ঢাকা ০২:১২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্বপ্নের ইউরোপ: পর্ব ০৩

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৫৫:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০১৬
  • ৩৭১ বার

আশরাফুল মোসাদ্দেক

জামার্নির মিউনিখে আছে Residenz Museum। এটি ১৯২০ সালে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় এবং বর্তমানে ইউরোপের সুন্দর একটি মিউজিয়াম হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে এতে প্রচুর বোমাবর্শন হয় এবং ১৯৪৫সালে মূল আদল ঠিক রেখে একে আবার পুর্ণনির্মাণ করা হয়েছে। এ মিউজিয়াম পরিদর্শন করলে তৎকালীন জার্মান রাজাদের জীবনযাপন শিল্প-সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। একজন মহিলা গাইড আমাদের মিউজিয়ামটি ঘুরিয়ে দেখালেন। এ মিউজিয়াম দেখতে গিয়ে এক সদ্যবিবাহিত উৎফুল্ল যুগল এবং একটি বিশাল সাদা স্বপ্নের লিম্যুজিন গাড়ির দেখা পাওয়া গেলো যা জুম করে অনেকদূর থেকে জনান্তিকে ধারণ করে নিলাম।

১৩০ কক্ষবিশিষ্ট এটি ছিলো Bavarian Dukes, নির্বাচকমণ্ডলী এবং রাজার ১৫০৮ থেকে ১৯১৮সাল পর্যন্ত আবাসস্থল। জার্মানি এলে এ মিউজিয়াম না দেখলে নাকি জার্মানি দেখাই অপূর্ণ থেকে যায়। এটি রত্নসামগ্রীর এর কোষাগার হিসেবে তৈরি করেন Duke Albert V যা আজ মধ্যযুগের প্রায় একহাজার বছরের রাজকীয় মুকুট, তলোয়ারসহ বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য সামগ্রীর ভাণ্ডার। এখানে রয়েছে নেপোলিয়নের সময় থেকে সংগৃহীত ৩০০,০০০ এর বেশি ধরনের মুদ্রা ও ব্যাংকনোটের বিশাল ভাণ্ডার।

জার্মানি পর্ব শেষ করার আগে এখানে একটি কথা ভুলে ফেলে যাচ্ছি তা হলো মিউনিখে Marienplatz অর্থাৎ City Center Central Square এবং English Garden পরিদর্শন করেছিলাম। এর মধ্যে City Center Central Square এর একটি ছবি দিলাম। কিন্তু English Garden এর ছবি দিতে পারলাম না কারণ ক্যামেরার ব্যাটারি ডাউন হয়ে গিয়েছিলো। তাই নেট থেকে নিয়ে কয়েকটি ছবি দিলাম। ১১৫৮ সাল থেকেই Marienplatz মিউনিখ শহরের মূল স্কোয়ার হিসেবে প্রচলিত হয়ে আসছে। মধ্যযুগ থেকেই এখানে বাজার ও বিভিন্ন টুর্নামেন্ট আয়োজন হতো। এ স্কোয়ার পরিদর্শনের জন্য বর্তমানে প্রতিবছর লক্ষলক্ষ দর্শনার্থীর সমাগম হয়।

জনগণের উন্মুক্ত পার্ক হিসেবে মিউনিখে English Garden ব্যবহৃত হয়। বিশাল এ পার্কে রয়েছে হ্রদ, প্রাকৃতিক শোভার বাগান, যা আঠার শতকের শেষভাগে ফ্রান্সের ল্যান্ডস্কেপ বাগানের আদলে তৈরি করা হয়েছে। এখানে উইক-এন্ড বা ভেকেশনে এতো তরুণ-তরুণীর সমাগম হয় যে দেখলেই মনে প্রশ্ন আসে এদের কী আর কোনো কাজ নেই। সবুজ বনানী আর শীতল হ্রদ কলিজাটাকে টেনে ছিঁড়ে ফেলে দিতে চায়। এখানে সারাদিন চলে অভিসারের ডেটিং, সূর্যস্নান আর জলকেলির উৎসব। ওয়াটার স্কীইং এর ব্যবস্থা আছে। বাগানটির আয়তন ৩.৭বর্গ কিমি বা ১.৪বর্গ মাইল অথবা ৩৭০হেক্টর কিংবা ৯১০ একর। এটি হলো ইউরোপের সর্ববৃহৎ পাবলিক পার্ক যা নিউইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্কের চেয়েও বড়। ১৭৮৯ সালে স্যার বেঞ্জামিন থমসন এর সূচনা করেন এবং পরবর্তীকালে কাউন্ট রামফোর্ডসহ অন্যান্যগণ এর পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করেন।

«গার্ডেনের মুখেই যেখানে কৃত্রিমভাবে জলের মধ্যে বিপুলস্রোত সৃষ্টিসহ কৃত্রিম ঢেউ তৈরি করা হয়েছে ওয়াটার স্কীইং এর জন্য। এঁকেবেঁকে যাওয়া হ্রদের দুপাশে বিপুলসংখ্যক স্বল্পপোশাকধারী বালক-বালিকাদের বিভিন্ন ভঙ্গিমায় দেখা যায়। এখানে দিনভর আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠে জার্মানির এবং ইউরোপের পর্যটক তরুণ-তরুণীরা। দেখেই শান্তি। ইউরোপের ঐ যে বলে না খেলনেওয়ালা খেলে আর দেখনেওয়ালা চোখ পাকায়। যদিও ইউরোপ মূলত তরুণদের তথাপি এখানে সিনিয়ররাও আসেন যেনো এসব দেখলেই মনের বয়সটা একলাফে একযুগ কমে যাবে। কিন্তু হায় মরিচাধরা দেহের বয়স তো কমে না কখনোই।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

স্বপ্নের ইউরোপ: পর্ব ০৩

আপডেট টাইম : ১১:৫৫:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০১৬

আশরাফুল মোসাদ্দেক

জামার্নির মিউনিখে আছে Residenz Museum। এটি ১৯২০ সালে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় এবং বর্তমানে ইউরোপের সুন্দর একটি মিউজিয়াম হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে এতে প্রচুর বোমাবর্শন হয় এবং ১৯৪৫সালে মূল আদল ঠিক রেখে একে আবার পুর্ণনির্মাণ করা হয়েছে। এ মিউজিয়াম পরিদর্শন করলে তৎকালীন জার্মান রাজাদের জীবনযাপন শিল্প-সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। একজন মহিলা গাইড আমাদের মিউজিয়ামটি ঘুরিয়ে দেখালেন। এ মিউজিয়াম দেখতে গিয়ে এক সদ্যবিবাহিত উৎফুল্ল যুগল এবং একটি বিশাল সাদা স্বপ্নের লিম্যুজিন গাড়ির দেখা পাওয়া গেলো যা জুম করে অনেকদূর থেকে জনান্তিকে ধারণ করে নিলাম।

১৩০ কক্ষবিশিষ্ট এটি ছিলো Bavarian Dukes, নির্বাচকমণ্ডলী এবং রাজার ১৫০৮ থেকে ১৯১৮সাল পর্যন্ত আবাসস্থল। জার্মানি এলে এ মিউজিয়াম না দেখলে নাকি জার্মানি দেখাই অপূর্ণ থেকে যায়। এটি রত্নসামগ্রীর এর কোষাগার হিসেবে তৈরি করেন Duke Albert V যা আজ মধ্যযুগের প্রায় একহাজার বছরের রাজকীয় মুকুট, তলোয়ারসহ বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য সামগ্রীর ভাণ্ডার। এখানে রয়েছে নেপোলিয়নের সময় থেকে সংগৃহীত ৩০০,০০০ এর বেশি ধরনের মুদ্রা ও ব্যাংকনোটের বিশাল ভাণ্ডার।

জার্মানি পর্ব শেষ করার আগে এখানে একটি কথা ভুলে ফেলে যাচ্ছি তা হলো মিউনিখে Marienplatz অর্থাৎ City Center Central Square এবং English Garden পরিদর্শন করেছিলাম। এর মধ্যে City Center Central Square এর একটি ছবি দিলাম। কিন্তু English Garden এর ছবি দিতে পারলাম না কারণ ক্যামেরার ব্যাটারি ডাউন হয়ে গিয়েছিলো। তাই নেট থেকে নিয়ে কয়েকটি ছবি দিলাম। ১১৫৮ সাল থেকেই Marienplatz মিউনিখ শহরের মূল স্কোয়ার হিসেবে প্রচলিত হয়ে আসছে। মধ্যযুগ থেকেই এখানে বাজার ও বিভিন্ন টুর্নামেন্ট আয়োজন হতো। এ স্কোয়ার পরিদর্শনের জন্য বর্তমানে প্রতিবছর লক্ষলক্ষ দর্শনার্থীর সমাগম হয়।

জনগণের উন্মুক্ত পার্ক হিসেবে মিউনিখে English Garden ব্যবহৃত হয়। বিশাল এ পার্কে রয়েছে হ্রদ, প্রাকৃতিক শোভার বাগান, যা আঠার শতকের শেষভাগে ফ্রান্সের ল্যান্ডস্কেপ বাগানের আদলে তৈরি করা হয়েছে। এখানে উইক-এন্ড বা ভেকেশনে এতো তরুণ-তরুণীর সমাগম হয় যে দেখলেই মনে প্রশ্ন আসে এদের কী আর কোনো কাজ নেই। সবুজ বনানী আর শীতল হ্রদ কলিজাটাকে টেনে ছিঁড়ে ফেলে দিতে চায়। এখানে সারাদিন চলে অভিসারের ডেটিং, সূর্যস্নান আর জলকেলির উৎসব। ওয়াটার স্কীইং এর ব্যবস্থা আছে। বাগানটির আয়তন ৩.৭বর্গ কিমি বা ১.৪বর্গ মাইল অথবা ৩৭০হেক্টর কিংবা ৯১০ একর। এটি হলো ইউরোপের সর্ববৃহৎ পাবলিক পার্ক যা নিউইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্কের চেয়েও বড়। ১৭৮৯ সালে স্যার বেঞ্জামিন থমসন এর সূচনা করেন এবং পরবর্তীকালে কাউন্ট রামফোর্ডসহ অন্যান্যগণ এর পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করেন।

«গার্ডেনের মুখেই যেখানে কৃত্রিমভাবে জলের মধ্যে বিপুলস্রোত সৃষ্টিসহ কৃত্রিম ঢেউ তৈরি করা হয়েছে ওয়াটার স্কীইং এর জন্য। এঁকেবেঁকে যাওয়া হ্রদের দুপাশে বিপুলসংখ্যক স্বল্পপোশাকধারী বালক-বালিকাদের বিভিন্ন ভঙ্গিমায় দেখা যায়। এখানে দিনভর আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠে জার্মানির এবং ইউরোপের পর্যটক তরুণ-তরুণীরা। দেখেই শান্তি। ইউরোপের ঐ যে বলে না খেলনেওয়ালা খেলে আর দেখনেওয়ালা চোখ পাকায়। যদিও ইউরোপ মূলত তরুণদের তথাপি এখানে সিনিয়ররাও আসেন যেনো এসব দেখলেই মনের বয়সটা একলাফে একযুগ কমে যাবে। কিন্তু হায় মরিচাধরা দেহের বয়স তো কমে না কখনোই।