আশারাফুল মোসাদ্দেক
ঋতু ও জার্মানির ফুল
ইউরোপে মূলত তিনটি সিজন— শীতকাল, বসন্তকাল এবং শরৎকাল। কিন্তু এ বছর ২০১৫ সালে ইউরোপ প্রায় ষাট বছর পর আবার অভিজ্ঞতা নিলো গ্রীষ্মকালের। জুন এর শেষ সপ্তাহ থেকে জুলাই এর প্রথম সপ্তাহজুড়েই প্রচণ্ড গরম— ৩৭-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ইউরোপের অনেক হোটেলেই এসি’র ব্যবস্থা নেই এবং কোনো সিলিং ফ্যান বা টেবিল ফ্যান অথবা প্যাডেস্ট্যাল ফ্যানের ব্যবস্থা নেই।
কারণ ইউরোপে এমন গরম এ বছরের মতো সচারাচর পড়ে না। তাই এবারের এ ব্যতিক্রমে দেখা গেছে অনেকেই বাধ্য হয়ে দোকান থেকে টেবিল ফ্যান কিনে নিয়ে যাচ্ছে। বাতাসে আর্দ্রতা খুবই কম থাকায় ঘেমে ওঠার মতো কিছু নয়। তবে রোদটা খুবই কড়া। তবু এ কড়ারোদেই সূর্যস্নানে মেতে থাকতে দেখা গেছে ইউরোপীয় লোকজনকে। যেখানেই জলাশয় সেখানেই পাড়ে পাড়ে সূর্যস্নান। মনে হতে পারে যে এসব লোকজন কি বেকার ভাতা খায় আর রোদ পোহায়? অথবা ভেকেশন কাটাচ্ছে কিংবা ডেটিংয়ে মত্ত আছে। তবে দিনের আলো ফুরিয়ে আসতে থাকা মাত্রই কনকনে ঠাণ্ডা হিমেল হাওয়ার রাত হানা দিতে শুরু করে।
এখানে বলে রাখা ভালো যে এখন ইউরোপে এখন সকাল হচ্ছে সকাল ০৫-০০টায় আর সূর্যাস্ত হচ্ছে রাত ১০-০০টায়ঃ আর দিনের আলো ফুরিয়ে আকাশ অন্ধকার হচ্ছে রাত ১১-৩০মি এর পর। অন্যদিকে রাত ০৮-০০টার পর দোকানপাট সব বন্ধ হয়ে যায় যখন কিনা আকাশে হেলান দিয়ে মুচকি হাসে সূর্য। এর মধ্যেই লোকজন ডিনার সেরে নেয়। ঐ সময়ই লোকজন ঘুমিয়ে পড়ে পরদিন কাজে যাওয়ার প্রস্তুতি হিসাবে। শুধুমাত্র কিছুসংখ্যক খাবারের দোকান ও বার রাত ১০-০০ অবধি কিংবা তার পরও খোলা থাকে। এ এক আজীব দিবস-রাত্রির লুকোচুরি এখন গোটা ইউরোপে। যারা মুসলিম তাদের ১৮-১৯ঘন্টার কঠিণ রোজা রাখতে দেখলাম। এমনকি সূর্য অস্ত যাওয়ার আগেই পাহাড়ের কটিদেশে পুষ্পিত হয়ে ওঠতে দেখা যায় গোলচাঁদ। দিন আর রাতের এ ঝামেলা সমন্বয় করতেও এক সপ্তাহের বেশি সময় লেগে যায়।
ইউরোপেই এসে দেখলাম কবিগুরুর “ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে বহে কিবা মৃদু বায়” বাস্তবচিত্রটি। পৃথিবীতে এতো যে আশ্চর্য-সুন্দর অসংখ্য ধরনের ফুল আছে এবং এতো বিচিত্র প্রকারের ফল এর সমাহার আছে ইউরোপে গিয়ে এবার টের পেলাম। সিংহভাগ ফুলের নাম জানি না কিন্তু বিমোহিত হয়েছি এর রূপ-সৌন্দর্যে। জার্মানির পথে-প্রান্তরে আনাচে-কানাচে চোখে পড়ে এবং মন কেড়ে নেয় এমন সব ফুল ফোটে থাকতে দেখা যায়। এদের বৈচিত্র ও সৌন্দর্যের কোনো জুড়ি নেই। ১০০-১১০কিমি বেগে ছুটে চলা বাস থেকে সেসব ফুলের ছবি ধারণ করা সম্ভব ছিলো না। তবে যখন বাস থেকে নেমেছি, যখনই চোখে পড়েছে আর ক্যামেরার ব্যাটারিতে যতক্ষণ চার্জ আছে ফুলের ছবি তুলতে চেষ্টা করেছি। এসব অধিকাংশ ফুলই আমাদের দেশে ফোটে না।