ঢাকা ১২:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

একাত্তরের স্মৃতি কথা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৪৪:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ জানুয়ারী ২০১৬
  • ৬২৭ বার

এক.
আমার বাবা ছিলেন রেলওয়ের কর্মকর্তা । পাকিস্তান আমল থেকেই রেল শ্রমিক লীগ করতেন । ময়মনসিংহের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন । রেল ষ্টেশনের কাছেই রেল কোয়াটারে আমাদের বাসা । ১৯৭১ সালে আমি ৫ম শ্রেণীর ছাত্র । ময়মনসিংহ সিটি কলেজিয়েট স্কুলে পড়ি ।স্বাধীনতার পর আমি ময়মনসিংহ জিলা স্কুলে ভর্তি হই । সে যাক । আমরা মালগুদাম কলোনীতে থাকতাম । তখনকার সময়ে কলোনীতে ৫% বাঙালি ছিল । অধিকাংশই বিহারী পরিবার ছিল । তখন আমার সহপাঠি বা খেলার সাথী ছিল আতিক,সেলিম, সিদ্দিক, জামান, দুলাল প্রমুখ । আর বিহারী বন্ধুদের ভিতর ছিল আশফাক,সাজ্জাদ,আলিম প্রমুখ । আমরা ছোটরা তখন বুঝিনি আমরা কেন ওদের চেয়ে কম পরিবার । যেটি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বুঝেছিলেন । যে কোন প্রতিষ্ঠানে তখন বাঙালি নিয়োগ ছিল ২-৩% । বঙ্গবন্ধু বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে গেছেন ।

১৯৬৯ সাল । আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় জেল খানায় । প্রায় প্রতিদিন আমাদের স্কুল ছুটি হয়ে যায় । কলেজের ছাত্ররা এসে দপ্তরীর কাছ থেকে ঘন্টা নিয়ে বাজিয়ে দেয় । আর আমরা ক্লাশ রুম থেকে বেরিয়ে চলে আসি । গেটে জমায়েত হতেই শ্লোগান শুরু হয় । তোমার আমার ঠিকানা-পদ্মা মেঘনা যমুনা । জেগেছে জেগেছে বীর বাঙালি জেগেছে । জেলের তালা ভাংবো-শেখ মুজিবকে আনবো । ঢাকা না পিন্ডি-ঢাকা ঢাকা । জয় বাংলা । মিছিলটি স্কুল থেকে বের হয়ে রেল ষ্টেশনের দিকে যেতো । আমরা আমাদের বাসার কাছে আসতেই মিছিল থেকে কেটে পড়তাম ।এ মিছিলের গুরুত্ব তখন আমরা ছোটরা বুঝতাম না ।

সেই ময়মনসিংহের গুটি কয়েক ক্লাব ছিল । এর মধ্যে মুকুল ফৌজ ছিল অন্যতম । আমার আব্বা আমাকে একদিন সকাল বেলা নিয়ে গেলেন সেই মুকুল ফৌজ ক্লাবের প্রধান রতনদার কাছে । আব্বাকে দেখেই রতনদা বললেন, আরে রশীদ ভাই, আসেন আসেন । তারা অনেক রাজনৈতিক আলাপ করলো । তারপর আমাকে রতনদা হাতে দিয়ে বললেন, আমার ছেলেকে তোমার হাতে দিয়ে গেলাম । ব্যাস , হয়ে গেলাম এক ক্ষুদে ফৌজ । প্রতিদিন বিকেলে ক্লাবে আসতাম । একটি চৌচালা ঘর ছিল । গেট থেকে অনেক দূরে । গেটে দাড়িয়ে বলতে হতো ‘‘আসি ভাই’’ । ভিতরে যদি সিনিয়র কেই থাকতো বলতো-আস । সেই ক্লাবে মার্চ পাষ্ট এর জন্য প্রশিক্ষণ,শারিরীক চর্চা, ফুটবল খেলা, ক্রিকেট, ভলিবল,ক্যারাম,দাবা ইত্যাদি । আবার গান প্রশিক্ষণ হতো । সেদিনের দিনগুলি খুবই মজার ছিল । আবার শাসন ছিল কড়া । রতনদাকে সবাই বাঘের মতো ভয় পেতো । অন্যায় করলে আর রক্ষা নেই । শাস্তি তাকে পেতেই হতো ।

আমাদের মুকুল দের ড্রেস ছিল খুব সুন্দর । সাদা ইংলিশ হাফ পেন্ট, সাদা সার্ট,সাদা কাপড়ের জোতা-মোজা ও মাথায় সাদা লম্বাটে ক্যাপ । আমরা যখন প্যারেট করতাম তখন অদ্ভূত লাগতো । আমরা ১৪ আগস্ট স্বাধীনতা দিবসে সার্কিট হাউজ ময়দানে যেতাম । প্রায় প্রতিবারই পিটি প্রদর্শনীতে আমরা প্রথম হতাম । ভালো রেজান্ট করলে রতনদা আমাদের খুব খাওয়াতো । আমার যতটুকু সাংগঠনিক কর্মকান্ড সবটুকুই রতনদার কাছ থেকে পাওয়া । সেদিনকার মুকুল ফেীজ আর তেমনটি নেই । স্কুল হয়েছে, কলেজ হয়েছে । ক্লাবে পরিধি বেড়েছে । বর্তমানে রতনদা মুকুল নিকেতন স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ । তার পূর্ণ নাম আমির আহম্মেদ চৌধুরী রতন ।

১৯৬৯ সালেই বাঙালির নেতা শেখ মুজিবুর রহমান কে মুক্তি দেয়া হলো । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিপি তখন ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদ । তিনি বাঙালির নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য একটি সংবর্ধনার আয়োজন করেন । সেখানে তোফায়েল আহমেদ শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু উপাধীতে ভূষিত করেন । শেখ মুজিব হলেন বঙ্গবন্ধু । ১৯৭০ এর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সংখ্যা গরিষ্ঠ আসন পেলো । কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানীরা ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে টালবাহানা শুরু করে দিল । ১৯৭১ এর ৭মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু ঘোষনা করলেন, ‘‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীণতার সংগ্রাম ।’’ তিনি বাঙালিদের বললেন, ‘‘যার যা আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো । শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে ।’’

২৫ মার্চ পাক বাহিনীরা রাতের অন্ধকারে অর্তকিতে হামলা চালালো । হাজার হাজার বাঙালিকে হত্যা করলো । ঢাকা সহ সারা বাংলা হলো শ্মশান ।২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু ধানমন্ডির ৩২ নাম্বার বাড়িতে প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষনা দেন । তিনি পালিয়ে যেতে পারতেন । তিনি তা করেননি । বাঙালিতে বিপদের মুখে ফেলে তিনি গা ঢাকা দেননি । নিজের বাড়িতেই অবস্থান করেছেন । পশ্চিম পাকিস্তানীরা তাকে গ্রেফতার করলো । নিয়ে গেলো পশ্চিম পাকিস্তানে ।

পাক বাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য কজ চলছিল । আমাদের পাড়ার রুমেল মামা, জুয়েল ভাইরা বড়বড় গাছ কেটে ময়মনসিংহের প্রধান সড়ক ব্যারিকেট দিল । আমরা ছোটরা শরীক হলাম । আমরা বাসা থেকে দা বটি এনে কলাগাছ কেটে রাস্তায় ফেল্লাম । চারদিকে আতংক । ওরা বাঙালিদের হত্যা করেই চলছে । ক’দিন পর হঠাৎ সকাল বেলা ময়মনসিংহ ষ্টেশনে এক ট্রেনে ইপিআর বাহিনী উঠলো । ওরা বাংলাকে শত্রুমুক্ত করতে যুদ্ধে যাচ্ছে । সকলের চোখে জল । অশ্রুসজল চোখে আমরা তাদের বিদায় জানালাম । একজন ইপিআর জোয়ানকে তার দেয়া বোতলে টিউবওয়েল থেকে পানি ভরে দিয়েছিলাম । সেই বাঙালি জোয়ান আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেছিল । ওরা বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর সকলে কি ফিরে এসেছিল ?

দুই.
মে মাসের শেষ দিকে আমাদেরকে আব্বা গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিল । ময়মনসিংহ থেকে সরিষাবাড়ী । রেল-বাস বন্ধ । যেতে হবে রিক্সায় । দুটি রিক্সা ভাড়া করলেন আব্বা । প্রথমে আমরা যাব নান্দিনা । ফুফুর বাড়ী । ওখানে একরাত থেকে সরিষাবাড়ী । আমাদের বাসার সব কিছু ফেলে চললাম । আম্মা তেমন কিছুই নিতে পারেন নি ।আব্বার সাংগঠনিক কাজ থাকায় তিনি থেকে গেলেন । রাস্তায় হাজার রকম বিপদ । ইতিমধ্যে রাজাকার বাহিনী তৈরী হয়ে গেছে । পাব বাহিনীদের সহযোগিতা করার জন্য ।রাস্তায় ক্ষণে ক্ষণে ব্যারিকেড । জিজ্ঞাসাবাদ । আমাদের সাথে সুজা ভাই ছিলেন । আমার ফুপাতো ভাই । তিনি বুদ্ধি করে কথা বলাতে প্রথম যাত্রা আমরা কোন রকমে পার দিতে পারলাম ।

ফুপুর বাড়ী একদিন থেকে আবার রিক্সায় সরিষাবাড়ী । জামালপুর দয়াময় মোড় এ এসে আমরা থমকে দাড়ালাম । একটু আগে পাকবাহিনীরা সারা শহর তছনছ করে গেছে । দয়াময় মোড়ে কিছু মিস্টির দোকান ছিল । বেশ ক’গামলা রাস্তায় এলোপাথরি ভাবে পড়ে আছে । আর রসগোল্লাগুলি রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে আছে । ক’টি কুকুর সেই মিস্টিগুলো খাবার চেস্টা করছে । একটু দূর এগুতেই দেখলাম দু’জন বাঙালির লাশ । রক্তের ¯্রােতধারা রাস্তায় । ক’টি কাক খুব অসহায় এর মতো কাকা করছে । আমরা ভয়ে ভয়ে জামালপুর শহর পেরিয়ে এলাম । দিকপাইত নামক জায়গাটি পেরিয়ে সরিষাবাড়ী রোডে আমরা উঠলাম । বাউশী পেরিয়ে কমরাবাদ নদী পার হলাম ।এটি যমুনার শাখা । ঝিনাই নদী । আমাদের বাড়ীর কাছে রিক্সা যেতেই শত শত লোক আমাদেরকে স্বাগত জানালো । আমার শিশু মন চনমনে হয়ে উঠলো । ছায়া সুনিবিড় আমাদের মায়াময় গ্রাম । এখানকার মানুষগুলো শান্ত ।

পরদিন থেকেই আমি আমার মুকুল ফৌজ এর ড্রেস পড়ে বাড়ীর ছেলে-মেয়েদের ট্রেনিং দেয়া শুরু করলাম । মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং । প্রায় ৫০জন ছেলে মেয়ে । আমি হলাম ওদের কমান্ডার । আমরা দু’ভাগে ভাগ হয়ে লড়াই করতাম । রাজাকার দের পরাজিত করে আমরা শাস্তি দিতাম । যুদ্ধে জয়ের পরই আমরা জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু শ্লোগান দিয়ে উঠতাম । ইতিমধ্যে আমাদের বাড়ির সামনে আলহাজ জুট মিল এ আর্মিদের ক্যাম্প করা হয়েছে । গ্রামের লোকদের রাজাকার বাহিনীতে ভর্তি করানো হচ্ছে ।

আর গ্রামে কিছু সংখ্যক যুবক পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে চলে গেছে । তাদের মাঝে মজিদ চেয়ারম্যন, আলতাফ মাস্টার , হারুন মাস্টার, ইমান আলী, বারেক, কাদের, সিকান্দর প্রমুখ । রাজাকাররা মাঝে মধ্যে গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে হানা দিয়ে চাল ,ডাল, মুরগী, খাসি,গরু ক্যাম্পে নিয়ে যায় । প্রায় সব জায়গায় শান্তি কমিটি গঠন করা হল ।আমাদের গ্রামের গফুর মাস্টার শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান হলেন ।

এলাকার অনেক যুবক ছেলেরা রাতের অন্ধকারে পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে চলে গেলো । আর গফুর মাস্টার এর নেতৃত্বে কিছু লোক রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিল । সরিষাবাড়ীতে আলবদর এর কমান্ডার ছিল আনসার মৌলভী ।সবচেয়ে বড় মাদ্রাসা আলিয়া মাদ্রাসা ছিল আমাদের সরিষাবাড়ীতে । সেই মাদ্রাসার শিক্ষক ছিল আনসার মৌলভী । তার দাপটে এলাকার শান্তিপ্রিয় ও নিরিহ মানুষ অতিষ্ট । কিন্তু মুখে কোন কথা বলতে পরতো না । ওদের বিরুদ্ধে কথা বললেই লাল ঘরে নিয়ে যেতো । সেখানে অত্যাচার করতো । আর যে বাড়ীর ছেলেদের এলাকায় দেখা যেতো না তখন সন্দেহ করতো ওরা মুক্তি বাহিনীতে যোগ দিয়েছে । তখন ঐসব বাড়ীর উপর বিভিন্ন রকম অত্যাচার করতো রাজাকার , আলবদররা ।

অক্টোবর বা নভেম্বর এর এক ভোরে সেকান্দর কাকা লুকিয়ে বাড়ি এসেছে । কতদিন ভাত খায়নি কে জানে । দাদী সেকান্দর কাকাকে ভাত খাওয়াচ্ছে । ভোর বেলা গ্রামের মহিলারা বাড়ির পিছনে পুকুর ঘাটে বাসি বাসনপত্র পরিস্কার করে সেদিন আমার মা মরহুম হাজেরা বেগম সে কাজটি করছিল । হঠাৎ মা দেখে পশ্চিম দিক থেকে একদল পাক বাহিনী আমাদের বাড়ির দিকে আসছে । তাদের সাথে কিছু রাজাকার ও আলবদর । আমার মায়ের আর বুঝতে বাকি রইল না ওরা কেন আসছে । আমার মা উর্ধ্ব শ্বাসে দৌড়ে বাড়ির ভিতর এসে সেকান্দর কাকাকে বললো , তুই এখনো ভাত খাস ? তোরে ধরতে আইতেছে । পালা পালা সেকান ।

অমনি মুক্তিযোদ্ধা সেকান্দর আমাদের বাড়ির সামনে ঝিনাই নদী সাতরে পার হয়ে চলে গেলো । আমার সেকান কাকা সেদিন ভালোভাবে ভাত খেতে পারেনি । সেদিন কিন্ত আমার মা সহযোদ্ধার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল্ । এমনিভাবে সারা বাংলাদেশের মা-বোনেরা এবং ছোট ছেলে-মেয়েরা মুক্তিযুদ্ধে সহযোদ্ধা হিসেবে কাজ করেছে । আমাদের ভুলে গেলে চলবে না হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর ডাকে বাংলার আবাল,বৃদ্ধ,বণিতা, কৃষক,শ্রমিক,মজুর সকলে মাতৃভুমিকে রক্ষার জন্য পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল ।

দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা । আমরা হারিয়েছি ত্রিশ লক্ষ বাংলা মায়ের বীর সন্তানকে । আর স¤্রম হারিয়েছে দু’লক্ষ মাবোনের । অনেক ত্যাগ, তীতীক্ষার পর আমরা পেয়েছি সোনার বাংলাকে । ১৯৭৫সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শাহাদাত বরণ করার পর ৪০ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে । বর্তমানে বঙ্গবন্ধু কণ্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনা দেশ পরিচালনা করছেন । তিনি দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য একবিংশ শতাব্দির চ্যালেঞ্জ হাতে নিয়েছেন এবং ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ । আমরা সহযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার পাশে থেকে নিরলস কাজ করে যাব । বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার জন্য সারা বাংলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সহযোদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধ করে বাংলার উন্নয়নের সংগ্রামে অংশগ্রহন করবো ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

একাত্তরের স্মৃতি কথা

আপডেট টাইম : ১১:৪৪:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ জানুয়ারী ২০১৬

এক.
আমার বাবা ছিলেন রেলওয়ের কর্মকর্তা । পাকিস্তান আমল থেকেই রেল শ্রমিক লীগ করতেন । ময়মনসিংহের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন । রেল ষ্টেশনের কাছেই রেল কোয়াটারে আমাদের বাসা । ১৯৭১ সালে আমি ৫ম শ্রেণীর ছাত্র । ময়মনসিংহ সিটি কলেজিয়েট স্কুলে পড়ি ।স্বাধীনতার পর আমি ময়মনসিংহ জিলা স্কুলে ভর্তি হই । সে যাক । আমরা মালগুদাম কলোনীতে থাকতাম । তখনকার সময়ে কলোনীতে ৫% বাঙালি ছিল । অধিকাংশই বিহারী পরিবার ছিল । তখন আমার সহপাঠি বা খেলার সাথী ছিল আতিক,সেলিম, সিদ্দিক, জামান, দুলাল প্রমুখ । আর বিহারী বন্ধুদের ভিতর ছিল আশফাক,সাজ্জাদ,আলিম প্রমুখ । আমরা ছোটরা তখন বুঝিনি আমরা কেন ওদের চেয়ে কম পরিবার । যেটি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বুঝেছিলেন । যে কোন প্রতিষ্ঠানে তখন বাঙালি নিয়োগ ছিল ২-৩% । বঙ্গবন্ধু বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে গেছেন ।

১৯৬৯ সাল । আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় জেল খানায় । প্রায় প্রতিদিন আমাদের স্কুল ছুটি হয়ে যায় । কলেজের ছাত্ররা এসে দপ্তরীর কাছ থেকে ঘন্টা নিয়ে বাজিয়ে দেয় । আর আমরা ক্লাশ রুম থেকে বেরিয়ে চলে আসি । গেটে জমায়েত হতেই শ্লোগান শুরু হয় । তোমার আমার ঠিকানা-পদ্মা মেঘনা যমুনা । জেগেছে জেগেছে বীর বাঙালি জেগেছে । জেলের তালা ভাংবো-শেখ মুজিবকে আনবো । ঢাকা না পিন্ডি-ঢাকা ঢাকা । জয় বাংলা । মিছিলটি স্কুল থেকে বের হয়ে রেল ষ্টেশনের দিকে যেতো । আমরা আমাদের বাসার কাছে আসতেই মিছিল থেকে কেটে পড়তাম ।এ মিছিলের গুরুত্ব তখন আমরা ছোটরা বুঝতাম না ।

সেই ময়মনসিংহের গুটি কয়েক ক্লাব ছিল । এর মধ্যে মুকুল ফৌজ ছিল অন্যতম । আমার আব্বা আমাকে একদিন সকাল বেলা নিয়ে গেলেন সেই মুকুল ফৌজ ক্লাবের প্রধান রতনদার কাছে । আব্বাকে দেখেই রতনদা বললেন, আরে রশীদ ভাই, আসেন আসেন । তারা অনেক রাজনৈতিক আলাপ করলো । তারপর আমাকে রতনদা হাতে দিয়ে বললেন, আমার ছেলেকে তোমার হাতে দিয়ে গেলাম । ব্যাস , হয়ে গেলাম এক ক্ষুদে ফৌজ । প্রতিদিন বিকেলে ক্লাবে আসতাম । একটি চৌচালা ঘর ছিল । গেট থেকে অনেক দূরে । গেটে দাড়িয়ে বলতে হতো ‘‘আসি ভাই’’ । ভিতরে যদি সিনিয়র কেই থাকতো বলতো-আস । সেই ক্লাবে মার্চ পাষ্ট এর জন্য প্রশিক্ষণ,শারিরীক চর্চা, ফুটবল খেলা, ক্রিকেট, ভলিবল,ক্যারাম,দাবা ইত্যাদি । আবার গান প্রশিক্ষণ হতো । সেদিনের দিনগুলি খুবই মজার ছিল । আবার শাসন ছিল কড়া । রতনদাকে সবাই বাঘের মতো ভয় পেতো । অন্যায় করলে আর রক্ষা নেই । শাস্তি তাকে পেতেই হতো ।

আমাদের মুকুল দের ড্রেস ছিল খুব সুন্দর । সাদা ইংলিশ হাফ পেন্ট, সাদা সার্ট,সাদা কাপড়ের জোতা-মোজা ও মাথায় সাদা লম্বাটে ক্যাপ । আমরা যখন প্যারেট করতাম তখন অদ্ভূত লাগতো । আমরা ১৪ আগস্ট স্বাধীনতা দিবসে সার্কিট হাউজ ময়দানে যেতাম । প্রায় প্রতিবারই পিটি প্রদর্শনীতে আমরা প্রথম হতাম । ভালো রেজান্ট করলে রতনদা আমাদের খুব খাওয়াতো । আমার যতটুকু সাংগঠনিক কর্মকান্ড সবটুকুই রতনদার কাছ থেকে পাওয়া । সেদিনকার মুকুল ফেীজ আর তেমনটি নেই । স্কুল হয়েছে, কলেজ হয়েছে । ক্লাবে পরিধি বেড়েছে । বর্তমানে রতনদা মুকুল নিকেতন স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ । তার পূর্ণ নাম আমির আহম্মেদ চৌধুরী রতন ।

১৯৬৯ সালেই বাঙালির নেতা শেখ মুজিবুর রহমান কে মুক্তি দেয়া হলো । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিপি তখন ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদ । তিনি বাঙালির নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য একটি সংবর্ধনার আয়োজন করেন । সেখানে তোফায়েল আহমেদ শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু উপাধীতে ভূষিত করেন । শেখ মুজিব হলেন বঙ্গবন্ধু । ১৯৭০ এর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সংখ্যা গরিষ্ঠ আসন পেলো । কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানীরা ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে টালবাহানা শুরু করে দিল । ১৯৭১ এর ৭মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু ঘোষনা করলেন, ‘‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীণতার সংগ্রাম ।’’ তিনি বাঙালিদের বললেন, ‘‘যার যা আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো । শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে ।’’

২৫ মার্চ পাক বাহিনীরা রাতের অন্ধকারে অর্তকিতে হামলা চালালো । হাজার হাজার বাঙালিকে হত্যা করলো । ঢাকা সহ সারা বাংলা হলো শ্মশান ।২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু ধানমন্ডির ৩২ নাম্বার বাড়িতে প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষনা দেন । তিনি পালিয়ে যেতে পারতেন । তিনি তা করেননি । বাঙালিতে বিপদের মুখে ফেলে তিনি গা ঢাকা দেননি । নিজের বাড়িতেই অবস্থান করেছেন । পশ্চিম পাকিস্তানীরা তাকে গ্রেফতার করলো । নিয়ে গেলো পশ্চিম পাকিস্তানে ।

পাক বাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য কজ চলছিল । আমাদের পাড়ার রুমেল মামা, জুয়েল ভাইরা বড়বড় গাছ কেটে ময়মনসিংহের প্রধান সড়ক ব্যারিকেট দিল । আমরা ছোটরা শরীক হলাম । আমরা বাসা থেকে দা বটি এনে কলাগাছ কেটে রাস্তায় ফেল্লাম । চারদিকে আতংক । ওরা বাঙালিদের হত্যা করেই চলছে । ক’দিন পর হঠাৎ সকাল বেলা ময়মনসিংহ ষ্টেশনে এক ট্রেনে ইপিআর বাহিনী উঠলো । ওরা বাংলাকে শত্রুমুক্ত করতে যুদ্ধে যাচ্ছে । সকলের চোখে জল । অশ্রুসজল চোখে আমরা তাদের বিদায় জানালাম । একজন ইপিআর জোয়ানকে তার দেয়া বোতলে টিউবওয়েল থেকে পানি ভরে দিয়েছিলাম । সেই বাঙালি জোয়ান আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেছিল । ওরা বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর সকলে কি ফিরে এসেছিল ?

দুই.
মে মাসের শেষ দিকে আমাদেরকে আব্বা গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিল । ময়মনসিংহ থেকে সরিষাবাড়ী । রেল-বাস বন্ধ । যেতে হবে রিক্সায় । দুটি রিক্সা ভাড়া করলেন আব্বা । প্রথমে আমরা যাব নান্দিনা । ফুফুর বাড়ী । ওখানে একরাত থেকে সরিষাবাড়ী । আমাদের বাসার সব কিছু ফেলে চললাম । আম্মা তেমন কিছুই নিতে পারেন নি ।আব্বার সাংগঠনিক কাজ থাকায় তিনি থেকে গেলেন । রাস্তায় হাজার রকম বিপদ । ইতিমধ্যে রাজাকার বাহিনী তৈরী হয়ে গেছে । পাব বাহিনীদের সহযোগিতা করার জন্য ।রাস্তায় ক্ষণে ক্ষণে ব্যারিকেড । জিজ্ঞাসাবাদ । আমাদের সাথে সুজা ভাই ছিলেন । আমার ফুপাতো ভাই । তিনি বুদ্ধি করে কথা বলাতে প্রথম যাত্রা আমরা কোন রকমে পার দিতে পারলাম ।

ফুপুর বাড়ী একদিন থেকে আবার রিক্সায় সরিষাবাড়ী । জামালপুর দয়াময় মোড় এ এসে আমরা থমকে দাড়ালাম । একটু আগে পাকবাহিনীরা সারা শহর তছনছ করে গেছে । দয়াময় মোড়ে কিছু মিস্টির দোকান ছিল । বেশ ক’গামলা রাস্তায় এলোপাথরি ভাবে পড়ে আছে । আর রসগোল্লাগুলি রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে আছে । ক’টি কুকুর সেই মিস্টিগুলো খাবার চেস্টা করছে । একটু দূর এগুতেই দেখলাম দু’জন বাঙালির লাশ । রক্তের ¯্রােতধারা রাস্তায় । ক’টি কাক খুব অসহায় এর মতো কাকা করছে । আমরা ভয়ে ভয়ে জামালপুর শহর পেরিয়ে এলাম । দিকপাইত নামক জায়গাটি পেরিয়ে সরিষাবাড়ী রোডে আমরা উঠলাম । বাউশী পেরিয়ে কমরাবাদ নদী পার হলাম ।এটি যমুনার শাখা । ঝিনাই নদী । আমাদের বাড়ীর কাছে রিক্সা যেতেই শত শত লোক আমাদেরকে স্বাগত জানালো । আমার শিশু মন চনমনে হয়ে উঠলো । ছায়া সুনিবিড় আমাদের মায়াময় গ্রাম । এখানকার মানুষগুলো শান্ত ।

পরদিন থেকেই আমি আমার মুকুল ফৌজ এর ড্রেস পড়ে বাড়ীর ছেলে-মেয়েদের ট্রেনিং দেয়া শুরু করলাম । মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং । প্রায় ৫০জন ছেলে মেয়ে । আমি হলাম ওদের কমান্ডার । আমরা দু’ভাগে ভাগ হয়ে লড়াই করতাম । রাজাকার দের পরাজিত করে আমরা শাস্তি দিতাম । যুদ্ধে জয়ের পরই আমরা জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু শ্লোগান দিয়ে উঠতাম । ইতিমধ্যে আমাদের বাড়ির সামনে আলহাজ জুট মিল এ আর্মিদের ক্যাম্প করা হয়েছে । গ্রামের লোকদের রাজাকার বাহিনীতে ভর্তি করানো হচ্ছে ।

আর গ্রামে কিছু সংখ্যক যুবক পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে চলে গেছে । তাদের মাঝে মজিদ চেয়ারম্যন, আলতাফ মাস্টার , হারুন মাস্টার, ইমান আলী, বারেক, কাদের, সিকান্দর প্রমুখ । রাজাকাররা মাঝে মধ্যে গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে হানা দিয়ে চাল ,ডাল, মুরগী, খাসি,গরু ক্যাম্পে নিয়ে যায় । প্রায় সব জায়গায় শান্তি কমিটি গঠন করা হল ।আমাদের গ্রামের গফুর মাস্টার শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান হলেন ।

এলাকার অনেক যুবক ছেলেরা রাতের অন্ধকারে পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে চলে গেলো । আর গফুর মাস্টার এর নেতৃত্বে কিছু লোক রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিল । সরিষাবাড়ীতে আলবদর এর কমান্ডার ছিল আনসার মৌলভী ।সবচেয়ে বড় মাদ্রাসা আলিয়া মাদ্রাসা ছিল আমাদের সরিষাবাড়ীতে । সেই মাদ্রাসার শিক্ষক ছিল আনসার মৌলভী । তার দাপটে এলাকার শান্তিপ্রিয় ও নিরিহ মানুষ অতিষ্ট । কিন্তু মুখে কোন কথা বলতে পরতো না । ওদের বিরুদ্ধে কথা বললেই লাল ঘরে নিয়ে যেতো । সেখানে অত্যাচার করতো । আর যে বাড়ীর ছেলেদের এলাকায় দেখা যেতো না তখন সন্দেহ করতো ওরা মুক্তি বাহিনীতে যোগ দিয়েছে । তখন ঐসব বাড়ীর উপর বিভিন্ন রকম অত্যাচার করতো রাজাকার , আলবদররা ।

অক্টোবর বা নভেম্বর এর এক ভোরে সেকান্দর কাকা লুকিয়ে বাড়ি এসেছে । কতদিন ভাত খায়নি কে জানে । দাদী সেকান্দর কাকাকে ভাত খাওয়াচ্ছে । ভোর বেলা গ্রামের মহিলারা বাড়ির পিছনে পুকুর ঘাটে বাসি বাসনপত্র পরিস্কার করে সেদিন আমার মা মরহুম হাজেরা বেগম সে কাজটি করছিল । হঠাৎ মা দেখে পশ্চিম দিক থেকে একদল পাক বাহিনী আমাদের বাড়ির দিকে আসছে । তাদের সাথে কিছু রাজাকার ও আলবদর । আমার মায়ের আর বুঝতে বাকি রইল না ওরা কেন আসছে । আমার মা উর্ধ্ব শ্বাসে দৌড়ে বাড়ির ভিতর এসে সেকান্দর কাকাকে বললো , তুই এখনো ভাত খাস ? তোরে ধরতে আইতেছে । পালা পালা সেকান ।

অমনি মুক্তিযোদ্ধা সেকান্দর আমাদের বাড়ির সামনে ঝিনাই নদী সাতরে পার হয়ে চলে গেলো । আমার সেকান কাকা সেদিন ভালোভাবে ভাত খেতে পারেনি । সেদিন কিন্ত আমার মা সহযোদ্ধার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল্ । এমনিভাবে সারা বাংলাদেশের মা-বোনেরা এবং ছোট ছেলে-মেয়েরা মুক্তিযুদ্ধে সহযোদ্ধা হিসেবে কাজ করেছে । আমাদের ভুলে গেলে চলবে না হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর ডাকে বাংলার আবাল,বৃদ্ধ,বণিতা, কৃষক,শ্রমিক,মজুর সকলে মাতৃভুমিকে রক্ষার জন্য পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল ।

দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা । আমরা হারিয়েছি ত্রিশ লক্ষ বাংলা মায়ের বীর সন্তানকে । আর স¤্রম হারিয়েছে দু’লক্ষ মাবোনের । অনেক ত্যাগ, তীতীক্ষার পর আমরা পেয়েছি সোনার বাংলাকে । ১৯৭৫সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শাহাদাত বরণ করার পর ৪০ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে । বর্তমানে বঙ্গবন্ধু কণ্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনা দেশ পরিচালনা করছেন । তিনি দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য একবিংশ শতাব্দির চ্যালেঞ্জ হাতে নিয়েছেন এবং ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ । আমরা সহযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার পাশে থেকে নিরলস কাজ করে যাব । বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার জন্য সারা বাংলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সহযোদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধ করে বাংলার উন্নয়নের সংগ্রামে অংশগ্রহন করবো ।