বাংলাদেশে বিনিয়োগে সর্বোচ্চ মুনাফা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ করোনা মোকাবিলা করে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। গত অর্থবছরেও বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ৫ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

এই অর্জন এশিয়া ও এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সর্বোচ্চ। এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ অর্থনৈতিক উন্নয়নে অত্যন্ত সিরিয়াস সরকার।

অন্যদিকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ সবচেয়ে বেশি লাভজনক। ইতোমধ্যে ২০টির বেশি বহুজাতিক কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে এখান থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মুনাফা অর্জন করেছে।

এছাড়াও আন্তর্জাতিক যে কোনো অংশীজনকে পাওনা পরিশোধে বাংলাদেশ কখনো ব্যর্থ হয়নি। এসব বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করুন। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে বুধবার বাংলাদেশের অর্থনীতি বিষয়ক রোড শোর তৃতীয় সেশনে বক্তারা এসব কথা বলেন।

দেশটির হোটেল রিজট কালটনে অনুষ্ঠিত রোড শোর মূল বিষয়বস্তু ‘রেইস অব বেঙ্গল টাইগার : পটেনশিয়াল ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট’। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ফাইন্যান্স ডিভিশনের সিনিয়র সচিব আবদুর রউফ তালুকদার, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম, রপ্তানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বেপজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতেমা ইয়াসমিন, শান্তা এসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির ভাইস চেয়ারম্যান আরিফ খান এবং ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেইন। অনুষ্ঠানে মূল তিনটি বিষয় তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো-বাংলাদেশের অর্জন, সম্ভাবনা এবং সংস্কারের বিভিন্ন উদ্যোগ। এর মধ্যে রয়েছে-অবকাঠামো উন্নয়ন, বিভিন্ন আইনের সংশোধন এবং বেসরকারি খাতবান্ধব পলিসি গ্রহণ।

সালমান এফ রহমান বলেন, চতুর্থ ও পঞ্চম শিল্প খাত মাথায় রেখে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। শিক্ষা খাতে প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুক্ত হতে যাচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি। এছাড়া স্বাস্থ্য খাতে মোট ওষুধের ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশ বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়। শিল্প খাতে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, শিল্প খাতের সেবা গ্রাহকের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে সবচেয়ে বেশি মুনাফা পাওয়া যায়।

বিদেশি বিনিয়োগ সংক্রান্ত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের অনেক সুযোগ-সুবিধার কথা বিদেশিরা জানে না। তবে এ বিষয়গুলো জানাতে সরকার এবং বিদেশি মিশনগুলো কাজ করছে। আশা করছি, আগামীতে এটি বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক হবে।

শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, গত বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিভিন্ন খাতে সফলতার অনেক গল্প রয়েছে। এই সফলতা দ্রুতই এগিয়ে যাচ্ছে।

আগামী ৫ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী অবস্থানে চলে যাবে। আঞ্চলিক দেশ হিসাবে চীন ও ভারত এগিয়ে যাচ্ছে। এসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কও বাড়ছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেই সবচেয়ে বেশি মুনাফা পাওয়া যায়। সামগ্রিকভাবে মূল্যায়ন করলে আগামীতে বাংলাদেশের অর্থনীতির সম্ভাবনা বিশাল। কিন্তু আমাদের অর্থনীতিতে যে অর্জন ও সম্ভাবনা রয়েছে, উন্নত দেশগুলোর বিনিয়োগকারীদের কাছে তা তুলে ধরা হয়নি।

যে কারণে আমাদের ওইভাবে বিদেশি বিনিয়োগ আসেনি। ফলে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য আমরা এ ধরনের রোড শোর উদ্যোগ নিয়েছি।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের অর্থনীতির সম্ভাবনা তুলে ধরে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগ আকর্ষণে যুক্তরাষ্ট্রের ৪টি গুরুত্বপূর্ণ শহরে ১০ দিনের রোড শোর আয়োজন করা হয়েছে।

ইতোমধ্যে নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটনে রোড শো শেষ হয়েছে। আগামী ৩০ জুলাই লস এঞ্জেলেস এবং ২ আগস্ট সানফ্রানসিসকোতে অনুষ্ঠিত হবে এই কর্মসূচি।

শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এর আয়োজন করেছে। অর্থনৈতিকভাবে বিশ্বে সবচেয়ে প্রভাবশালী এই দেশটিতে বাংলাদেশকে তুলে ধরে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ এই আয়োজনের উদ্দেশ্য। বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশিরা যাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে সে বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। অনুষ্ঠানের প্রথম দিনেই যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি কেআইইউ গ্লোবাল লিমিটেড বাংলাদেশ সরকারের মালিকানাধীন মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস কোম্পানি নগদের ৩ কোটি ডলারের বন্ড কেনার চুক্তি করেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ২৬৫ কোটি টাকা।

মূল প্রবন্ধে আরিফ খান বলেন, এশীয় অঞ্চলে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির মধ্যে শীর্ষে বাংলাদেশ। বর্তমানে বিদেশি সহায়তা ছাড়াই আমাদের সক্ষমতা বাড়ছে। ১৯৭১ সালে আমাদের বিদেশি সহায়তার হার ছিল ৯৮ শতাংশ। আর ২০২১ সালে তা মাত্র ২ দশমিক ৯৮ শতাংশ। সবজি উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ বৃহত্তম অবস্থানে বাংলাদেশ। ভৌগোলিক দিক থেকেও আমাদের অবস্থান সুবিধাজনক। তিনি বলেন, আমাদের সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারা এখানে এসেছেন।

ওনাদের সবার কথার মূল বিষয় হলো, অর্থনৈতিক উন্নয়নে সিরিয়াস সরকার। তিনি বলেন, আমাদের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাত এগিয়ে যাচ্ছে। যদিও আমাদের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেশি। কিন্তু এসএমই খাতে খেলাপি ঋণ মাত্র ৩ শতাংশ। কিন্তু মোট কর্মসংস্থানের ৭০ শতাংশই এ খাতে। আগামী ৫ বছরে শিল্প খাতে নেতৃত্ব দেবে এসএমই। এ কারণে শেয়ারবাজারেও এসএসইর জন্য আলাদা বোর্ড গঠন করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুসারে ২০৫০ সালে বিশ্বের ২৩তম অর্থনীতির দেশ হবে বাংলাদেশ। সংস্থাটির তথ্য অনুসারে দক্ষিণ এশিয়ায় দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হলো বাংলাদেশ। একই পূর্বাভাস দিয়েছে আরেক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান হংকং সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন (এইচএসবিসি)।

গত দশ বছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ। আর মোট জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ৩১ শতাংশ। প্রবৃদ্ধিকে সাপোর্ট দিতে ২০২০ সালে বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে ৪০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে।

২০১১ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ৮৬০ মার্কিন ডলার। বর্তমানে তা ২ হাজার ২২৭ ডলারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়াও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। করোনার মধ্যেও ২০২০ সালে প্রবাসী আয়ে (রেমিট্যান্স) ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিল। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) পূর্বাভাস অনুসারে করোনার মধ্যে ২৩ দেশ অর্থনৈতিকভাবে ইতিবাচক অবস্থানে থাকবে।

সংস্থাটি বলছে, এর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এছাড়াও বর্তমানে বাংলাদেশে মোট শ্রমশক্তি ৭ কোটি। এর মধ্যে সাড়ে ৫ কোটিই বয়সে তরুণ। ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি অত্যন্ত সম্ভাবনাময়।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর