এসএসসি-এইচএসসির অ্যাসাইনমেন্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমাধানের ছড়াছড়ি

হাওর বার্তা ডেস্কঃ এসএসসি-এইচএসসির অ্যাসাইনমেন্টের মূল উদ্দেশ্য অর্জনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হিসাবে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন সামাজিক যোগযোগমাধ্যম। রেডিমেড কনটেন্টে (সমাধান) ভরে গেছে ইউটিউব-ফেসবুকসহ ডিজিটাল মাধ্যম। সেখানে এসএসসির দুই ধরনের কনটেন্ট পাওয়া যাচ্ছে। এর একটি হচ্ছে প্রকাশিত অ্যাসাইনমেন্ট এবং আরেকটি ‘কাস্টমাইজড’ সিলেবাসের ওপর। অন্যদিকে এইচএসসির অ্যাসাইনমেন্ট কাল প্রকাশ করা হবে। কিন্তু এর আগেই ‘কাস্টমাইজড’ সিলেবাসের ওপর এই স্তরেরও বিভিন্ন বিষয়ের কনটেন্ট পাওয়া যাচ্ছে। এসব কনটেন্ট দেখে অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করা হলে শিক্ষার্থীরা কোনো কিছুই শিখবে না-এমন আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।

গত ১৮ জুলাই এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার অ্যাসাইনমেন্ট প্রকাশ করা হয়। আর কাল প্রকাশ করা হবে এইচএসসির। সেখানে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে তিনটি করে নৈর্বাচনিক বিষয়ের অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়ার কথা আছে। তবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বিভিন্ন বিভাগের মোট ২৭টি বিষয়ের তিন সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করেছে। এগুলো ওয়েবসাইটে আপলোডের জন্য আজ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) কাছে হস্তান্তর করবে সংস্থাটি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ঈদের ছুটি এবং কঠোর লকডাউন পরিস্থিতির কারণে এখন পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছেনি এসএসসির অ্যাসাইনমেন্ট। বিশেষ করে চর-পাহাড়, হাওড়সহ দুর্গম অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা বেশি বঞ্চিত বলে জানা গেছে। কেবল যেখানে ইন্টারনেটের সুবিধা আছে, পিতামাতা বেশ সচেতন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা উদ্যমী, সেখানে শিক্ষার্থীরা অ্যাসাইনমেন্ট পেয়েছে।

পরীক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট তৈরির কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন এনসিটিবির সদস্য (পাঠ্যক্রম) অধ্যাপক মশিউজ্জামান । তিনি শনিবার যুগান্তরকে বলেন, এসএসসিতে প্রত্যেক বিষয়ের একটিই পত্র, আর এইচএসসিতে দুটি। অন্যদিকে এসএসসির চেয়ে এইচএসসিতে বিষয়-বৈচিত্র্য বেশি। বেশি পছন্দের সুযোগ রাখায় বিজ্ঞান, মানবিক, বিজনেস স্টাডিজ, মিউজিকসহ বিদ্যমান শিক্ষার্থীদের বিষয় সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭টি। প্রত্যেক বিষয়ের আবার দুটি করে পত্র আছে। এসব বিষয়ের ওপর আপাতত তিন সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করা হয়েছে। আপলোডের জন্য রোববার তা মাউশিতে পাঠানো হবে।

তিনি জানান, ১০ মিনিট সংক্রান্ত একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে এবং ইউটিউবে অ্যাসাইনমেন্টের ওপর বিভিন্ন ধরনের কনটেন্ট আপলোড করা হচ্ছে বলে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। ইউটিউবে ব্যক্তি-বিশেষ কনটেন্ট আপলোড করছেন। কিন্তু একটি প্রতিষ্ঠান যেটা করছে সেটা অনেকটাই পরীক্ষার হলে নকল সরবরাহের মতো অপরাধ। এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

জানা গেছে, ফেসবুকে ১০ মিনিট শীর্ষক ওই প্ল্যাটফরমটির নাম লিখে সার্চ দিলেই আপলোড করা বিভিন্ন কনটেন্ট পাওয়া যাচ্ছে। তবে ওই কনটেন্টগুলোর বেশির ভাগ এর আগে প্রকাশিত এসএসসি ও এইচএসসির কাস্টমাইজড সিলেবাসের ওপর। এ সংক্রান্ত একটি কনটেন্টের লিঙ্কে লেখা হয়েছে, ‘অ্যাসাইনমেন্টের সল্যুশন নিয়ে এখন আর দুশ্চিন্তা নয়! অভিজ্ঞ শিক্ষকদের গাইডলাইনে সলভ করো তোমার অ্যাসাইনমেন্ট!’ এতে এ সংক্রান্ত প্রোগ্রামে ভর্তির আহ্বানও করা হয়েছে।

অন্যদিকে ইউটিউবে সার্চ দিলে শুধু কাস্টমাইজড সিলেবাসই নয়, গত ১৯ জুলাই প্রকাশিত ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার বিভিন্ন বিষয়ের ওপর অসংখ্য কনটেন্ট পাওয়া যাচ্ছে। প্রথম দফায় সরকার ১১টি বিষয়ের তিন সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট প্রকাশ করেছে। এগুলো হচ্ছে, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান ও উচ্চতর গণিত। আরও আছে, ব্যবসায় উদ্যোগ, হিসাববিজ্ঞান, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং। বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা, ভূগোল ও পরিবেশ, অর্থনীতি এবং পৌরনীতি ও নাগরিকতা বিষয়ের অ্যাসাইনমেন্টও দেওয়া হয়েছে। ইউটিউবে সার্চ দিয়ে দেখা গেছে, প্রত্যেক বিষয়েই কনটেন্ট তৈরি করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ ড. এম তারিক আহসান যুগান্তরকে বলেন, কোনো ব্যক্তি তার সম্পদ অনিরাপদ করে রাখলে তা চুরি হওয়াটাই স্বাভাবিক। অ্যাসাইনমেন্টের মতো সৃজনশীল এই পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি দূর করা সম্ভব ছিল। তিনি বলেন, এখন যে অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হয়েছে সেটার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় এবং প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে। অর্থাৎ, কেন্দ্রীয়ভাবে অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করে শিক্ষকদের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে। এখানে অভিভাবকদের কেবল তদারকির কাজ দেওয়া হয়েছে। এর পরিবর্তে কেন্দ্রের কেবল তদারকির কাজ করা উচিত ছিল। আর অ্যাসাইনমেন্ট তৈরির কাজটি স্থানীয় পর্যায়ে বা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষকদের দেওয়া উচিত ছিল। এ ক্ষেত্রে তাদের কাছে কেবল একটি গাইডলাইন পাঠানোর প্রয়োজন ছিল। সেটার পাশাপাশি কারিকুলাম এবং কাস্টমাইজড সিলেবাস অনুসরণে শিক্ষক অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করে দিতেন, যার বাস্তবায়নে অভিভাবকরা সহায়কের ভূমিকায় থাকতে পারতেন। এতে ইউটিউবারদের পক্ষে এত কনটেন্ট তৈরি করে দেওয়া সম্ভব হতো না। উন্মুক্ত জ্ঞানার্জনের যুগে সেই অ্যাসাইনমেন্টও হয়তো ইউটিউব বা গুগলে সার্চ দিয়ে পাঠ্য বইয়ের অতিরিক্ত হিসাবে কনটেন্ট সংগ্রহ করে অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করত শিক্ষার্থীরা। পারিপার্শ্বিকতা আর নিজের সমাজজীবন থেকে শিক্ষার্থীরা যে অ্যাসাইনমেন্ট পেত তা তৈরি করতে তাকে পরিশ্রম করতে হতো। এতে শিখন-শিক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকার পাশাপাশি শিখনফলও অর্জিত হতো। তাই আমি মনে করি, এখানে পদ্ধতিগত ভুল হয়েছে।

মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মুহাম্মদ গোলাম ফারুক বলেন, আমরা বলে দিয়েছি যে, নকল করে বা হুবহু গাইড কিংবা ইউটিউব দেখে করা অ্যাসাইনমেন্ট গ্রহণ করা হবে না। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট শিক্ষক নিশ্চিত করবেন। উল্লিখিত তথ্য কেউ গোপন করলে এবং তদন্তে প্রমাণিত হলে বিভাগীয় শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীর অ্যাসাইনমেন্টও বাতিল হয়ে যাবে। তাই শিক্ষার্থীদের উচিত পাঠ্যবই দেখে অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করা। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর