ঢাকা ০১:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

একটি ভ্রমন কাহিনীর ভালো লাগার রোমান্সগুলো

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:৫৭:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ জুলাই ২০২১
  • ১৬৪ বার
ড. গোলসান আরা বেগমঃ ঢাকার আগারগাঁও নিজ বাসভবন থেকে ২০১৯ সালে ১২ ডিসেম্বরের দিকে যাত্রা শুরু করি ভারতের অঙ্গরাজ্য মোম্বাইয়ের উদ্দ্যেশে। লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যানেল এর ৩০ জন সদস্য গ্রুপ টুরে বেরিয়ে পড়ি। দি লায়ন্স ক্লাব অফ প্রতিতি এর নেত্রী শামীমা নাজনীন ছিলো আমার ট্যুর পার্টনার। অতিতে তার সাথে আরো কয়েক বার বিভিন্ন রাষ্ট্রে গিয়েছি বেড়াতে গ্রুপ টুরে।
সে সব ট্যুরের স্মৃতি রুমন্থন করতে বসলে হারিয়ে যাই অসীমের মাঝে। পৃথিবী এতো সুন্দর তা ঘর থেকে পা বের না করলে অজানা রয়ে যেতো। অামার গলায় ঝুলানো ছিলো বাংলাদেশ কৃষকলীগের লঘু খচিত লাল সবুজের মাফলার। ১৬ ডিসেম্বরে জয়বাংলা  স্লোগান  লিখে দিয়ে পাহাড়ের পাদ দেশে দাঁড়িয়ে ওঠানো অামার  ছবিটি ফেইজ বুকে পোষ্ট দিয়ে বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস উদযাপন করতে ভুল করিনি।
ঢাকা শাহজালাল বিমান বন্দরে ঢোকেই  আমাদের দল ভুক্ত টুরিষ্টদের সাথে দেখা হয়।বিশেষ করে স্বদেশ রঞ্জন সাহা ও মায়া রাণী, এই দম্পতি ছিলো বাড়তি আকষর্ন।ইমিগ্রেশান বুথ ক্রস করতেই আই কন্টাক হয় স্বদেশ সাহার সাথে। আমি চিৎকার করে বলতে থাকি –দাদা আপনার আমন্ত্রণ রক্ষা করতেই এবার ভ্রমনে এলাম।ওপাশ থেকে অারো একজন বলে উঠে ৬০% সদস্য এসেছে দাদার সৌজন্যে।
আমি আনন্দ উচ্ছাসে বলতে থাকি-দেখতে হবে না স্বদেশ সাহা কে । কিশোরগঞ্জ জেলার মাটি ও মানুষোর লায়ন্স নেতা স্বদেশ সাহা। সেবামূলক লায়ন্স জগতে তার রয়েছে দেশী ও বিদেশী পর্যায়ে অগণিত সুখ্যাতি।তিনি তারকা খচিত  একজন লায়ন্স নেতা অথ্যাৎ লায়ন্স আইডল। মুক্ত হস্তে দান করার উদাহারণ রয়েছে ভুরিভুরি তাঁর।তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ হলেও মসজিদ নির্মাণ করে দিয়ে হয়েছেন অনন্য। কিশোরগঞ্জে হাজার হাজার স্কুল ছাত্রদের মাঝে আজিমউদ্দিন স্কুলের মাঠে স্কুল ব্যাগ বিতরণ করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
শামীমা নাজনিনের পায়ে ব্যথা, ক্ষেত্র বিশেষে হুইল চেয়ার ব্যবহার করার ব্যবস্থা করেছেন সুদীর্ঘ যাত্রা পথে। বিমানে ওঠা,নামা, ইমিগ্রেশান ক্রস করার সময় প্রতি ক্ষেত্রেই হুইল চেয়ারের সেবা পেয়েছেন অটোমেটিক ভাবে। আমি তার সাথে খুশগল্প করতে করতে ভারতীয় বিমান ইন্ডিগোর দরজায় পৌঁছে চমকে যাই। একটি শিশু প্রথম সিটে বসে আছে দুই পা বেন্ডেজ করা লম্বা করে। মনে মনে বলি – কেন এতো কষ্টের ব্যথা শিশুটিকে বইতে হচ্ছে।কি তার দোষ। সেও যাবে চেন্নাই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে।
 দুপুর একটার দিকে আকাশ পথে বাতাসে ভেসে মোম্বাইয়ের দিকে যাত্রা শুরু করি।মনটা কিছুটা হলেও খারাপ ছিলো, কারণ ১২ দিন পর অামার ছোট ছেলের বিয়ে,অনেক কাজের চাপ রেখেই বেড়িয়ে পরছি।কারণ অামি শারিরীক ভাবে অসুস্থ্য,ফুসফুসে ইনফেকশান হয়েছে। ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে  ট্রিটমেন্ট করিয়েছি।তারপরও ফেরার  পথে চেন্নাইয়ে ডাক্তার দেখানোটাও ছিলো জরুরী।
আগামী চার মাস পর আমার বয়স ষাটে পৌঁছে যাবে।অবসর জীবন শুরু হবে। নিজের হাতে গড়া কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে বাইশ বছর পেরিয়ে অবসরে যাওয়া কত যে কষ্টের তা মনকে বোঝাতে পারছি না। কিন্তু সৃস্টির বিধান মেনে নিতে তো হবেই।তারপরও হৃদয়ের তোলপাড় বন্ধ হয় না।গতকাল বুড়ু বয়সে পিএইচডি ডিগ্রির সর্বশেষ পরীক্ষাটা দিতে পেরে মাথাটা হালকা মনে হচ্ছে।জীবনের শেষ স্বপ্নটা পূরণ হতে যাচ্ছে। বাবার আশা, মায়ের সহনশীলতার প্রতি এটাই আমার চূড়ান্ত উপহার।
বিমানের মাঝামাঝি জায়গায় আমার সিট।জানা শুনা সঙ্গী সাথী কেউ নেই।যাত্রীরা কেউ ঘুমাচ্ছে,কেউ করছে চুপচাপ খুশগল্প।অন্যরা নীরবে কি ভাবছে জানি না।আমি কাগজ কলমে যুদ্ধ শুরু করে দেই।কিছু মনের ভাবনা তুলে ধরার চেস্টা করি। লিখতে বসলে মনটা ফুরফুরে হয়ে যায়। আরো পুলকিত হই সে লেখাটি ফেইজ বুকে পোষ্ট দিতে পারলে। কেউ পড়ুক বা না পড়ুক, এই কাজটি অব্যহত রাখবো, না ফেরার দেশে চলে যাওয়ার পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত।
জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি কোর্সে ভর্তি হওয়ার সময় নানা জনে ব্যঞ্জ করে বলেছে — বুড়ু বয়সে এই ডিগ্রি নিয়ে কি করবে।আমি উত্তরে বলেছিলাম — কবরে নিয়ে যাবো। পারো যদি লিখে দিও কবরের দেয়ালে — এখানে ঘুমিয়ে আছে সেই ডক্টরেটধারী মহা বোকা মেয়েটি।যিনি অনবরত সৃষ্টির কল্যাণে কিছু করার জন্য চেষ্টা করেছেন।কিন্তু সামাজিক নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে দুই হাত খুলে ইচ্ছামত পারেননি মনের মাধুরী ছড়িয়ে দিতে।
কলম বন্ধ করে দেখি আমার চার পাশে তরুন যাত্রীরা অনলাইনে ডুবে আছে।কথা প্রসঙ্গে জানতে পারলাম, তারা বাংলাদেশ থেকে শ্রম বিক্রি করতে যাচ্ছে মধ্য প্রাচ্যে।উদ্দেশ্য একটাই বিদেশী টাকা অর্জন করে ভাগ্যের চাকা ঘুরাবে। হয়তো বা চৌদ্দ পুরুষের ভিটে মাটি বিক্রি করে তারা বিদেশ পাড়ি জমাচ্ছে। সেখানে গিয়ে পেঁয়াজ কাটবে, টয়লেট পরিস্কার করবে।কিন্তু নিজের দেশে মাঠে ঘাটে চাষাবাদ বা ছোট কাজ করলে তাদের সন্মানহানি ঘটে।
বিমানবালা লাল নীল পরীদের শৈল্পিক কার্যকলাপ দেখছি।তাদের ঠোঁটের হাসি ,চকচকে  লিপিস্টিক,শরীরের লাবান্যময় ভাঁজ সত্যি নয়ন কাড়া সুন্দর। চুপচাপ নীরবতা ভেঙ্গে বিমানটি চলছে তো চলছেই।কত উচ্চতায় বা কোথায় আছি জানি না।শুধু শো শো শব্দে কান মাথা ভারী হয়ে আসছে।স্বামী, সন্তান বা কাছের কেউ সাথে থাকলে ভ্রমনটি অারো মধুময় হতো।
হঠাৎ ভয় ভয় ভৌতিকতা উড়ে এসে জুড়ে বসলো মাথায়। শুণ্যে ঝুলন্ত বিমানটি যদি দুর্গঠনার শিকার হয়, তখন কি হবে? বাঁচার তো কোন উপায় নাই।এসব ভেবে হাত পা অবশ হয়ে আসতে থাকে। বিমানের জানালা দিয়ে বাহিরে চোখ করি প্রসারিত। সাদা তূলোর মতো মেঘ ভেসে আছে।সেই মেঘের বুক ছিড়ে আমাদের বিমানটি দৌড়াছে। যাত্রিরা প্রায় সবাই রোমান্টিকতায় মজে আছে। এমন সময় মাইকে বলতে থাকে — আপনারা সিট বেল্ট বেঁধে ফেলুন,অল্প কিছুক্ষনের মধ্যে মোম্বাই বিমান বন্দরে অবতরণ করবো। মাটি স্পর্শ করার পুর্বে নীচের দিকে চোখ রাখলে সত্যি অপূর্ব দৃশ্যাবলি উপভোগ করা যায়।জোড়ে মাটিতে  ধাক্কা দিয়ে বিমানটি যখন দৌড়াতে শুরু করলো। বুঝে গেলাম এবার কিছুক্ষনের মধ্যে মোম্বাইয়ের জনপদে মিশে যাবো।
লেখকঃ কবি,লায়ন্স,রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

একটি ভ্রমন কাহিনীর ভালো লাগার রোমান্সগুলো

আপডেট টাইম : ০৩:৫৭:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ জুলাই ২০২১
ড. গোলসান আরা বেগমঃ ঢাকার আগারগাঁও নিজ বাসভবন থেকে ২০১৯ সালে ১২ ডিসেম্বরের দিকে যাত্রা শুরু করি ভারতের অঙ্গরাজ্য মোম্বাইয়ের উদ্দ্যেশে। লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যানেল এর ৩০ জন সদস্য গ্রুপ টুরে বেরিয়ে পড়ি। দি লায়ন্স ক্লাব অফ প্রতিতি এর নেত্রী শামীমা নাজনীন ছিলো আমার ট্যুর পার্টনার। অতিতে তার সাথে আরো কয়েক বার বিভিন্ন রাষ্ট্রে গিয়েছি বেড়াতে গ্রুপ টুরে।
সে সব ট্যুরের স্মৃতি রুমন্থন করতে বসলে হারিয়ে যাই অসীমের মাঝে। পৃথিবী এতো সুন্দর তা ঘর থেকে পা বের না করলে অজানা রয়ে যেতো। অামার গলায় ঝুলানো ছিলো বাংলাদেশ কৃষকলীগের লঘু খচিত লাল সবুজের মাফলার। ১৬ ডিসেম্বরে জয়বাংলা  স্লোগান  লিখে দিয়ে পাহাড়ের পাদ দেশে দাঁড়িয়ে ওঠানো অামার  ছবিটি ফেইজ বুকে পোষ্ট দিয়ে বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস উদযাপন করতে ভুল করিনি।
ঢাকা শাহজালাল বিমান বন্দরে ঢোকেই  আমাদের দল ভুক্ত টুরিষ্টদের সাথে দেখা হয়।বিশেষ করে স্বদেশ রঞ্জন সাহা ও মায়া রাণী, এই দম্পতি ছিলো বাড়তি আকষর্ন।ইমিগ্রেশান বুথ ক্রস করতেই আই কন্টাক হয় স্বদেশ সাহার সাথে। আমি চিৎকার করে বলতে থাকি –দাদা আপনার আমন্ত্রণ রক্ষা করতেই এবার ভ্রমনে এলাম।ওপাশ থেকে অারো একজন বলে উঠে ৬০% সদস্য এসেছে দাদার সৌজন্যে।
আমি আনন্দ উচ্ছাসে বলতে থাকি-দেখতে হবে না স্বদেশ সাহা কে । কিশোরগঞ্জ জেলার মাটি ও মানুষোর লায়ন্স নেতা স্বদেশ সাহা। সেবামূলক লায়ন্স জগতে তার রয়েছে দেশী ও বিদেশী পর্যায়ে অগণিত সুখ্যাতি।তিনি তারকা খচিত  একজন লায়ন্স নেতা অথ্যাৎ লায়ন্স আইডল। মুক্ত হস্তে দান করার উদাহারণ রয়েছে ভুরিভুরি তাঁর।তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ হলেও মসজিদ নির্মাণ করে দিয়ে হয়েছেন অনন্য। কিশোরগঞ্জে হাজার হাজার স্কুল ছাত্রদের মাঝে আজিমউদ্দিন স্কুলের মাঠে স্কুল ব্যাগ বিতরণ করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
শামীমা নাজনিনের পায়ে ব্যথা, ক্ষেত্র বিশেষে হুইল চেয়ার ব্যবহার করার ব্যবস্থা করেছেন সুদীর্ঘ যাত্রা পথে। বিমানে ওঠা,নামা, ইমিগ্রেশান ক্রস করার সময় প্রতি ক্ষেত্রেই হুইল চেয়ারের সেবা পেয়েছেন অটোমেটিক ভাবে। আমি তার সাথে খুশগল্প করতে করতে ভারতীয় বিমান ইন্ডিগোর দরজায় পৌঁছে চমকে যাই। একটি শিশু প্রথম সিটে বসে আছে দুই পা বেন্ডেজ করা লম্বা করে। মনে মনে বলি – কেন এতো কষ্টের ব্যথা শিশুটিকে বইতে হচ্ছে।কি তার দোষ। সেও যাবে চেন্নাই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে।
 দুপুর একটার দিকে আকাশ পথে বাতাসে ভেসে মোম্বাইয়ের দিকে যাত্রা শুরু করি।মনটা কিছুটা হলেও খারাপ ছিলো, কারণ ১২ দিন পর অামার ছোট ছেলের বিয়ে,অনেক কাজের চাপ রেখেই বেড়িয়ে পরছি।কারণ অামি শারিরীক ভাবে অসুস্থ্য,ফুসফুসে ইনফেকশান হয়েছে। ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে  ট্রিটমেন্ট করিয়েছি।তারপরও ফেরার  পথে চেন্নাইয়ে ডাক্তার দেখানোটাও ছিলো জরুরী।
আগামী চার মাস পর আমার বয়স ষাটে পৌঁছে যাবে।অবসর জীবন শুরু হবে। নিজের হাতে গড়া কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে বাইশ বছর পেরিয়ে অবসরে যাওয়া কত যে কষ্টের তা মনকে বোঝাতে পারছি না। কিন্তু সৃস্টির বিধান মেনে নিতে তো হবেই।তারপরও হৃদয়ের তোলপাড় বন্ধ হয় না।গতকাল বুড়ু বয়সে পিএইচডি ডিগ্রির সর্বশেষ পরীক্ষাটা দিতে পেরে মাথাটা হালকা মনে হচ্ছে।জীবনের শেষ স্বপ্নটা পূরণ হতে যাচ্ছে। বাবার আশা, মায়ের সহনশীলতার প্রতি এটাই আমার চূড়ান্ত উপহার।
বিমানের মাঝামাঝি জায়গায় আমার সিট।জানা শুনা সঙ্গী সাথী কেউ নেই।যাত্রীরা কেউ ঘুমাচ্ছে,কেউ করছে চুপচাপ খুশগল্প।অন্যরা নীরবে কি ভাবছে জানি না।আমি কাগজ কলমে যুদ্ধ শুরু করে দেই।কিছু মনের ভাবনা তুলে ধরার চেস্টা করি। লিখতে বসলে মনটা ফুরফুরে হয়ে যায়। আরো পুলকিত হই সে লেখাটি ফেইজ বুকে পোষ্ট দিতে পারলে। কেউ পড়ুক বা না পড়ুক, এই কাজটি অব্যহত রাখবো, না ফেরার দেশে চলে যাওয়ার পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত।
জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি কোর্সে ভর্তি হওয়ার সময় নানা জনে ব্যঞ্জ করে বলেছে — বুড়ু বয়সে এই ডিগ্রি নিয়ে কি করবে।আমি উত্তরে বলেছিলাম — কবরে নিয়ে যাবো। পারো যদি লিখে দিও কবরের দেয়ালে — এখানে ঘুমিয়ে আছে সেই ডক্টরেটধারী মহা বোকা মেয়েটি।যিনি অনবরত সৃষ্টির কল্যাণে কিছু করার জন্য চেষ্টা করেছেন।কিন্তু সামাজিক নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে দুই হাত খুলে ইচ্ছামত পারেননি মনের মাধুরী ছড়িয়ে দিতে।
কলম বন্ধ করে দেখি আমার চার পাশে তরুন যাত্রীরা অনলাইনে ডুবে আছে।কথা প্রসঙ্গে জানতে পারলাম, তারা বাংলাদেশ থেকে শ্রম বিক্রি করতে যাচ্ছে মধ্য প্রাচ্যে।উদ্দেশ্য একটাই বিদেশী টাকা অর্জন করে ভাগ্যের চাকা ঘুরাবে। হয়তো বা চৌদ্দ পুরুষের ভিটে মাটি বিক্রি করে তারা বিদেশ পাড়ি জমাচ্ছে। সেখানে গিয়ে পেঁয়াজ কাটবে, টয়লেট পরিস্কার করবে।কিন্তু নিজের দেশে মাঠে ঘাটে চাষাবাদ বা ছোট কাজ করলে তাদের সন্মানহানি ঘটে।
বিমানবালা লাল নীল পরীদের শৈল্পিক কার্যকলাপ দেখছি।তাদের ঠোঁটের হাসি ,চকচকে  লিপিস্টিক,শরীরের লাবান্যময় ভাঁজ সত্যি নয়ন কাড়া সুন্দর। চুপচাপ নীরবতা ভেঙ্গে বিমানটি চলছে তো চলছেই।কত উচ্চতায় বা কোথায় আছি জানি না।শুধু শো শো শব্দে কান মাথা ভারী হয়ে আসছে।স্বামী, সন্তান বা কাছের কেউ সাথে থাকলে ভ্রমনটি অারো মধুময় হতো।
হঠাৎ ভয় ভয় ভৌতিকতা উড়ে এসে জুড়ে বসলো মাথায়। শুণ্যে ঝুলন্ত বিমানটি যদি দুর্গঠনার শিকার হয়, তখন কি হবে? বাঁচার তো কোন উপায় নাই।এসব ভেবে হাত পা অবশ হয়ে আসতে থাকে। বিমানের জানালা দিয়ে বাহিরে চোখ করি প্রসারিত। সাদা তূলোর মতো মেঘ ভেসে আছে।সেই মেঘের বুক ছিড়ে আমাদের বিমানটি দৌড়াছে। যাত্রিরা প্রায় সবাই রোমান্টিকতায় মজে আছে। এমন সময় মাইকে বলতে থাকে — আপনারা সিট বেল্ট বেঁধে ফেলুন,অল্প কিছুক্ষনের মধ্যে মোম্বাই বিমান বন্দরে অবতরণ করবো। মাটি স্পর্শ করার পুর্বে নীচের দিকে চোখ রাখলে সত্যি অপূর্ব দৃশ্যাবলি উপভোগ করা যায়।জোড়ে মাটিতে  ধাক্কা দিয়ে বিমানটি যখন দৌড়াতে শুরু করলো। বুঝে গেলাম এবার কিছুক্ষনের মধ্যে মোম্বাইয়ের জনপদে মিশে যাবো।
লেখকঃ কবি,লায়ন্স,রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।