনা নদীর পানি স্থিতিশীল থাকলেও ধলেশ্বরী ও ঝিনাইসহ অনান্য নদী পানি আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় টাঙ্গাইলের ৭টি উপজেলার শতাধিক গ্রামে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানি ও গবাদিপশুর খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। অনেকে বাড়ি ছেড়ে উঁচু বাঁধ ও বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।

জামালপুর থেকে নুরুল আলম সিদ্দিকী জানান, বন্যাজনিত দুর্যোগ মোকাবিলায় ১৫৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেওয়া হলেও অনেক বন্যার্ত আশ্রয় নিয়েছে খোলা আকাশের নিচে, উঁচু স্থানে ও স্বজনদের বাড়িতে। এমন চিত্র জেলার ইসলামপুর উপজেলার চিনাডুলি ইউনিয়নে। চিনাডুলি ইউনিয়নের দেওয়ানপাড়া এলাকার গিয়াস উদ্দিন বলেন- ‘আমরা হইলাম কপাল পুড়া। বন্যা আইলেই আঙ্গর জ্বালা শুরু হয়ে যা। সব জায়গায় পানি। কোন জায়গায় যে এল্লা রান্না কইরে খামু। এই উপায়ডা নাই। খুব কষ্টে আছি গো। এই কষ্ট দেহারও কেউ নাই।’ জামালপুর ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় থেকে জানা যায়- জেলার ৬টি উপজেলার ৬৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩৯টি ইউনিয়নের ১৬৯টি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। ফলে জেলার ২৫ হাজার পরিাবরের প্রায় লক্ষাধিক সাধারণ জনগণ বন্যাকবলিত হয়ে চরম দুর্ভোগ পড়েছে। এছাড়া পানি কমতে থাকলেও যমুনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙনের কারণে গৃহহীন হয়ে পড়েছে ৬৫টি পরিবার।

মুন্সীগঞ্জ থেকে মঞ্জুর মোর্শেদ জানান, জেলার বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হচ্ছে। পদ্মা নদী তীরবর্তী লৌহজং এবং টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলে ধীরে ধীরে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। পদ্মা নদীর পানি মাওয়া ও ভাগ্যকূল পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

মানিকগঞ্জ থেকে শাহীন তারেক জানান, জেলার চার উপজেলার কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। বন্যার পানিতে কিছু এলাকার রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় যাতায়াতে বেড়েছে দুর্ভোগ। এ অবস্থায় বানভাসি এলাকার মানুষের এখন একমাত্র ভরসা নৌকা।

কুড়িগ্রাম থেকে শফিকুল ইসলাম বেবু জানান, ব্রহ্মপূত্র নদের পানি হু-হু করে বৃদ্ধি পাওয়ায় উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী ও চর রাজিবপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বসতভিটায় পানি প্রবেশ করায় লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে বাঁধে অথবা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। চারদিকে পানি ওঠায় দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। এছাড়া দেখা দিয়েছে গবাদিপশুর তীব্র খাদ্য সংকট। নিম্নবিত্তরা এক বেলা খেয়ে আরেক বেলা থাকছেন অনাহারে।

নীলফামারী থেকে মোশফিকুর রহমান সৈকত জানান, জেলার ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাপানী, ঝুনাগাছ চাপানী ও গয়াবাড়ি ইউনিয়নের তিস্তা নদী বেস্টিত ১৫ গ্রামের পাঁচ সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে।

গাইবান্ধা থেকে আবেদুর রহমান স্বপন জানান, জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি ও সদর উপজেলার ১৯টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়েছে। এর ফলে ১৯ হাজার ১৫৭টি পরিবারের ৮৫ হাজার ৯৭৫ ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় ১ হাজার ৩৭৫টি ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বন্যায় রোপা আমন, শাকসবজি ও আমন বীজতলার ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ১৫৭ হেক্টর জমির।

চিলমারী (কুড়িগ্রাম) থেকে ফয়সাল হক জানান, দিনের পর দিন ধরে ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার বন্যার পানিতে ভাসছে এ উপজেলার প্রায় ২৫ হাজার মানুষ। লন্ডভন্ড হয়ে পড়েছে উপজেলার ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার তীরের জনজীবন। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ঘরবাড়ি ছেড়ে পরিবারগুলো আশ্রয় নিতে শুরু করেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বাঁধে। তাদের মাঝে রয়েছে খাদ্য অভাব। বানভাসিরা কেউ রাত কাটাচ্ছে বাঁধে। কষ্টের যেন নেই শেষ।

লালপুর (নাটোর) থেকে আশিকুর রহমান টুটুল জানান, উপজেলার ওয়ালিয়া ইউপির ২টি ওয়ার্ডের ৩ গ্রামে বৃষ্টির পানি জমে প্রায় ৩ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে জীবনযাপন করছে। প্রায় বাড়ির উঠানে ও ঘরের মাধ্যে পানি প্রবেশ করেছে, এতে পানিবন্দি পরিবারে বসবাসকারী শিশু ও বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছে। শুধু একটি পাকা ড্রেন নির্মাণ না করায় গত দুই বছর যাবত এই তিন গ্রামের মানুষ বর্ষা মৌসুম আসলেই পানিবন্দি হয়ে পড়ে।

সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) থেকে মোশাররফ হোসেন বুলু জানান, জেলার সুন্দরগঞ্জে দিন দিন বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। এর মধ্যেই ১ হাজার ৫০ পরিবারের ৪ হাজার ২০০ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে এর মধ্যেই কাপাসিয়া, হরিপুর ও বেলকা ইউনিয়নের সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। তারা অনাহারে-অর্ধাহারে জীবনযাপন করছেন। অনেকেই পরিবার-পরিজন, গবাদিপশু নিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ ও উঁচু স্থানসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন। তারা খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও জ্বালানি না থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সীমাহীন কষ্টে বানভাসিরা

আপডেট টাইম : ০৯:২৬:১৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশের চলমান বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে ১৫টি জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। বানের স্রোতে রাস্তাঘাট ও ব্রিজ ভেঙে যাতায়াতে বেড়েছে দুর্ভোগ। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। একই সাথে নদী ভাঙনে ঘরবাড়ি জায়গা জমি সব হারিয়ে নিঃস্ব মানুষ আশ্রয়ের খোঁজে উঁচু বাঁধের দিকে ছুটছে। অনেকেই আবার মাঁচা তৈরি করে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। কেউ কেউ নৌকাতে ভাসমান জীবন কাটাচ্ছেন। অনেকে বন্যামুক্ত এলাকায় স্বজনদের বাড়িতে ঠাঁই নিচ্ছে। চলতি বন্যায় প্রায় এক কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বানভাসিদের কষ্টের সীমা নেই। তাদের পয়ঃনিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। প্লাবিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ত্রাণের জন্য চলছে হাহাকার। ১০ বার দিন ধরে পানিবন্দি থাকলে অনেক এলাকায় এখনো ত্রাণ পৌঁছেনি। অসহায় বানভাসিদের দেখার কেউ নেই।

টাঙ্গাইলে ১০ দিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন প্রায় দুই লাখ মানুষ। এখন পর্যন্ত কোনো খাদ্য সহায়তা পৌঁছেনি এই বানভাসি মানুষের কাছে। জেলার ভূঞাপুর উপজেলায় তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট। রাস্তাগুলো ভেঙে সড়কপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া বন্যার পানিতে টিউবওয়েল তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়ায় উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী ও চররাজিবপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বসতভিটায় পানি প্রবেশ করায় লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে বাঁধ ও আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। তৃণভ‚মি তলিয়ে যাওয়ায় গবাদিপশুর খাদ্যেরও তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সিরাজগঞ্জে ৫টি উপজেলায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় দূর্বিষহ জীবনযাপন করছে।

ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান জানিয়েছেন, মন্ত্রণালয়ে গঠিত মনিটরিং টিম সার্বক্ষণিক বন্যা পরিস্থিতি নজরে রাখছে। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রয়োজন অনুযায়ী পরামর্শ করা হচ্ছে।

বর্তমানে দেশের ১৫টি জেলা বন্যাকবলিত। এ জেলাগুলো হলো- কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, পাবনা, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও শরীয়তপুর। আগামী ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, পাবনা, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও শরীয়তপুরের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। এছাড়া দেশের ১০ নদীর পানি ২২টি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীগুলোর মধ্যে রয়েছে দুধকুমার, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, তিস্তা, ঘাঘট, তুরাগ, পদ্মা, আত্রাই ও ধলেশ্বরী।

বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদন তুলে ধরা হলো।
চট্টগ্রাম থেকে শফিউল আলম জানান, উজান থেকে ভারতের ঢল হ্রাস-বৃদ্ধি হচ্ছে। সেই সঙ্গে দেশের প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি কোথাও বাড়ছে কোথাও কমছে। আবার অনেক জায়গায় নদীর পানি অপরিবর্তিত রয়েছে। গতকাল শনিবার ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, পদ্মাসহ ৯টি নদ-নদী ২১টি পয়েন্টে বিপদসীমার ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হয়। ঢল-বানের পানি হ্রাস-বৃদ্ধি ও অপরিবর্তিত থাকার ফলে নদ-নদীগুলো উত্তাল ও অশান্ত রয়েছে। এতে নদীভাঙন আরো তীব্র আকার ধারণ করেছে। অনেক স্থানে রাস্তাঘাট, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ধসে পড়ছে। পৈত্রিক বসতভিটা, ফল-ফসলের জমি, বাগান, ক্ষেত-খামার, চাষের মাছ, মসজিদ, হাসপাতাল-ক্লিনিক, হাট-বাজার, স্কুল-মাদরাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান চোখের সামনেই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নিঃস্ব হয়ে পথে বসছে হাজারো পরিবার। বন্যা ও নদীভাঙনে ভাঙছে তাদের কপাল। চরম অভাব-অনটনে কাটছে দিন। দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল থেকে দক্ষিণে পদ্মা-মেঘনার ভাটি, চাঁদপুর-ভোলা মোহনা, দক্ষিণ-পশ্চিমে সাতক্ষীরা অবধি বৃদ্ধি পাচ্ছে নদীভাঙনের তান্ডব। অসহায় নদীপাড়ের লাখো মানুষ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, বর্তমানে দেশের দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল থেকে মধ্য-দক্ষিণাঞ্চল পর্যন্ত ১৩টি জেলা বন্যা কবলিত। জেলাগুলো হচ্ছে, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, পাবনা, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও শরীয়তপুর। আগামী ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর ও বগুড়া জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও মানিকগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকতে পারে। অন্যদিকে রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মুন্সীগঞ্জ ও ফরিদপুর জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে।

গতকাল বিকাল পর্যন্ত ৯টি নদ-নদী ২১টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। নদ-নদীগুলো হচ্ছে- ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, পদ্মা, ঘাঘট, ধরলা, আত্রাই, ধলেশ্বরী, কালিগঙ্গা ও তুরাগ। প্রধান নদ-নদীগুলোর ১০৯টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে গতকাল ৪৬টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি, ৫৯টিতে হ্রাস ও ৪টি স্থানে অপরিবর্তিত থাকে। নদ-নদীর প্রবাহ পরিস্থিতি ও পূর্বাভাসে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র আরো জানায়, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি হ্রাস পাচ্ছে। অন্যদিকে যমুনা নদের পানি স্থিতিশীল রয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় উভয় নদ-নদীর পানি হ্রাস পেতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে।

রংপুর থেকে হালিম আনসারী জানান, তিস্তার তীরবর্তী চরাঞ্চলসহ ৩টি উপজেলার প্রায় ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জেলার গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ১৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে। হাজার হাজার একর জমির ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

টাঙ্গাইল থেকে আতাউর রহমান আজাদ জানান, জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। যমুনা নদীর পানি স্থিতিশীল থাকলেও ধলেশ্বরী ও ঝিনাইসহ অনান্য নদী পানি আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় টাঙ্গাইলের ৭টি উপজেলার শতাধিক গ্রামে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানি ও গবাদিপশুর খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। অনেকে বাড়ি ছেড়ে উঁচু বাঁধ ও বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।

জামালপুর থেকে নুরুল আলম সিদ্দিকী জানান, বন্যাজনিত দুর্যোগ মোকাবিলায় ১৫৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেওয়া হলেও অনেক বন্যার্ত আশ্রয় নিয়েছে খোলা আকাশের নিচে, উঁচু স্থানে ও স্বজনদের বাড়িতে। এমন চিত্র জেলার ইসলামপুর উপজেলার চিনাডুলি ইউনিয়নে। চিনাডুলি ইউনিয়নের দেওয়ানপাড়া এলাকার গিয়াস উদ্দিন বলেন- ‘আমরা হইলাম কপাল পুড়া। বন্যা আইলেই আঙ্গর জ্বালা শুরু হয়ে যা। সব জায়গায় পানি। কোন জায়গায় যে এল্লা রান্না কইরে খামু। এই উপায়ডা নাই। খুব কষ্টে আছি গো। এই কষ্ট দেহারও কেউ নাই।’ জামালপুর ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় থেকে জানা যায়- জেলার ৬টি উপজেলার ৬৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩৯টি ইউনিয়নের ১৬৯টি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। ফলে জেলার ২৫ হাজার পরিাবরের প্রায় লক্ষাধিক সাধারণ জনগণ বন্যাকবলিত হয়ে চরম দুর্ভোগ পড়েছে। এছাড়া পানি কমতে থাকলেও যমুনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙনের কারণে গৃহহীন হয়ে পড়েছে ৬৫টি পরিবার।

মুন্সীগঞ্জ থেকে মঞ্জুর মোর্শেদ জানান, জেলার বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হচ্ছে। পদ্মা নদী তীরবর্তী লৌহজং এবং টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলে ধীরে ধীরে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। পদ্মা নদীর পানি মাওয়া ও ভাগ্যকূল পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

মানিকগঞ্জ থেকে শাহীন তারেক জানান, জেলার চার উপজেলার কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। বন্যার পানিতে কিছু এলাকার রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় যাতায়াতে বেড়েছে দুর্ভোগ। এ অবস্থায় বানভাসি এলাকার মানুষের এখন একমাত্র ভরসা নৌকা।

কুড়িগ্রাম থেকে শফিকুল ইসলাম বেবু জানান, ব্রহ্মপূত্র নদের পানি হু-হু করে বৃদ্ধি পাওয়ায় উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী ও চর রাজিবপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বসতভিটায় পানি প্রবেশ করায় লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে বাঁধে অথবা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। চারদিকে পানি ওঠায় দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। এছাড়া দেখা দিয়েছে গবাদিপশুর তীব্র খাদ্য সংকট। নিম্নবিত্তরা এক বেলা খেয়ে আরেক বেলা থাকছেন অনাহারে।

নীলফামারী থেকে মোশফিকুর রহমান সৈকত জানান, জেলার ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাপানী, ঝুনাগাছ চাপানী ও গয়াবাড়ি ইউনিয়নের তিস্তা নদী বেস্টিত ১৫ গ্রামের পাঁচ সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে।

গাইবান্ধা থেকে আবেদুর রহমান স্বপন জানান, জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি ও সদর উপজেলার ১৯টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়েছে। এর ফলে ১৯ হাজার ১৫৭টি পরিবারের ৮৫ হাজার ৯৭৫ ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় ১ হাজার ৩৭৫টি ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বন্যায় রোপা আমন, শাকসবজি ও আমন বীজতলার ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ১৫৭ হেক্টর জমির।

চিলমারী (কুড়িগ্রাম) থেকে ফয়সাল হক জানান, দিনের পর দিন ধরে ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার বন্যার পানিতে ভাসছে এ উপজেলার প্রায় ২৫ হাজার মানুষ। লন্ডভন্ড হয়ে পড়েছে উপজেলার ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার তীরের জনজীবন। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ঘরবাড়ি ছেড়ে পরিবারগুলো আশ্রয় নিতে শুরু করেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বাঁধে। তাদের মাঝে রয়েছে খাদ্য অভাব। বানভাসিরা কেউ রাত কাটাচ্ছে বাঁধে। কষ্টের যেন নেই শেষ।

লালপুর (নাটোর) থেকে আশিকুর রহমান টুটুল জানান, উপজেলার ওয়ালিয়া ইউপির ২টি ওয়ার্ডের ৩ গ্রামে বৃষ্টির পানি জমে প্রায় ৩ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে জীবনযাপন করছে। প্রায় বাড়ির উঠানে ও ঘরের মাধ্যে পানি প্রবেশ করেছে, এতে পানিবন্দি পরিবারে বসবাসকারী শিশু ও বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছে। শুধু একটি পাকা ড্রেন নির্মাণ না করায় গত দুই বছর যাবত এই তিন গ্রামের মানুষ বর্ষা মৌসুম আসলেই পানিবন্দি হয়ে পড়ে।

সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) থেকে মোশাররফ হোসেন বুলু জানান, জেলার সুন্দরগঞ্জে দিন দিন বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। এর মধ্যেই ১ হাজার ৫০ পরিবারের ৪ হাজার ২০০ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে এর মধ্যেই কাপাসিয়া, হরিপুর ও বেলকা ইউনিয়নের সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। তারা অনাহারে-অর্ধাহারে জীবনযাপন করছেন। অনেকেই পরিবার-পরিজন, গবাদিপশু নিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ ও উঁচু স্থানসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন। তারা খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও জ্বালানি না থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।