জন্মনিয়ন্ত্রণসহ পানের রয়েছে আশ্চর্য গুণ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাঙালিদের বিভিন্ন উৎসব আয়োজনে পান ছাড়া যেন চলেই না। খাওয়ার পর একটা পান চিবুতে চিবুতে গল্পে মশগুল হওয়ার দৃশ্য আমাদের দেশে নতুন কিছু নয়। আবার প্রতিদিনই দুই-চারটা পান খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে অনেকেরই। মধ্যবয়সীদের মধ্যেই এই অভ্যাস বেশি। তাইতো অনেকের ঘরেই পান থাকে।

অনেকেরই ধারণা পান খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। তবে ধারণাটি পুরোপুরি সঠিক নয়। পানের দোষ গুণ দুটোই রয়েছে। পান অনেক কঠিন রোগ থেকে আমাদের মুক্ত রাখে। যা সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। তাই চলুন আজ জেনে নেয়া যাক পান খাওয়ার আশ্চর্য উপকারিতাগুলো-

চর্মরোগ সারায়

দেহের কোথাও চুলকানি বা পাঁচড়া হলে সেখানে পান পাতার রস লাগিয়ে দিলে কয়েক দিনের মধ্যে তা ভালো হয়ে যায়।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে

পান রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে বলে গবেষণায় জানা গেছে। ফলে পানে রয়েছে ডায়াবেটিস প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য। পানে যে সব উপাদান ব্যবহার করা হয় অর্থাৎ সুপারি, চুন, জর্দা ইত্যাদি চিবানোর ফলে আমাদের রক্তের শর্করা সঠিক থাকে। এতে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবন কমে যায়। এমনকি যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা ইতিমধ্যে আছে, তাদেরও দমন হবে।

ওজন কমাতে সাহায্য করে

যারা ওজন কমাতে ইচ্ছুক তারা পান খেতে পারেন। পান খেলে ওজন বাড়েনা, অপরদিকে আপনি অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকতে পারবেন। তাই ডায়েটের জন্য পান উপকারী।

মাথাব্যথা দূর করে

আপনার যদি মাথায় অনেক ব্যথা অনুভূত হয়, তাহলে এক্ষেত্রেও পান আপনাকে সাহায্য করতে পারে। পান পাতা বেটে মাথায় লাগিয়ে রাখুন। এতে আপনার মাথা ঠাণ্ডা হবে এবং ব্যথা দূর হবে।

হজমে সাহায্য করে

পান খেলে লালাগ্রন্থির নিঃসরণ বেড়ে যায়। এ লালার কারণেই হজমের প্রথম ধাপের কাজ শুরু হয়। লালার মধ্যে থাকা বিভিন্ন এনজাইম বা উৎসেচক খাদ্যকে কণায় ভাঙতে সাহায্য করে যার ফলে হজম ভালো হয়। শুধু পান পাতা চিবিয়ে খেলেও এ উপকার পাওয়া যায়।

মুখের দুর্গন্ধ দূর করে

খাবার গ্রহণের পর তার কণা মুখের ভেতরে, দাঁতের ফাঁকে লেগে থাকে। এগুলো ব্যাকটেরিয়া পচিয়ে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। পান খেলে তার রস জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে এসব ব্যাকটেরিয়াকে জন্মাতে দেয় না। যার ফলে মুখের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং দুর্গন্ধমুক্ত হয়।

যৌন শক্তি বাড়ায়

এটি একটি পুরনো প্রথা তবে কার্যকর। পানের রস যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে। আগেকার দিনে নববিবাহিতরা বেশি বেশি পান খেতেন।

গ্যাস্ট্রিক আলসার দূর করে

পান খেলে পেটে বায়ু জমে কম। যার ফলে গ্যাস্ট্রিক ও আলসার সৃষ্টির সুযোগ পায় না। পানের রস হজমে সাহায্য করায় তা পেটে বদ গ্যাস তৈরিও রোধ করে। যার ফলে পেট ফাঁপে না।

জন্মরোধ করে

পান গাছের শিকড় বেটে রস করে খেলে ছেলেপুলে হয় না। জন্ম নিরোধক বড়ি না খেয়েও এটা জন্মনিয়ন্ত্রণে সেবন করা যায়। বিভিন্ন দেশের গবেষণায় এর প্রমাণও মিলেছে।

উঁকুন মারে

মাথায় উঁকুন হলে গোসলের কিছুক্ষণ আগে পান পাতার রস মাথায় লাগিয়ে বসে থাকলে উঁকুন মারা যায়। এ কাজে ঝাল জাতীয় পান হলে ভালো হয়।

ফোঁড়া ফাটায়

পান পাতার চকচকে সবুজ পিঠে ঘি মাখিয়ে একটু সেঁক দিয়ে গরম করে ফোঁড়ার ওপর লাগিয়ে দিলে দ্রুত ফোঁড়া পেকে ফেটে যায়। আবার পাতার উল্টো পিঠে ঘি মাখিয়ে একইভাবে বসিয়ে রাখলে তা পুঁজ টেনে বের করে আনে। ঘিয়ের বদলে ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করেও একই ফল পাওয়া যায়।

মুখ ও দাঁতের উপকার করে

দাঁতের মাঢ়ি দূষিত হলে ফুলে যায় এবং ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে পানের রসের সঙ্গে অল্প পানি মিশিয়ে কুলকুলি করলে ধীরে ধীরে ক্ষত শুকিয়ে যায়। মুখগহ্বরে কোনো ক্ষত হলে পানের রসে তার উপশম হয়। পানের রসে এসকরবিক এসিড আছে যা একটি চমৎকার এন্টিঅক্সিডেন্ট। এটা মুখের ক্যান্সারও প্রতিরোধ করে।

নখের ব্যথা সারায়

অনেক সময় নখের কোণায় ব্যথা হয়। এ অবস্থায় সেখানে কয়েক ফোঁটা পানের রস দিলে ব্যথা চলে যায়।

আঁচিল দূর করে

শরীরে আঁচিল হলে তার উপর কয়েক দিন পানের রস লাগান। এতে তা ধীরে ধীরে খসে পড়বে আঁচিল এবং ওই জায়গায় আর তৈরিও হবে না।

সর্দি বের করে

বুকের ভেতর কফ/সর্দি বা শ্লেষ্মা জমা হলে তা বের করতে পানের রস কার্যকর। এ ক্ষেত্রে পানের রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে কয়েক দিন খেতে হবে। এতে বুকে জমা কফ বেরিয়ে যাবে।

ক্ষত ও ব্যথা সারায়

পানের বেদনানাশক ও ক্ষত সারানোর ক্ষমতা আছে। কোথাও ব্যথা হলে পান পাতা বেটে মলমের মতো সেখানে লেপে দিলে দ্রুত ব্যথা কমে। দেহের ভেতরে কোথাও ব্যথা হলে পানের রস করে পানিতে মিশিয়ে তা শরবতের মতো খেতে হবে। শুধু পান পাতা চিবিয়ে এর রস খেলেও এ উপকার মিলবে।

ঠাণ্ডা লাগা দূর করে

ঠাণ্ডা লাগা সারাতে পান চমৎকার কাজ করে। ঠাণ্ডা লাগলে সর্দি কাশিও হয়। এক্ষেত্রে পানপাতা গরম পানি দিয়ে ছেঁচে রস বের করতে হবে। এ রসের সঙ্গে এক চিমটি গোলমরিচের গুঁড়া ও আদার রস  মিশিয়ে খেতে হবে।

ক্ষুধা বৃদ্ধি করে

পাকস্থলী গড়বড় হলে সবই উল্টে যায়। খিদেও লাগে না। পাকস্থলীতে অম্লমান বা পিএইচের মাত্রা স্বাভাবিক না থাকলেই এরূপ হয়। পান তা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। শুধু পান পাতা চিবিয়ে খেলেও ক্ষুধা বাড়বে।

এন্টিসেপটিকের কাজ করে

কোথাও কেটে গেলে দ্রুত সেখানে পানের রস লাগিয়ে দিলে জীবাণু সংক্রমণের ভয় থাকে না। পান পাতা পলিফেনল বিশেষত চাভিকল নামক রাসায়নিক উপাদানে পূর্ণ। এটা জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করে। এ ছাড়া সেখানে ফোলাও বন্ধ করে, ব্যথার উপশম করে।

পিঠে ব্যথার উপশম করে

নানা কারণে পিঠে ব্যথা হতে পারে। শোয়া থেকেও হয়। বয়স্কদের এ সমস্যা প্রায়ই দেখা দেয়। মাংসপেশির টান থেকেও এরূপ ব্যথা হতে পারে। এক্ষেত্রে ব্যথা জায়গায় পান পাতা দিয়ে সেঁক দিলে উপকার মেলে। এ ছাড়া পান পাতার রসের সঙ্গে নারকেল তেল মিশিয়ে ব্যথা জায়গায় মালিশ করলে ব্যথা কমে।

মূত্র স্বল্পতা ও মূত্রকৃচ্ছতার উপশম করে

যাদের কম প্রস্রাব হয় বা প্রস্রাব করতে গেলে কষ্ট হয় তারা পান পাতার রস সেবন করে উপকার পেতে পারেন। এক্ষেত্রে একটি পান পাতা ছেঁচে রস করে নিতে হবে। সেই রস একটু দুধের সঙ্গে মিশিয়ে পান করলে উপকার হবে। এতে দেহে পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়বে ও মূত্রকৃচ্ছতা চলে যাবে।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়

পান পাতায় আছে চমৎকার এন্টিঅক্সিডেন্ট যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় ও দেহে ক্যান্সার সৃষ্টি প্রতিরোধ করে। এজন্য রোজ ১০-১২টি পান পাতা পানিতে ৫ মিনিট জ্বাল দিতে হবে। এরপর তা নামিয়ে ছেঁকে নিতে হবে। একটু ঠাণ্ডা হলে তাতে কয়েক ফোটা মধু মিশিয়ে কুসুম গরম থাকতেই পান করুন। রোজ এটি খেতে পারলে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যাবে।

শিশুদের পেট ব্যথা কমায়

পেটে ব্যথা হলে ছোট্ট শিশুরা কাঁদতে থাকে। বড় শিশুরা পেট চেপে ধরে কাতরাতে থাকে। এ অবস্থায় পান পাতার চকচকে পিঠে নারিকেল তেল মাখিয়ে তা গরম করে সেই পাতা পেটের ওপর চেপে ধরে সেঁক দিতে হবে। ৩-৪ মিনিট পর পর এভাবে কয়েকবার সেঁক দিলে পেটে ব্যথা কমে যাবে। খেয়াল রাখতে হবে সেঁকের সময় তাপটা যেন বেশি না হয়।

পোড়া সারায়

পুড়ে গেলে সেখানে প্রচণ্ড জ্বালাপোড়া হয়। পোড়া জায়গায় পান পাতা বেটে তার সঙ্গে ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে প্রলেপ দিলে যন্ত্রণার উপশম হবে ও পোড়া জায়গা শুকিয়ে যাবে।

তবে পানের কিছু দোষও রয়েছে। পানের নতুন পাতা শ্লেষ্মা বাড়ায়। পান হজম করে বটে তবে বেশি খেলে অজীর্ণ হয়। পানের  বোঁটা ও শিরার রস ইন্দ্রিয়ের শক্তি কমিয়ে দেয়। তাই পানের বোঁটা খাওয়া উচিত নয়। যারা রুগ্ন, দুর্বল, ক্ষীণ স্বাস্থ্যের তারা পান খাবেন না। মূর্চ্ছা রোগী, যক্ষ্মা রোগী ও যাদের চোখ উঠেছে তারও পান খাবেন না।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর