ঢাকা ০৫:৫৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

এক বিঘার ধান বিক্রি পাঁচ লাখ টাকায়!

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৪১:০৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুন ২০২১
  • ১৭৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মাত্র এক বিঘা জমিতে এক ফসল আবাদ করে পাঁচ লাখ টাকার ধান বিক্রি করে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কৃষক মিলন হোসেন।

উচ্চ ফলনশীল এ নতুন জাতের ধান উদ্ভাবিত হওয়ায় নিজের মেয়ের নামে ধানের নাম রেখেছেন “ফাতেমা” ধান।

মিলন হোসেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের চক গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি একজন মুদি দোকানি। সেইসঙ্গে আধুনিক চাষাবাদে রয়েছে তার ব্যাপক আগ্রহ। গতানুগতিক কৃষির পরিবর্তে তিনি নতুন ধান উদ্ভাবন করে এ সাফল্য দেখিয়েছেন। তার দেখা দেখি এলাকার অন্য কৃষকরাও এখন নতুন এ জাতের ধান চাষের জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

কৃষক মিলন হোসেন  বলেন, তিন বছর আগে আমি ব্রি-৫১ জাতের ধান চাষ করি। সে সময় আমার ধানের জমিতে এক গোছা ধানের গাছ দেখা যায় অস্বাভাবিক। অন্য গাছের তুলনায় গাছগুলো বেশ শক্ত, লম্বা এবং মোটা। আমি গাছগুলোকে তুলে ফেলে না দিয়ে অন্য ধানের সঙ্গে রেখে দিই। পরে দেখি ওই ধান গাছের শীষে অনেকগুলো ধান। আমি সেই গোছার ধানগুলোকে আলাদা করে কেটে রেখে দিলাম। পরবর্তীতে সেই ধানগুলো আলাদা করে চারা দিয়ে অল্প কিছু জমিতে চাষ করি। এর পরের বছর ওই ধান থেকে বীজ সংগ্রহ করে পুনরায় ২ বিঘা জমিতে এ ধানের চাষ করি।

এ ধানের জাতের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্য ধানের মতেই এ ধানের চাষ পদ্ধতি। আউশ, আমন ও বোরো তিন মৌসুমেই এ ধানের চাষ করা যায়। গাছের উচ্চতা অন্য ধানের তুলনায় বড়। গাছের বয়স ১০০-১১০ দিন। গাছগুলো শক্ত হওয়ায় হেলে পড়ে না। আর এক একটি ধানের শীষে ৭শ থেকে ৭৫০টা করে ধান হয়। যা সাধারণ ধানের তুলনায় ৬ গুণ। যার ফলে এর উৎপাদনও অনেক বেশি। রোগ ও পোকা-মাকড়ের আক্রমষ তুলনামূলক কম। এছাড়া চিকন চাল হয় এবং ভাতও খেতে খুব সুস্বাদু।

ধানের নামকরণ সম্পর্কে তিনি জানান, যেহেতু এই ধানের কোনো নাম নেই তাই আমি আমার মেয়ের নাম অনুসারে এ ধানের নাম রেখেছি ফাতেমা ধান।

মিলন হোসেন আরো বলেন, এই বোরো মৌসুমে আমি এক বিঘা জমিতে ৪৩ মণ ধান পেয়েছি। যেহেতু এই ধান ইতোপূর্বে কেউ চাষ করেনি। তাই আশপাশের এলাকার চাষিরা এসে বীজ হিসেবে এই ধান কিনে নিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে আমি ৩০০ টাকা কেজি হিসেবে ধান বিক্রি করেছি। যা প্রায় ৫ লাখ টাকার উপরে বিক্রি করেছি।

তিনি আরো বলেন, আমি চাই সরকার এই ধান সংগ্রহ করে আরো উন্নত করে কৃষকদের কাছে পৌঁছে দিক। এছাড়া আমি এলাকায় কৃষকদের এ ধান চাষ করার পরামর্শ দিচ্ছি। আমার মেয়ের নামের ধান সবাই চাষ করবে এতেই আমার আনন্দ।

একই এলাকার কৃষক আমিরুল ইসলাম  বলেন, আমরা যে সব ধান চাষ করি তার তুলনায় এ ধান তিনগুণ ফলন বেশি হয়। এর খড়ও গবাদিপশুর উন্নতমানের খাবার। আমরা চাই সরকারিভাবে এ ধান চাষের বিস্তার করা হোক।

আরেক কৃষক সিরাজুল ইসলাম  বলেন, আমি শুনেছিলাম কৃষক মিলনের জমিতে অনেক ভালো ধান হয়েছে। এলাকার মানুষের কথা শুনে আমি এই ধান দেখতে এসেছি। এসে খুবই ভালো লেগেছে। আগামীতে এই ধান চাষের জন্য বীজ নিয়েছি।

কৃষক শওকত আলী  বলেন, আমি দুই বিঘা জমিতে হাইব্রিড জাতের ধানের আবাদ করেছি। তবে আমার দুই বিঘাতে যে ধান হয়েছে। তার চেয়ে মিলনের “ফাতেমা” ধান এক বিঘাতে বেশি হয়েছে। আগামীতে আমি এই ধানের চাষ করবো কারণ এটার ফলন অনেক বেশি।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাঈম হোসেন , সাধারণত প্রতিটি ধানের শীষে ১৫০-১৬০টি করে ধান থাকে। কিন্তু কৃষক মিলনের উদ্ভাবিত ধানের প্রতিটি শীষে ৭০০-৭৫০টি করে দানা হয়েছে। ধানের ফলন বিঘাপ্রতি ৪০-৫০ মণ হতে পারে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর বোরো মৌসুমে ১ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড, ৭ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। হেক্টর প্রতি গড় ফলন হয়েছে হাইব্রিড ৭ দশমিক ৮ মেট্রিকটন এবং উফশী হেক্টরপ্রতি ৫ দশমিক ৮ মেট্রিকটন।

মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ  জানান, কৃষক মিলন হোসেন নিজের প্রচেষ্টায় ব্রিধান-৫১ জাতের মধ্য থেকে কয়েকটা ধানের গোছা সংগ্রহ করে নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন। আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে কৃষকদের আধুনিক ধান চাষে উদ্বুদ্ধ এবং প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছি। আমরা কৃষক মিলনের উদ্ভাবিত ধানের নমুনা সংগ্রহ করেছি। সেইসঙ্গে আগামীতে এ ধানের বিস্তার লাভ করবে বলে আশাকরছি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে একসাথে সাকিব-তামিম

এক বিঘার ধান বিক্রি পাঁচ লাখ টাকায়!

আপডেট টাইম : ১০:৪১:০৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুন ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মাত্র এক বিঘা জমিতে এক ফসল আবাদ করে পাঁচ লাখ টাকার ধান বিক্রি করে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কৃষক মিলন হোসেন।

উচ্চ ফলনশীল এ নতুন জাতের ধান উদ্ভাবিত হওয়ায় নিজের মেয়ের নামে ধানের নাম রেখেছেন “ফাতেমা” ধান।

মিলন হোসেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের চক গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি একজন মুদি দোকানি। সেইসঙ্গে আধুনিক চাষাবাদে রয়েছে তার ব্যাপক আগ্রহ। গতানুগতিক কৃষির পরিবর্তে তিনি নতুন ধান উদ্ভাবন করে এ সাফল্য দেখিয়েছেন। তার দেখা দেখি এলাকার অন্য কৃষকরাও এখন নতুন এ জাতের ধান চাষের জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

কৃষক মিলন হোসেন  বলেন, তিন বছর আগে আমি ব্রি-৫১ জাতের ধান চাষ করি। সে সময় আমার ধানের জমিতে এক গোছা ধানের গাছ দেখা যায় অস্বাভাবিক। অন্য গাছের তুলনায় গাছগুলো বেশ শক্ত, লম্বা এবং মোটা। আমি গাছগুলোকে তুলে ফেলে না দিয়ে অন্য ধানের সঙ্গে রেখে দিই। পরে দেখি ওই ধান গাছের শীষে অনেকগুলো ধান। আমি সেই গোছার ধানগুলোকে আলাদা করে কেটে রেখে দিলাম। পরবর্তীতে সেই ধানগুলো আলাদা করে চারা দিয়ে অল্প কিছু জমিতে চাষ করি। এর পরের বছর ওই ধান থেকে বীজ সংগ্রহ করে পুনরায় ২ বিঘা জমিতে এ ধানের চাষ করি।

এ ধানের জাতের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্য ধানের মতেই এ ধানের চাষ পদ্ধতি। আউশ, আমন ও বোরো তিন মৌসুমেই এ ধানের চাষ করা যায়। গাছের উচ্চতা অন্য ধানের তুলনায় বড়। গাছের বয়স ১০০-১১০ দিন। গাছগুলো শক্ত হওয়ায় হেলে পড়ে না। আর এক একটি ধানের শীষে ৭শ থেকে ৭৫০টা করে ধান হয়। যা সাধারণ ধানের তুলনায় ৬ গুণ। যার ফলে এর উৎপাদনও অনেক বেশি। রোগ ও পোকা-মাকড়ের আক্রমষ তুলনামূলক কম। এছাড়া চিকন চাল হয় এবং ভাতও খেতে খুব সুস্বাদু।

ধানের নামকরণ সম্পর্কে তিনি জানান, যেহেতু এই ধানের কোনো নাম নেই তাই আমি আমার মেয়ের নাম অনুসারে এ ধানের নাম রেখেছি ফাতেমা ধান।

মিলন হোসেন আরো বলেন, এই বোরো মৌসুমে আমি এক বিঘা জমিতে ৪৩ মণ ধান পেয়েছি। যেহেতু এই ধান ইতোপূর্বে কেউ চাষ করেনি। তাই আশপাশের এলাকার চাষিরা এসে বীজ হিসেবে এই ধান কিনে নিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে আমি ৩০০ টাকা কেজি হিসেবে ধান বিক্রি করেছি। যা প্রায় ৫ লাখ টাকার উপরে বিক্রি করেছি।

তিনি আরো বলেন, আমি চাই সরকার এই ধান সংগ্রহ করে আরো উন্নত করে কৃষকদের কাছে পৌঁছে দিক। এছাড়া আমি এলাকায় কৃষকদের এ ধান চাষ করার পরামর্শ দিচ্ছি। আমার মেয়ের নামের ধান সবাই চাষ করবে এতেই আমার আনন্দ।

একই এলাকার কৃষক আমিরুল ইসলাম  বলেন, আমরা যে সব ধান চাষ করি তার তুলনায় এ ধান তিনগুণ ফলন বেশি হয়। এর খড়ও গবাদিপশুর উন্নতমানের খাবার। আমরা চাই সরকারিভাবে এ ধান চাষের বিস্তার করা হোক।

আরেক কৃষক সিরাজুল ইসলাম  বলেন, আমি শুনেছিলাম কৃষক মিলনের জমিতে অনেক ভালো ধান হয়েছে। এলাকার মানুষের কথা শুনে আমি এই ধান দেখতে এসেছি। এসে খুবই ভালো লেগেছে। আগামীতে এই ধান চাষের জন্য বীজ নিয়েছি।

কৃষক শওকত আলী  বলেন, আমি দুই বিঘা জমিতে হাইব্রিড জাতের ধানের আবাদ করেছি। তবে আমার দুই বিঘাতে যে ধান হয়েছে। তার চেয়ে মিলনের “ফাতেমা” ধান এক বিঘাতে বেশি হয়েছে। আগামীতে আমি এই ধানের চাষ করবো কারণ এটার ফলন অনেক বেশি।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাঈম হোসেন , সাধারণত প্রতিটি ধানের শীষে ১৫০-১৬০টি করে ধান থাকে। কিন্তু কৃষক মিলনের উদ্ভাবিত ধানের প্রতিটি শীষে ৭০০-৭৫০টি করে দানা হয়েছে। ধানের ফলন বিঘাপ্রতি ৪০-৫০ মণ হতে পারে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর বোরো মৌসুমে ১ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড, ৭ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। হেক্টর প্রতি গড় ফলন হয়েছে হাইব্রিড ৭ দশমিক ৮ মেট্রিকটন এবং উফশী হেক্টরপ্রতি ৫ দশমিক ৮ মেট্রিকটন।

মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ  জানান, কৃষক মিলন হোসেন নিজের প্রচেষ্টায় ব্রিধান-৫১ জাতের মধ্য থেকে কয়েকটা ধানের গোছা সংগ্রহ করে নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন। আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে কৃষকদের আধুনিক ধান চাষে উদ্বুদ্ধ এবং প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছি। আমরা কৃষক মিলনের উদ্ভাবিত ধানের নমুনা সংগ্রহ করেছি। সেইসঙ্গে আগামীতে এ ধানের বিস্তার লাভ করবে বলে আশাকরছি।